০৪. জলপাইগুড়ি শহরের দুপাশ দিয়ে

জলপাইগুড়ি শহরের দুপাশ দিয়ে দুটো ট্রেন লাইন চলে গেছে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সগর্বে এসে রানিনগর স্টেশনে ওরা আলাদা হল। ফলে জলপাইগুড়ি দুটো স্টেশন পেয়ে গেল। একটা সেই পুরনো স্টেশন যা শহরের বুকের ওপর হলেও অব্যবস্থা এবং অযত্নে প্রাগৈতিহাসিক হয়ে রয়েছে। বড় ট্রেন বলতে দার্জিলিং মেলের কয়েকটা কামরা বিকেলবেলায় যাত্রী টেনে আনে। দ্বিতীয় স্টেশনটা ছিমছাম, অনেকটা লম্বা প্ল্যাটফর্ম, নামী ট্রেনগুলি থামে বা না থেমে ছুটে যায় আসাম থেকে বা আসামে। কিন্তু স্টেশনটায় পৌঁছতে হাঙ্গামা করতে হয়। তিস্তা নদীর প্রায় কোল ঘেঁষে এই স্টেশনে পৌঁছতে রাতবিরেতে রিকশা পাওয়া মুশকিল। ট্রেন লেট হলে বিপাকে পড়তে হয়।

সুদর্শনের জিপ এই দ্বিতীয় স্টেশনের দিকে ছুটছিল। জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পেরিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে ডিঙিয়ে রেললাইনের কাছে পৌঁছে সুদর্শন বললেন, একটা কথা বলছি বলে কিছু মনে করবেন না।

নিশ্চয়ই না। বলুন।

আমাদের বড়কর্তারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছেন এখানে। আপনি জিপ থেকে নামছেন এটা কেউ কেউ পছন্দ নাও করতে পারেন।

বুঝতে পেরেছি। জিপ থামাতে বলুন, নেমে যাচ্ছি।

স্টেশনটা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ওই পথে প্রচুর মানুষ ছুটে যাচ্ছে।

দূরেও প্রচুর লোক দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ মুখে মুখে ডাকাতির খবর চাউর হয়ে গেছে। সুদর্শন বললেন, না, থাক, আপনাকে নামতে হবে না।

অর্জুন শুনতে পেল সুদর্শন বলছেন, এস পি সাহেব যা-ই ভাবুন, আমার কি, সামান্য ভদ্রতাবোধ থাকবে না? ছি ছি, কী বললাম ওঁকে!

অর্জুন হেসে ফেলল। জিপ থেমে গিয়েছিল। মাটিতে পা বাড়িয়ে সুদর্শন জিজ্ঞেস করলেন, হাসছেন কেন?

আপনার সঙ্কোচের কোনও কারণ নেই। আমি কিছুই মনে করিনি।

সুদর্শন মাথা নাড়লেন, ওঃ, আপনাকে এড়ানোর উপায় নেই।

 

ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীদের চিৎকার চেঁচামেচি এখনও চলছে। স্থানীয় যুবকেরা তিনজন মানুষকে ট্রেন থেকে নামিয়েছে যারা মৃত না জীবিত বোঝা যাচ্ছে না। সুদর্শন তাঁর দুজন সেপাইকে নিয়ে কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল কনভয় ছুটে এল শহর থেকে। এস পি, ডি এস পি সাহেবরা প্রচুর সেপাই নিয়ে চলে এসেছেন। যাত্রীদের সঙ্গে সুদর্শনের ঝগড়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতার জন্যে পুলিশকে দায়ী করছিলেন। সাধারণ পুলিশ এবং রেলপুলিশের যে পার্থক্য তা তাঁরা বুঝতে চাইছিলেন না। তিনটে শরীরকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।

যাত্রীদের জিজ্ঞেস করে অর্জুন জানতে পারল ট্রেনটা একটু লেটে চলছিল। রানিনগর স্টেশনে গাড়িটা দুভাগ হয়ে যায়। এই কাটাকুটির জন্যে প্রায় মিনিট কুড়ি খরচ হয়। কুচবিহারের দিকে সেই অর্ধেক ট্রেন যাত্রা শুরু করা মাত্র এসি টুটিয়ারে সাতজন ছেলে ঢুকে পড়ে। তাদের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল। যাত্রীদের দামি জিনিসপত্র ছিনতাই করছিল বেশ রুক্ষভাবে। শেষ পর্যন্ত তিনজন যাত্রী বাধা দেন। এরা সঙ্গে-সঙ্গে তিনজনের পেটে ছুরি চালায়। তখন চাবাগানের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলছিল। তার পরেই ট্রেন গতি কমায়। এরা চেন ধরে টানে। গতি আর একটু কমতে সবাই লাফিয়ে জঙ্গলে মিলিয়ে যায়। যেখানে ডাকাতি হয় তার চারপাশে কোনও লোকালয় ছিল না। এই কামরায় কোনও রেলরক্ষী না থাকায় ডাকাতরা সহজে পালাতে পেরেছে। সাধারণত ডাকাতি হয় থ্রি-টিয়ার স্লিপার ক্লাসে। আজ পর্যন্ত কখনও এসি কামরায় ডাকাতরা ডাকাতির জন্যে পছন্দ করেনি। পালাবার অসুবিধে হবে ভেবেই হয়তো অপছন্দ করেছে। তাছাড়া দামি টিকিট বলে রক্ষী থাকে বন্দুক নিয়ে। আজ এখানে রক্ষী ছিল না কিন্তু থ্রি-টিয়ার স্লিপার ক্লাসে বন্দুকধারী ছিল। সম্ভবত সেই কারণেই ডাকাতরা ওই কামরা এড়িয়ে গিয়ে এখানে হামলা করেছে আজ।

রেলপুলিশের কর্তারা এসে গেলে সুদর্শনের চাপ কমল। এর মধ্যে এস পি সাহেব সুদর্শনকে বলেছেন, কী করব বলুন তো! দুটো ডাকাতকে হাতে পেয়ে ছেড়ে দিলেন। ওরা থাকলে চাপ দিয়ে বের করা যেত এই ডাকাতি কারা করেছে। লোক তিনটে মারা গেলে খবরের কাগজ আমাদের ছেড়ে দেবে? আপনাদের একটা ভুলের জন্যে এইভাবে হেনস্থা হতে হয় আমাকে।

কিন্তু সার, এই ডাকাতি অন্য দলও করতে পারে।

আপনি কী করে জানলেন? কাল যাদের ছেড়ে দিয়েছেন তারাই যে আজ সকালে ডাকাতি করেনি তার কোনও প্রমাণ আছে আপনার কাছে?

সুদর্শন কোনও জবাব দিতে পারলেন না।

খানিকটা দূরে অর্জুন এসি টু-টিয়ারের এক যাত্রীর কাছে ডাকাতদের চেহারার বর্ণনা শুনছিল। ভদ্রলোক যতটা মনে করতে পারছেন ততটাই বলতে গিয়েও গুলিয়ে ফেলছেন। যে লোকটা প্রথম ছুরি চালিয়েছিল তাকে মোটাসোটা বলেই মাথা নাড়লেন, ঠিক মোটা নয়। ওইরকম উত্তেজনার সময় দেখার স্মৃতি পরে বিশ্বাসঘাতকতা করতেই পারে।

এস পি সাহেব সুদর্শনকে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি এখানে কেন?

সুদর্শন একটু পাশ কাটিয়ে বললেন, হয়তো ট্রেন ডাকাতির কথা শুনে এসেছেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলবেন?

ডাকুন এঁকে।

সুদর্শন ডাকতেই অর্জুন এগিয়ে এসে বলল, নমস্কার।

এস পি সাহেব তাকালেন। অর্জুন শুনল, মতলবটা কী? আমাকে অপদস্থ করার ধান্দায় আসা হয়েছে এখানে? এস পি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনিও বুঝি এই ট্রেনে ছিলেন?

না। খবরটা শুনে ছুটে এলাম।

কেন? এস পি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, এই ট্রেনে আপনার কোনও ক্লায়েন্টের আসার কথা ছিল নাকি?

না। আমি কোনও মতলব বা কোনও ধান্দা নিয়ে এখানে আসিনি।

অর্জুন শুনল, আচ্ছা সেয়ানা তো!

অর্জুন হাসল, এস পি সাহেব, মিছিমিছি আমাকে গালাগালি না দিয়ে যাত্রীদের কাছে গিয়ে ডাকাতদের হদিস পাওয়া যায় এমন কোনও কু খুঁজে বের করুন না!

কী? আমি আপনাকে গালাগালি দিয়েছি? এস পি সুদর্শনের দিকে তাকালেন, সুদর্শন, আপনি আমাকে কিছু বলতে শুনেছেন?

সুদর্শন সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে না বললেন।

কোনও ভদ্রলোককে অকারণে সেয়ানা ভাবা কি উচিত বলে মনে হয় আপনার? আচ্ছা, নমস্কার। অর্জুন সরে এল ওখান থেকে।

এস পি সাহেবের মুখের চেহারা দেখে সুদর্শন মজা পেলেন, সার, অর্জুনবাবুর মধ্যে কিছু অলৌকিক ক্ষমতা লক্ষ করেছি।

যেমন?

উনি মনের কথা বুঝতে পেরে যান।

ডেঞ্জারাস ব্যাপার। আপনার মতো আমারও একই সন্দেহ হচ্ছে। এইসব লোক ইচ্ছে করলে বিশাল ক্রাইম করতে পারে। আরে মশাই, এটা কোনও অলৌকিক ব্যাপার নয়। আপনাকে সম্মোহিত করে ওর ইচ্ছেমতো আপনার ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যাকগে, এসি কামরার প্যাসেঞ্জারদের এক-এক করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি স্টেশন মাস্টারের ঘরে গিয়ে বসছি। এস পি সাহেব চলে গেলেন।

কিন্তু যাত্রীদের রাজি করাতে পারলেন না সুদর্শন। নিরাপত্তার অভাবে তাঁরা এতক্ষণ বেশ উষ্ণ ছিলেন, এখন পুলিশ তাঁদেরই জেরা করবে জেনে খেপে গেলেন। তাঁদের দাবি, যার যা গিয়েছে তা রেল কর্তৃপক্ষ নথিবদ্ধ করে অঙ্গীকার করুক, অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ করবে।

অর্জুন বুঝল এখানে অপেক্ষা করার কোনও মানে হয় না। সে স্টেশনের বাইরে এসে একটা রিকশা নিতে গিয়ে আবিষ্কার করল একটাও রিকশা নেই। এই ট্রেনের যেসব যাত্রী এখানে নেমেছে তাদের নিয়ে শহরে চলে গেছে রিকশাগুলো। অর্জুন হাঁটা শুরু করল। সুদর্শনকে বিরক্ত করার কোনও মানে হয় না। এস পি সাহেব থাকলে ওঁকে আদেশ মান্য করতেই হবে।

মিনিট সাতেক হেঁটে লেভেল ক্রসিং-এ পৌঁছে গেল অর্জুন এবং সেখানেই অজিত নাগের দেখা পেয়ে গেল। অজিত ওর সঙ্গে জেলা স্কুলে পড়ত। খুব মাতব্বর ছিল সে-সময়। এখন কন্ট্রাক্টরি করছে।

কী রে? তুই? ট্রেনে এলি? অজিত জিজ্ঞেস করল।

না। তুই কেমন আছিস?

আর থাকা। আমরা কুলিগিরি করি তোর মতো তো নয়। কোথায় যাবি? অজিত জিজ্ঞেস করল।

বাড়ি।

তা হলে চল তোকে আমি জলপাই মোড়ে নামিয়ে দিচ্ছি, ওখান থেকে রিকশা পেয়ে যাবি। অজিত তার মোটরবাইক চালু করল।

ওর পেছনে উঠে অর্জুন জানতে চাইল, তুই কোথায় যাচ্ছিস?

শিলিগুড়ি। বাইক চলছিল। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তোর সঙ্গে এক্সট্রা হেলমেট নেই?

আছে। অজিত মেরুদণ্ড সোজা করে বাইক চালাচ্ছিল। আমাকে দে।

তুই তো একটু পরেই নেমে যাবি। এদিকে পুলিশ কোথায়?

আমি ভাবছি তোর সঙ্গে শিলিগুড়ি থেকে ঘুরে আসি।

যাবি? চল, তোকে একটা দারুণ দোকানে মোমো খাওয়াব। অজিত বাইক থামাল। তারপর বাইকের বাক্স থেকে একটা হেলমেট বের করে অর্জুনকে দিল। হেলমেট পরলে মানুষের চেহারা পালটে যায়।

অজিত বাইক চালাচ্ছিল বেশ দ্রুতগতিতে। ছুটন্তু বাস বা লরিদের ও তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। অর্জুন নিজে হলে কখনওই এভাবে চালাত না। একসময় রেলগেট এসে গেল। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তোর কি খুব তাড়া আছে?

অজিত মাথা নাড়ল, না।

তা হলে ওই চায়ের দোকানের সামনে একটু দাঁড়া।

অজিত দাঁড়াল। মাটিতে নেমে অর্জুন দেখল দোকানে হারাধন নেই। সে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, হারাধনের বাড়িটা কোথায়?

দোকানদার তাকাল। অর্জুন শুনতে পেল, আর একজন এল। দোকানদার মাথা নাড়ল, ওকে বাড়িতে পাবেন না। সকালেই শিলিগুড়ি চলে গিয়েছে। কখন ফিরবে জানি না।

আমার আগে ওকে কে খুঁজতে এসেছিল?

জানি না।

আপনি তো দেখেছেন।

ওর কোনও বন্ধু বোধ হয়। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করতে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। একটু পরেই দেখলাম হারাধন ওর সঙ্গে বাসে উঠে গেল। কী ব্যাপার বলুন তো?

অর্জুন মাথা নেড়ে আবার বাইকে উঠে বসল। বাইক চালু করে অজিত জিজ্ঞেস করল, এই হারাধনটা কে রে?

ট্রেনে ডাকাতি করেছিল।

যাচ্চলে। আজকেই তো ডাকাতি হয়েছে সেই দলে ও ছিল কিনা জানি না।

তুই এদের নিয়ে কারবার করিস, না?

কারবার বলা যায় কিনা বুঝতে পারছি না।

অর্জুন শুনল অজিত ভাবছে, অর্জুন কোনও অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ওর সঙ্গে থাকলে মন্দ হয় না! অর্জুন হাসল।

মণ্ডলপাড়া চলে এল। অর্জুন বলল, বাঁ দিকে চল।

একটাও প্রশ্ন না করে বাঁ দিকের রাস্তা ধরল অজিত। একেবারে বৈদ্যনাথের বাড়ির সামনে পৌঁছে অর্জুন ওকে থামাল। বিশ্বনাথদের বাড়ির দরজা বন্ধ। সেখানে শব্দ করতে ভেতর থেকে হেঁড়ে গলার চিৎকার ভেসে এল, কে?

আমি অর্জুন।

দরজা খুললেন বৈদ্যনাথ। সম্ভবত হেলমেট থাকায় তিনি প্রথমে চিনতে পারলেন না, কী চাই?

বিশ্বনাথ বাড়িতে আছে? হেলমেট খুলল অর্জুন।

ও। তুমি? তুমি আবার এসেছ? তোমার সাহস তো কম নয়।

আপনি কি ভয়ঙ্কর মানুষ যে, আসতে ভয় পাব? অর্জুন হাসল।

তোমরা আমার ছেলেকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়েছ। ওর জীবনটাকে নষ্ট করে দিতে চাইছ তোমরা। গলা তুলে চিৎকার শুরু করলেন বৈদ্যনাথ।

সামনের পথ দিয়ে যাঁরা যাচ্ছিলেন তাঁরা ওই চিৎকারে দাঁড়িয়ে গেলেন। ক্রমশ ভিড় বাড়তে লাগল। অজিত ডাকল, অর্জুন চলে আয়।

অর্জুন হাত তুলল, আপনি একটু থামবেন?

থামব? তুমি আমার ছেলেকে জেলে ঢোকাতে চাইছ বিনা দোষে, আর আমি চুপ করে থাকব। আগের দিন হলে তোমাকে আমি এই গ্রাম থেকে বেরোতে দিতাম না।

বেশ, আপনার আগের দিন এখন যখন নেই তখন দয়া করে বলুন বিশ্বনাথ বাড়িতে আছে কিনা, কারণ আজ সকালেও ট্রেনে ডাকাতি হয়েছে। ও বাড়িতে থাকলে বেঁচে যাবে।

এই সময় এক প্রৌঢ় এগিয়ে এসে বললেন, বলে দাও না বিশু বাড়িতে আছে কিনা? ট্রেনডাকাতির কথা আমিও শুনেছি।

ও একটু বেরিয়েছে। গম্ভীর মুখে বললেন বৈদ্যনাথ।

কখন বেরিয়েছে?

সকালে।

ঠিক সময়টা বলুন।

এই তো একটু আগে।

কোথায় গিয়েছে? শিলিগুড়িতে? আমি জানি না, আমাকে বলে যায়নি।

অনেক ধন্যবাদ। অর্জুন ফিরে গেল বাইকে। সঙ্গে সঙ্গে বাইক চালু করল অজিত। জনতা কোনও আপত্তি জানাল না তাদের পথ করে দিতে।

হাইওয়েতে ওঠার পর অজিত বলল, ভাগ্যিস লোকগুলো খেপে যায়নি। তা হলে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না।

ওরা খেপে যাবে কেন? ওই ভদ্রলোক সম্পর্কে গ্রামের কেউ ভাল ধারণী রাখেন না। উলটে সবাই একটু বিরক্ত।

কিন্তু কেসটা কী বল তো? এই ছোকরাও ট্রেনডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে নাকি?

হ্যাঁ।

তা হলে পুলিশ ওদের ধরছে না কেন? পুলিশ জানে?

ধরেছিল। কাল কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে।

জামিন পেয়েই আবার ডাকাতি করেছে।

সেটা এখনও জানি না।

ওরা শিলিগুড়িতে চলে এল। অর্জুন বলল, তুই আমাকে এয়ারভিউ হোটেলের সামনে নামিয়ে দে।

এখানে তোর কতক্ষণ লাগবে?

বলতে পারছি না।

তুই তো জলপাইগুড়ি ফিরে যাবি?

বাঃ, যাব না কেন?

গুরু, কোনও অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছিস নাকি?

না, না। স্রেফ বেড়াতে এলাম।

ঠিক আছে। আমি ঘণ্টাদুয়েক বাদে এখান দিয়ে ফিরব। তোর কাজ হয়ে গেলে অপেক্ষা করিস। অজিত চলে গেল।

অর্জুন বুঝল অজিত তাকে বিশ্বাস করেনি। সে বেড়াতে এসেছে বলা সত্ত্বেও বলল কাজ শেষ হয়ে গেলে অপেক্ষা করতে। সম্ভবত ওর ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গে থাকার। কিন্তু আদৌ কোনও অ্যাডভেঞ্চারের কথা যখন মাথায় নেই তখন ও বেচারাকে হতাশ করে লাভ কী! ও ওর কাজ করুক।

এয়ারভিউ হোটেলের পাশে একটা সুন্দর রেস্তরাঁ আছে। খিদে পেয়েছিল। অর্জুন সেখানে বসে মোগলাই পরোটা খেয়ে নিল। তারপর বাইরে আসতেই পেট্রল পাম্পের সামনে মারুতি স্ট্যান্ডটা নজরে পড়ল। তার মনে পড়ল এই স্ট্যান্ডেই নাকি মানাভাইকে পাওয়া যায়, বলেছিল হারাধন। সে ধীরেসুস্থে পার হতেই শুনতে পেল, আরে দাদা, আপনি?

অর্জুন দেখল, মাধব এগিয়ে আসছে। মালবাজারের ঠোঁটকাটা চাঁদুর বন্ধু মাধু। গতকালই ওর সঙ্গে জলপাইগুড়িতে দেখা হয়েছিল। অর্জুন হাসল, এই একটু কাজে এসেছিলাম। তুমি এখানে কী করছ?

এই স্ট্যান্ডেই তো আমি গাড়ি রাখি। কোথায় যাবেন বলুন?

কোনও বিশেষ জায়গায় যাওয়ার কথা নয় আমার। বলতে বলতে অর্জুনের খেয়াল হল। মাধুর কাছে মানভাইয়ের খবর পাওয়া যেতে পারে।

চলুন দাদা, আপনাকে চা খাওয়াই।

না, না। আমি এইমাত্র খেলাম। তুমি এখন কোথাকার প্যাসেঞ্জার তুলছ?

কোনও ঠিক নেই। পুরো ভাড়া পেলে প্যাসেঞ্জার যেখানে বলবে। তা না হলে কার্শিয়াং পর্যন্ত শাটুল খাটব। মাধব বলল।

আচ্ছা, এখানে মানাভাই বলে কেউ আসে?

মাধব চকিতে স্ট্যান্ডটা দেখে নিল, কী ব্যাপার দাদা?

নামটা শুনে তুমি যেন চমকে উঠলে?

না, মানে, মানাভাই খুব পাওয়ারফুল লোক। এই স্ট্যান্ড ওই কন্ট্রোল করে। ওকে কমিশন দিতে হয় আমাদের।

তারপর?

কোনও বড় প্যাসেঞ্জার তুললে মানাভাইকে রিপোর্ট দিতে হয়।

কীরকম?

স্টেশনে নিয়ে গেলে কোন ট্রেনে যাচ্ছে, কীরকম দামি জিনিস নিয়ে যাচ্ছে, তার একটা আন্দাজ করে বলতে হয়।

সেটা শুনে মানাভাই কী করে?

তা আমি জানি না দাদা। ওই যে আসছে। ওই মারুতিটায়।

অর্জুন দেখল একটা মারুতি ভ্যান বেশ জোরে ছুটে এসে কায়দা করে ওদের পেছনে পৌঁছেই সজোরে ব্রেক চাপল। চাকায় শব্দ হল। ড্রাইভারের পাশের আসন থেকে যে লোকটা নেমে দাঁড়াল তাকে দেখতে মোটেই শক্তিমান বলে মনে হয় না। রোগ, খাটো, পরনে সাফারি। একবার মাধবকে দেখে লোকটা পাম্পের অফিসে ঢুকে গেল।

এই সময় ওপাশ থেকে একজন চিৎকার করল, অ্যাই মাধু, কার্শিয়াং তুলবি? চারজন আছে।

মাধব হাত নাড়ল, পেছনে বসিয়ে দে। দাদা কার্শিয়াং যাবেন?

না। আচ্ছা, এই মানাভাই থাকে কোথায়?

জানি না। তবে আমি ওঁকে কয়েকদিন পাঙ্খবাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। মানাভাইকে কেউ প্রশ্ন করে না!

ও এত শক্তিশালী হল কী করে? ওর মাথার ওপর কেউ আছে?

তা জানি না। তবে পুলিশ ওকে খুব খাতির করে। মাধব বলল।

এই সময় মানাভাই বেরিয়ে এল। অর্জুন লোকটাকে দেখল। ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে বলল, এ মাধুভাই, কার্শিয়াং যাচ্ছ?

মাধব মাথা নাড়ল। এই প্যাকেটটা গুরুং-এর দোকানে দিয়ে দেবে।

ও যদি দোকানে না থাকে?

ওর বাপ থাকবে।

আচ্ছা।

ওপাশ থেকে লোকটা চেঁচাল, পাঁচজন হয়ে গেছে।

মাধব উত্তর দিল, আর একটা তোল।

মানাভাই জিজ্ঞেস করল, ইনি যাবেন না?

অর্জুন বাটপট বলল, এখনও ঠিক করিনি।

তার মানে? আপনি যাবেন কিনা ঠিক না করে স্ট্যান্ডে এসেছেন?

তা নয়। একবার ভাবছি যাব, আর একবার ভাবছি গিয়ে যদি কাজ না হয় তা হলে ভাড়াটাই পকেট থেকে যাবে। অর্জুন হাসল।

আমার তো মনে হয় না। মাধব এতক্ষণ ধরে আপনার সঙ্গে কথা বলছে যখন, তখন বোঝাই যাচ্ছে ও ভাড়া নেবে না। কী মাধব?

মাধব হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

ও না নিলে ওর ক্ষতি হবে। সেটা কি ঠিক? তা ছাড়া ফেরার সময় তো ভাড়া দিতে হবে। কাজকর্ম নেই, বেকার ছেলে, তাই ঝুঁকি নিতে ঠিক সাহস হচ্ছে না। অর্জুন নরম গলায় বলল।

কার্শিয়াং-এ কোথায় কাজ আপনার? আমাকে ওখানকার সবাই চেনে। আমাকে বললে আপনার উপকার হতে পারে। মানাভাই তাকাল।

অর্জুন দ্রুত নাম হাতড়াচ্ছিল। এর আগে কার্শিয়াং-এ সে গিয়েছে। সে বলল, ডাউহিল স্কুলে খাতাপত্র সাপ্লাই দেওয়ার জন্যে যাচ্ছিলাম।

ও। তাতে কি প্রফিট হবে আপনার?

ওঁরা যদি কাজটা দেন তা হলে কিছুটা উপকার হবে।

ঠিক আছে। ওখানে মিসেস তামাং আছেন। বলবেন আপনি আমাকে চেনেন। হয়তো কাজ হয়ে যাবে। কী নাম আপনার?

সে জবাব দেওয়ার আগে মাধব বলল, অর্জুন।

মানাভাই মাথা নাড়তেই ওপাশ থেকে লোকটা চেঁচাল, ছজন হয়ে গেছে। জলদি। কার্শিয়াং, কার্শিয়াং।

মাধব বলল, যাঃ। চলুন, একজন প্যাসেঞ্জারকে নেমে যেতে বলি।

মানাভাই মাথা নাড়ল, না। তা পারো না তুমি। স্ট্যান্ডের নিয়ম হল প্যাসেঞ্জারকে গাড়িতে তুললে নামানো যাবে না। তুমি চলে যাও, আমি অর্জুনকে পরের গাড়িতে তুলে দেব।

কথাগুলো শেষ হতেই টেলিফোন বেজে উঠল। মানাভাই পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিচু গলায় হেলোবলল। দু-তিনটে কথা বলেই লোকটা দ্রুত চলে গেল তার মারুতির দিকে। চোখের নিমেষে মারুতি হাওয়া হয়ে গেল।

মাধব হাসল, এরকম মাঝে মাঝে হয়।

কীরকম?

ওই যে দেখলেন না! কেউ মোবাইলে ডেকে পাঠালে মানাভাই এখানে এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না। আসুন। মাধব হাঁটা শুরু করল।

এই যে বললেন ডাউহিল স্কুলে যাবেন?

না। থাক। তা ছাড়া তোমার গাড়িতে জায়গা নেই।

আপনি আসুন না–!

গাড়ির কাছে গিয়ে মাধব একটি নেপালি ছেলেকে নেপালি ভাষায় বলল সে যদি পেছনে গিয়ে বসে তা হলে আর একজন প্যাসেঞ্জার নিতে পারে।

ছেলেটা প্রবলভাবে আপত্তি করল। অর্জুন বলল, মাধব, পরে আর একদিন হবে। এখন তুমি যাও। বলে আর না দাঁড়িয়ে সোজা হাঁটতে লাগল।

সেবক রোডে সে মারুতিটাকে দেখতে পেল। মানাভাইয়ের গাড়ি। একই নম্বর। গাড়িতে কেউ নেই। উলটোদিকের বাড়িগুলোর দিকে নজর বোলাতেই চায়ের অফিসের সাইনবোর্ড দেখতে পেল সে। অর্জুন একটু সরে একটা দোকানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মানাভাই তা হলে এই ডেরায় এসেছে। কী এমন জরুরি ফোন, যা ওকে এখানে নিয়ে এল?

মিনিট তিনেক বাদে চারজন যুবক বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এল। রাস্তায় নেমে দুপাশে দেখে ওরা চারজন দুভাগে দুদিকে হাঁটা শুরু করল। অর্জুন এগোল। যারা শহরের দিকে যাচ্ছিল তাদের পেছনে চলে এল সে। একজন বলল, আমি এখান থেকে রিকশা নিয়ে সিনক্লেয়ারের সামনে চলে যাচ্ছি। তুমি পাঁচ মিনিট পরে অটো নিয়ে চলে এসো। এই রিকশা। ছেলেটি একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে উঠে বসল। দ্বিতীয় ছেলেটি ঘড়ি দেখল। অর্জুন তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনতে পেল, ব্যাটাকে ঠিক মেরে ফেলবে। বেইমানির শাস্তি মৃত্যু।

অর্জুন গম্ভীর গলায় বলল, এটা পৃথিবীর সব দেশের মাফিয়াদের নিয়ম। বেইমানির শাস্তি মৃত্যু।

ভূত দেখার মতো চমকে উঠল ছেলেটা। তারপর মুখ ঘুরিয়ে পাঁই পাঁই করে ছুটতে লাগল শিলিগুড়ির ব্যস্ত রাস্তার পাশ ধরে। অর্জুনও দৌড়ল। এবং এই সময় যে চিৎকারে খুব কাজ হয় সেই চিৎকারটা করল সে, চোর, চোর, ধরুন ধরুন। দুপাশের লোকজন অবাক হয়ে এই দৌড় দেখছিল, চিৎকার কানে যাওয়ামাত্র ছেলেটি যাদের পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল তাদের দুজন ওকে জাপটে ধরল। ছাড়াবার জন্যে প্রাণপণে চেষ্টা করতে করতে ছেলেটি চেঁচাল, আমি চোর নই, ছাভুন, ছেড়ে দিন আমাকে।

ততক্ষণে অর্জুন পৌঁছে গেছে পাশে। ছেলেটির কবজি শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করল, তুমি চোর নও?

না।মাথা নাড়ল ছেলেটি।

তা হলে পালাচ্ছিলে কেন?

ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিন প্লিজ। সেইসঙ্গে অর্জুন শুনতে পেল, এই লোকটা আমার মনের কথা টের পেল কী করে। আমাকে পালাতেই হবে। নইলে ওরা ঠিক মেরে ফেলবে। ধরা পড়ে গেছি জানলে বিশ্বাস করবে না।

ভিড় জমছিল। সবাই চোর দেখতে চায়। অর্জুন বলল, শোনো, তোমাকে কেউ মারবে না। তুমি যদি আমার কথা শোনো তা হলে কোনও বিপদ হবে না।

অর্জুন হাত বাড়িয়ে একটা রিকশা থামিয়ে ছেলেটাকে একটু জোর করেই সঙ্গে তুলে নিল। জনতা সম্ভবত হতাশ হল হাতের সুখ না করতে পারার জন্যে।

রিকশা চলছিল, অর্জুন ছেলেটার কবজি শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করল, নাম কী?

ছেলেটা জবাব দিল না। অর্জুন বলল, মুখ বন্ধ করে থাকলে কোনও লাভ হবে না। তুমি এখন ভাবছ আমি পুলিশ কিনা, তাই তো?

আপনি কে?

আমি একজন সত্যসন্ধানী।

মানে?

ওটা তুমি বুঝবে না। তোমরা যেখান থেকে বের হলে সেখানে কি হারাধন আর বিশ্বনাথ ছিল? সত্যি কথা বলবে।

না।

ওরা কোথায়?

জানি না।

তুমি তখন কাকে মেরে ফেলার কথা ভাবছিলে? কে বেইমানি করেছে?

আমি আপনাকে কোনও কথা বলব না।

তুমি ভয় পাচ্ছ, ওরা তোমার ক্ষতি করবে? যা সত্যি তাই আমাকে মানতে হবেই।

বাঃ! খুব ভাল। আজ ভোরে জলপাইগুড়ি রোডে ট্রেন ডাকাতি করে যে জিনিসগুলো তোমরা পেয়েছ সেগুলো কোথায় রেখেছ?

আপনি, আপনি কী করে জানলেন?

সেটা তোমার না জানলেও চলবে। কত পেয়েছ আজকের কাজের জন্যে?

এখনও পাইনি। জিনিসগুলো বিক্রি হয়ে গেলে পাব।

তার মানে তুমি স্বীকার করছ–!

আপনি যখন সব খবর জানেন—?

তোমার নাম কী?

অসিত।

অসিত, এবার বলো হারাধন কোথায়?

সত্যি বলছি আমি জানি না।

মানাভাই কী বলল তোমাদের?

অসিত তাকাল। বোঝা যাচ্ছিল সে খুব অবাক হয়ে গেছে। হঠাৎ গলার স্বর বদলে গেল ওর, আপনি আমাকে পুলিশে দেবো না তো?

আপাতত না। অবশ্য তুমি যদি সহযোগিতা করো।

কী চান আপনি?

তোমাদের বস-এর কাছে যেতে চাই।

বসকে আমি কখনও দেখিনি।

কোথায় থাকেন তিনি?

তাও জানি না। যা কিছু খবর মানাভাই দেয়।

দ্যাখো অসিত, এখন পর্যন্ত তুমি সত্যি কথা বলছ বলেই মনে হচ্ছে। তোমার সঙ্গী সিনক্লেয়ার হোটেলের সামনে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে কেন?

প্রশ্নটা করেই অর্জুন শুনতে পেল, অনেক বলেছি, আর বলা উচিত হবে না।

অর্জুন বলল, অনেক যখন বলতে বাধ্য হয়েছ তখন–।

আপনি কি ভগবান? কথা থামিয়ে দিল অসিত।

সে কী?

না হলে আমি যা ভাবছি তা বুঝে ফেলছেন কী করে?

কেউ কেউ চিন্তা পড়তে পারে। শোনোনি?

বেশ। আমরা পাঙ্খাবাড়ি যাচ্ছি।

পাঙ্খাবাড়ির কোথায়?

জানি না, ওখানে গিয়ে গুরুংয়ের দোকানে দেখা করতে বলা হয়েছে।

তুমি কোথায় থাকো? প্রশ্নটা শুনে মুখ ফেরাল অসিত। অর্জুন বলল, চুপ করে থেকে কোনও লাভ নেই। তুমি তো জানো আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি।

ফাটাপুকুরে।

ঠিক আছে। তুমি গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করো। আমি এখানে নামব।

আপনি আমার ক্ষতি করবেন না তো?

ক্ষতি করতে চাইলে তো প্রথমেই পাবলিককে দিয়ে মার খাওয়াতাম। রিকশাওয়ালাকে থামতে বলে নেমে পড়ল অর্জুন।

রাস্তার একপাশে তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস। বেশ ভিড়। চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে। অর্জুন একটা এসটিডি বুথে ঢুকে পড়ল। একবারেই লাইন পেয়ে গেল সে, সুদর্শনই ফোন ধরলেন।

আরে! আপনি কোথায়?

শিলিগুড়িতে। মানাভাই-এর সন্ধান পেয়েছি।

বাঃ। কিন্তু শিলিগুড়ি তো আমার এলাকা নয়। এদিকে যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তার চারজনই মারা গেছে। যে এখনও আছে সে কতক্ষণ থাকবে বলা যাচ্ছে না।

আমি এখন বস-এর সন্ধানে যাচ্ছি। হারাধন এবং বিশ্বনাথকে পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত ওদের জীবন বিপন্ন। অর্জুন জানাল।

আপনি এক কাজ করুন। শিলিগুড়ির কোন জায়গায় রয়েছেন এখন?

তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস।

দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। শিলিগুড়ির ওসির সঙ্গে কথা বলছি। ওখানে থাপা আছে। খুব ভাল লোক। এসটিডি বুথের নাম কী?

বাইরে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করে নাম বলে দিল অর্জুন। বাইশ টাকা মিটারে উঠেছে। অর্জুন সেটা মিটিয়ে দিয়ে বলল, একটু বসতে পারি ভাই?

লোকটি বলল, বসুন।

চেয়ারে বসে রাস্তার দিকে তাকাল সে। লোকটা জিজ্ঞেস করল, কোথাও যাওয়ার থাকলে বলুন টিকিট আনিয়ে দিচ্ছি।

সে মাথা নাড়ল, না। কোথাও যাচ্ছি না। এই জায়গাটা সবসময় এমন জমজমাট থাকে? কত বাস যাচ্ছে আসছে!

সবসময়। সবরকম ধান্দা এখান থেকে হয়। আপনি কি আবার ফোন করবেন?

হ্যাঁ। দশ মিনিট পরে।

কিন্তু ন মিনিটের মাথায় পুলিশের জিপটা সামনে এসে দাঁড়াল। মিষ্টি চেহারার এক ভদ্রলোক জিপ থেকে লাফিয়ে নামলেন। তাঁর পরনে জিন্স আর হাওয়াই শার্ট। সোজা এসটিডি বুথে ঢুকে অর্জুনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, অর্জুন?

অর্জুন উঠে দাঁড়াল, মিস্টার থাপা?

ইয়েস। আমাকে কে খবর দিয়েছে বলুন তো?

সুদর্শনবাবু।

সঙ্গে সঙ্গে হাত মেলালেন ভদ্রলোক। ততক্ষণে পেছনের লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে, আসুন সার, আসুন সার। কোল্ড ড্রিঙ্ক না চা, কী বলব?

হাত নেড়ে না বলে থাপা অর্জুনকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। চারপাশে তাকিয়ে বললেন, জলপাইগুড়ির ওসি আমাকে রিকোয়েস্ট করেছেন আপনাকে সাহায্য করতে। আপনার কথা আমি আগেই শুনেছি, আলাপ করতে পেরে খুশি হলাম। এবার বলুন, কী ধরনের সাহায্য চাই।

আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন আজও ট্রেনে ডাকাতি হয়েছে এবং তিনজন যাত্রী ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। আমার অনুমান ভুল হতে পারে কিন্তু ভুল না হলে ওই দলের পাণ্ড এখন পাঙ্খাবাড়িতে আছেন। অর্জুন বলল।

পাঙ্খাবাড়ি? ওটা অবশ্য শিলিগুড়ি থানার মধ্যে পড়ে না, তবে আমার যেতে আপত্তি নেই। লেটুস গো।

যেতে যেতে প্রধান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সমস্ত ব্যাপার জেনে নিলেন। অর্জুন সব বলল, শুধু রুদ্রাক্ষের মালাপ্রসঙ্গ এড়িয়ে গেল। থাপা অবাক হয়ে বললেন, বাঃ। আপনি তা হলে থটরিডার, আমি কী ভাবছি তা বলতে পারবেন?

চেষ্টা করব। অর্জুন সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেল, ভারতবর্ষে এখনও জেমস বন্ড জন্মায়নি।

থাপা জিজ্ঞেস করল, বলুন তো, আমি কী ভাবলাম?

অর্জুন বলল, ভারতবর্ষের কথা ভাবছেন কেন? পৃথিবীতেই কোনও জেমস বন্ড জন্মাবে না। কারণ ওর জন্ম উপন্যাসের পাতায়।

প্রচণ্ড জোরে হাত চেপে ধরে থাপা চেঁচিয়ে উঠলেন, কী অদ্ভুত ব্যাপার। আপনি তো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।

পেছনে বসা সেপাইরা মজা পেয়ে গেল। তারাও অর্জুনকে পরীক্ষা করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দুজনকে সন্তুষ্ট করে অর্জুন অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল। জিপ শিলিগুড়ি থেকে বেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর দার্জিলিং-এর রাস্তা ছেড়ে বাঁ দিকে ঢুকে পড়েছিল। এবার আবার ডান দিকে বাঁক নিয়ে পাহাড়ের দিকে ছুটছে।

সবাই চুপ করে গেলে অর্জুন অসিতের কথা নিয়ে ভাবতে লাগল। ছেলেটা থাকে ফাটা করে। এই জায়গাটাও শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি যেতে পড়ে।

একটা অদ্ভুত ঘটনা হল, এখন পর্যন্ত এই দলের যে তিনজনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তারা থাকে শিলিগুড়ির বাইরে। অর্থাৎ এই দলের ছেলেগুলোকে ওরা শহরের বাইরে থেকে কি সংগ্রহ করে? কেন করে? এই ছেলেরা মফস্বলের বলে শহরের ছেলের মতো চালাকচতুর নয় বলে কি ওদের ধারণা? এবং অবশ্যই এরা বেকার, কাজকর্ম নেই, টাকার লোভ দেখানো অনেক বেশি সহজ।

মানাভাইয়ের কথা ভাবল সে। লোকটাকে ধরা সহজ। কিন্তু ওকে ধরে যে কিছুতেই পেট থেকে কথা বের করা যাবে না এব্যাপারে অর্জুন নিশ্চিত। ওর ওপর আস্থা না থাকলে ওকে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেওয়া হত না। অর্জুনের মনে পড়ল মানাভাই মারুতিভ্যানের ড্রাইভার মাধবকে একটা প্যাকেট দিয়েছে পাঙ্খাবাড়িতে পৌঁছে দিতে। সে উত্তেজিত হল। মাধবকে প্যাকেটটা গুরুং-এর দোকানে পৌঁছে দিতে বলেছিল মানাভাই। সেই গুরুং-এর দোকানেই যাচ্ছে অসিত। এই গুরুং লোকটা খুব জরুরি। মাধব যখন জিজ্ঞেস করেছিল গুরুং না থাকলে কী করবে, তখন মানাভাই জবাব দিয়েছিল, ওর বাপ থাকবে। কথাটার। দুটো মানে, এক, গুরুং তার দোকান ছেড়ে কোথাও যায় না। দুই, সে যখন কোথাও যায় তখন তার বাবা দোকান চালায়।

জিপ পাহাড়ে উঠছিল। পাঙ্খবাড়ির পথ অনেকটা খাড়াই। এই পথ আগে আরও খারাপ ছিল। কার্শিয়াং যাওয়ার মূল রাস্তা সুখনা দিয়ে। একটু ঘুরপথ বলে সময় লাগে। এখন পাঙ্খবাড়ির পথ অনেকটা ভাল। ভারী বাস বা লরির এই পথে যেতে অসুবিধে হয়। কিন্তু জি বা মারুতি সহজেই চলে যায় এবং কম সময়ে কার্শিয়াং পৌঁছয়। ফলে এই পথেগাড়ির সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গিয়েছে।

অর্জুন দেখল সোজা ওপরে উঠে আচমকা ডান দিকে বাঁক নিতে হল জিপটাকে। শক্ত করে কিছু ধরে না রাখলে মুশকিল। মিস্টার থাপা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি পাঙ্খাবাড়িতে আগে গিয়েছেন?

না। অর্জুন মাথা নাড়ল। তা হলে প্রথমে এখানকার পুলিশ স্টেশনে যাওয়া উচিত।

আমার মনে হয় সেটা না করাই ঠিক হবে।

কেন?

আমি এখনও জানি না ওদের চিফ পাঙ্খাবাড়িতে আছে কিনা। যদি থাকে এবং এটাই যদি ওর আস্তানা হয়, তা হলে লোক্যাল থানার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকাই স্বাভাবিক। সেটা না থাকলেও থানায় ওর বিশ্বস্ত কেউ থাকতে পারে, যে আমাদের আসার খবরটা ওকে পৌঁছে দেবে।

আপনি দেখছি খুব সতর্ক। মিস্টার থাপা বললেন।

অর্জুন হাসল, তা ছাড়া যদি চিফ এখানে না থাকে তা হলে থানায় বলে আমি হাসির খোরাক হয়ে যাব। আপনিও হয়তো সময় নষ্ট করার জন্যে বিরক্ত হবেন। কিন্তু আপনি তো নিজেই এসেছেন সাহায্য করতে।

হুম। তা হলে আমরা কোথায় যাচ্ছি? পাঙ্খাবাড়ি এসে গেল বলে!

অর্জুন একটু ভাবল। বাঁক ঘুরতে দূরে কিছু বাড়ি দেখা গেল পাহাড়ের গায়ে। অর্জুন বলল, জিপ থামাতে বলুন, আমরা দুজন এখানে নেমে পড়ি।

জিপ থামালেন মিস্টার থাপা, তারপর?

ওরা জিপ নিয়ে পাঙ্খাবাড়ি ছাড়িয়ে কিছুটা ওপরে উঠে দাঁড়াক। জিপ শিলিগুড়ির দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে এমন ভান করুক যে, এঞ্জিনে গোলমাল হয়েছে। ঠিক আধঘণ্টা বাদে আবার ওরা পাঙ্খাবাড়ির ভেতর দিয়ে নীচে নেমে এসে এখানে অপেক্ষা করবে। যদি আমাদের দেখা না পায় তা হলে আধঘণ্টা আরও অপেক্ষা করে পাঙ্খাবাড়িতে গিয়ে গুরুং-এর দোকানের খোঁজ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। ওদের বুঝিয়ে দিন। অর্জুন ধীরে ধীরে বলল।

মিস্টার থাপা তাঁর সেপাইদের কী করতে হবে বুঝিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি ছাড়তে বলে অর্জুনের সঙ্গে নীচে নেমে দাঁড়ালেন। একটু বাদে জিপ চোখের আড়ালে চলে গেলে মিস্টার থাপা জিজ্ঞেস করলেন, এখানে তো কোনও মানুষের বাড়ি নেই, এখানে নামলেন কেন?

একটা মিনিবাস আসছে, চলুন ওটায় উঠি।

বাসে?

হ্যাঁ। আপনাকে যদি কেউ পুলিশ বলে চিনতে না পারে তা হলে আমাদের যাত্রী ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না। আপনার সঙ্গে অস্ত্র আছে?

মিনিবাস আসছে বাগডোগরা থেকে। বেশ ভিড়। কোনওমতে দুজনে সিঁড়ির ওপর পা রাখতে পারল। যাত্রীরা সবাই পাহাড়ের মানুষ। পাঙ্খাবাড়িতে নেমে মাথা পিছু দুটাকা দিতে হল। মিস্টার থাপার আপত্তি সত্ত্বেও অর্জুনই দিয়ে দিল। পাঙ্খবাড়ির বাসস্ট্যান্ড আদৌ জমজমাট নয়। পাহাড়ি জায়গার বাসস্ট্যান্ডেই যা কিছু প্রাণচাঞ্চল্য থাকে। এখানে একটা চায়ের দোকান, একটা রেস্টুরেন্ট আর কিছু অন্যান্য দোকান নজরে পড়ল। এদের মধ্যে কোনটা গুরুং-এর দোকান? অর্জুন ঘড়ি দেখল। অসিত এবং তার বন্ধুর এখানে চলে আসার কথা। ওরা নিশ্চয়ই গুরুং-এর দোকানে পৌঁছে গেছে।

চা খাবেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

না। আমি চা খাই না।

সিগারেট?

হাত নাড়লেন ভদ্রলোক, আপনি খেলে খেতে পারেন।

আসলে স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চায়ের দোকানে ঢোকা দরকার। চলুন। ওরা দোকানটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

একটা চা। অর্জুন বলল।

একজন প্রৌঢ়া দোকান চালাচ্ছেন। গরম জলে কাপ ধুতে ধুতে জিজ্ঞেস করলেন, স্পেশ্যাল না অর্ডিনারি।

স্পেশ্যাল।

প্রৌঢ়া খুশি হলেন, এখানে কোথায় এসেছেন আপনারা?

কোথাও না। কার্শিয়াং যাচ্ছিলাম, জায়গাটা দেখে ভাল লাগল বলে নেমে পড়লাম। একটু ঘুরে আবার বাস ধরব।

চায়ের কাপ অর্জুনের হাতে তুলে দিয়ে প্রৌঢ়া নেপালি ভাষায় মিস্টার থাপাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনিও আগে এখানে আসেননি?

মিস্টার থাপা জবাব দিলেন, আমি তো এদিকে থাকি না।

ও। এখানে দেখার কিছুই নেই। থাকতে হয় বলে থাকি। মিস্টার থাপা জিজ্ঞেস করলেন, খুব ঠাণ্ডা পড়ে শীতকালে?

খুব মানে দার্জিলিংয়ের মতো নয়।

আমাকে এক বন্ধু বলেছিল পাঙ্খাবাড়িতে থাকার জায়গা পাওয়া খুব মুশকিল। কার যেন দোকান আছে তিনি ইচ্ছে করলে ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তাঁর নামটা মনে পড়ছে না! মিস্টার থাপা অভিনয় করলেন। কোন দোকান? এভারেস্ট স্টোর্স? প্রধানের দোকান?

না, না। পেটে আসছে, মনে আসছে না।

গুরুংয়ের দোকান?

হ্যাঁ, হ্যাঁ! গুরুং। এই নামটাই শুনেছিলাম।

গুরুং আর আগের মতো নেই। ওর হালচাল সব বদলে গেছে। আগে ও একটা ঘর ভাড়া দিত। তখন রোজগার ছিল না। এখন পাহাড়ের ওপাশে জমি কিনে বিরাট বাড়ি করেছে। পাঁচিল ঘেরা।

হঠাৎ বড়লোক হয়ে গেল?

ওর দাদা এল কাঠমাণ্ডু থেকে। অনেক টাকা নিয়ে এসেছে।

মিস্টার থাপা বলল, একেই বলে কপাল! গুরুং ভাইয়ের দোকানটা কোথায়?

একটু ওপরে উঠলেই বাঁ দিকে দেখতে পাবেন।

চায়ের দাম একটু বেশি। হাসিমুখে সেটা মিটিয়ে দিয়ে ওরা হাঁটা শুরু করল। মিস্টার থাপা বললেন, একটু রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু গুরুংকে কী বলবেন?

আগে গিয়ে দেখি কী অবস্থা, সেই বুঝে কথা বলা যাবে।অর্জুন বলল। বাঁক ঘুরতেই ডান দিকে একটা ডালভাতরুটির হোটেল আর বাঁ দিকে একটা বড় স্টেশনারি দোকান দেখতে পেল ওরা। দোকানের নাম, কাঞ্চনজঙ্ঘা।

মিস্টার থাপা বললেন, এরকম নির্জন জায়গায় এতবড় দোকান!

নিশ্চয়ই খদ্দের আছে।

একটা বুড়ো বসে আছে দোকানে।

উনি সম্ভবত গুরুংয়ের বাবা।

কী করে বুঝলেন?

চলুন না, জিজ্ঞেস করে দেখা যাক।

এখন এখানে ঠাণ্ডা নেই, তবু বৃদ্ধ সোয়েটার পরে বসে আছেন কাউন্টারের ওপারে। চকোলেট থেকে হরলিক্স, খাতাপত্র, প্রসাধনী জিনিসের বিপুল সম্ভার এখানে সাজানো। বৃদ্ধ রোগা। পিটপিটে চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী চাই?

আচ্ছা, এখানে মিস্টার গুরুংকে পাওয়া যাবে?

আমিই গুরুং।

ও। নমস্কার। আমরা আপনার সাহায্য চাই। কলকাতার একটা স্কুলের তিরিশটা বাচ্চা নিয়ে স্কাউটের দল এখানে আসবে। ওরা এই পাঙ্খাবাড়িতে সাতদিন থাকতে চায়। যা খরচ লাগে সব দেবে। আমরা তার ব্যবস্থা করতে এসেছি। বাসস্ট্যান্ডে খোঁজ করতে সবাই বলল আপনার দোকানে আসতে। আপনি এব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। অর্জুন বলল।

আমি কী করে সাহায্য করব।

কিছু না, ওই তিরিশজনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা যদি করে দেন। তিরিশজনের জন্যে দিনে তিন হাজার টাকার বাজেট আছে।

বৃদ্ধকে চিন্তিত দেখাল, সাতদিন?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

আপনি তো পাহাড়ের লেক, আপনিও এর সঙ্গে আছেন? প্রশ্নটা মিস্টার থাপার দিকে তাকিয়ে, অতএব তাঁকে জবাব দিতে হল, আমি শিলিগুড়িতে থাকি। ইনি আমার পরিচিত।

দেখুন, এখানে অত লোকের থাকার জায়গা নেই। তবে, আমার ছেলের সঙ্গে কথা বললে ও একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

বেশ তো। তিনি এখন কোথায়? মিস্টার থাপা জিজ্ঞেস করলেন।

ওই বেঞ্চিতে বসুন। তার আসার সময় হয়ে গিয়েছে।

দোকানের সামনে ফেলে রাখা বেঞ্চিতে বসল ওরা। অর্জুন লক্ষ করল বৃদ্ধ ওদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এই বুড়ো যেভাবে আমিই গুরুং বলেছিল তাতে অবাক হয়েছিল সে। ওর ধারণা ছিল গুরুং লোকটা মধ্যবয়সী। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ওরা দেখতে পেল মিস্টার থাপার জিপ ওপর থেকে নেমে আসছে। অর্জুনের ভয় হল অফিসারকে দেখে ড্রাইভার জিপ না থামিয়ে দেয়। সে মিস্টার থাপাকে বলল, আসুন, দোকানের ভেতরে যাই। খিদে পেয়েছে, বিস্কুট কিনব।

মিস্টার থাপা ইঙ্গিত বুঝতে পেরে চটপট দোকানের ভেতর ঢুকে পড়তেই জিপ পাশের রাস্তা দিয়ে নেমে গেল।

কী বিস্কুট নেবেন? বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন।

মেরি বিস্কুট।

বৃদ্ধ একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, ওই যে এসে গেছে।

ওরা দেখল বেশ স্মার্ট এক নেপালি ভদ্রলোক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। বৃদ্ধ প্রথমে তাঁর ভাষায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন। শোনার পর গুরুং জিজ্ঞেস করল, কলকাতার কোন স্কুল?

ক্যালকাটা ইউনাইটেড। ঝটপট নামটা বানাল অর্জুন।

কবে আসতে চায়?

সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে।

দেখুন ভাই, এখানে তো থাকার জায়গার খুব অভাব। আপনারা বলেছেন তিরিশটা বাচ্চা আসবে, সঙ্গে নিশ্চয়ই মাস্টাররাও কজন থাকবে?

হ্যাঁ, তা তো থাকবেই।

অসম্ভব।

আপনিও সমস্যাটাকে অসম্ভব বলছেন?

আমি কে? গুরুং হাসল, আপনারা কার্শিয়াং চলে যান, ওখানে অনেক জায়গা পেয়ে যাবেন।

না, ওরা কার্শিয়াং বা কোনও শহরে থাকতে চায় না।

আরে ভাই, এই পাহাড়ে কে আপনাকে দশ-বারোটা ঘর দেবে? তাঁবুতে থাকবে ওরা? আচমকা জিজ্ঞেস করল গুরুং।

কোনও সমস্যা নেই।

তা হলে আরও এক হাজার ডেইলি বেশি দেবেন।

কোথায় তাঁবু ফেলব?

ওই পাহাড়ের পেছনে আমার বাড়ি আছে। তার পাশে অনেকটা জায়গা প্লেন করে রেখেছি, ওখানে ফেলা যেতে পারে।

গুরুং কথাটা বলতেই ওর বাবা বললেন, জায়গাটা দেখিয়ে দাও না!

তুমি সব ব্যাপারে কথা বলবে না।

ও। এই সময় দুটো ছেলে এগিয়ে এল; মিস্টার গুরুং আছেন?

হ্যাঁ। আপনারা?

আমরা শিলিগুড়ি থেকে আসছি।

আমিই গুরুং। কে পাঠিয়েছে?

এম বি।

অর্জুনের খেয়াল হল, এই দুজনকে সেবক রোডে দেখেছে সে। অসিতদের সঙ্গে বেরিয়ে এরাই উলটোদিকে হেঁটে গেছে। অর্জুন গুরুংয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনতে পেল, ঝামেলা হয়ে গেল। এই দুটোকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে।

অর্জুন বলল, আপনি তো বাড়িতেই যাবেন, আমরা জায়গাটা দেখে আসি আপনার সঙ্গে গিয়ে।

গুরুং মাথা নাড়ল, তারপর ইশারায় ওদের অনুসরণ করতে বলে হাঁটতে লাগল। অর্জুন শুনল, মাত্র আটাশ হাজার, খুব বেশি হলে সাতদিনে চৌদ্দ হাজার থাকবে। বাবার জন্যে ফালতু ঝামেলা নিতে হবে।

অর্জুন বলল, শুরুং ভাই, এখানে টাকাটা বেশি কথা নয়। আপনি যে বাচ্চাদের সাহায্য করছেন এটা কজন করে বলুন!

অর্জুন শুনল, এ ব্যাটা আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে। কিন্তু ওর সঙ্গীটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি যেন!

গুরুং দাঁড়াল, আপনি কোথায় থাকেন ভাই?

অর্জুন বলল, গ্যাংটকে। আপনি নিশ্চয়ই গ্যাংটকে গিয়েছেন?

অর্জুন শুনল, গ্যাংটকের জুবিলি স্কুলে পড়ায় নাকি লোকটা?

গ্যাংটকে কয়েকবার গিয়েছি। গ্যাংটকের কোথায়?

মিস্টার থাপা কোনও কথা বলার আগেই অর্জুন বলল, উনি টিচার। গ্যাংটকের জুবিলি স্কুলে পড়ান।

গুরুংয়ের মুখে হাসি ফুটল, তাই বলুন। আপনাকে ওখানেই দেখেছি। খুব চেনা মনে হচ্ছিল। আমার ভাগ্নী ওই স্কুলে পড়ে।

মিস্টার থাপার গলা শুকনো শোনাল, কী নাম?

শ্রেয়া। নিচু ক্লাসে পড়ে।

পিচের রাস্তা ছেড়ে কাঁচা পথ ধরে ওরা অনেকটা চলে এসেছিল। এবার বাঁক ঘুরতেই বাড়িটা দেখতে পেল। অনেকটা জায়গা সমতল করে দোতলা বাড়ি বানানো হয়েছে। বাড়িটা বিশাল। লম্বা তারের বেড়ায় ঘেরা বাগানে ফুলের গাছ আছে। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি?

ঠিক আমার নয়, আবার আমারও বলতে পারেন।

বুঝলাম না!

বাড়িটা বানিয়েছেন আমার দাদা। উনি বিয়ে করেননি। তাই ওঁর পরে তো বাড়িটা আমিই পাব। হাত বাড়াল গুরুং, ওই যে ওপাশে জায়গাটা দেখছেন, ওখানে তাঁবু ফেলা যেতে পারে।

জলের ব্যবস্থা?

ওসব হয়ে যাবে। মিস্টার থাপা বললেন, সত্যি বাড়িটা সুন্দর। একবার ভেতরে গিয়ে দেখতে পারি? অবশ্য আপনার যদি কোনও আপত্তি না থাকে।

অর্জুন শুনল, ঝামেলা পাকাল। ঠিক আছে, বাগানে নিয়ে গিয়ে বের করে দেব। হাজার হোক শ্রেয়ার মাস্টার।

অর্জুন লক্ষ করছিল সেই ছেলে দুটো খানিকটা দূরত্ব রেখে ওদের অনুসরণ করছে। এম বি পাঠিয়েছে মানে কি মানাভাই পাঠিয়েছে? ওরা কি লোকটাকে এম বি বলে?

নীচে নেমে গেটের কাছে পৌঁছতেই একটি পাঞ্জাবি যুবক দৌড়ে এসে সেলাম করে তালা খুলে দিল। ছেলেটি স্বাস্থ্যবান।

বাড়ির সামনে বাগানে পৌঁছে গুরুং বলল, এই হল বাড়ি। এমন কিছু আহামরি নয়।

অর্জুন বলল, তা হলে তাঁবুর ব্যাপারটা পাকা।

এখনই বলতে পারছি না। সামনের মাসে আমার বাইরে যাওয়ার কথা আছে। যদি ক্যানসেল হয় তা হলে করে দেব।

কিন্তু সেটা জানব কী করে?

দোকানের ঠিকানায় চিঠি লিখবেন।

এই সময় মিস্টার থাপা বললেন, এক্সকিউজ মি, মিস্টার গুরুং। আমি আপনাদের টয়লেটটা ব্যবহার করতে পারি? স্টমাকে মনে হচ্ছে গোলমাল হয়েছে।

অর্জুন শুনল, সর্বনাশ! টয়লেটে যাওয়ার আর সময় পেল না।

সে বলল, এ কি বলছেন মিস্টার গুরুং! জন্মমৃত্যু এবং টয়লেট পাওয়া তো আগে থেকে জানান দিয়ে হয় না।

গুরুং এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াল যেন কেউ তাকে সপাটে চড় মেরেছে। তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। অর্জুন বলল, ওঁকে টয়লেটটা দেখিয়ে দিন।

আপনি। আপনি হঠাৎ একথা বললেন কেন?

আমার মনে হল আপনি এরকম ভাবতে পারেন।

গুরুং তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টিতে। অর্জুন শুনতে পেল, এই লোকটা থেকে দূরে থাকতে হবে। খুব সাঙ্ঘাতিক লোক। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে মিস্টার থাপাকে বলল, আসুন আমার সঙ্গে। আর তোমরা ওই গাড়িতে গিয়ে উঠে বসো।

বাগানের আর-এক প্রান্তে দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সামনে দুজন ড্রাইভার। মিস্টার থাপাকে নিয়ে গুরুং বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলে ছেলে দুটো এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। ড্রাইভার ওদের মারুতি ভ্যানে উঠতে বলল।

অর্জুন ভেবে পাচ্ছিল না কীভাবে বাড়ির দোতলায় উঠবে। ছেলে দুটোকে যখন গাড়িতে উঠতে বলা হল তখন নিশ্চয়ই কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। তা হলে হারাধনদের কি এ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়নি? অসিত এবং তার সঙ্গী কোথায় গেল? এদের চিফ যদি দোতলায় থাকে তা হলে সেখানেই কি ওরা রয়েছে। সেই শক্তিমান লোকটি এখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ওপরে যেতে গেলে ও নিশ্চয়ই বাধা দেবে এবং তাতে কাজের কাজ হবে না। লোকটার কাছাকাছি গিয়ে কান পাতল অর্জুন কিন্তু কিছুই শুনতে পেল না। আশ্চর্য! লোকটা কি কিছুই ভাবছে না?

মিস্টার থাপাকে নিয়ে গুরুং ফিরে এল একটু বাদে, আচ্ছা!

অর্জুন শুনতে পেল, বিদায় হও।

তা হলে আপনি কথা দিচ্ছেন না?

মাথা নাড়ল গুরুং। অর্জুন শুনল, এখানে একে আনাই ভুল হয়েছে। একটু পরেই বস্ বের হবে। এদের এখান থেকে না কাটালে–!

গুরুং হাত নাড়ল, বাই।

অর্জুন মিস্টার থাপাকে বলল, চলুন, অন্য কোথাও খোঁজ করি।

ওরা গেট পেরিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে ওপরে চলে এল। বাড়িটা এখন নীচে। অর্জুন চারপাশে তাকিয়ে একটা ঝোপ দেখতে পেল। সে পা চালাল। চটপট চলে আসুন, লুকোতে হবে।

মিস্টার থাপা একটুও দ্বিধা করলেন না। ঝোপের আড়ালে চলে গিয়ে বললেন, জানি না, কেউ আমাদের লক্ষ করল কি না।

নীচের ওরা করেনি, ওপর থেকে কেউ করলে ওরা জানতে পারবে না। ভেতরটা কীরকম দেখলেন?

কিছুই চোখে পড়েনি। তবে এত কস্টলি টয়লেট বোধ হয় ফাইভস্টার হোটেলেই থাকে। এরকম জায়গায় ভাবা যায় না। আপনার যদি মনে হয় এই বাড়িতে লিডার লুকিয়ে আছে তা হলে আমরা সার্চ করতে পারি।

আমি তো নিশ্চিত নই।

কিন্তু এই গুরুং লোকটা হঠাৎ যেন বদলে গেল। মিস্টার থাপার কথা শেষ হওয়ামাত্র একটা লোক বাইরে বেরিয়ে ইশারা করা মাত্র ভ্যানের পাশে দাঁড়ানো মারুতি জেনটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল সিঁড়ির সামনে। তারপরই সেই শক্তিমান লোকটা পেছনের দরজা খুলে একপাশে দাঁড়িয়ে গেল। এখান থেকে বারান্দাটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু বাইনোকুলারের অভাব টের পাচ্ছিল অর্জুন।

এই সময় চারজন লোক বেরিয়ে এল ব্যস্ত পায়ে? এদের মধ্যে গুরুংও আছে। ওদের পেছন পেছন যে মানুষটা বেরিয়ে এল তার উচ্চতা বড়জোর সাড়ে চার ফুট। মাথাটা বিশাল বড়। পরনে গ্যালিস দেওয়া প্যান্ট শার্ট। গরমজামা পরেনি। লোকটা সোজা গাড়ির মধ্যে ঢুকে যাওয়া মাত্র ওরা দরজা বন্ধ করে ভ্যানের দিকে ছুটল। শুধু গুরুং গিয়ে জেনের সামনের সিটে বসে দরজা বন্ধ করল।

অর্জুন বলল, তাড়াতাড়ি চলুন। বড় রাস্তায় পৌঁছতে হবে।

মিস্টার থাপা বললেন, সেটা সম্ভব করতে পারলে চাকরি ছেড়ে দিতাম। ওরা গাড়িতে চেপে এখানে আসার আগে বড় রাস্তায় পৌঁছলে বিশ্বরেকর্ড হয়ে যাবে দৌড়নোর।

কথাটায় যুক্তি আছে। তা ছাড়া গুরুং মিস্টার থাপাকে চিনতে পারেনি বটে কিন্তু ওই বেঁটে লোকটা তো চিনতে পারে। গাড়ি দুটো তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। ঝোপের মধ্যে বসেই ওরা দেখল গাড়ি দুটো ওদের পেছন দিয়ে ওপরে উঠে গেল।

মিস্টার থাপা ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ওরা কোথায় গেল এইটেই জানা গেল না।

ওরা তো আমাদের ঠিকানাটা বলত না!

এই যে ছেলে দুটো এল, ওরাও কি ডাকাতি করে?

সেটাই স্বাভাবিক।

বড় রাস্তায় পৌঁছতেই ভ্যানটা আচমকা থেমে গেল পাশে, এ কী! দাদা, আপনি?

আরে! তোমার এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল?

তাড়াতাড়ি? এর মধ্যে ঘণ্টা চারেক চলে গেছে জানেন?

মাধব কার্শিয়াং থেকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে ফিরছে। ভ্যান ভর্তি। মাধব, তুমি একটু নেমে আসতে পারবে?

নিশ্চয়ই। গাড়ি একপাশে করে প্যাসেঞ্জারদের কিছু বুঝিয়ে সে চলে এল অর্জুনের কাছে। নিচু গলায় বলল, বড়বাবুকে নিয়ে এখানে?

চিনতে পেরেছ?

চিনব না? আমার কথা একটু বলে দেবেন যাতে কেস না নেয়?

বলে দেব। কিন্তু তোমার কাছে একটা উপকার চাই।

আদেশ করুন।

তুমি আজ গুরুং-এর দোকানে একটা প্যাকেট পৌঁছে দিয়েছ মনে আছে? মানাভাই তোমাকে দিয়েছিল।

আর বলবেন না দাদা। শিলিগুড়ি থেকে ওঠার সময় পেছনে বসা একটা প্যাসেঞ্জার এমন ঝামেলা করছিল যে, যাওয়ার সময় ওই প্যাকেটটা দিতে একদম ভুলে গিয়েছি। এখন দেব।

প্যাকেটটা দেখতে পারি?

মাধব গাড়ির দিকে ছুটে গেল। ফিরে এল একটা বড় খাম হাতে। অর্জুন বলল, মানাভাই বলেছিল প্যাকেট, এটা তো খাম।

এটাই দিয়েছিল দাদা।

অর্জুন ঝটপট খাম খুলে ফেলল। গোটা পাঁচেক কাগজ। ইংরেজিতে ছাপা কোনও কিছুর জেরক্স। পড়ে বিষয় জানার সময় হাতে নেই, দ্রুত পাতা উলটে গেল সে। পেছনের পাতার কোণে লেখা, টু থার্টি পি এম, সিংলা বাংলো।

এই কথাটার মানে কী? সে মাধবকে জিজ্ঞেস করল, সিংলা বাংলো বলে কোনও বাড়ি কি এখানে আছে?

না দাদা, আমি জানি না।

দোকানে গুরুংয়ের বাবা আছেন। ওকে যখন এই খামটা দিতে যাবে তখন জিজ্ঞেস করবে সিংলা কোথায়?

ঠিক আছে। কিন্তু খামটা তো ছিঁড়ে ফেলেছ?

বলবে ছিঁড়ে গিয়েছে।

মাথা নেড়ে চলে গেল মাধব তার গাড়ি নিয়ে।

মিস্টার থাপা বললেন, খবরটা দিতে ওকে আবার ফিরে আসতে হবে। তার চেয়ে চলুন এগিয়ে যাই।

ওরা হাঁটছিল। একটু এগোতেই মিস্টার থাপার ভ্যানটাকে দেখতে পাওয়া গেল। ওপর থেকে ধীরে ধীরে নামছে। অর্জুন বলল, উঠে পড়ুন। রাস্তায় মাধবকে ধরে নেব।