ভার্য্যাসহ গেল নল অরণ্য ভিতর।
দূতমুখে বার্ত্তা পায় ভীম নৃপবর।।
শুনিয়া শোকার্ত্ত বড় ভীম নরপতি।
সহস্র সহস্র দ্বিজ আনি শীঘ্রগতি।।
দ্বিজগণ প্রতি রাজা বলিল বচন।
নল দময়ন্তী দোঁহে কর অন্বেষণ।।
অন্বেষণ করিয়া কহিবে বার্ত্তা আসি।
সহস্র সহস্র গবী দিব রত্নে ভূষি।।
গ্রাম দেশ ভূমি দিব, নানা রত্ন ধন।
দুই জন মধ্যে যে দেখিবে এক জন।।
এত বলি দ্বিজগণে মেলানি করিল।
সেইক্ষণে দ্বিজগণ চতুর্দ্দিকে গেল।।
সুদেব নামেতে দ্বিজ ভ্রমে নানাদেশ।
সুবাহু রাজার পুরে করিল প্রবেশ।।
দৈবাৎ ভৈমীরে তথা কৈল দরশন।
সুনন্দা সহিত সতী করেন গমন।।
চন্দ্রানন বিশালক্ষী দীর্ঘ মুক্তকেশা।
চারু পীনপয়োধরা সুনাসা সুবেশা।।
পদ্ম যেন বিদলিত হস্তীদন্তাঘাতে।
চন্দ্র যেন বিদলিত রাহুগ্রহ দাঁতে।।
ক্ষিতিমধ্যে নাহিক ইহার রূপসীমা।
এই যে সৈরিন্ধ্রী হবে বিদর্ভ চন্দ্রিমা।।
স্বামীর বিচ্ছেদে কৃশা বিবর্ণ বদনী।
ভৈমী পাশে দিয়া শেষে বলে দ্বিজমণি।।
মোর বাক্যে বরাননে কর অবধান।
সুদেব ব্রাহ্মণ আমি ভ্রাতৃসখা জান।।
তোমারে চাহিয়া ভ্রমি দেশ দেশান্তর।
চারিদিকে গিয়াছেন দ্বিজ বহুতর।।
কন্যা পুত্র দুই তব আছে শুভ তরে।
তব শোকে পিতা মাতা প্রাণ মাত্র ধরে।।
এত শুনি দময়ন্তী করেন রোদন।
শুনিয়া আইল অন্তঃপুর-নারীগণ।।
ব্রাহ্মণের বাক্য শুনি সৈরিন্ধ্রী কান্দিল।
বার্ত্তা পেয়ে রাজমাতা বিপ্রে জিজ্ঞাসিল।।
কাহার তনয়া এই, কাহার গৃহিণী।
কি কারণে স্থানভ্রষ্টা হৈল এ ভামিনী।।
যদি তুমি জানহ, জানাও দ্বিজবর।
শুনিয়া সুদেব তাঁরে করিল উত্তর।।
বিদর্ভ ঈশ্বর ভীম, তাঁহার দুহিতা।
পুণ্যশ্লোক নলরাজা তাহাঁর বনিতা।।
নিজভর্ত্তা রাজ্য দেশ পাশায় হারিল।
অরণ্যে পশিল গিয়া, কেহ না দেখিল।।
এই হেতু সহস্র সহ্র দ্বিজগণ।
দেশ দেশান্তরে গিয়া করে পর্য্যটন।।
মম ভাগ্যে তব গৃহে পাই দেখিবারে।
ভ্রূমধ্যেতে তিল দেখি চিনিনু ইহারে।।
বিশেষতঃ ক্ষিতিমধ্যে নাহিক উপমা।
মুনিগণ বলে, দোঁহে কান্ত কান্তা সমা।।
নল দময়ন্তী মহাভারতোপাখ্যান।
জীবাদ্ধার হেতু ব্যাসদেবের রচন।।