তবে নল নরপতি দশম দিবসে।
অযোধ্যায় প্রবেশিল বহু পথক্লেশে।।
রাজার দুয়ারে গিয়া বলে নরপতি।
মম তুল্য কেহ নাহি অশ্ব শিক্ষাকৃতী।।
বাহুক আমার নাম শুন নরপতি।
নিষধ রাজার আমি ছিলাম সারথি।।
আর এক মহাবিদ্যা জানি যে রাজন।
বিনা অনলেতে পারি করিতে রন্ধন।।
এত শুনি কহে রাজা করিয়া আশ্বাস।
যথোচিত বৃত্তি দিব, রহ মম পাশ।।
যত অশ্বপালোপরে হবে তুমি পতি।
যা বাঞ্ছিবে তাহা দিব, থাকিবে সংহতি।।
এত শুনি নল রাজা রহিল তথায়।
দিবস রজনী রাজা নিদ্রা নাহি যায়।।
অন্ন জল নাহি রুচে পত্নীরে ভাবিয়া।
সদা ভাবে দময়ন্তী কোথা গেল প্রিয়া।।
গভীর কাননে তোমা ছাড়িয়া আইনু।
তোমারে ছাড়িয়া হায় কি কাজ করিনু।।
না জানি সে কি করিল আমার বিহনে।
নিরাহারে নিরাশ্রয়ে আছে কোন স্থানে।।
কতেক কান্দিল প্রিয়া মোরে না দেখিয়া।
কি কুকর্ম্মা করিলাম নিষ্ঠুর হইয়া।।
ভয়ঙ্কর সিংহ ব্যাঘ্র নির্জ্জন কাননে।
একাকিনী বনে নারী বঞ্চিবে কেমনে।।
পতিব্রতা অনুরক্তা আমাতে সতত।
হেন স্ত্রী ছাড়িয়া আমি বাঁচি মৃতবত।।
বনপর্ব্বে নলাখ্যান যেই জন শুনে।
অশেষ দুঃখেতে পার হয় যেই জনে।।
পাপকর্ম্মে তার মন কভু নাহি যায়।
মদ দম্ভ রাগ দ্বেষ তাহারে না পায়।।
ব্যাসের বচন, ইথে নাহিক সংশয়।
পাঁচালী প্রবন্ধে কাশীরাম দাস কয়।।