হেথা ভৈমী ছাড়ি, পরি অর্দ্ধ শাড়ী,
চলিল নৃপতি নল।
বায়ুবেগে ধায়, পাছু নাহি চায়,
অঙ্গে বহে শ্রমজল।।
দেখে হেনকালে, দাবানল জ্বলে,
যেন ডাকে আর্ত্তস্বরে।
বলয়ে পুণ্যাত্মা নল, পোড়ায় মোরে অনল,
রক্ষা করহ আমারে।।
শুনি নৃপবরে, কহে উচ্চস্বরে,
স্মরণ কে করে মোরে।
শুনি ফণিপতি, কহে নল প্রতি,
নিবেদি দুঃখ তোমারে।।
আমি নাগরাজ, অনন্ত অনুজ,
কর্কোট নামে ভুজঙ্গ।
নারদের শাপে, সদ্য পুড়ি তাপে,
অচল হইল অঙ্গ।।
নিষ্পাপ যে তুমি, তোমা স্পর্শে আমি,
মুক্ত হৈব শাপ হৈতে।
বিলম্ব না কর, সত্বর উদ্ধার,
পুড়িয়া মরি অগ্নিতে।।
পর্ব্বত আকার, শরীর আমার,
দেখি না করিও ভয়।
পরশিতে তুমি, ক্ষুদ্র হইব আমি,
না হবে শ্রম তায়।।
শুনি নরপতি, দয়ামত অতি,
আনিল অনল হৈতে।
পাইয়া অভয়, নাগরাজ কয়,
সখ্য হৈল তব সাথে।।
কর এক কাজ, শুন মহারাজ,
কোলে করি মোরে লহ।
বিপুল শবদে, গণি পদে পদে,
কত দূরে লয়ে যাহ।।
তার বাক্য শুনি, পদে পদে গণি,
দশ চরণ চলিল।
দশ ডাক শুনি, দংশিলেক ফণি,
ছাড়িয়া অন্তর হৈল।।
নল বলে ভাল, সখ্য ধর্ম্ম রৈল,
সখারে দংশন কর।
নাহি দোষ তব, জাতির স্বভাব,
উপকারী জনে মার।।
বলে নাগপতি, না ভাব দুর্গতি,
করিয়াছি উপকার।
কুৎসিত মূরতি, হৈলে নরপতি,
অঙ্গ দেখ আপনার।।
দুঃখের সময়, কভু ভাল লয়,
ভূপতি লক্ষণ রূপ।
কেহ না লক্ষিবে, যথায় যাইবে,
সে হেতু হৈল বিরূপ।।
যবে ইচ্ছা মনে, আমার স্মরণে,
আপন রূপ পাইবে।
না চিন্ত রাজন, তুমি পুণ্য জন,
পুনঃ রাজ্যেশ্বর হবে।।
কলি বাম হৈল, এ দশা সে কৈল,
দ্বাপর তার সহায়।
মোর এই বিষে, কলি অহর্ণিশে,
জ্বলিবে জেনহ রায়।।
আমার বচন, শুনহ রাজন,
অযোধ্যায় ত্বরা রায়।।
আমার বচন, শুনহ রাজন,
অযোধ্যায় ত্বরা যাও।
রাজা ঋতুপর্ণ, পালে চতুর্ব্বর্ণ,
সারথি তাঁহার হও।।
বৈদর্ভী রূপসী, তোমার প্রেয়সী,
আরো তনয় তনয়া।
কুশলে ভেটিবে, পুনঃ রাজা হবে,
নিষধ রাজ্যেতে গিয়া।।
এতেক কহিয়া, বস্ত্র এক দিয়া,
অন্তর্ধান হয়ে গেল।
নাগের বচন, শুনিয়া রাজন,
অযোধ্যাপুরী চলিল।।
ভারত কমল, শ্রবণ মঙ্গল,
সাধুজন করে আশ।
কৃষ্ণদাসানুজ, কৃষ্ণপদাম্বুজ,
বন্দি কহে কাশীদাস।।