কতক্ষণে দময়ন্তী নিদ্রা অবশেষে।
সজাগ হইয়া দেখে, স্বামী নাহি পাশে।।
মূর্চ্ছিত হইয়া ভৈমী ভূমিতলে পড়ি।
ধূলায় ধূসর হয়ে যায় গড়াগড়ি।।
উঠিয়া সঘনে চতুর্দ্দিকে ধায় রড়ে।
নাথ নাথ বলি উচ্চৈঃস্বরে ডাক ছাড়ে।।
অনাথা ডাকয়ে কেন না দেহ উত্তর।
কোন দিক গেলে প্রভু নিষধ ঈশ্বর।।
কোন দোষে দোষী আমি নহি তপ পায়।
তবে কেন আমারে ত্যজিলা মহাশয়।।
ধার্ম্মিক বলিয়া তোমা কহে সর্ব্বলোকে।
তবে কেন নিদ্রিতা ছাড়িয়া গেলে মোকে।।
লোকপাল মধ্যে পূর্ব্বে সত্য কৈলে প্রভু।
শরীর থাকিতে আমা না ছাড়িবে কভু।।
সত্যবাদী হয়ে সত্য ছাড় কি কারণ।
লুক্কায়িত আছ কোথা, দেহ দরশন।।
দুঃখ সিন্ধু মধ্যে প্রভু কেন দেহ দুখ।
অতি শীঘ্র এস নাথ, দেখি তব মুখ।।
ক্ষুধার্ত্ত ফলের হেতু গিয়াছ কি বনে।
তৃষ্ণার্ত্ত হইয়া কিবা গেলে জলপানে।।
এত বলি বনে বনে ভৈমী পর্য্যাটিয়া।
ক্ষণে উঠে, ক্ষণে বসে, ক্ষণে যায় ধাইয়া।।
সিংহ ব্যাঘ্র মহিষ শূকর যতি ছিল।
লক্ষ লক্ষ চতুর্দ্দিকে তাহারা বেড়িল।।
স্বামী অন্বেষিয়া ভৈমী করে বনভ্রম।
অকস্মাৎ সম্মুখেতে দেখে ভুজঙ্ঘম।।
বিকট দর্শন আর বিকট গর্জ্জন।
ভৈমীরে দেখিয়া অহি বিস্তারে বদন।।
বিপরীত মূর্ত্তি অহি দেখিয়া নিকটে।
হা নাথ বলিয়া ডাকে পড়িয়া সঙ্কটে।।
আর না দেখিব প্রভু তোমার বদন।
নিশ্চয় হইনু অজগরের ভক্ষণ।।
উচ্চৈঃস্বরে কান্দে দেবী বলিয়া হা নাথ।
দূরেতে থাকিয়া তাহা শুনে এক ব্যাধ।।
শীঘ্রগতি আসি ব্যাধ দেখি অজগর।
দুইখান করিল মারিয়া তীক্ষ্ণ শর।।
সর্প মারি মৃগজীবী কহে বৈদর্ভীরে।
কে তুমি একাকী ভ্রম এ কানন ঘোরে।।
সকল বৃত্তান্ত তারে বৈদর্ভী কহিল।
বৈদর্ভীর রূপে ব্যাধ আকুল হইল।।
সম্পূর্ণ চন্দ্রমামুখ পীন পয়োধর।
বচন অমৃতে ব্যাধে বিন্ধে স্মরশর।।
কামাতুর হয়ে যায় ভৈমী ধরিবারে।
ব্যাধেরে দেখিয়া ভৈমী কহিছে অন্তরে।।
সত্যশীল নল রাজা যদি মোর পতি।
নল বিনা অন্যে যদ নাহি থাকে মতি।।
এ পাপিষ্ঠ পরশিতে না পারে আমায়।
এখনি হইক অস্মরাশি দুরাশয়।।
এতেক বলিতে ব্যাধ ভস্ম হয়ে গেল।
স্বামীর উদ্দেশে সতী বৈদর্ভী চলিল।।