চতুশ্চত্বারিংশ অধ্যায়
পরীক্ষিতের প্রাণবিয়োগ
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, মন্ত্রিগণ রাজাকে তক্ষকের শরীর দ্বারা বেষ্টিত দেখিয়া বিষণ্ণ বদনে ও দুঃখিতমনে রোদন করিতে লাগিলেন; তদনন্তর তক্ষকের সেই ভীষণ গর্জ্জন শ্রবণে ভীত হইয়া সে স্থান হইতে পলায়ন করিলেন। তাঁহারা পলায়নকালে গগনমণ্ডলে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন, ভুজঙ্গরাজ তক্ষক দীপ্তাগ্নি শিখা-সদৃশ স্বীয় শরীর দ্বারা নভোমণ্ডল দ্বিখণ্ডিত করিয়া অতিবেগে গমন করিতেছেন। পরিশেষে সেই একস্তম্ভ গৃহ তক্ষকের বিষাগ্নি দ্বারা প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। মন্ত্রিবর্গ তদ্দর্শনে শঙ্কাকুলিতচিত্তে ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিলেন এবং রাজাও বজ্রাহতের ন্যায় ভূপৃষ্ঠে পতিত ও মূর্চ্ছিত হইলেন। রাজা পরীক্ষিৎ এইরূপে তক্ষকদংশনে প্রাণত্যাগ করিলে তদীয় মন্ত্রিগণ ও রাজপুরোহিতগণ সমবেত হইয়া তাঁহার পারত্রিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করিলেন। পরে পুরবাসী সমস্ত প্রজাগণকে একত্র করিয়া তাঁহার শিশুপুৎত্রকে পিতৃরাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। ঐ অমিত্রঘাতী কুরুপ্রবীর নৃপাত্মজের নাম জনমেজয়। কুরুবংশাবতংস মহামতি জনমেজয় শিশু হইয়াও মন্ত্রিগণ ও পুরোহিতগণের সহিত মন্ত্রণা করিয়া আপন প্রপিতামহ ধর্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠিরের ন্যায় সুচারুরূপে রাজ্যশাসন করিতে লাগিলেন। অনন্তর মন্ত্রিগণ ঐ নবীন রাজার রাজকার্য্য-সম্পাদনে বিলক্ষণ নিপুণতা জন্মিয়াছে দেখিয়া তাঁহার পরিণয়ার্থে কাশীপতি সুবর্ণবর্ম্মার নিকটে গিয়া তদীয় কন্যা বপুষ্টমাকে প্রার্থনা করিলেন। কাশীশ্বর সেই কুরুপ্রবীরকে বেদবিধানানুসারে বপুষ্টমা প্রদান করিলেন। রাজা জনমেজয় ঐ লোকললামভূত[অসামান্য রূপবতী] নিতম্বিনীকে [সুলক্ষণাস নারী] পাইয়া পরম পরিতোষ প্রাপ্ত হইলেন। তিনি কদাচ অন্য রমণীর প্রতি কটাক্ষপাতও করিতেন না। পূর্ব্বকালে পার্থিবাগ্রণী [নৃপশ্রেষ্ঠ] পুরুরবা যেমন ঊর্ব্বশীকে পাইয়া তাঁহার সহিত বিহার করিয়াছিলেন, তদ্রূপ ইনিও সেই মনোহারিণী বরবর্ণিনী[উত্তমা নারী]কে পাইয়া কদাচিৎ সুরম্য সরোবরে, কদাচিৎ বিচিত্র উপবনে, তাঁহার সহিত বিহার করিয়া পরমসুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন। রূপলাবণ্যবতী পতিব্রতা বপুষ্টমাও বিহারকাল সাতিশয় প্রেম প্রদর্শন দ্বারা প্রিয় পতিকে যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট করিলেন।