৪৪তম অধ্যায়
অর্জ্জুনের গান্ধর্ব্ব গীত-নৃত্য শিক্ষা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, দেবতারা ইন্দ্ৰকর্ত্তৃক অনুজ্ঞাত হইয়া উত্তম অর্ঘ্য গ্রহণপূর্ব্বক অর্জ্জুনের অৰ্চনা করিলেন এবং পাদ্য ও আচমনীয় প্রদান করিয়া পুরন্দরগৃহে প্রবেশ করাইলেন। বীরবর পার্থ এইরূপে সম্পুজিত হইয়া মহাস্ত্রসমূহের প্রয়োগ ও সংহার শিক্ষা করিয়া পিতৃগৃহে বাস করিতে লাগিলেন। তিনি ইন্দ্রের নিকট বজ্র ও অশনি প্রভৃতি অন্ত্রশস্ত্ৰ-সকল প্রাপ্ত হইয়া ভ্রাতৃবর্গকে স্মরণপূর্ব্বক ইন্দ্রের নিয়োগানুসারে সুখে তথায় পঞ্চবর্ষ অতিবাহিত করিলেন। অনন্তর দেবরাজ ইন্দ্ৰ অর্জ্জুনকে কৃতান্ত্র জানিয়া একদা তাহাকে কহিলেন, “হে কৌন্তেয়! তুমি চিত্ৰসেনের নিকট নিখিল নৃত্য, গীত ও নরলোকপ্রসিদ্ধ বাদ্য-সকল শিক্ষা কর; অবশ্যই তোমার শ্রেয়োলাভ হইবে।” দেবরাজ এই কথা বলিয়া চিত্ৰসেন গন্ধর্ব্বের সহিত পার্থের সখ্যবিধান করিয়া দিলে, তিনি তখন অভিনব সখা চিত্ৰসেন-সমভিব্যাহারে নিরাময়ে কালব্যাপন করিতে লাগিলেন। সুররাজ ইন্দ্র ভূয়োভুয়ঃ তাহাকে নৃত্য, গীত ও বাদ্য-শিক্ষায় আদেশ করিতেন, তথাপি তিনি ক্ষণকালের নিমিত্তও সুখলাভ করিতে পারিতেন না। কারণ, দূতকারিতাজনিত দুঃসহ দুঃখযন্ত্রণা তাহার অন্তঃকরণে নিরন্তর জাগরকে ছিল। তিনি সর্ব্বদাই কেবল দুঃশাসন ও শকুনির বন্ধচিন্তা করিয়া ক্ৰোধানলে প্রজ্বলিত হইতেন; কখন কখন প্রীত হইয়া অনুপম গান্ধর্ব্ব নৃত্য ও বাদ্য-শিক্ষা করিতেন। অর্জ্জুন সঙ্গীতবিদ্যায় সুশিক্ষিত এবং নৃত্য-গীতের যথার্থ গুণজ্ঞ হইয়াও মাতা কুন্তী ও ভ্ৰাতৃগণকে অনুক্ষণ স্মরণ করিয়া সুখলাভে বঞ্চিত হইয়াছিলেন।