৪৩তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের কৃষ্ণবন্দনা-কৃষ্ণের প্রত্যভিনন্দন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, রাজা যুধিষ্ঠির এইরূপে সাম্রাজ্যে অভিষিক্ত হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে কৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “বাসুদেব! আমি কেবল তোমার অনুগ্রহ, নীতি, বল, বুদ্ধিকৌশল ও বিক্রমপ্রভাবেই এই পিতৃপিতামহোপভুক্ত রাজ্য পুনরায় প্রাপ্ত হইলাম; অতএব তোমাকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার করি। তুমি অদ্বিতীয় পুরুষ ও যাদবদিগের একমাত্র অবলম্বন। ব্রাহ্মণগণ তোমার বহুবিধ নাম উল্লেখপূর্ব্বক স্তব করিয়া থাকেন। তুমি বিশ্বকর্ম্মা ও বিশ্বাত্মক; এই জগৎ তোমা হইতেই উৎপন্ন হইয়াছে। তুমি বিষ্ণু, জিষ্ণু, হরি, কৃষ্ণ, বৈকুণ্ঠ ও পুরুষোত্তম। তুমি সপ্ত আদিত্য। তুমি একমাত্র হইয়াও ভিন্ন ভিন্ন গর্ভে ভিন্ন ভিন্ন বিগ্রহ ধারণ করিয়াছ। তুমি তিন যুগেই বিদ্যমান আছ। তুমি পুণ্যকীৰ্ত্তি, হৃষীকেশ ও যজ্ঞেশ্বর। তুমি ব্রহ্মারও গুরু[জনক]। তুমি ত্রিনয়ন শম্ভ। তুমি দামোদর, বরাহ, অগ্নি ও সূৰ্য্য। তুমি ধৰ্ম্ম, তুমি গরুড়ধ্বজ, তুমি শত্রুসেনাবিমর্দ্দন ও সৰ্ব্বব্যাপী পুরুষ। তুমি শ্রেষ্ঠ ও উগ্র। তুমি কাৰ্ত্তিকেয়, সত্য, আনন্দ, অচ্যুত ও অরাতিনাশক। তুমি বিদিবর্ণ এবং অনুলোমবিলোমজাত। তুমি ঊর্দ্ধবর্ত্ম[উত্তমগতি] ও পৰ্ব্বত। তুমি ইন্দ্রদর্পহন্তা ও হরিহররূপী। তুমি সিন্ধু, নির্গুণ এবং পূৰ্ব্বদিক, পশ্চিমদি ও ঈশানকোণস্বরূপ। তুমি সূর্য্য, চন্দ্র ও অগ্নিরূপে স্বর্গ হইতে অবতীর্ণ হইয়াছ। তুমি সম্রাট, বিরাট ও স্বরাট্[স্বয়ং প্রকাশ]। তুমি ইন্দ্রেরও কারণ। তুমি বিভু, শরীরী ও অশরীরী। তুমি অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের পিতা। তুমি কপিল। তুমি বামন, যজ্ঞ, যজ্ঞসেন, ধ্রুব ও গরুড়। তুমি শিখণ্ডী ও নহুষ। তুমি মহেশ্বর, দিবম্পৃক, পুনৰ্ব্বসু, বভ্রূ, সুবভ্রূ। তুমি সমিদেব, সুষেণ, দুন্দুভি, কাল, শ্রীপদ্ম। তুমি পুষ্কর, পুষ্করেক্ষণ, ঋতু ও সৰ্ব্বাপেক্ষা সূক্ষ্ম। তুমি চরিত্র, নির্মল, জ্যোতি ও হিরণ্যগর্ভ[ব্রহ্মা]। তুমি স্বধা ও স্বাহা। তুমি এই জগতের স্রষ্টা এবং তুমিই ইহার সংহৰ্ত্তা। তুমি অগ্রে এই বিশ্বমধ্যে বেদের সৃষ্টি করিয়াছ এবং চরাচর বিশ্বকে স্ববশে রাখিয়াছ। হে শার্ঙ্গপাণে! তোমাকে নমস্কার।”
রাজা যুধিষ্ঠির সভামধ্যে বাসুদেবকে এইরূপে স্তব করিলে তিনি যারপরনাই আহ্লাদিত হইয়া বিনীতবাক্যে জ্যেষ্ঠপাণ্ডবকে আনন্দিত করিতে লাগিলেন।