৪১তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের রাজোচিত পর্য্যবেক্ষণ-ব্যবস্থা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণের সেই দেশকালোচিত বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “হে বিপ্রগণ! পাণ্ডুনন্দনদিগের গুণ প্রকৃত হউক বা অপ্রকৃতই হউক, যখন আপনারা সমবেত হইয়া উহা কীৰ্ত্তন করিতেছেন, তখন পাণ্ডবগণ ধন্য, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। এক্ষণে আপনারা সুস্থচিত্তে আমাদিগকে গুণসম্পন্ন বলিয়া অঙ্গীকার করিতেছেন; অতএব আমাদিগের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করাও আপনাদিগের অবশ্য কৰ্ত্তব্য। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র আমার পরম দেবতা ও পিতা; অতএব যদি আমার প্রিয়কাৰ্য্য সাধন করা আপনাদিগের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে আপনারা সতত উঁহার শাসনানুবর্ত্তী ও হিতানুষ্ঠানপরতন্ত্র হইবেন। প্রতিনিয়ত অধ্যবসায়সহকারে ঐ মহাত্মার শুশ্রূষা করা আমার কর্ত্তব্য। আমি সমস্ত জ্ঞাতিবধ করিয়া কেবল উহার শুশ্রূষা করিবার নিমিত্তই জীবন ধারণ করিতেছি। এক্ষণে যদি আমার প্রতি ও আমার অন্যান্য সুহৃদ্বর্গের প্রতি আপনাদিগের অনুগ্রহ প্রদর্শন করা সুমচিত হয়, তাহা হইলে আপনারা রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সহিত পূৰ্ব্ববৎ ব্যবহার করুন। উনি আমার, আপনাদিগের ও এই জগতের অধিপতি। সমগ্র পৃথিবী ও পাণ্ডবগণ উহারই আয়ত্ত। হে বিপ্রগণ! এক্ষণে আমি যেসমস্ত কথা কহিলাম, আপনারা বিস্মৃত হইবেন না।” ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির এই বলিয়া ব্রাহ্মণগণকে বিদায় করিলেন।
অনন্তর তিনি পুর ও জনপদনিবাসী প্রজাগণকে বিদায় করিয়া ভীমসেনকে যৌবরাজ্য প্রদানপূর্ব্বক ধীমান্ বিদুরকে মন্ত্রণা ও সন্ধিবিগ্রহ প্রভৃতি কাৰ্য্যের অবধারণ, সৰ্ব্বগুণসম্পন্ন বৃদ্ধ সঞ্জয়কে কার্য্যাকাৰ্য্য-পরিজ্ঞান ও আয়ব্যয়-চিন্তা, নকুলকে সৈন্যের পরিমাণ, তাহাদিগকে ভুক্ত বেতন প্রদান ও তাহাদের কার্য্য পরীক্ষা, মহাবীর অর্জ্জুনকে পরসৈন্যোপরোধ [বিপক্ষ সৈন্যের আক্রমণাদির প্রতিকার] ও দুষ্ট-নিগ্রহ, মহাবীর সহদেবকে শরীররক্ষা এবং পুরোহিতপ্রধান মহর্ষি ধৌম্যকে ব্রাহ্মণদিগের কাৰ্য্য ও দৈবকার্য্যের অনুষ্ঠানে নিযুক্ত করিলেন। এইরূপে মহীপাল যুধিষ্ঠির যে ব্যক্তি যে কাৰ্য্যের উপযুক্ত, তাঁহাকে সেই কার্য্যের ভার প্রদান করিয়া বিদুর, সঞ্জয় ও যুযুৎসুকে কহিলেন, “আপনারা সতত অধ্যবসায়সম্পন্ন হইয়া রাজা ধৃতরাষ্ট্র যখন যেরূপ আদেশ করিবেন, অবিলম্বে তাহা সম্পাদন এবং পৌর ও জনপদ[প্রজা]বর্গের কোন কাৰ্য্য উপস্থিত হইলে উহার আজ্ঞা লইয়া তাহা সমাধান করিবেন।”