০৪০. সনৎসুজাতপর্ব্বাধ্যায়

৪০তম অধ্যায়

সনৎসুজাতপর্ব্বাধ্যায়

ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বিদুর! তুমি অতি বিচিত্ৰ কথা কীর্ত্তন করিতেছ; অতএব যদি আর কিছু বক্তব্য থাকে, তাহা হইলে পুনরায় আরম্ভ কর, শ্রবণ করিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইতেছে।”

বিদুর কহিলেন, “মহারাজ! সনাতন-কুমার সনৎসুজাত কহিয়া থাকেন, মৃদ্যুনামে কোন একটি পদার্থ নাই। সেই ধীমান আপনার গোপনীয় ও প্রকাশ্য সংশয়সকল নির্যাকরণ করিবেন সন্দেহ নাই।”

ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বিদুর! সনাতন-কুমার সনৎসুজাত আমাকে যাহা কহিবেন, তাহা কি তোমার অবিদিত আছে? যদি তাহা জ্ঞাত হইয়া থাক, তাহা হইলে তুমিই এক্ষণে উহা কীর্ত্তন কর।’

শুদ্রগর্ভজাত বিদুরের বেদব্যাখ্যায় অনভিমত

বিদুর কহিলেন, “মহারাজ! আমি শূদ্ৰযোনিতে জন্মপরিগ্রহ করিয়াছি, এই নিমিত্ত আপনার নিকট সে বিষয়ের উল্লেখ করিতে অসমর্থ হইতেছি। কিন্তু সনাতন-কুমার সনৎসুজাতের জ্ঞানই শাশ্বত জ্ঞান। যিনি ব্রাহ্মণকুলে জন্মপরিগ্ৰহ করিয়া অতি গোপনীয় বিষয়সমুদয় কীর্ত্তন করেন, তিনি দেবগণের নিকট কদাচ নিন্দাভাজন হয়েন না, অতএব আমি সনৎসুজাতের নিকট এই বিষয় শ্রবণ করিতে আপনাকে অনুরোধ করিতেছি।”

ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে বিদুর! এই স্থানে সনাতন-কুমার সনৎসুজাতের সহিত কিরূপে সাক্ষাৎ হইবে, ইহার উপায় বল।” অনন্তর মহাত্মা বিদুর মহর্ষি সনৎসুজাতকে চিন্তা করিতে লাগিলে তিনি তৎক্ষণাৎ তথায় আবির্ভূত হইলেন। বিদুর বিধি অনুসারে মধুপৰ্কাদিদ্বারা তাঁহাকে পূজা করিলেন, পরে সুখোপবিষ্ট ও গতক্লম দেখিয়া কহিলেন, “ভগবান! মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের মনোমধ্যে সাতিশয় সংশয় উপস্থিত হইয়াছে, আমি তাহা নির্যাকরণ করিতে অসমর্থ অতএব যাহা শ্রবণ করিলে মহারাজ অনায়াসে দুঃখসাগর হইতে উত্তীর্ণ হয়েন এবং যাহাতে লাভ, অলাভ, শত্ৰু, মিত্র, জরা, মৃত্যু, ভয় অমৰ্ষ, ক্ষুৎ পিপাসা, তন্দ্ৰা, কাম, ক্ৰোধ, ক্ষয়, উদয় ও অপ্রীতি তাহার নিকট যাইতে না পারে, আপনি সেই বিষয় কীর্ত্তন করুন।”