৪০তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেক
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! অনন্তর কুন্তীপুত্র যুধিষ্ঠির শোকসন্তাপ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক হৃষ্টমনে পূর্ব্বাস্য হইয়া কাঞ্চনময় আসনে উপবেশন করিলেন। তখন অরাতিনিপাতন মহাবীর সাত্যকি ও বাসুদেব ধৰ্ম্মরাজের অভিমুখে স্বর্ণময় উজ্জ্বল পীঠে, মহাত্মা ভীমসেন ও অর্জ্জুন উভয় পার্শ্বে মণিময় আসনে, মনস্বিনী কুন্তী, সহদেব ও নকুলের সহিত সুবর্ণভূষিত গজদন্তময় সিংহাসনে এবং মহাত্মা সুধৰ্ম্মা, বিদুর, ধৌম্য ও ধৃতরাষ্ট্র পাবকের ন্যায় সমুজ্জ্বল আসনে উপবিষ্ট হইলেন। যুযুৎসু, সৃঞ্জয় ও যশস্বিনী গান্ধারী ধৃতরাষ্ট্রের সন্নিধানে উপবেশন করিলেন।
অনন্তর ধর্ম্মপরায়ণ মহারাজ যুধিষ্ঠির মঙ্গলদায়ক অক্ষত[১], স্বস্তিক[২], শ্বেতপুষ্প, ভূমি, সুবর্ণ, রজত ও মণি স্পর্শ করিলে প্রজাবর্গ পুরোহিতের সহিত বিবিধ মঙ্গলবস্তু গ্রহণপূৰ্ব্বক তাঁহাকে দর্শন করিতে লাগিল। ঐ সময় মৃত্তিকা, সুবর্ণ, বিবিধ রত্ন, কাঞ্চনময়, তাম্রময়, রজতময় ও মৃন্ময় পূর্ণকুম্ভ, পুষ্প, লাজ[খই], অগ্নি, দুগ্ধ, মধু, ঘৃত, স্রুব[যজ্ঞপাত্র], হেমভূষিত শঙ্খ এবং শমী, পিপ্পল ও পলাশের সমিধ প্রভৃতি অভিষেকের দ্রব্যসম্ভার তথায় সমাহৃত হইল। তখন পুরোহিত ধৌম্য বাসুদেবকর্ত্তৃক অনুজ্ঞাত হইয়া বিধানানুসারে পূৰ্বোত্তরে ক্রমশঃ নিম্ন বেদী নির্ম্মাণপূৰ্ব্বক তদুপরি হুতাশনসন্নিভ ব্যাঘ্রচর্ম্মাবৃত সৰ্ব্বতোভদ্র আসনে মহাত্মা যুধিষ্ঠির ও দ্রুপদকুমারী কৃষ্ণাকে উপবেশন করাইয়া বিবিধ মন্ত্র অনুসারে হুতাশনে আহুতি প্রদান করিতে লাগিলেন। মহাত্মা বাসুদেব রাজর্ষি ধৃতরাষ্ট্র ও প্রজাগণের সহিত গাত্রোত্থান করিয়া পাঞ্চজন্য[শঙ্খ] গ্রহণপূৰ্ব্বক মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে অভিষিক্ত করিলেন। ধৰ্ম্মরাজ বাসুদেব ও স্বীয় ভ্রাতৃগণকর্ত্তৃক সৎকৃত ও পাঞ্চজন্যের জলে অভিষিক্ত হইয়া যারপরনাই সুশোভিত হইলেন। ঐ সময় পণব, আনক ও দুন্দুভির মধুর নিস্বন হইতে লাগিল। ধৰ্ম্মরাজ তৎসমুদয় শ্রবণপূৰ্ব্বক ধৈর্য্যশালী, সৎস্বভাবান্বিত, বেদাধ্যয়ন সম্পন্ন ব্রাহ্মণগণকে সহস্র মুদ্রা প্রদানপূর্ব্বক স্বস্তিবাচন করাইয়া তাঁহাদের যথাবিধি অর্চ্চনা করিলেন। তখন দ্বিজগণ যুধিষ্ঠিরের প্রতি প্রীত হইয়া হংসের ন্যায় মধুরস্বরে তাঁহার জয়কীৰ্ত্তন ও প্রশংসাপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! আপনি সৌভাগ্যবশতঃ স্বীয় পরাক্রমপ্রভাবে শত্ৰুবিজয় ও স্বধর্মলাভ করিয়াছেন। সৌভাগ্যক্রমে আপনি গাণ্ডীবধারী অর্জ্জুন, মহাবীর ভীমসেন এবং মাদ্ৰীতনয় নকুল ও সহদেবের সহিত সেই বীরক্ষয়কর ভীষণ সংগ্রাম হইতে বিমুক্ত হইয়াছেন; অতএব এক্ষণে কর্ত্তব্যকাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করুন।” ধৰ্ম্মরাজ এইরূপে সাধুদিগের পূজিত ও সুহৃদ্বর্গে পরিবৃত হইয়া স্বীয় বিস্তীর্ণ রাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন।