০৩. শুয়ে বসে থেকে এবং ভাল খেয়ে

শুয়ে বসে থেকে এবং ভাল খেয়ে টুকি এবং ঝায়ের স্বাস্থ্যের খানিকটা উন্নতি হল কিন্তু কিছু না করে এবং চব্বিশ ঘণ্টা রোবি নামের হাবাগোবা রবোটটার কথা শুনতে শুনতে তাদের মন মেজাজের অবস্থা হল খুব খারাপ। রোবির কপোট্রনের কানেকশান কেটে তাকে অচল করে রাখা টুকি কিংবা ঝায়ের জন্যে এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয় কিন্তু মহাকাশযানের কোথায় কী আছে সেগুলো রোবি ছাড়া আর কেউ জানে না বলে তাকে চলাফেরা করতে দিতে হচ্ছে।

হাইপার ডাইভ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর রোবির যন্ত্রণায় টুকি এবং ঝায়ের জীবন যখন মোটামুটি অসহ্য হয়ে উঠল তখন হঠাৎ করে তাদের জীবনে খানিকটা উত্তেজনা দেখা দিল। ঘুম থেকে উঠে তারা আবিষ্কার করল এই নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে হিংস্র এবং সবচেয়ে যুদ্ধবাজ বিদ্রোহী দলটি তাদের মহাকাশযানটিকে দখল করে বিচিত্র একটি গ্রহে নামিয়ে ফেলেছে।

টুকি, ঝা এবং রোবিকে মহাকাশযান থেকে নামিয়ে বিদ্রোহী দল তাদের আস্তানায় নিয়ে যেতে থাকে। যারা তাদেরকে টেনে হিচড়ে নামিয়েছে তারা সবাই খুব উগ্র প্রকৃতির মানুষ, টুকি এবং ঝাকে গলাধাক্কা দিয়ে নামিয়ে নিতে নিতে তাদের সম্পর্কে নানা ধরনের অসম্মানজনক কথা বলতে লাগল। টুকি এবং ঝা অবশ্যি বিশেষ কিছু মনে করল না, তাদের জীবনে তারা অসংখ্যবার এরকম পরিবেশে পড়েছে। রোবি অবশ্য সারাক্ষণ তাদের জ্বালাতন করতে লাগল, পিছু পিছু হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কী ভয় পাচ্ছেন?

টুকি মুখ শক্ত করে বলল, পেলে পেয়েছি, তাতে তোমার বাবার কী?

না, আমি শুনেছি মানুষ খুব ভয় পেলে জামা কাপড়ে নাকি পেচ্ছাব করে দেয়। আপনারা কী পেচ্ছাব করে দিয়েছেন?

ঝা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, না, করি নি।

কেমন করে জানেন করেন নি? হয়তো নিজের অজান্তে করে দিয়েছেন। আমি শুনেছি মানুষ নিজের অজান্তে পেচ্ছাব করে দেয়। ব্লাডার বলে একটা জিনিস থাকে, কিডনি থেকে ফিল্টার হয়ে পেচ্ছাব সেখানে এসে জমা হয়, সেটাকে যেটা কন্ট্রোল করে–

চুপ কর হতভাগা–ফিউজড বাল্ব, প্যাচ কাটা স্কু–

ঝায়ের ধমক খেয়েও রোবি নিবৃত্ত হল না, ফিসফিস করে বলল, মানুষ ভয় পেলে তাদেরকে নাকি খুব বিচিত্র দেখায়। আপনাদেরকেও বিচিত্র দেখাচ্ছে। কি মনে হয় এখন আপনাদের কি গুলি করে মারবে? তাহলে ভয় পেয়ে নিশ্চয়ই কাপড়ে পেচ্ছাব করে দেবেন। আচ্ছা, পেচ্ছাব জিনিসটা কী? তার পি. এইচ. কত? স্পেসেফিক গ্র্যাভিটি? ক্যামিকেল কম্পােজিশান? রংটা কী?

পেছন থেকে রোবির পিছনে কষে একটা লাথি মারার ইচ্ছা ঝাকে অনেক কষ্ট করে সংবরণ করতে হল।

টুকি এবং ঝাকে বিদ্রোহী দলের নেতার সামনে এনে প্রায় ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হল। নেতা মানুষটির বয়স খুব বেশি নয়, মাথায় বড় চুল এবং লম্বা লম্বা গোঁফ, গায়ের রং ফ্যাকাশে, চোখ দুটি ঢুলু ঢুলু এবং টকটকে লাল। ঢিলেঢালা আলখাল্লার মতো একটা ক্যাটক্যাটে হলুদ রংয়ের কাপড় পরে আছে। ঢুলু ঢুলু চোখে টুকি এবং ঝাকে এক নজর দেখে বলল, এরাই তারা?

রাগী রাগী চেহারার একজন মোটা গলায় বলল, জী হুঁজুর! তারপর সে টুকি এবং ঝায়ের পিছনে গুতো দিয়ে বলল, আমাদের নেতাকে অভিবাদন কর–

টুকি শুকনো মুখে বলল, অভিবাদন কেমন করে করে?

মাটিতে মাথা ঠেকাও। বেকুব কোথাকার।

টুকি এবং ঝা মাটিতে মাথা ঠেকাতে যাচ্ছিল তখন বিদ্রোহী দলের নেতাটি গুরুগম্ভীর গলায় বলল, তুমি বেকুব কাকে বলছ? এই দুজন হচ্ছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ পরিচালনাকারী অস্ত্রবিজ্ঞানী রিকি এবং ফ্রাউল।

টুকি এবং ঝা চমকে উঠলো, তারা নিচু শ্রেণীর চোর, বিজ্ঞানী রিচি-ফ্রাউল নয় কিন্তু সেটা এখন বলা ঠিক হবে কী না বোঝা যাচ্ছে না।

দলের নেতা তার লম্বা গোঁফে হাত বুলিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখকে যেটুকু সম্ভব খুলে বলল, এই দুজন অস্ত্রবিজ্ঞানীকে গোপনে আমাদের এম সেভেন্টিওয়ান এলাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের ধরে ফেলেছি, এখন তাদেরকে কত দামে গ্যালাক্টিক হাই কমাণ্ডের কছে বিক্রি করতে পারব চিন্তা করে দেখেছ কেউ?

যে মানুষটি টুকি এবং ঝাকে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে অভিবাদন করার জন্যে পীড়াপিড়ি করছিল, সে এবারে খুব কাচুমাচু হয়ে পড়ল। মাথা নিচু করে বলল, বুঝতে পারি নাই স্যার—একেবারে চোরের মত চেহারা ছবি–

চুপ কর বেয়াদপ। এক্ষুনি বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউলের পায়ে চুমু খেয়ে ক্ষমা চাও।

যারা টুকি এবং ঝাকে মহাকাশযান থেকে ধরে এনেছে তাদের অনেকেই এবার উবু হয়ে টুকি এবং ঝায়ের পায়ে চুমু খাবার চেষ্টা করতে লাগল। ঝা মোটামুটি হতবাক হয়ে ব্যাপারটা দেখছিল টুকি ততক্ষণে খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছে। বৃষ্টির রাতে আশ্রয় নেবার জন্যে মহাকাশযানে উঠে বুড়োমতন যে দুজন বদরাগী মানুষকে বৃষ্টির মাঝে বাইরে ফেলে এসেছিল তারাই নিশ্চয় বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। তারা সেই মহাকাশযানটিতে করে এসেছে বলে তাদেরকেই মনে করছে অস্ত্রবিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। এই রকম মাথা গরম বিদ্রোহী দলকে সত্যি কথাটা তাড়াতাড়ি বলে দেওয়া ভাল। এটি গোপন রাখার চেষ্টা করেও খুব লাভ হবে বলে মনে হয় না। টুকি কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা আসলে বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল নই। আমার নাম হচ্ছে টুকি আর এ হচ্ছে ঝা।

বিদ্রোহী দলের নেতা হা হা করে হেসে উঠে বলল, আমি ঠিক এরকম একটা উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম মহামান্য অস্ত্রবিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউল। এর আগেরবার আমরা যখন গ্যালাক্টিক এম্বেসডরকে ধরেছিলাম তিনিও প্রথমে কিছুতেই স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। শেষে আমরা যখন একটা একটা করে তার নাকের লোম ছিড়তে শুরু করলাম–

নাকের নোম?

হ্যাঁ! তখন সব স্বীকার করে ফেললেন। আপনারা অবশ্যি জ্ঞানী মানুষ, আপনাদের উপর নিচু স্তরের অত্যাচার করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু দরকার পড়লে আর কী করব?

টুকি মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আসলে আমরা সত্যিই বিজ্ঞানী নই।

খুব যেন একটা মজার কথা শুনেছে সেরকম ভান করে বিদ্রোহী দলের নেতা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আপনারা কী?

আমরা আসলে চোর।

চোর? হা হা হা–দলপতির সাথে অন্য সবাই এবারে উচ্চস্বরে হা হা করে হাসতে শুরু করে এবং টুকি আর ঝা হঠাৎ করে খুব অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। দলপতি এক সময় হাসি থামিয়ে বলল, আপনারা সত্যি সত্যি জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তি। মিথ্যা কথাটি কেমন করে বলতে হয় তার বিন্দু বিসর্গও জানেন না। মিথ্যা কথা বলতে হয় সত্যের খুব কাছাকাছি করে। আপনাদের বলা উচিত ছিল যে আপনারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা শিল্পীসাহিত্যিক। তা না বলে আপনারা বললেন চোর!

টুকি মুখ শক্ত করে বলল, আমরা সত্যিই চোর।

দলপতি তার চোখে কৌতুকের হাসি ধরে রেখে বলল, তার কোন প্রমাণ আছে?

আছে। আমরা শেষবার যেটা চুরি করেছি সেটা আমাদের কাছেই আছে।

দেখি, কী চুরি করেছেন।

টুকি তার কোমর থেকে খুলে হীরার ঝোলাটি দলপতির দিকে এগিয়ে দিল। সে ভিতরে এক নজর তাকিয়ে একটা বড় সাইজের হীরা বের করে এনে আবার উচ্চস্বরে হাসতে থাকে। অন্য সবাই যারা কাছাকাছি ছিল এবারে তারাও হাসতে শুরু করল। টুকি এবং ঝা প্রথমবারের মত পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেল, হীরা চুরি করার মাঝে কোন অংশটি হাসির কে জানে। দলপতি কোনমতে হাসি থামিয়ে চোখ মুছে বলল, আপনারা চুরি করার আর জিনিস পেলেন না? হীরা চুরি করলেন?

কী হয় হীরা চুরি করলে?

খুব বড় রকমের গাধামো হয়। মাটি থেকেই যখন দশ কেজি বিশ কেজি সাইজের হীরা তুলে নেওয়া যায় তখন যদি কেউ এইটুকুন হীরা দেখিয়ে বলে সে সেটা চুরি করে এনেছে তখন শুনতে কেমন লাগে?

টুকি আর ঝা কিছুই বুঝতে পারল না, খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। দলপতি বলল, এই পুরো গ্রহটা হীরার তৈরি। এই যে আপনি মেঝের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা হীরার, দেওয়ালটা হীরার, এই গ্রহের ছাদ হীরার, বাইরের পাহাড়টা হীরার! দুই বিলিয়ন বছর আগে এই গ্রহের কার্বন-কোর বাইরের পাথরের চাপে হীরা হয়ে গেছে। তারপর গত এক বিলিয়ন বছরে বাইরের পাথর ক্ষয়ে গিয়ে ভিতরের হীরা বের হয়ে এসেছে। এখানে কেউ হীরা চুরি করে না।

টুকি এবং ঝা নিচে তাকাল। সত্যি সত্যি তারা স্বচ্ছ কিছুর উপর দাঁড়িয়ে আছে, চারিদিকে সেই একই স্বচ্ছ দেওয়াল, স্বচ্ছ ঘরের ছাদ। চারিদিকে এত হীরা আর তারা কী না এই অল্প কয়টা হীরা চুরি করার জন্যে জীবন পণ করেছিল? টুকি এবং বার হঠাৎ নিজেদের বোকার মত মনে হতে থাকে।

দলপতি হাসি হাসি মুখে বলল, আপনারা কী এখনো দাবি করবেন যে আপনারা চোর, নাকি সত্যি কথাটি বলে দেবেন বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউল।

টুকি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি কথাটাই হচ্ছে আমরা চোর।

বেশ। তাই যদি মনে করেন তাহলে তাই হোক। দলপতির চোখমুখ হঠাৎ কেমন জানি থমথমে হয়ে যায়, গম্ভীর গলায় বলে, যদি আপনারা সেই বিখ্যাত খ্যাতিমান অস্ত্রবিজ্ঞানী না হয়ে থাকেন, আপনাদেরকে আমার কোন প্রয়োজন নেই।

ঝা এক গাল হেসে বলল, তাহলে আমরা যেতে পারি?

উহুঁ। দলপতি মাথা নেড়ে বলল, আমি বলেছি আপনাদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই সেটা তো বলি নি। ফেডারেশানের সাথে আমাদের বার বছর থেকে যুদ্ধ চলছে। আমাদের লোকজন আহত হচ্ছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হচ্ছে—আমাদের তাজা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দরকার। আপনাদের কিডনি, লিভার, প্যাংক্ৰিয়াস, ইন্টেস্টাইন, হার্ট, লাংস, আংগুল, হাত, পা, চোখ, কান দরকার।

ঝা মুখ হা করে বলল, সবই তো দরকার। তাহলে বাকি থাকল কী?

একজন হি হি করে হেসে বলল, চুল।

টাক মাথা একজন এগিয়ে এসে বলল, আমার চুলও দরকার।

তার কথা শেষ হবার আগেই একজন মানুষ ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে এগিয়ে এসে বলল, স্কাউটশীপ যুদ্ধে আমার ডান পাটা গেছে। আমি শুকনো মানুষটার পাটা চাই।

চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা একজন এগিয়ে এসে বলল, আমি একটা চোখ চাই।

বুক থেকে কিছু টিউব বের হয়ে একটা যন্ত্রের সাথে লাগানো আছে সেরকম একজন বলল, আমাকে একটা হার্ট দিলেই চলবে।

আগুনে পোড়া ঝলসে যাওয়া একজন মানুষ চেঁচিয়ে বলল, আমার দরকার চামড়া। মোটাটার চামড়া, ভাল ইলাস্টিক মনে হচ্ছে।

দেখতে দেখতে অসংখ্য কানা, খোড়া, পোড়া, কাটা, ফাটা, ঝলসানো মানুষ। টুকি এবং ঝাকে ঘিরে ফেলল। তারা সবাই টুকি এবং ঝায়ের শরীরের কিছু না কিছু চাচ্ছে।

দলপতি হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তোমাদের যা প্রয়োজন সব পাবে। অস্ত্রোপাচারকারী রবোটকে ডাক, নিয়ে যাক এক্ষুনি। কাটাকুটি করে ভাগাভাগি করে নাও, যাও।

দলপতির কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে মানুষগুলো আনন্দে চিৎকার করে উঠে টুকি এবং ঝাকে খামচা খামচি করতে থাকে। সবাই মিলে যখন দুজনকে ধরে টানাটানি করছে ঠিক তখন তারা হঠাৎ করে সত্যিকার বিপদটা টের পেল। প্রথমে টুকি নিজেকে সামলে নিয়ে গলা উঁচিয়ে বলল, আমরা আসলে বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। এতক্ষণ মিছে কথা বলছিলাম।

কানা খোড়া এবং ঝলসানো মানুষ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সরবরাহ হাতছাড়া হয়ে যাবে ভেবে টুকির কথাকে চাপা দিয়ে হৈ হুঁল্লোর করে টানাটানি করতে থাকে। টুকির সাথে গলা মিলিয়ে ঝাও তখন গলা উঁচিয়ে বলল, আমরা অস্ত্র বিজ্ঞানী। অস্ত্রবিজ্ঞানী।

বিদ্রোহী দলপতি আবার হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে ভুরু কুচকে বলল, আপনারা অস্ত্রবিজ্ঞানী?

জী।

এতক্ষণ তাহলে নিজেদের চোর বলে দাবি করছিলেন কেন?

টুকি থতমত খেয়ে বলল, অত্যন্ত গোপন প্রজেক্টে যাচ্ছিলাম, আমাদের উপরে খুব কড়া নির্দেশ ছিল যে কিছুতেই সত্যিকারের পরিচয় দেয়া যাবে না।

দলপতি শক্ত মুখে বলল, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী আমার মনে হয় আপনারা প্রথমে সত্যি কথা বলেছিলেন এখন মিথ্যা কথা বলছেন। আসলেই আপনারা চোর। আপনাদের চেহারায় একটা চোর ছ্যাচড়ের ভাব আছে। বিশেষ করে এই যে মোটাটা, একে দেখে একটা গর্দভের মত মনে হয়।

অন্য সময় হলে ঝা নিঃসন্দেহে অপমানিত বোধ করত কিন্তু এখন করল না। আমতা আমতা করে বলল, মানুষের চেহারার উপর নিজের হাত নেই। যে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ার আমার চেহারার ডিজাইন করেছে, সেই ব্যাটা বদমাইশ নেশা করে।

দলপতি মাথা নেড়ে বলল, আমি ওসব কথা শুনতে চাই না। আপনারা যে বিজ্ঞানী তার কোন প্রমাণ আছে?

উপস্থিত কানা খোড়া কাটা ফাটা এবং ঝলসানো মানুষেরা সমস্বরে চিৎকার করে বলল, নাই। নাই।

টুকি চিঁ চিঁ করে বলল, মহাকাশযানের লগ পরীক্ষা করে দেখেন, সেখানে আমরা ছাড়া আর কে থাকবে?

দলপতি বলল, ঠিক আছে, আজ রাতে আমরা ফেডারেশানের একটা দলকে আক্রমণ করব। যুদ্ধ চলাকালীন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আপনাদের দুজনের। আপনারা সত্যিকারের অস্ত্রবিজ্ঞানী কী না তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে।

টুকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, আমাদের কী করতে হবে?

মেগা কম্পিউটারে সিস্টেমস কন্ট্রোল করতে হবে। ভয়েস কমান্ড দিয়ে সুপার মাইজার চালাতে হবে, স্কাউটশীপ স্কোয়াড্রনকে ট্র্যাক করতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন সবকিছু।

টুকি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, জানি। জানি। করতে পারবেন তো সবকিছু?। টুকি চিঁ চিঁ করে বলল, পারব। একশবার পারব। ঝা মাথা নেড়ে বলল, সোজা কাজ। একেবারে পানির মত সোজা।

রোবি এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, কী সুন্দর মিথ্যা কথা বলছেন আপনারা মুগ্ধ হয়ে গেছি দেখে। মানুষ কী সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে–

দলপতি জিজ্ঞেস করলো, কী বলছে এই ব্যাটা রবোট?

ইয়ে বলছে বলছে আপনাদের দলটি খুব দুর্ধর্ষ!

দলপতি মৃদু হেসে বলল, এখনই দুর্ধর্ষ বলছে—যখন আমাদের যুদ্ধ করতে দেখবে তখন কী বলবে?

টুকি কিছু না বলে দুর্বল ভাবে হাসল। দলপতি তার দলের একজনকে ডেকে বলল, জেনারেল কাওয়াগাতা এই দুজনকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাও।

মুখের অর্ধেক উড়ে গেছে এরকম একজন মানুষ এগিয়ে এসে বলল, চলুন বিজ্ঞানী রিচি আর বিজ্ঞানী ফ্রাউল।

টুকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, চলুন।