০৩. রিকার্ডো লিডিয়ার দিকে চোখ

রিকার্ডো লিডিয়ার দিকে চোখ মটকে বলল, “তুমি বলেছিলে তুমি এপসিলোনে যোগ দেবে না।”

লিডিয়া কোনো উত্তর দিল না। রিকার্ডো সহৃদয়ভাবে হেসে বলল, “আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত মত পরিবর্তন করে এখানে যোগ দেয়াটা তোমার জন্যে খুব চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

লিডিয়া হিংস্র মুখে বলল, “তুমি যখন আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে তখন যদি পরিষ্কার করে সত্যি কথাটা বলে আসতে তাহলে

আমার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আরো সহজ হতো।”

রিকার্ডো অবাক হবার ভান করে বলল, “কোন সত্যি কথাটা তোমাকে বলা হয়নি?”

“তোমার সাথে দেখা হওয়ার দুই সপ্তাহের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় আমার থিসিস নিয়ে তদন্ত কমিটি বসিয়েছে, তিন সপ্তাহের মাঝে ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে চিঠি এসেছে, চার সপ্তাহের মাঝে এফ বি আই কথা বলতে এসেছে–এগুলো কী এমনি এমনি হয়েছে?”

“তুমি যখন একটা বি.এমডব্লিউ গাড়ী কিনে আমাদের সিগন্যাল দিয়েছ যে তুমি আমাদের সাথে যোগ দেবে তখন কী ম্যাজিকের মতো সব যন্ত্রণা মিটে যায়নি?”

“গিয়েছে।”

“তাহলে আমরা তোমার ভালো চাই লিডিয়া। তুমি একা একা থাকলে আগে হোক পরে হোক বিপদে পড়বে। আমাদের সাথে থাকো তুমি জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো পাবে, কিন্তু কখনো বিপদে পড়বে না। আমরা তোমাকে রক্ষা করব। আর যদি না থাকো–”

“আর যদি না থাকি?”

রিকার্ডো হা হা করে হাসল, “আর যদি না থাকো তাহলে কী হতে পারে সেটা তো দেখেছই। সেটা এখন অতীত। এখন তুমি আমাদের এসসিলনের একজন সম্মানীত গবেষক। এপসিলনে তোমাকে স্বাগত জানাই।”

লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “এখন আমাকে কী করতে হবে?”

“তোমাকে আলাদা করে কিছুই করতে হবে না। আমাদের কাজকর্মের সাথে পরিচিত হও, দেখো কী ধরণের কাজ তোমার ভালো লাগে। সেটা করো।”

“ঠিক আছে।”

রিকার্ডো উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চল, তোমাকে আমাদের অফিসটা ঘুরিয়ে দেখাই। তোমার ভালো লাগবে।”

রিকার্ডো তখন লিডিয়াকে সবকিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল। বড় লাইব্রেরী, বড় ডাটা সেন্টার, নানা ধরনের ল্যাবরেটরি। সবচেয়ে দর্শনীয় বিষয়টি হচ্ছে ক্র্যাগনন নামে একটা বিশাল সুপার কম্পিউটার। সারা পৃথিবীতেই মনে হয় এই মডেলের কম্পিউটার খুব বেশী নেই। ছোট ছোট অফিস ঘরে টেবিলে ঝুঁকে মানুষজন কাজ করছে। মানুষগুলোর চেহারার মাঝে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ছাপ আছে কিন্তু কোনো কমনীয়তা নেই। চেহারার মাঝে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে সেটা কেন বোঝা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।

সবকিছু ঘুরিয়ে দেখিয়ে যখন অফিসের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে তখন লিডিয়ার চোখ পড়ল একটা নোটিস বোর্ড–সেখানে আলাদা আলাদাভাবে বেশ কিছু মানুষের ছবি। মানুষগুলোর সবাই কম বয়সী। লিডিয়া জিজ্ঞেস করল, “এগুলো কাঁদের ছবি?”

রিকার্ডো বলল, “সেটা তোমার এখনই জানতে হবে না।”

“আমি জানতে চাই।”

“বেশ। তাহলে শোনো–এরা আমাদের প্রাক্তন গবেষক।”

“প্রাক্তন?”

“হ্যাঁ।”

লিডিয়া ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “এখন কোথায়?”

“নেই।”

“নেই মানে?”

“মারা গেছে।”

“কীভাবে?”

রিকার্ডো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “কেউ একসিডেন্টে, কেউ সুইসাইড, কেউ ড্রাগ ওভারডোজ।”

লিডিয়া ধীরে ধীরে রিকার্ডোর দিকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, “কেন?”

“এরা সবাই এপসিলন ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এপসিলনের কাজ করার পদ্ধতি তাদের পছন্দ হয়নি। চাকরী ছেড়ে দেবার পর হতাশায় ডুবে গিয়ে এভাবে মারা গেছে।”

লিডিয়া ফিস ফিস করে বলল, “আসলে, তোমরা এদের সবাইকে মেরে ফেলেছ, তাই না?”

রিকার্ডো কোনো উত্তর দিল না। হাসার মত ভঙ্গী করল। লিডিয়া গলা আরেকটু নামিয়ে বলল, “তারপর এই ছবিগুলো এখানে টানিয়ে রেখেছ, সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছ, কেউ যদি এপসিলনের সাথে বেইমানী করে তাহলে তার অবস্থাও হবে এরকম। তাই না?”

রিকার্ডোর মুখে হাসিটুকু আরো বিস্তৃত হল, বলল “কফি খাবে? আমাদের কাফেটারিয়াতে অসাধারণ কফি পাওয়া যায়।”

.

এক সপ্তাহ পর লিডিয়া রিকার্ডোর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এই যে নাও। এর ভিতরে একটা সিডি আছে। সিডির ভেতরে আমি একটা প্রজেক্ট সম্পর্কে লিখেছি।”

রিকার্ডো খুশি হওয়ার ভান করে বলল, “চমৎকার। সাধারণত এতো তাড়াতাড়ি কেউ কোনো আইডিয়া দিতে পারে না।”

লিডিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে লাইব্রেরীর দিকে হেঁটে গেল। ঘণ্টাখানেক পর রিকার্ডো তাকে খুঁজে বের করে বলল, “তোমার প্রজেক্টটা পড়েছি।”

লিডিয়া তার মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল রিকার্ডোর কথায় কোনো উৎসাহ দেখাল না। রিকার্ডো বলল, “আমি বসের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার ধারণা–”

লিডিয়া এবারেও রিকার্ডোর কথায় কোনো উৎসাহ দেখাল না। তার মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। রিকার্ডো হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমার ধারণা তোমার বক্তব্য পুরোটা এক ধরনের পাগলামো। অবাস্তব পাগলামো।”

লিডিয়া কোনো কথা বলল না।

পরদিন ভোরবেলা রিকার্ডো উত্তেজিত ভাবে লিডিয়াকে খুঁজে বের করল। গলা নামিয়ে বলল, “ তোমাকে এখনই নিউইয়র্ক যেতে হবে।”

“এখনই?”

“হ্যাঁ। বস তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন।”

লিডিয়া বলল, “পরের ফ্লাইট কখন?”

“ফ্লাইটে যেতে হবে না। আমাদের কোম্পানীর নিজের জেট আছে। তুমি রেডি হও।”

“আমি রেডি।”

রিকার্ডো উত্তেজিত গলায় বলল, “আগে কখনো এরকম ঘটেনি। বস কখনো এতো জুনিয়র মানুষের সাথে দেখা করতে চাননি।”

লিডিয়া কিছু বলল না। রিকার্ডো বলল, “তোমার প্রজেক্ট! নিশ্চয়ই তোমার প্রজেক্টটা নিয়ে বস কিছু বলবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে পাগলামো, কিন্তু বসের কাছে পাগলামো মনে হয়নি। বস নিশ্চয়ই এর মাঝে কিছু একটা দেখেছেন যেটা আমি দেখিনি।

লিডিয়া বলল, “বসের সাথে কথা বলার জন্যে আমার কী আলাদা কিছু জানা থাকতে হবে?”

“তাকে নাম ধরে ডাকবে না। স্যার বলবে। তোমাকে নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিলেও নাম ধরে ডাকবে না। তোমাকে বসার অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত বসবে না।”

“আর কিছু?”

“তোমাকে কিছু খেতে দিলে না করবে না। খাবে, অপছন্দ হলেও খাবে।”

“আর কিছু?”

“সোজাসুজি চোখের দিকে তাকাবে না।”

লিডিয়া বলল, “ঠিক আছে।”

.

ঠিক ছয় ঘন্টা পর একটা কালো গাড়ী লাগার্ডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে লিডিয়াকে তুলে নিয়ে গেল। ম্যানহাটনের মাঝামাঝি একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ীটা দাঁড়াতেই একজন দরজা খুলে বলল, “লিডিয়া?”

লিডিয়া মাথা নাড়ল। মানুষটি বলল, “আমার সাথে এসো। বস তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

ছিয়াশি তালায় লিফট থেমে গেল, লিডিয়া তখন মানুষটির পিছনে পিছনে লিফট থেকে বের হয়ে আসে। দরজার সামনে দাঁড়াতেই ভারী দরজাটা খুলে যায়। দুজনে ভেতরে ঢুকে গেল। সামনে আরেকটা ভারী দরজা। সেটাও খুলে গেল। মানুষটা একটা লম্বা করিডর ধরে হেঁটে হেঁটে একেবারে শেষ মাথায় পৌঁছে একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “লিডিয়া, বস এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

লিডিয়া দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। বিশাল একটা আলোকোজ্জ্বল ঘর। ঘরের শেষ মাথায় একটা বড় টেবিলের পিছনে একজন মানুষ তার দিকে পিছন দিয়ে একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে। লিডিয়ার পায়ের শব্দ শুনে মানুষটি ঘুরে তাকাল। মানুষটির চুল ধবধবে সাদা, চোখ দুটো আশ্চর্য রকম নীল। মুখে বয়সের বলি চিহ্ন। তার বয়স কতো অনুমান করা কঠিন। সাদা রংয়ের শার্ট সাদা টাই সাদা স্যুট। জুতো দেখা যাচ্ছে না কিন্তু লিডিয়া অনুমান করতে পারল সেগুলোও নিশ্চয়ই ধবধবে সাদা। লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় বলল, “এসো লিডিয়া।”

লিডিয়া এগিয়ে যায়। কাছে না গিয়েও বুঝতে পারে এই মানুষটি ভয়ংকর। একদিন সে কী এই মানুষটির মতো হতে পারবে?

লিডিয়া কাছাকাছি পৌঁছানোর পর মানুষটি বলল, “বস।”

লিডিয়া একটা চেয়ার টেনে বসে। চেয়ারটি সুন্দর কিন্তু আরামদায়ক নয়। ইচ্ছে করে এরকম রাখা হয়েছে, এই ঘরে নিশ্চয়ই কাউকে আমন্ত্রিত অনুভব করতে দেয়া হয় না।

মানুষটি বলল, “চা, কফি কিছু খাবে।” লিডিয়া চোখের কোনা দিয়ে আগেই দেখেছে ঘরের কোনায় একটা কফি মেশিনে কফি রাখা আছে। পাশে বেশ কয়টা মগ। তাই সে বলল, “একটু কফি খেতে পারি। ব্ল্যাক।”

মানুষটি নিজেই উঠে গেল কফি আনতে। মানুষটি লম্বা, হাঁটে সোজা হয়ে। পায়ের জুতো সাদা, ঠিক যে রকম অনুমান করেছিল। মানুষটি দুটি মগে কফি ঢেলে তার দিকে এগিয়ে আসে। লিডিয়ার সামনে একটা কফির মগ রেখে সে আবার তার চেয়ারে গিয়ে বসল। লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”

“না। কোনো অসুবিধে হয়নি।” লিডিয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে বুঝতে পারল পৃথিবীতে এর চাইতে ভালো কফি হওয়া সম্ভব নয়।

“আমার নাম উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী। আমাকে বিল বলে ডাকতে পার।”

রিকার্ডো বলেছিল তাকে নাম ধরে না ডাকতে, কিন্তু লিডিয়া নাম ধরে ডাকল, বলল, “তোমাকে ধন্যবাদ বিল।”

রিকার্ডো বলেছিল সরাসরি তার চোখের দিকে না তাকাতে, কিন্তু লিডিয়া সরাসরি উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জীর চোখের দিকে তাকাল, এতো নীল। চোখ সে আগে কখনো দেখেনি।

উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তার কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল, “আমি তোমার রিপোর্টটা দেখেছি। তোমার চিন্তার স্টাইলটা আমার পছন্দ হয়েছে। তুমি কী আমাকে তোমার মত করে বোঝাতে পারবে মানুষ কেন পোষা কুকুরের বদল পোষা মানুষের বাচ্চা রাখবে?”

লিডিয়া একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, “মানুষ পোষা পশুপাখী রাখে সঙ্গ পাবার জন্যে। যে প্রাণী যত বুদ্ধিমান সে তত ভালো সঙ্গ দিতে পারে। মানুষ থেকে বুদ্ধিমান আর কোন প্রাণী আছে? তাই মানুষের বাচ্চা সবচেয়ে ভালো সঙ্গ দিতে পারবে। তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ আমার রিপোর্টে আমি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি এই মানুষের বাচ্চাগুলো আইন মাফিক বাজার থেকে কেনা যাবে কারণ এরা পুরোপুরি স্বাভাবিক বাচ্চা হবে না। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে এই বাচ্চা গুলোর মাঝে কিছু পরিবর্তন করে কংগ্রেস থেকে পাস করিয়ে নিতে হবে যে দেখতে মানুষের মতো হলেও এরা আসলে মানুষ প্রজাতি নয়। এরা মানুষ এবং পশুর কাছাকাছি একটা প্রাণী। এরা হাসিখুশি হবে কিন্তু কোনো কথা বলবে না। এদের বুদ্ধিমত্তা হবে সীমিত, স্মৃতিশক্তি হবে দুর্বল। এদের আয়ু হবে সর্বোচ্চ দশ বছর। যারা এতোদিন বাসায় কুকুর পুষছে তারা এখন মানুষের বাচ্চা পুষবে।”

“তুমি কেন মনে কর কংগ্রেস থেকে এই প্রজাতিকে মানুষ নয় সেটা পাশ করিয়ে নেয়া যাবে?”

“আমি জানি তোমার অনেক ক্ষমতা। তাছাড়া কংগ্রেসম্যান আর সিনেটরদের টাকা দিয়ে কেনা যায়। আমরা কাজটা সহজ করে দেব বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিয়ে।”

উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তীক্ষ্ণ চোখে লিডিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি কীভাবে বিজ্ঞানীদের সাহায্য নেবে?”

“আমরা বলব এই মানুষের বাচ্চাগুলো আসলে কোনো মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় না। এরা জন্ম নেয় ল্যাবরেটরির কৃত্রিম পরিবেশে?”

“এটা কী সত্যি?”

“না। কিন্তু আমরা পৃথিবীর একাধিক ল্যাবরেটরিতে এটা করে দেখাব। যখন দেখানো হবে একটা স্তন্যপায়ী প্রাণী ল্যাবরেটরির কৃত্রিম পরিবেশে জন্ম নেয়ানো সম্ভব হয়েছে তখন সবাই মেনে নেবে এই প্রযুক্তি আছে। জার্নালে প্রকাশিত তথ্য কে অবিশ্বাস করবে?”

“একটা মিথ্যা গবেষণার ফল কীভাবে জার্নালে ছাপাবে?”

লিডিয়া শব্দ করে হাসল, বলল “আমার যে দুটি গবেষণা দিয়ে আমি বিজ্ঞানী মহলে পরিচিত হয়েছি দুটিই ভূয়া। রাজনীতিবিদদের যেভাবে কেনা যায় বিজ্ঞানীদেরও সেভাবে কেনা যায়। সবারই একটা মুল্য থাকে–সেই মূল্য দিতে রাজী থাকলে এগুলো খুব সহজ।”

“মানুষের যে বাচ্চাটকে পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি করতে চাও সেটা দেখতে কেমন হবে তুমি ভেবেছ?”

লিডিয়া মাথা নাড়ল, বলল, “ভেবেছি। তবে আমার ভাবনটাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা এটার জন্যে অনেকগুলো জরীপ নিতে পারি।”

উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী বলল, “তবু তোমার ভাবনাটা শুনি।”

“বড় বড় চোখ। চাপা নাক। মুখে হাসি। মানুষ থেকে আলাদা করার জন্যে দুই পায়ে দাঁড়া করানোর প্রয়োজন নেই। গায়ে পশম। নিউট্রাল জেন্ডার অর্থাৎ ছেলেও না মেয়েও না। এরা মানুষের প্রজাতির না সেটা প্রমাণ করার জন্যে বাড়তি কিছু ক্রমোজম দেয়া যেতে পারে।”

“আর কিছু?”

“কখনো চেহারার মাঝে দুঃখ বেদনায় ছাপ পড়বে না। যখন কষ্ট পাবে তখনও হাসবে। যন্ত্রণা পেলেও হাসবে। মানুষ কখনোই জানবে না তার ভেতরে কষ্ট আছে।”

উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “এই মানুষের বাচ্চার ব্যবসা করে কতো বিলিওন ডলার আসতে পারে তার যে হিসেবটি দিয়েছ সেটা আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। সঠিক হিসেব। ভালো কাজ হয়েছে।”

“ধন্যবাদ।”

“আমি যদি তোমার এই প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করতে চাই কতোদিন লাগবে?”

“তুমি কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে চাও তার উপর নির্ভর করবে। যদি টাকা পয়সা কোনো সমস্যা না হয় তাহলে দুই বছর।”

“ঠিক আছে মেয়ে, আমি তোমাকে দুই বছর সময় দিচ্ছি।”

“ধন্যবাদ।”

“তুমি এখন যেতে পার।”

লিডিয়া উঠে দাঁড়ল, বলল, “শুভ রাত্রি।”

“শুভ রাত্রি।”

লিডিয়া যখন ঠিক ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জী তাকে থামাল, বলল, “তুমি কী এই পোষা মানুষের বাচ্চার কোনো নাম ঠিক করেছ?

“করেছিলাম।”

“কী?”

লিডিয়া একটু ইতস্তত করে বলল, “এটাকে এনিম্যান বলা যায়। এনিম্যালের এনি এবং হিউমানের ম্যান। এনিম্যান।”

“ঠিক আছে লিডিয়া, তোমার এনিম্যান প্রজেক্ট সফল হোক।”