০৩. মিস্টার ফিক্সের অনুসন্ধান

একটু পরেই জেটিতে ফিক্সের সঙ্গে পাসপার্তুর দেখা হয়ে গেলো। ফিক্স শুধোলেন : কী-হে? তোমাদের পাসপোর্টে ঠিকঠাক স্বাক্ষর করা হয়েছে তো?

আরে! আপনি যে! ধন্যবাদ! হ্যাঁ, সবই ঠিক হয়েছে।

বম্বাই চলেছে বুঝি?

হ্যাঁ। এত তাড়াতাড়ি আমরা চলেছি যে এখনও আমার কাছে সবই স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। এইটে তো সুয়েজ, কেমন না?

হ্যাঁ, সুয়েজ।

তাহলে আমরা মিশরে, মানে আফ্রিকাতে, এসেছি! সত্যি-সত্যিই কি আমরা এখন আফ্রিকায়? একবার ভাবুন দেখি ব্যাপারখানা! আমার তো ধারণাই ছিলো না যে আমরা কখনও পারীর বাইরে যাবো। সেখানে কতক্ষণই-বা ছিলাম—একটি ঘন্টা মাত্র। এখন আমার বড় আপশোশ হচ্ছে। পারীর সুন্দর-সুন্দর জায়গাগুলো আবার দেখবার ইচ্ছে। হচ্ছে আর কেবলই মন-কেমন করছে!

তাহলে সত্যিই দেখছি তোমাদের বড় তাড়াতাড়ি চলতে হচ্ছে?

আমার আর তাড়াতাড়ি কী, আমার মনিবেরই যত তাড়াতাড়ি। ভালো কথা, আমাকে খান-কয় কামিজ আর একজোড়া জুতো কিনতে হবে। লণ্ডন থেকে রওনা হবার সময় আমাদের সঙ্গে ছোটো-একটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।

চলো, এক্ষুনি তোমাকে বাজারে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে যা-যা দরকার, সব পাবে।

আপনি অতি সজ্জন। সবিনয়ে বললে পাসপার্তু। আচ্ছা, চলুন তাহলে। একট তাড়াই আছে আমার। জাহাজ-ছাড়ার আগেই আবার আমাকে ফিরে আসতে হবে কিনা।

ফিক্স বললেন : এখনও জাহাজ ছাড়ার ঢের দেরি আছে। এই তো সবে বারোটা বেজেছে।

পাসপার্তু পকেট থেকে তার প্রকাণ্ড ঘড়িটা বার করলো। ঘড়িটা সম্ভবত তার ঠাকুরদার আমলের। বারোটা বেজেছে! আমার ঘড়িতে তো নটা বাহান্ন বাজে।

বাইরের দিকে পা চালাতে-চালাতে ফিক্স বললেন : তাহলে তোমার ঘড়ি ভুল।

ভুল! পাসপার্তুর গলা কেমন তীক্ষ্ণ্ণ হয়ে উঠলো। ঠাকুর্দার আমল থেকে ঘড়িটা ঠিক সময় দিয়ে আসছে, একটুও এদিক-ওদিক টা-ফেঁা করেনি, আর আজ কিনা ভুল হয়ে গেলো! ইল্লি। বছরে পাঁচমিনিটও এদিক-ওদিক হয় না—আর আজ দু-তিন ঘণ্টার ফারাক হয়ে গেলো! কী বলছেন, মশাই, আপনি? এ কি আমার যে-সে ঘড়ি! ঠিক যেন একটা ক্রনোমিটার?

কেন-যে সময়ের অত তফাৎ হয়েছে, আমি তা বুঝতে পেরেছি, ফিক্স বললেন : তোমার ঘড়িতে লণ্ডনের সময় আছে। সুয়েজের সময় আর লণ্ডনের সময় এক নয়-সুয়েজে যখন বারোটা, তখন লণ্ডনে প্রায়-দশটা। যেখানেই যাও, বেলা ঠিক বারোটার সময় সেই দেশের ঘড়ির সঙ্গে নিজের ঘড়ি মিলিয়ে নিয়ো–তাহলেই ঠিক সময় থাকবে।

বললেই হলো আর-কি। চাইনে আমি অন্য দেশের সময়। আমার ঘড়ি যেমন আছে, তেমনি থাক। আমার ঘড়ি কি ভুল হতে পারে, মশায়? সগর্বে পাসপার্তু তার ঘড়িটা পকেটের মধ্যে রেখে দিলে।

ফিক্স শুধোলেন : তোমরা বোধহয় বেজায় তাড়াহুড়ো করেই লণ্ডন থেকে বেরিয়েছো? যাচ্ছো কোথায়?

হ্যাঁ, খুব তাড়াহুড়ো করেই বেরুতে হয়েছে আমাদের। বুধবার রাত ঠিক আটটার সময় আমার মনিব তার ক্লাব থেকে ফিরে এলেন, তারপর ঠিক পৌনে-এক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের বেরিয়ে পড়তে হলো। উনি সারা দুনিয়া ঘুরে আসতে বেরিয়েছেন কি-না, তাই বরাবর সামনের দিকেই চলেছি আমরা।সোজা নাকবরাবর।

সারা দুনিয়া ঘুরে আসতে বেরিয়েছেন? বিশ্বপরিভ্রমণে?

হ্যাঁ, তাও আবার মাত্র আশিদিনে। আমাকে বললেন যে, বাজি রেখে এই কাজে হাত দিয়েছেন—কিন্তু, আপনাকে বলতে আপত্তি নেই, আমি এ-কথার বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করিনে। মাথার ঠিক থাকলে কি কেউ এমন আজব বাজি ধরে, এমনিতর কাজে হাত দেয়? আমার তো মনে হয় এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।

ভারি আশ্চর্য মানুষ তো তোমার মনিব! ওঁর জুড়ি মেলা ভার! উনি কি খুব ধনী নাকি।

ধনী বলে ধনী, বিরাট ধনী। টাকার একেবারে কুমির। তার সঙ্গে টাকা কত! সবই টাটকা ব্যাংক-নোট। খরচ করতে তো কুণ্ঠিত দেখিনে কখনও। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বম্বাই পৌঁছুতে পারলে মংগোলিয়ার এঞ্জিনম্যানকে ইনাম দেবেন বলেছেন।

তুমি বুঝি অনেকদিন থেকেই এঁর চাকরি করছো?

অনেকদিন? যেদিন আমরা লণ্ডন ছেড়েছি, ঠিক সেদিন থেকেই আমার চাকরির শুরু!

পাসপার্তুর কথা শুনে ফিক্সের মন যে কীভাবে আলোড়িত হলো, তা সহজেই অনুমেয়। ব্যাংকে চুরি হওয়ার পরেই অত তাড়াহুড়ো করে লণ্ডন থেকে বেরিয়ে-পড়া, সঙ্গে কাড়িকাড়ি ব্যাংক-নোট, একটা বাজির ভান করে ভারতবর্ষে পৌঁছুনোর জন্যে এমন অধীর ব্যগ্রতা-এ-সমস্তই ফিক্সের সন্দেহকে আরো-সুদৃঢ় করে তুললো। আরো বিশদভাবে, খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে, খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে ফিক্স পাসপার্তুর সঙ্গে নানান কথা বলতে লাগলেন।

পাসপার্তু শুধোলে : বম্বাই তো ভারতবর্ষে, মানে এশিয়ায়? এখান থেকে বুঝি। অনেক দূর?

নেহাৎ কাছে নয়, জাহাজে দিন-দশেক লাগে।

উঃ! বাতিটার কথাই আমার দিনরাত মনে হচ্ছে!

বাতি? কীসের বাতি?

বিজলি বাতি। এমন তাড়াহুড়ো করে বেরুতে হয়েছিলো যে বেরুবার সময় বাতিটা যে নেভাতে হবে, সে-কথাই খেয়াল ছিলো না। যখন খেয়াল হলো, তখন বেজায় দেরি হয়ে গিয়েছে। মুখ ফসকে কথাটা যেই বলেছি, অমনি কর্তা জানালেন, বাতিটা তো জ্বলছে আমারই দোষে, ফলে আমার ভুলের মাশুল আমাকেই গুনতে হবে—যা বিল উঠবে, সবই দিতে হবে আমাকে! তা, ভেবে দেখুন, দিনে দু শিলিং করে গচ্চা দিতে হচ্ছে। ধরুন, যদি আশিদিন পরে ফিরেও আসি, কত টাকা আমায় মিছেমিছি খেসারৎ দিতে হবে। শুধু মুহূর্তের একটা ভুলে এতগুলো টাকা গুনাগার–

পাসপার্তুর ঘ্যানঘ্যান বাহাদুর গোয়েন্দা ফিক্সের কানের পোকাগুলোকেও যেন নড়িয়ে দিচ্ছিলো তখন। পাসপার্তুতে কত টাকা গচ্চা দিতে হবে, তাতে ফিক্সের কী! ফিক্স এখন আকাশে মস্ত একটা কেল্লা বানাচ্ছেন—ব্যাংককে পাকড়াতে পারলে কত টাকা পাবেন, তিনি তখন তার ভাবনাতেই মশগুল। ইনামের সঙ্গে-সঙ্গে নামও হবে তাঁর, কাগজে-কাগজে ছবি বেরুবে। সবাই তাকে একডাকে চিনতে পারবে। আহা, কবে যে চোরটার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিতে পারবেন।

পাসপার্তু তখন তার নিজের নামের মানে সাতকাহন করে ব্যাখ্যান করতে লেগেছে। তার নামের মানে সবখোল চাবি হলে কী হয়, নিজের কপালটাতেই সে কুলুপ এঁটে রেখেছে! নামের অবশ্য আরেকটি অর্থও হয়-ছবি বাঁধিয়ে রাখার ফ্রেম–তা সে নিশ্চয়ই নিজের ভাগ্যটাকেই এখন ফ্রেমে পুরে টাঙিয়ে রেখেছে। কোথায় সবখানে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াবে এই সবখোল চাবি, সব কুলুপে ঢুকে পড়বে অনায়াসে—না, বাঁধানো একখানা ছবি হয়েই শোভা বাড়াচ্ছে তার দুর্ভাগ্যের।

পাসপার্তুর নাকিকান্নাকে মোটেই প্রশ্রয় না-দিয়ে বাহাদুর গোয়েন্দা ফিক্সসাহেব পাসপার্তুকে নিয়ে গিয়ে তার যা-যা কেনাকাটা করার ছিলো, সেগুলো দরদাম করে, শস্তায় দাঁও বাগাবার ভঙ্গি করে, পাসপার্তুর কৃতজ্ঞতা অর্জন করে, অতঃপর তার কাছ থেকে বেশ অন্তরঙ্গভাবেই বিদায় নিলেন। এবং সটান পুর্নবার এসে হাজির হলেন কলের কাছে।

অতঃপর কন্সালের সঙ্গে ফিক্সের যা কথাবার্তা হলো, তা এইরকম:

না, না, কন্সাল। আমার আর-কোনো সন্দেহই নেই। যার জন্যে অ্যাদ্দিন হা-পিত্যেশ করে বসেছিলুম, সে-ই এখন সশরীরে এখানে এসে হাজির হয়েছে। লোকটি কিরকম ফেরেব্বাজ দেখুন-গুল দিয়ে বেড়াচ্ছে, সে না কি আশিদিনে আস্ত পৃথিবী ঘুরে আসবে। আরে, এ-যে তার একটা ধাপ্পা ছাড়া আর কিছু নয়, সে কি আর আমার বুঝতে দেরি আছে? ও-রকম বুজরুকি আমি ঢের-ঢের দেখেছি।

আপনার কথা ঠিক হলে বলতেই হয় লোকটা আসলে ধূর্তের শিরোমণি, সে এত দেশ-বিদেশ ঘুরে শেষকালে খোদ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চোখেই ধুলো দিয়ে লণ্ডন ফিরতে চায়! বইটি আমারবই.কম এর জন্য নির্মিত।

কী করে ফেরে, দেখবো।

কিন্তু আপনার কোনো ভুল হয়নি তো?

আমার ভুল? ফি যেন বিষম অপমানিত বোধ করলেন। আর যারই ভুল হোক, ডিটেকটিভ ফিক্সের কখনও ভুল হয় না। ফিক্স উইল ফিক্স হিমইভেনচুয়্যালি।

কিন্তু সে-যে সুয়েজ পেরিয়ে যাচ্ছে, তা সে প্রমাণ করবার জন্যে এমন উঠেপড়ে লেগেছে কেন?

আসল কারণ জানিনে। তবে ধাপ্পাটা বজায় রাখবার জন্যেই হয়তো। হয়তো এই ভাণটা বাহাল রাখতে চায় যে সে পৃথিবীভ্রমণেই বেরিয়েছে। যাক, আমি এক্ষুনি লণ্ডনে তাড়া দিয়ে তার করছি যাতে বম্বাইতে ওয়ারেন্টটা পেয়ে যাই। ভারতবর্ষের মাটিতে পা দেবার সঙ্গে-সঙ্গে বাছাধনকে পাকড়াতে হবে। আমিও মংগোলিয়ায় এই ব্যাংকদস্যুর সহযাত্রী হবো। দেখবো, কী করে আমার কবল থেকে সে পালায়।

বলে কন্সলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিক্স প্রথমে গেলেন ডাক ও তারের আপিশে-লণ্ডনে টেলিগ্রাফ পাঠালেন তিনি, যাতে বম্বাইতে নামবামাত্র ওয়ারেন্ট হাতে পান। তারপর ছোট্ট একটা ব্যাগে নিজের জামাকাপড় পুরে সোজা গিয়ে হাজির হলেন মংগোলিয়ায়। একেবারে ঠিক সময়েই পৌঁছেছিলেন। একটু বাদেই চোঙ দিয়ে কালোধোঁয়া ওগরাতে-ওগরাতে মংগোলিয়া নীল সমুদ্রে পাড়ি জমালে।

সুয়েজ থেকে এডেন তেরোশো দশ মাইল দূরে, কম্পানির সব জাহাজই অতটা পথ সবমিলিয়ে একশো আটত্রিশ ঘটায় পেরিয়ে আসে।

জাহাজে উঠেই ফিলিয়াস ফগ বন্ধু জুটিয়ে নিয়েছেন—বন্ধু মানে তাশুঁড়ে, যাঁদের সঙ্গে বসে-বসে তিনি হুইস্ট খেলবেন। জাহাজেরই সঙ্গী সবাই-জীবনে এই-প্রথমবার তাদের তিনি চর্মচক্ষে দেখলেন। ডেকে গিয়ে পায়চারি করার বদলে, অন্তহীন নীল জলের একঘেয়ে উচ্ছ্বাস দেখার বদলে, হরতন রুহিতন চিড়েন ইকাবনেই ফিলিয়াস কগের আগ্রহ বেশি। টেক্কা-সাহেব-বিবি-গোলাম-এ-সব হাতে থাকলে তার ককখনও একঘেয়ে বা অসহ্য লাগে না।

পাসপার্তুও আচমকা-এই-সমুদ্রযাত্রাকে শেষটায়, খুশিমনেই, মেনে নিয়েছে। দিব্বি কোনো কাজকর্ম নেই, ফাইফরমাশ খাটা নেই, জাহাজের সেলুনে আর ডাইনিংরুমে ভালোমন্দ গেলো, আর হজমের যাতে গোলমাল না-হয়, বাকি সময়টা ডেকে পায়চারি করে বেড়াও।

আর সুয়েজ থেকে বেরুবার পরের দিনই পায়চারি করতে গিয়ে পাসপার্তুর সঙ্গে আচমকা দেখা হয়ে গেলো ফিরে। দেখেই, পাসপার্তু গায়ে পড়েই এগিয়ে গেলো ফিক্সের দিকে। আপনার সঙ্গেই তো সুয়েজের জাহাজঘাটায় দেখা হয়েছিলো, তাই না?

আরে, তা-ই তো বটে। তুমিই সেই ইংরেজ ভদ্রলোকের সঙ্গে পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়েছো–

আপনি ঠিকই ধরেছেন মিস্টার—

আমার নাম ফিক্স।

মিস্টার ফিক্স, আপনাকে জাহাজে দেখে খুব খুশি হলাম। যাচ্ছেন কোথায়?

বম্বাই।

বাঃ, ভালোই হলো। আপনি কি আগে আর-কখনও বম্বাই গিয়েছিলেন?

অনেকবার। পি, অ্যাণ্ড ও. কম্পানির আমি একজন এজেন্ট কি-না। আমাকে তো আখছার নানা জায়গায় যেতে হয়।

ভারতবর্ষের সঙ্গে আপনি তাহলে পরিচিত দেখছি। ভারতবর্ষ ভারি-একটা আজব দেশ, কেমন না?

তা একরকম আজব দেশ বলতে পারো। ফিক্স তার পুঁথি-পড়া বিদ্যেকে স্মরণ করবার চেষ্টা করলেন। সেখানে কত মন্দির মশজিদ মিনার আছে। কত সাপ-বাঘ সেখানে দেখতে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, তা মিস্টার ফগ ভালো আছেন তো?

বেশ সুস্থ আছেন। আমিও ভালোই আছি। ঠিক রাক্ষসের মতো খাচ্ছি আজকাল। সমুদ্রের হাওয়া বোধহয় খিদে বাড়ায়।

কই, তোমার মনিব তো কখনও ডেকে আসেন না?

না। এসব বিষয়ে তার মোটেই কোনো কৌতূহল নেই।

আমার মনে হয়, এই আশিদিনে সারা দুনিয়া ঘুরে আসার ব্যাপারটা একটা ভান মাত্র। এর ভেতরে নিশ্চয়ই বিশেষ-কোনো-একটা গুরুতর বিষয় লুকোনো আছে। তুমি কী বলে?

শপথ করে বলতে পারি, আমি এ-সবের কিছুই জানি না। আর সে-বিষয়ে কিছু জানবার আগ্রহও নেই আমার।

তখনকার মতো কথাবার্তা এখানেই শেষ হলো। কিন্তু পরে সুযোগ পেলেই ফিক্স পাসপার্তুর কাছ থেকে খবর বার করবার চেষ্টা করতেন। সেজন্য মাঝে-মাঝে দু-এক গেলাশ মদ্যপান করতে আমন্ত্রণ জানাতেন তিনি। মদিরা সেবনে পাসপার্তুর কখনোই কোনো অনীহা নেই। সে ভাবতো, বাঃ, লোকটা কী ভদ্র, অমায়িক, এমন ভদ্রলোক তোত সচরাচর দেখা যায় না!

দ্রুতগামী মংগোলিয়া মোম্বাসা ছাড়লো, বেবেলমণ্ডেব ছাড়লো, ক্রমে-ক্রমে এড়েন বন্দরের উত্তরে অবস্থিত স্টীমার-পয়েন্ট ছাড়িয়ে এলো। বম্বাই তখনও যোলোশো-পঞ্চাশ মাইল দূরে। পনেরো তারিখে এডেন পৌঁছুবার কথা হলেও চোদ্দই অক্টোবর সন্ধেবেলাতেই মংগোলিয়া এডেন পৌঁছেছিলো। ফিলিয়াস ফগ তাই পনেরো ঘণ্টার মতো সময় হাতে পেলেন। স্টীমার-পয়েন্টে নেমে ফিলিয়াস ফগ পাসপোর্টে সই করিয়ে এনেছিলেন। বলা বাহুল্য, হুশিয়ার ও ধুরন্ধর ফিক্স অলক্ষ্যে তখন তাকে অনুসরণ করতে ছাড়েননি।

সন্ধে ছটার জাহাজের নোঙর উঠলো। বিপুল ভারত মহাসাগরের উচ্ছ্বসিত নীল জল কেটে তরতর করে বম্বাইয়ের দিকে চললো মংগোলিয়া। তখনও বম্বাই প্রায় একশো সত্তর ঘণ্টার পথ ছিলো।

আকাশ ছিলো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ। আবহাওয়া ছিলো চমৎকার। আস্তে-আস্তে বাতাস বইছিলো। ক্যাপ্টেন সুযোগ বুঝে পাল তুলে দিলেন। কলে আর পালে দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে উঠলো জাহাজের গতি।