০৩. ভাষ্যকার
প্ৰাথমিক এক বৈদিক সাহিত্যের ভাষা ছিল আচার্য ও শিষ্যের আলাপ অর্থাৎ মৌখিক এবং এই জন্যই সেগুলি সংরক্ষিত হয় নি। অধিকাংশ আর্য বালকের শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যতালিকা ছিল বেদের সূক্তগুলি; যেহেতু দেবতারা সাধারণ্যে পরিচিত ছিলেন এবং সঙঘবদ্ধ সামাজিক অনুষ্ঠানরূপে যজ্ঞ প্রায়ই আয়োজিত হত আর সমগ্র সমাজ এতে অংশগ্রহণ করত—তাই ভায্যের প্রয়োজন সম্ভবত খুবই সীমাবদ্ধ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যজ্ঞানুষ্ঠান যতই বিরল ও দীর্ঘ ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হতে লাগল এবং সেই সঙ্গে বৌদ্ধধর্ম ও আনুক্রমিক যুগবাহিত নুতন অধ্যাত্মবিদ্যার মধ্য দিয়ে নূতন নূতন চিন্তার প্রচলন হতে লাগল, —প্রাচীন সাহিত্যের সংরক্ষণ করার প্রয়োজন ততই অনুভূত হল ; ফলে নানারকম ভাষ্যও রচিত ? সংরক্ষিত হল। এদের মধ্যে আদিমতম হচ্ছে ব্ৰাহ্মাণ গ্রন্থগুলি ; পরবতীকালে আরণ্যক ও উপনিষদ সাহিত্যে যজ্ঞ প্রতীকীভাবে ব্যাখ্যাত হল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত কোন ভাষ্য আমরা পাই নি, সম্ভবত সেগুলি থাকলেও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
যে সমস্ত ভাষ্যকারীদের রচনা আমাদের কালে এসে পৌঁছেছে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে খ্যাতকীর্তি ব্যক্তিদের নাম হল : স্কন্দস্বামী, নারায়ণ, উদগীথ, হস্তামলক, উবট (১১শ শতাব্দী), বেঙ্কটমাধব (১২শ), আনন্দতীর্থ (১২ ১৩শ), আত্মানন্দ (১৩শ), সায়ণ (১৪শ), রাবণ (১৬শ), দেবস্বামী, ভট্টভাস্কর, হরদত্ত, সুদর্শনসূরি, ভবস্বামী, রাহুদেব, শ্ৰীনিবাস, ভাস্করমিশ্র, মাধবদেব ও মাধবাচার্য। লুই হ্রনু বলেছেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ঋগ্বেদ সাহিত্য ভাষ্যের বিবিধ প্রবণতার প্রেরণাস্থল হয়েছে—কিছু কিছু ব্যাখ্যা যজ্ঞানুষ্ঠানকেন্দ্ৰিক, কিছু বা দুরাবগাহী ভাবনাকেন্দ্ৰিক, কিছু কিছু আবার প্রত্নকথা ও কাল্পনিক উপাখ্যানের অনুগামী। ভাষ্যকারীদের আপনি প্রবণতা অনুসারেই ভাষ্যগুলির চরিত্রে এই পরিবর্তন।