০৩. ববি রায় যেখানে গাড়িটা থামালেন

ববি রায় যেখানে গাড়িটা থামালেন সে জায়গাটা লীনার চেনা। ডান ধারে ওই দেখা যাচ্ছে যুবভারতী স্টেডিয়াম, ছড়ানো-ছিটানো লোকালয়।

ববি রায় বললেন, রাস্তাঘাট তো আপনি ভালই চেনেন। গাড়ি নিয়ে একা ফিরে যেতে পারবেন তো!

পারব। কিন্তু—

কিন্তু, ৩বে, তার মানে, এই সব শব্দগুলোকে বর্জন করতে হবে। এ দেশের লোকেদের কোনও কাজই এগোতে চায় না ওই সব দ্বিধা, দ্বন্দ্ব আর ভয়ের দরুন।

লীনা ফুঁসে উঠে বলল, আপনি যে একটা ইচ্ছেমতো মিস্ত্রি তৈরি করছেন না, তা কী করে বুঝব? মিস্ত্রি তৈরি করব? কেন, ববি রায়ের কি এতই বাড়তি সময় আছে?

সেটাই বুঝতে পারছি না।

ববি রায় মাথা নেড়ে বললেন, মিষ্ট্রি হয়তো একটা তৈরি হয়েছে, তবে সেটা আমি তৈরি করিনি।

লীনা গলায় যথেষ্ট রাগ পুষে রেখে বলল, তা হলে শেষ অবধি আমাকে করতে হবে কী? একটা কোডেড ইনফরমেশন কম্পিউটার কি করা তো?

ববি রায় মাথা নাড়লেন, না। ইনফরমেশনটা কিল করতে হবে যদি আমার মৃত্যু ঘটে, তবেই।

‘তার মানে’ বলতে গিয়েও লীনা নিজেকে সামলে নিল।

ববি রায় বললেন, আমার মৃত্যু কোথায় কীভাবে হতে পারে তা তো আপনার জানার কথা নয়। আমি হাইডিং—–হাইডিং মানে কী বলুন তো?

আত্মগোপন করা।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, আর একটা সহজ বাংলাও আছে না! গা-ঢাকা না কী যেন!

আছে।

আমি গা-ঢাকা দিচ্ছি। অফিস পুরোপুরি আপনার হাতে। বি কেয়ারফুল।

এইটুকু বলেই ববি রায় সুইচ টিপলেন, ড্রাইভারের দিককার দরজা খুলে গেল, ববি রায় নেমে দাঁড়ালেন। দরজা বন্ধ করার আগে লীনার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে বললেন, এ গাড়ির অটোমেটিক গিয়ার। পুরোপুরি ইলেকট্রনিক। স্মদ ড্রাইভ।

কিন্তু আপনি কথাটা শেষ করেননি।

কোন কথাটা?

ঠিক কখন আমাকে কম্পিউটার ইনফরমেশন কি করতে হবে।

ওঃ ঠিক খবর পেয়ে যাবেন। মৃত্যুকে লুকোনো যায় না। চলি।

লীনা রাগে বিস্ময়ে দেখল, লোকটা দরজাটা ঠেলে বন্ধ করে দিয়ে চোখের পলকে কোথায় অন্ধকারে মিলিয়ে গেল তা গাড়ির ভেতর থেকে ভাল বুঝতেই পারল না লীনা।

এই বেশ বড়সড় অটোমেটিক অচেনা গাড়িটাই বা কেন জগদ্দলের মতো চাপিয়ে গেল তার ঘাড়ে তাই বা কে বলবে!

এই নির্জন রাস্তায় বসে চিন্তাভাবনা করা এবং সময় কাটানো বিপজ্জনক। লীনা ড্রাইভারের সিটে বসল, গাড়ি স্টার্ট দিতে চেষ্টা করতে লাগল। হচ্ছিল না, বুকটা কাঁপছে লীনার।

আচমকাই তাকে আপাদমস্তক শিহরিত করে একটি পুরুষকণ্ঠ বলে উঠল, ও ডারলিং, ইউ ফরগট দা কী।

অভিভূত লীনার কয়েক সেকেন্ড লাগল ব্যাপারটা বুঝতে, কিন্তু কথা-বলা গাড়ির কথা সে শুনেছে, মনে পড়ল।

ড্যাশবোর্ডে প্রায় একটা জেট প্লেনের টার্মিনালের মতো নানারকম আলোর নিশানা। অস্কৃত গোটা কুড়ি ডায়াল। খুঁজে-পেতে চাবিটা বের করল লীনা।

গাড়ি চমৎকার শব্দহীন স্টার্ট নিল। তারপর অতি মসৃণ গতিতে ছুটতে শুরু করল।

মাঝে মাঝে সেই মোলায়েম পুরুষকণ্ঠ বলতে লাগল, ডারলিং ডোন্ট ফরগেট দি গিয়ার, টাইম টু চেঞ্জ… ওঃ সুইট সুইট ডারলিং, ইউ ক্যান হ্যান্ডেল এ কার… নাউ ডোন্ট প্রেস দি ব্রেক সো হার্ড, ইট গিভস মি এ ব্যাড জোল্ট… উড ইউ লাইক সাম মিউজিক লাভ? প্রেস দি ব্লু বাটন…।

এই বকাবাজ কণ্ঠটিকে বন্ধ করার উপায় জানা নেই লীনার, সে দাঁতে সঁাত টিপে যতদূর সম্ভব গতিতে গাড়িটা চালাতে লাগল। এখনও সময় আছে। অ্যাকাডেমিতে গিয়ে দোলনকে ধরা যাবে।

মোলায়েম দাড়ি, মধ্যম দীর্ঘ, ছিপছিপে, প্যান্ট আর হ্যান্ডলুমের পাঞ্জাবি পরা কাঁধে ঝোলাব্যাগ। অ্যাকাডেমির ফটকের ভিতরে উদাসীন মুখ নিয়ে দোলন দাঁড়িয়ে।

গাড়িটা পার্ক করে দরজা খুলে নামতে যাবে, পুরুষকণ্ঠটি বলে উঠল, লাভ, ইউ হ্যাভ ফরগটন দি কী।

লীনা চাবিটা ড্যাশবোর্ড থেকে খুলে নিল। রিংএ দুটো চাবি, একটা দরজার।

দোলন।

দোলন গোল গোল চোখে তার দিকে চেয়ে বলল, আরিব্বাস? তুমি এ গাড়ি কোথায় পেলে?

অফিস দিয়েছে।

বেড়ে অফিস তো? ঘ্যাম গাড়ি।

শো শুরু হতে আর বাকি নেই। চলো।

দোলন অনিচ্ছের সঙ্গে গাড়িটা থেকে চোখ ফিরিয়ে বলল, অফিস তোমাকে গাড়ি দেয়?

দিল তো!

তুমি তো শুনেছি মিস্টার রায়ের অফিস-সেক্রেটারি। সেক্রেটারিরা কি গাড়ি পায় লীনা? তার ওপর ওরকম দুর্দান্ত গাড়ি?

লীনা হেসে বলল, এমনিতে দেয়নি, অনেক ব্যাপার আছে। পরে বলব।

দু’জনে বাগানের ভিতর দিয়ে হল-এর দিকে হাঁটছিল, হঠাৎ দোলন বলল, তুমি আমার পক্ষে বড্ড বড় লীনা, বড্ড হাই।

তুমি এত কমপ্লেক্সে ভোগো কেন? বলছি তো সব বুঝিয়ে বলব, শুনলে দেখবে, আমি এখনও একজন নিতান্তই ছাপোষা সেক্রেটারি মাত্র।

দোলন জবাব দিল না। নাটক দেখার সময় ও কোনও কথা বলল না। কাটা হয়ে বসে রইল।

নাটক শেষ হলে লীনা বলল, চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

দোলন প্রায় আঁতকে উঠে বলল, ওই গাড়ি নিয়ে উত্তর কলকাতায়? মাপ করো লীনা। ঢের বাস আছে, চলে যাব।

উঃ, তুমি যে কী প্রিমিটিভ না! আচ্ছা, অন্তত এসপ্লানেড পর্যন্ত তো চলো।

গাঁইগুই করে দোলন রাজি হল।

কিন্তু গাড়িতে উঠতেই বিপত্তি। চাবিটা সবে ঢুকিয়েছে লীনা, গাড়ি অমনি বলে উঠল, আই সি ইউ হ্যাভ এ ফ্রেন্ড ডারলিং।

দোলন প্রায় বসা-অবস্থাতেই লাফিয়ে উঠবার চেষ্টা করল, এ কী? কে?

লীনা হেসে গড়িয়ে পড়ে বলল, ভয় পেয়ো না। এসব ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস। আমেরিকান বড়লোকদের জন্য জাপান বানায়।

দোলন নির্বাক বিস্ময়ে বসে রইল।

পুরুষকণ্ঠ ভারী অমায়িকভাবে জিজ্ঞেস করল, ইজ ইট এ বয়ফ্রেন্ড ডারলিং? গুড ইভনিং বয়ফ্রেন্ড। হ্যাভ এ নাইস টাইম।

লীনার পরিষ্কার মনে আছে ববি রায় যতক্ষণ গাড়িটা চালাচ্ছিলেন তখন কণ্ঠস্বরটি স্তব্ধ ছিল। ববি নেমে যাওয়ার সময়ে বোধহয় দুষ্টুমিটুকু করে গেছেন।

বয়ফ্রেন্ড কথাটা দু’বার ধাক্কা দিল লীনাকে, বয়ফ্রেন্ড! যদি ববি রায় মারা যায় তা হলে—

লীনা, এ গাড়ি সত্যি তোমাকে অফিস থেকে দিয়েছে?

বললাম তো! বিশ্বাস হচ্ছে না?

হচ্ছে। তবে তুমি খুব বিগ বিগ ব্যাপারের মধ্যে চলে গেছ বলে মনে হচ্ছে।

না, দোলন। বিগ ব্যাপার নয়। তবে আমি একটা মুশকিলে পড়েছি। তোমাকে একদিন সব বলব।

কী দরকার লীনা? কথার মাঝখানে হঠাৎ পুরুষকণ্ঠ বলে উঠল, হোয়াট ইজ ইয়োর বার্থ-ডে বয়ফ্রেন্ড?

দোলন হঠাৎ লীনার হাত চেপে ধরে বলল, আমার মনে হচ্ছে গাড়ির পিছনের সিটে কেউ লুকিয়ে আছে। আলোটা জ্বালো তো।

লীনা একটু চমকে উঠল এ কথায়। খুঁজে-পেতে আলোর বোতামটা পেয়েও গেল।

না, পিছনের সিটে কেউ নেই। একদম ফাঁকা।

লীনা লাইটটা নিবিয়ে দিয়ে বলল, এমন ভয় পাইয়ে দাও না মাঝে মাঝে!

তোমার গাড়ি আমার জন্মদিন জিজ্ঞেস করছে কেন?

না হয় করলই, তাতে তোমার পিছনের সিটে কেউ লুকিয়ে আছে বলে মনে হল কেন?

কেন মনে হল? কারণ আমার জন্মদিন আজ। সন্দেহ হচ্ছিল, আমার চেনা কোনও বন্ধুবান্ধবকে তুমি গাড়িতে লুকিয়ে এনেছ যে আড়াল থেকে রসিকতা করে যাচ্ছে।

আজ? হিয়ার ইজ মিউজিক ফর ইউ বয়ফ্রেন্ড।

‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ বাজতে লাগল লুকনো স্পিকারে। দোলন বাক্যহারা হয়ে গেল।

লীনা কিন্তু ভ্রু কুঁচকে ভাবছিল। দোলনের জন্মদিন কবে যে তা সে নিজেও এতকাল জানত না। সুতরাং এই গাড়ির ইলেকট্রনিক মগজেরও জানবার কথা নয়। তবে কি কোনও সংকেত? বার্থ ডে? ক’টা অক্ষর হচ্ছে? ঠিক আটটা, কম্পিউটারের আটটা ঘর, পরবর্তী কোড।

তোমার বস কেমন লীনা?

কেমন? কেন, ভালই।

মানে কত বয়স-টয়স?

আর ইউ জেলাস?

আরে না, বলোই না!

পঁয়ত্রিশ থেকে আটত্রিশের মধ্যে।

ম্যারেড?

কী করে জানব?

খুব স্মার্ট না?

লীনা হেসে ফেলল, ইউ আর রিয়েলি জেলাস। শোনো তোমাকে একটা কথা বলি। ববি রায় বিশ্ববিখ্যাত লোক। ইলেকট্রনিক উইজার্ড। আমি কেন, পৃথিবীর কোনও মেয়ের দিকেই মনোযোগ দেওয়ার মতো সময় লোকটার নেই। যদি ম্যারেড হয়ে থাকে তবে ওর স্ত্রীর মতো হতভাগিনী কমই আছে।

বুঝলাম।

লোকটা দেখতে কেমন জানতে চাও? লম্বায় তোমার চেয়ে অন্তত দু’ইঞ্চি কম। কালো, রোগা, ছটফটে। দেখলে মনেই হবে না যে লোকটা জিনিয়াস।

এসপ্লানেড এসে গেল। দোলন কেমন স্বপ্লেখিতের মতো নামল। লীনার দিকে একবার তাকিয়ে হাতখানা একবার তুলে দায়সারা বিদায় জানিয়ে ভিড়ে মিশে গেল।

আগামীকাল লীনার অফিসে যাওয়ার কথা আগে থেকেই হয়ে আছে দোলনের। কাল লীনা মাইনে পাবে। দু’জনের সন্ধের খাবারটা পার্ক স্ট্রিটে খাওয়ার কথা।

নিরাপদেই বাড়ি ফিরে এল লীনা। শুধু সারাক্ষণ ওই পুরুষকণ্ঠের টীকা-টিপ্পনী সয়ে যেতে হল। কাল সকালে চেষ্টা করে দেখবে কীভাবে ওটা বন্ধ করা যায়।

বাড়িতে দুটো গ্যারেজ। গাড়িটা সুতরাং গাড়ি-বারান্দার একধারে রাখতে হল লীনাকে।

যখন ঘরে এল লীনা তখন হঠাৎ রাজ্যের ক্লান্তি এসে শরীরে ভর করল। একটা দিনে কত অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে গেল। কোনও মানে হয়? এখনও মনে হচ্ছে বোধহয় স্বপ্ন।

খাওয়ার টেবিলে লীনার সঙ্গে তার বাবার দেখা হতেই কুঞ্চনসহ প্রশ্ন, তুমি কার গাড়ি নিয়ে এসেছ?

অফিসের।

অফিস তোমাকে গাড়ি দিচ্ছে কেন?

একটা জরুরি কাজে কিছু ঘোরাঘুরি করতে হবে, তাই।

তা বলে এত দামি গাড়ি?

লীনা বিরক্তির গলায় বলল, গাড়িটা তো আর দান করেনি, ধার দিয়েছে।

কেন? অ্যাম্বাসাডার ফিয়াট মারুতি, এসবও তো ছিল।

আমি অত জানি না, দিয়েছে ব্যবহার করছি।

বাবা একটু চুপ করে থেকে বলল, তোমার দাদার হয়তো এরকম গাড়ি আছে। তুমি তার কাছ থেকে–

লীনা প্লেট ছেড়ে উঠে বলল, সন্দেহ হলে খোঁজ নিতে পারো, তবে ওটা দাদার গাড়ি নয়।

তোমার বস ববি রায়কে আমি কাল টেলিফোনে জিজ্ঞেস করব।

কোরো।

ঠিক আছে। খেয়ে নাও।

লীনা বৈষ্ণবীর দিকে চেয়ে চেয়ে বলল, খাবারটা আমার ঘরে দিয়ে এসো।

মা অন্যধার থেকে মেয়ের দিকে একবার তাকাল। তারপর বলল, তোমার রাগ করা উচিত নয়। এত বড় একটা আধুনিক গাড়ি অফিস থেকে তোমাকে দেবে কেন?

ইউ আর জেলাস।

লীনা সবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

ঘরে বসেই খেল লীনা। বৈষ্ণবী এঁটোকাঁটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর সে তার ব্যাগ খুলে কার্ডটা বের করল। ববি রায়ের দেওয়া। কম্পিউটার ক্রিয়াশীল করার কিছু সংকেত, ববি রায়ের ছাপা ফোন নম্বর ইত্যাদি।

কার্ডটা ওলটাতেই চমকে গেল লীনা, শুধু চমকাল না, তার সারা শরীর রাগে রি রি করে কাঁপতে লাগল। ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল মুখ-চোখ। সে অত্যন্ত জ্বালাভরা চোখে চেয়ে ছিল ডটপেনে লেখা একটা লাইনের দিকে, আই লাভ ইউ।

না, এর একটা বিহিত করা দরকার। দাঁতে দাঁত পিষে লীনা গিয়ে লিভিংরুমে টেলিফোনটা এক ঝটকায় তুলে ক্রুদ্ধ আঙুলে ববি রায়ের নম্বর ডায়াল করল।

ওপাশ থেকে একটা নিরাসক্ত গলা বলে উঠল, ববি রায় ইজ নট হোম…ববি রায় ইজ নট হোম।

লীনা তীব্র স্বরে বলল, দেন হোয়ার ইজ হি?

উদাসীন গলা বলেই চলল, ববি রায় ইজ নট হোম… ববি রায় ইজ নট হোম…

আই হেট হিম।

ববি রায় ইজ নট হোম।

লীনা একটু থমকাল। সে যতদূর জানে, এ দেশে এখনও টেলিফোনে রেকর্ডেড মেসেজ-এর ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ববি রায়ের বাড়ির টেলিফোনে রেকর্ডেড মেসেজই শোনা যাচ্ছে। অবশ্য ইলেকট্রনিকসের জাদুকরের পক্ষে এসব তো ছেলেখেলা।

লীনা ঘরে ফিরে এল এবং ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোল।

পরদিন সকালে যখন অফিসে বেরোতে যাবে লীনা, তখন দিনের আলোয় গাড়িটা ভাল করে দেখল সে। জাপানি গাড়ি। এর কত লাখ টাকা দাম তা লীনা জানে না। কিন্তু এত দামি গাড়ি তার হাতে এত অনায়াসে ছেড়ে দেওয়াটারও মানে সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।

গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে লীনা, চাবিটা ঘোরানো মাত্র সেই মোলায়েম পুরুষকণ্ঠ বলে উঠল, গুড মর্নিং ডারলিং, আই লাভ ইউ।

অসহ্য! লীনা পাগলের মতো যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়া করল, গলাটাকে বন্ধ করার জন্য, পারল না।

তারপর চুপ করে বসে রাগে বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগল। তারপর মাথার মধ্যে যেন খট করে একটা আলো জ্বলে উঠল। তাই তো, আই লাভ ইউ, এটা তো প্রেমের বার্তা নয়। আই লাভ ইউ-তে যে মোট আটটা অক্ষর।

লীনা একাই একটু হাসল। মাথা ঠান্ডা হয়ে গেল। গাড়ি ছাড়ল সে।

অফিসে এসে নিজের ঘরখানায় বসে একটু কাগজপত্র গুছিয়ে নিল সে। তারপর উঠে ববি রায়ের চেম্বারে গিয়ে ঢুকল।

ঢুকেই আপাদমস্তক শিউরে উঠল সে।

একটা লম্বা চেহারার যুবক শিস দিতে দিতে টেবিলের ওপর ঝুঁকে কী যেন খুঁজছে, খুব নিশ্চিন্ত ভঙ্গি।

লীনা হঠাৎ ধমকে উঠল, হু আর ইউ?

যুবকটিও ভীষণ চমকে উঠল। শুধু চমকালই না, সটান দুটো হাত মাথার ওপর তুলে দাঁড়াল, যেন কেউ তার দিকে পিস্তল তাক করেছে। তারপর হাত দুটো নামিয়ে বলল, ও, আপনার তো পিস্তল নেই দেখছি।