এইরূপে অন্ধরাজ ভাবিতে ভাবিতে।
কাটালেন পঞ্চদশ বর্ষ হস্তিনাতে।।
ভোজনে না রুচে অন্ন নিদ্রা নাহি হয়।
নিরন্তর অন্ধরাজ চিন্তিত হৃদয়।।
কি করিব, কি হইবে, চিন্তা অনুক্ষণ।
গৃহবাস হৈল মোর নিগড় বন্ধন।।
যুধিষ্ঠির কদাচিৎ না ছাড়িবে মোরে।
কি কর্ম্ম করিব, বৃদ্ধ গৃহ-কারাগারে।।
কিমতে যাইব বনে, না দেখি উপায়।
দুই চক্ষুহীন বিধি করিল আমায়।।
আহা বিধি কোন্ বুদ্ধি করিব এখন।
কিরূপে হইবে মোর কারা-বিমোচন।।
কোন্ রূপে পরলোকে পাইব সদগতি।
কোন্ রূপে ধর্ম্মপথে হইবেক মতি।।
এই অনুশোচ করে দিবস রজনী।
গান্ধারীরে চাহি বলে কুরু-নৃপমণি।।
অবধান কর দেবি বচন আমার।
গৃহবাস হৈল মোর মহা কারাগার।।
মহাপাশে বান্ধিয়া রাখয়ে যেন লোকে।
তেমতি বন্ধনে আছি দৈবের বিপাকে।।
বিধি মোরে বিড়ম্বিল করি নানা পাকে।
মহামায়া জালে বন্দী করিল আমাকে।।
পরবশবর্ত্তী হয়ে আজন্ম বঞ্চিনু।
আপনার বংশ আমি আপনি নাশিনু।।
পাপ চেষ্টা করি জন্ম গেল মিছা কাজে।
কিরূপে পাইব ত্রাণ ভবসিন্ধু মাঝে।।
না দেখি উপায়, ভবসিন্ধু ঘোরতর।
কিরূপে হইব পার দুস্তর সাগর।।
এখন না চিন্তি যদি ইহার উপায়।
নিশ্চয় ঠেকিব ঘোর শমনের দায়।।
সেই ভয়ে ত্রাণকর্ত্তা প্রভু নারায়ণ।
ভক্তি বিনা বশ প্রভু নহে কদাচন।।
দান যজ্ঞ ব্রত হোম করে অনুব্রতে।
হরিভক্তি সমান নাহিক ত্রিজগতে।।
অভয় পদারবিন্দে ভক্তি আছে যার।
হেলায় তরিবে সেই এ ভবসংসার।।
হেন প্রভু ভক্তি আমি করিব কেমনে।
উপায় নাহিক মম এ ছার জীবনে।।
গান্ধারী বলয়ে, রাজা কহি সারোদ্ধার।
নিজ কর্ম্ম সাধিবারে হয়ত বিচার।।
ব্রহ্মচর্য্য আচরণ হয়ত বিধান।
হরি ভক্তি বিনা রাজা কর্ম্ম নাহি আন।।
যুধিষ্ঠির ছাড়িয়া না দিবে কদাচিৎ।
না মানিব উপরোধ, যাইব নিশ্চিত।।
তপোবনে প্রবেশিয়া তপ আচরিব।
যোগ আচরিয়া ভবসিন্ধু পার হব।।
ইহা বিনা কিবা আর আছয়ে উপায়।
ইথে অসম্মত কেন হয় ধর্ম্মরায়।।
এইরূপে বিচার করয়ে দুইজন।
নিশ্চিত যাইব বনে, নাহি নিবারণ।।
ভারতে আশ্রমপর্ব্ব অপূর্ব্ব কথন।
পয়ার প্রবন্ধে কাশীদাস বিরচন।।