০৩.
অ্যানসন ধুলো-ওড়ানো রাস্তাটার প্রায় শেষ প্রান্তে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, নাঃ লোহার দরজা খোলাই আছে, একেবারে হাট করে খোলা। সুতরাং কোন চিন্তা নেই। সে গাড়ি গ্যারেজে তুলল। তারপর গাড়ি থেকে নেমে ফটকের দরজা বন্ধ করে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়াল।
কড়া নাড়তে হলো না। মেগ যেন অপেক্ষাতেই বসেছিলো, দরজা খুলে দিলো। অ্যানসন ভিতরে ঢুকল। দরজা বন্ধ করে মেগ তার দিকে ফিরলো। বলল একেবারে কাঁটায় কাঁটায় সাতটা। আমি ভাবছিলাম আবার কি কাজেকর্মে আটকে পড়েন।
অ্যানসনের চোখ তার শরীরে ঘুরে গেল। মেগ দেখে মৃদু হাসল।
বাঃ দাঁড়িয়ে রইলেন কেন ভেতরে আসুন। বসবার ঘরে দুজন এলো। ঘেরাটোপে ঢাকা মৃদু নীল আলো। ওভার কোট খুলতে খুলতে জন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেগকে দেখলে।
তার পরনে লাল টকটকে চওড়া কলারের সার্ট, যেন রূপের লেলিহান শিখা ধিকিধিকি জ্বলছে। আজ যেন মেগ সেদিনের চেয়ে আরো সুন্দরী, আরো মোহময়ী।
মেগ বলল, চলুন আগে খেয়ে নেওয়া যাক।খিদেয় আমার পেট জ্বলছে, সকাল থেকে লিখছি। আজ দুপুরের খাওয়া খেতেও ভুলে গেছি।
অ্যানসনের খিদে না থাকলেও সে বলল, বেশ তো চলুন না খেয়ে নেওয়া যাক। তা আপনার লেখা কেমন এগালো।
ঐ একরকম। দুজনে একটা টেবিলে খেতে বসলো। খাবার বলতে তেমন কিছু নয়। মাংস, রুটি, হুইস্কি আর দুবোতল সোড়া ও বরফ।
মেগ হেসে বলল, চড়ুইভাতি গোছের আর কি! রায়বানা আবার আমার তেমন আসে না। দুজনে খেতে শুরু করল, কয়েক মিনিট নীরবে কাটলো। মেগ বলল, এবার বলুন আপনি কি ভেবেছেন, আমি তো শুনবো বলে একেবারে মুখিয়ে আছি। এতদিনে জব্বর একখানা গল্প হবে।
অ্যানসন দুটো গেলাসে পানীয় ঢালল। নিজের গেলাসটা তুলে ছোট্ট চুমুক দিলো। বললো, বলছি তবে আগে একটা প্রশ্ন করি মিসেস বারলো, কিছু মনে করবেন না নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার তবু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে আপনাদের বিয়ে হলো কতদিন হয়েছে?
তা বছর খানেক। এই তো এমাসের শেষে আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। কেন বলুন তো এ প্রশ্ন?
মিসেস বারলো সবার সম্বন্ধে জানতেই আমার ভারী ইচ্ছা। আজ বিকালে আমি ফ্রামলের দোকানে গিয়েছিলাম। আপনার স্বামীকে দেখে এলাম। ভারী ব্যস্ত মানুষ উনি।
তা আর বলতে, সব সময়েই উনি ব্যস্ত। সেই ছোটবেলার পড়া ব্যস্ত মৌমাছির মতো।
গলার স্বরে একটু কি অসন্তোষ ফুটে উঠল। একটু ক্রোধ ঘৃণা, অ্যানসন বললো, দেখুন লোকজন নিয়েই আমার কাজ। কোন কোন সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা বিরাট গরমিল দেখলে আমার চোখে লাগে। এই আপনাদের কথাই ধরুন না। আপনি ওর মতো কোনো একজন পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন–অ্যানসন বলে ভাবলো খুব একটা বেশি বলে ফেললাম না তো।
মেগ-এর উত্তর শুনে সে অবাক হল, রক্তে যেন ঝড় বয়ে গেল।
মেগ বলল ভগবানই জানেন কেন যে ওকে বিয়ে করতে গেলাম তখন। মাথাটাই বোধহয় তখন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
অ্যানসন তার দিকে নিষ্পলক নেত্রে তাকিয়ে রইল। মুখ নীচু করে সে খেতে লাগল। কয়েক মিনিট সব চুপচাপ, হঠাৎ মেগ মুখ তুলে তাকালো অ্যানসনের দিকে। একি আপনি খাচ্ছেন না।
আর খাওয়া, খাওয়া তার মাথায় উঠে গেছে।
সে বলল, পেটটা তেমন ভাল নয়, আর খেতে ইচ্ছে করছে না।
বেশ তাহলে একটু হুইস্কি নিন। নাকি অসুবিধা আছে।
না, হুইস্কিও ভাল লাগছে না।
আপনি তাহলে উঠে পড়ুন আগুনের কাছে গিয়ে সোফায় বসুন, আমার এই হয়ে এল বলে।
অ্যানসন সোফায় এসে বসল ভাবল মেগ-এর কথা, সে বলেছে কেন যে ওকে বিয়ে করতে গেলাম ভগবান জানেন। তখন বোধহয় আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছিল।
এটা কি একটা ইঙ্গিত? মনের চাপা-বেদনার প্রকাশ? অ্যানসন কি এরই অপেক্ষায় ছিলো?
মেগ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল যে আমি স্বামী সম্বন্ধে এমন বললাম শুনে আপনার হয়তো খারাপ লাগল। কথার পিঠে কথা এলো তাই বললাম। আসলে বড় দুঃখে কথাটা মুখ থেকে বেরিয়ে এল। ও বড়লোক নয়, ও দেখতে সুন্দর নয়। মাথায় কেবল ওর ওই এক চিন্তা,বাগান আর বাগান। অদূর ভবিষ্যতে নিজে একটা ফুলের নার্সারী করবে। ফুল বিক্রী করে ধনী হয়ে যাবে রাতারাতি।
তা নার্সারিই করুন, আর দোকানই করুন, টাকা তো চাই। মুরোদ তো নেই আধ পয়সার, তিন হাজার ডলার আসবে কোত্থেকে।
কিন্তু তিন হাজার ডলার দিয়ে কি হবে? অত কমে হলে তো যে কেউ এই ব্যবসা খুলে। বসতো।
যেমন ছোট মন, বড় কিছু ভাবতেও বুক ধড়ফড় করে। আমিও তো বলেছিলাম যে এত কম টাকায় কিছু হবে না। তা আমায় ধমকে থামিয়ে দিল।
কিন্তু কেন আপনি ওকে বিয়ে করলেন, কিসের আশায়?
মেগ অনেকক্ষণ চুপ করে বলল, ভাগ্যের ফের ছাড়া আর কি বলুন। তখন তো ভেবেছিলাম অনেক কিছুই ওর টাকা আছে, বাড়ি আছে, চাকরীকরে,ব্যাস মেয়েদের আর কি চাই। বিয়ে করলাম, কিন্তু এখন বুঝছি যে আমি কি ভুল করেছি। তখন তো বুঝিনি। জানেন মিঃ অ্যানসন এর থেকে আমি বিধবা হলেও ভাল হত। ওর কবল থেকে মুক্তি পেতাম। মেগ মাথা নীচু করলো, চোখের কোনে অবিন্দ চিকচিক করে উঠলো।
কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না। মুখ নীচু করে মেগ খেতে লাগল। তারপর কাটা-ছুরি নামিয়ে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল বলল, দেখুন কখন কাকে কেন ভাল লাগে কেউ রলতে পারে না। যেমন আমাকে আপনার ভাল লেগেছে, কেন লেগেছে, কি জন্য?
অ্যানসনের হাতের গেলাস চলকে খানিকটা পানীয় মাটিতে পড়ল। সে এরকম সোজাসুজি প্রশ্নের জন্য তৈরী ছিল না। সে একটু ইতঃস্তত করে বললো–আমার ভাল লেগেছে কারণ আপনি সুন্দরী, অপরূপা।
মেগ হাসলো, তার শরীরে হিল্লোল খেলে গেল। সে বলল, আপনিই প্রথম পুরুষ যিনি আমার সম্বন্ধে এমন প্রশংসা করলেন। এমন করে আর কেউ বলেনি, আমার স্বামীও নয়।
বলেনি তো ভারী বয়েই গেল, এই তো আমি বললাম, ব্যাস যথেষ্ট নয় কি?
অমন করে বলবেন না, আপনিও কি কম সুন্দর? পুরুষদের এমন চেহারাই আমার ভাল লাগে।
অ্যানসনের বুক থেকে যেন একটা ভারী বোঝা নেমে গেল। সে লাল মুখ করে বলল–যেদিন আপনাকে প্রথম দেখি সেদিন থেকেই মনে হয়েছে, আপনি অপূর্ব, আপনি অতুলনীয়। সত্যি কথা বলতে কি, এ কদিন সমানে শুধু আপনার কথাই ভেবেছি অন্য কিছু ভাবার সময়ই হয়নি।
মেগ টেবিলের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট তুলে নিয়ে ধরালো তারপর বলল যে এরকমই। হয়, আমার মনের অবস্থাও এমনই ছিল একদিন। জন ওঃ তোমাকে দেখে আমি আর পারছি না। আমি পারছি না।
এরপর মেগ দুহাত বাড়িয়ে অ্যানসনের দিকে এগিয়ে এল। অ্যানসন উঠে এসে তাকে আলিঙ্গন করল। মেগও তাকে দু-হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
কাঠের একটা বড় টুকরো দপ করে জ্বলে উঠল। ঘর উজ্জ্বল আলোয় ভরে গেল। মেগ উঠে বাল, তারপর অগ্নিকুণ্ডে আরও কয়েক টুকরো কাঠ গুঁজে দিল।
সে অ্যানসনের দিকে তাকিয়ে বলল–একটু ড্রিঙ্কস চলবে।
নাঃ এখন ভাল লাগছেনা, তুমি আমার কাছে এস মেগ। মেগ গেল না। আগুনটা উসকে দিল।
কটা বাজে দেখেছে। না বেজে গেছে। আজ রাতটা তুমি থাকবে তো।
থাকবো।
মেগ একটা সিগারেট ধরিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসল। তারপর একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, এবার বলো তুমি কি গল্প ভেবেছো?
অ্যানসন মুখ তুলে কড়ি কাঠ শুনল। তার মন পরিপূর্ণ সুখী। এত সুখ সে জীবনে পায়নি। মেগ-এর দেহের কোষে কোষে ভরা রোমাঞ্চ।
মেগ বলল, কই বল তোমার গল্পটা শুনি। অ্যা
নসন বলল, বলছি আগে একটু হুইস্কি দাও গলাটা ভিজিয়ে নিই।
মেগ দুটো গেলাসে হুইস্কি ঢালল। একটা নিজে নিল, আর একটা দিল অ্যানসনকে।
অ্যানসন বলল সাজিয়ে-গুছিয়ে গল্প বলার অভ্যেস নেই। মোটামুটি ঘটনাটা তোমাকে বলি তারপর তুমি সাজিয়ে নিও, গল্পটা এইরকম–
এক বীমা কোম্পানির সেলসম্যান হচ্ছে নায়ক। তার ভীষণ টাকার দরকার। একদিন কাজে বেরিয়ে তার সঙ্গে একটা মেয়ের দেখা হল। আর প্রথম দর্শনেই প্রেম,দুজনেই দুজনকে ভালবেসে ফেলল। মেয়েটি বিবাহিত কিন্তু অসুখী। সে তার স্বামীকে চাপ দিল জীবনবীমা করাতে। এদিকে সে আর তার প্রেমিক দুজনে মিলে বেচারা স্বামীটিকে খুন করার মতলব আঁটল। কী ভাবে কি করলে বীমার টাকা পুরো হস্তগত হবে সেই সেলস্ম্যানটির কণ্ঠস্থ। তাই ঝামেলা কিছু হল না। স্বামী মরল টাকাও পাওয়া গেল। এবং সেই প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ে করে সুখে দিন কাটাতে লাগল। এই হল গল্পের ছক এবার তোমার কলমের জোরে এটাকে আকর্ষণীয় করার ভার তোমার, এখন বল কেমন লাগল গল্পটা।
মেগ লোহার শিকটা তুলে নিয়ে আগুনটা একবার খুঁচিয়ে দিল। মৃদু স্বরে সে বলল, ভালো তবে ততটা বাস্তব নয়। কারণ তুমিই আগের দিন বলেছিলে যে বীমা কোম্পানিকে ঠকানো সহজ নয়। তাহলে এরা দুজনে ঠকাবে কিভাবে?
সহজে কি আর পারবে, বড় কঠিন কাজ। কিন্তু একটা সুবিধে যে নায়ক বীমা কোম্পানিতে কাজ করে। তাই তেমন একটা অসুবিধে হবে না। বরং সে আছে তাই ব্যাপারটা সুবিধেই হবে।
কিন্তু তাহলেও একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। একটা কথা কিন্তু ভুললে চলবে না কারণ পাঠকরা আজকাল আর বোকা নয়। সবকিছু খুঁটে খুঁটে বিচার করে তবেই তারা ক্ষান্ত হয়। তোমার গল্পে আছে স্বামীকে-স্ত্রী বীমা করাতে চাপ দেবে। সে দেবে আর স্বামীই বা বীমা করবে কেন ধরো ফিল–আমার স্বামীই গল্পের স্বামী, এবং আমি তার স্ত্রী, যতদূর জানি ফিল মরে গেলেও বীমা করবে না, কিছুতেই না।
এত জোর দিয়ে তুমি কিছু বলতে পারো না মেগ। গল্পের বাঁধুনি বা উপস্থাপনার ওপরই আগাগোড়া ব্যাপারটা নির্ভরশীল। দাঁড়াও বিষয়টা তোমাকে ভালো করে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দি। ধরো আমি সেই বীমা কোম্পানির সেলম্যান। কি পছন্দ তো?
হা হা, অপছন্দ হওয়ার কি আছে।
বেশ। আমি যদি সেই সেলসম্যান হই, তাহলে তুমি একরকম নিশ্চিন্ত থাকতে পারো মেগ তোমার স্বামীকে আমি বীমা করাতে বাধ্য করবোই করবো। হ্যাঁ আলবৎ তাকে আমি বোঝাবই অন্য ভাবে, অন্য কায়দায়।
কায়দাটা কি?
কেন, এত জলের মতো সোজা, আমি বোঝাববীমা করলে তার সুবিধে হবে। বীমার পলিসি ব্যাঙ্কে জমা রেখে সে লোন নিতে পারবে। ব্যাস কেল্লা ফতে। ও বরং তখন আমার হাতে পায়ে ধরবে বীমা করিয়ে দেবার জন্য।
মেগ বলল বাবা, এতোও আছে তোমার মাথায়! যাক একটা বড় চিন্তা গেল।
দাঁড়াও দাঁড়াও এই তো শুরু। আরো আছে, তা রীমা সে করবে কিন্তু কত টাকার। মন হোট তাই ভাবনা চিন্তাও ছোট। মেরে কেটে বড় জোর পাঁচ হাজার ডলারের বীমা করবে সে। তাছাড়া তিন হাজার ডলার ধার পাবার জন্য পাঁচ হাজার ডলারের বীমাই যথেষ্ট। কিন্তু ধার টার নিয়ে সে যদি হঠাৎ একদিন পটল তোলে তাহলে, সবমিলিয়ে তোমার হাতে কত আসছে?
মেগ বললো, কতো?
কতো আবার সব মিলিয়ে দেড়-দুহাজার। দুচো মেরে হাত গন্ধ। আমাদের দুজনের অন্ততঃ .. হাজার পঞ্চাশেক চাই। তার কমে আমার চলবে না।
হ্যাঁ তা ঠিক কিন্তু…
কিন্তু মজাটা এই আমি তোমার স্বামীকে করাবো পঞ্চাশ হাজারের বীমা, অথচ সে তার বিন্দু বিসর্গও জানবে না। সে জানবে যে তার বীমার মূল্য মাত্র পাঁচ হাজার ডলার।
অ্যানসন গর্বভরা দৃষ্টি নিয়ে মেগ-এর দিকে তাকাল। মেগ তার দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে সে বলল যে গল্পটা এবার বেশ জমে উঠেছে। আচ্ছা ধরেই নেওয়া যাক যে ফিলের নামে পঞ্চাশ হাজারের বীমাই করানো হল কিন্তু তারপর কি হবে।
অ্যানসন প্রমাদ গুনল এবারই যা কিছু কারিগুরি। এখনকার ঘটনা বেশ, ভেবেচিন্তে বলতে হবে।
হাতের গেলাস নামিয়ে অ্যানসন সিগারেট ধরালো। বলল, দেখো মেগ এখন বরং আমাদের নামধামগুলো বাদ দাও। এগুলো এজন্য বলছিলাম যাতে কাহিনীটা সহজেই তোমার বোধগম্য হয়। যেটুকু বলেছি আশা করি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছ। এবার ভেবে নাও ফিল নয় একজন লোক বীমা করিয়েছে পঞ্চাশ হাজার ডলারের। এখনও সে জানে না, তার স্ত্রীর সঙ্গে বীমা কোম্পানির সেই সেলসম্যানটির সম্পর্ক গভীর, তারা দুজনে মিলে কি চক্রান্তই না করেছে।
তারপর?
এখন এদের দুজনের অনেক টাকার দরকার। স্বামী বেচারা মরলে স্ত্রীর হাতে নগদ করকরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ডলার আসবে। আগে থেকেই ঠিকঠাক, টাকাটা দুজনে মিলে সমান ভাবে ভাগ করে নেবে। কিন্তু কি আপদ, স্বামী যে ছাই মরেও না। এরা দুজন তাই ভাবতে বসল। ভাবতে ভাবতে একসময় ঠিক হল যে স্ত্রীকে স্বামীর কবল থেকে মুক্তি পেতেই হবে। তবে এটা তো ঠিক যে স্বামীর সাধারণভাবে মরলে চলবে না সে যে দুর্ঘটনায় পড়ে মরেছে, এটা প্রমাণ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এও প্রমাণ করতে হবে যে স্বামীর এই হঠাৎ মৃত্যুর পিছনে স্ত্রীর কোন হাত নেই।
মেগ প্রশংসার দৃষ্টিতে অ্যানসনের দিকে তাকাল। বলল বাব্বা মাথা খাটিয়ে বেশ তত বের করেছে। তারপর কি হবে?
তারপর ধরে নাও যে স্বামীটার একটা খুব সুন্দর বাগান আছে বাগানে একটা ছোট পুকুর আছে। একদিন এক শনিবার বিকালে লোকটার বউ গেছে শহরে বাজার করতে। দেখে গেছে স্বামী বাগানের কাজে ব্যস্ত। ফিরে এসে দেখে যে স্বামী পুকুরের পাশে রাখা একটা মই থেকে পুকুরে পড়ে গেছে। তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগার জন্য আর জল থেকে উঠতে পারে নি। সেভাবেই সে মরে পড়ে আছে। আসলে সে কিন্তু অন্যভাবে মরেছে। স্ত্রী যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই সেলম্যানটি বাড়িতে চুপিচুপি ঢুকে স্বামীর মাথায় শক্ত একটা লাঠি দিয়ে আঘাত করে তারপর তাকে পুকুরে ডুবিয়ে সরে পড়েছে ব্যস কেল্লা ফতে।
অ্যানসন আর মেগ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকল। তারপর মেগ ধীরে ধীরে বলল, কিন্তু তোমার সেই লোক, সেই ম্যাডক্স না কি যেন তার নাম, তাকে কিভাবে ফাঁকি দেওয়া হবে?
অ্যানসন গেলাসে দীর্ঘ চুমুক দিলো। ভাবলো, না আর কোনো চিন্তাই নেই। মেগ আমার সঙ্গে সহযোগীতা করবেই। ম্যাডক্স-এর নাম বলে সে কাহিনীটাকে বাস্তবের দিকে হঠাৎ মোড় ফিরিয়ে দিয়েছে। মেগ স্বামীর কবল থেকে মুক্তি চায়, সে স্বামীর জীবনের বিনিময়ে অর্থোপার্জন করতে তার এতোটুকু আপত্তি নেই।
ম্যাডক্স, হ্যাঁ তাকে ভুললে চলবে না, তার ক্ষুরধার বুদ্ধিকে ছোট করে দেখলে চলবে না। লোকটা ভয়ঙ্কর, তবু তার ভাবনা-চিন্তার একটা নির্দিষ্ট পথ বা ধারা আছে। সে কি ভাববে! সে ভাববে স্বামী এবং স্ত্রী, স্বামী পঞ্চাশ হাজার টাকার বীমা করিয়ে হঠাৎ একদিন মারা গেল। আচ্ছা স্ত্রীটি আসলে কেমন, এ ভাবেই শুরু হবে তার চিন্তা। তোমার কিন্তু স্বামীর মৃত্যুকালীন সময়ের। একজব্বর আলিবাই থাকা চাই। প্রথমেই সাক্ষ্য প্রমাণ সহকারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ম্যাডক্সকে প্রমাণ করে দিতে হবে যে স্বামীর মৃত্যুতে তোমার কোন হাত নেই। একবার যদি এ বিশ্বাস তার মনে আনা যায় তাহলে টাকা পেতে আর কোনো অসুবিধে হবে না। বাকীটুকু যা করার আমিই করবো।
তাহলে আমি যখন প্রু টাউনে বাজার করতে যাবো তখন তুমি সামলাবে ফিলকে, কি তাইতো? মেগ বলল।
অ্যানসন চমকে উঠল মেগ-এর কণ্ঠস্বরে এতোটুকু চাঞ্চল্যের চিহ্ন নেই।
হ্যাঁ, আপাততঃ এই। এক চুমুকে গেলাসের হুইস্কিটুকু নিঃশেষ করে সে গেলাস নামালো, উঠে বলল কি আইডিয়াটা তোমার পছন্দ হয় তো?
ধীরে ধীরে চোখ তুললো মেগ, অ্যানসন-এর চোখে তার দৃষ্টি স্থির হল। খুব ভালো আইডিয়া জন, খুব ভালো। জন তুমি যদি জানতে গত একটা বছর কিভাবে আমি কাটিয়েছি। কিভাবে এই এক বছরে ফিল আমার সব স্বপ্ন, সব আশা, সব সুখ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। আমি নিষ্কৃতি চাই জন, ওর কবল থেকে মুক্তি চাই। দু-হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মেগ।
অ্যানসন তার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে তার চুলে মুখ রাখলো, ফিসফিস করে বললো, মুক্তি তুমি পাবে মেগ, টাকাও পাবে। আমারও টাকার দরকার, টাকা দুজনে ভাগ করে নেবো, এই বলে মেগকে জড়িয়ে ধরলো।
মেগ বলল-চলো আমরা দোতলায় যাই।
অ্যানসন উঠে দাঁড়াল বলল চলল। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ভাবলো মেগ কত সহজেই রাজী হল। আচ্ছা মেগ কি আগে থেকেই তার স্বামীকে খুন করার কথা ভাবছিল।
তার মেরুদণ্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল।
নীচের তলায় কোথায় যেন ঘড়িতে ঢং ঢং করে পাঁচটা বাজলো। খোলা জানালা দিয়ে এক চিলতে ভোরের রোদ যেন হামাগুড়ি দিল। অ্যানসন শোবার ঘরের চারিদিকে চোখ বোলাল।
বাড়ির বাইকের মতো এ ঘরটাও নোংরা অগোছালো। দারিদ্রের ছাপ দেয়ালে, সিলিংয়ে, দরজায়, কড়িকাঠে, সর্বত্র। একমাত্র ব্যতিক্রম মেগ, ভোরের আলোয় তাকে আরো সুন্দর আরো মনোহারী লাগছে।
অ্যানসন দু-হাতে মেগকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল ওঠো।
মেগ বলল উঠতে ইচ্ছে করছে না। মনে হয় সারাজীবন এভাবে শুয়ে থাকি।
আমারও। আচ্ছা মেগ তুমি আমাকে সাহায্য করবে তো? এ কিন্তু তোমার গল্প নয় যে কল্পনায় পুরো ব্যাপারটা ঘট খাবে।
জানি সব ভেবেই আমি রাজী হয়েছি। এভাবে আমি আর পারি না। আমার টাকা চাই অনেক টাকা।
আমি জানি তুমি আপত্তি করবে না কিন্তু মেগ, যতটা সোজা তুমি ভাবছো, ততটা সোজা কিন্তু নয়, অনেক কিছু ভাবতে হবে আমাদের। খতিয়ে দেখতে হবে। সবে খসড়াটা আমরা ভেবেছি, শুরু করলে দেখবে কত ঝঞ্ঝাট।
দাঁড়াও বাপু! মেগ উঠে বসলো, আগে একটু কফি নিয়ে আসি। কফি খেতে খেতে কথা বলবো। এ সুযোগ হয়তো আর হবে না। এতে নিরিবিলি, তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি চট করে দু কাপ কফি করে নিয়ে আসি।
অ্যানসন ভাবলো মেয়েটা মন্দ বলেনি। কাজ শুরু হলে দেখা সাক্ষাতের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ম্যাডক্স যদি কোনোক্ৰমে জানতে পারে যে তারা প্রেমিক প্রেমিকা, তাহলে কানাকড়িও পাওয়া যাবে না উল্টে ঝামেলার একশেষ হবে।
নীচের তলায় মেগের ব্যস্ত পদসঞ্চার শোনা গেল। একটু পরে দুকাপ কফি নিয়ে সে ঘরে ঢুকলো, একটা কাপ অ্যানসনকে দিয়ে আর একটা নিজে নিয়ে বসলো বিছানার একপাশে। সে বলল, তোমার কি মনে হয়, আমরা দুজন পারবো?
অ্যানসন মনে মনে যথেষ্ট অবাক হলো। কি আশ্চর্য! মেয়েটার ভঙ্গিতে এতোটুকু চাঞ্চল্য নেই, যেন স্থির বিশ্বাসে দাবা খেলতে বসেছে সে। সে ভাবছে ব্যাপারটা গল্প লেখার মতোই ছেলেখেলা। সব একেবারে ছিমছাম, সাজানো-গোছানো। নাঃ ওকে সতর্ক করে দেওয়ার দরকার নেই। বিপদের আঁচ আগে থেকেই দেওয়া দরকার।
অ্যানসন অন্য দিকে তাকাল, দেখো পারবোই যে একথা তেমন জোর দিয়ে বলতে পারি না, তবে সময় লাগবে। ভালো করে প্রতিটা পদক্ষেপ ভেবে ঠিক করতে হবে। তবে একটা কথা আমার জানা চাই যে স্বামীর মৃত্যু ঘটিয়ে তুমি লাভবান হতে চাও কি না?
মেগ অধৈর্য স্বরে বললো, আমি তো বলেইছি, আমি আছি তোমার সঙ্গে, আমি রাজী।
কিন্তু বুঝতে পারছ তো আমরা কি সাংঘাতিক কাজ করতে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু খুন করতে যাচ্ছি।
আমি জানি, মেগ বললো খুনে আমার কোন ভয় নেই। তোমার আছে নাকি?
হ্যাঁ আছে।
অন্য কারো ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারি না, তবে ফিল মরলেই আমার শান্তি। আমার মুক্তি।
কেন তুমি তো ওর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদও করতে পারতে।
তাতে আমার কি লাভ হতো, বড়জোর দুবেলা দুমুঠো খাবার আর মাথার ওপর ছাউনি ব্যস। কিন্তু না এত অল্পে আমার শান্তি নেই, আমি ওকে শাস্তি দিতে চাই, কঠোর শাস্তি। গত একবছর ধরে ও আমাকে জ্বালিয়েছে, তুমি ভাবতে পার রাতের পর রাত গেছে যন্ত্রণায়, দু-চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ওর শাস্তি চাই আমি। ও মরুক।
এতক্ষণে অ্যানসন নিশ্চিন্ত হলো, স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তাহলে এই ব্যাপার, এই কারণেই মেগ তার স্বামীকে খুন করতে চায়।
কিছু মনে কোরো না মেগ, আমি জানতাম না যে তোমার সঙ্গে তোমার স্বামী এমন নিষ্ঠুর আচরণ করে। জানলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না। ঠিক আছে তাহলে আর চিন্তার কিছুই নেই, তোমার স্বামীই হবে আমার দাবার বোড়ে। এখন থেকে তাহলে ভাবনা চিন্তা শুরু করে দাও। আমি যা যা বললাম ভেবে দেখো হয়তো কোথাও আমার ভুল হয়েছে, কিছু হয়তো এড়িয়ে গেছি আমি। তোমার কাছে হয়তো তা ধরা পড়লেও পড়তে পারে। সবটুকু একেবারে নিখুঁত হওয়া চাই। ফেঁসে গেলেই গণ্ডগোল, জুরীরা কিন্তু তোমার চাঁদপানা মুখের দিকে তাকিয়ে দণ্ড মকুব করবে না। মনে রেখো খুনী আর খুনীর আসামী দুজনেই সমান অপরাধী।
কিন্তু ধরা পড়বো কেন? আর ভুলই বা হবে কেন? খুনটা বড় অদ্ভুত অপরাধ মেগ। বেশ ভেবে-চিন্তে কোথাও কোনো গাফিলতি না রেখে তুমি একটা খুন করলে। তবু কি যেন হয়ে গেলো, ব্যস, আর দেখতে হবেনা। একটা ভুলই তোমাকে গ্যাস চেম্বারে ঢোকাবার পক্ষে যথেষ্ট।
তোমার যত সব উদ্ভট কথা। কাপ সরিয়ে রেখে মেগ একটা সিগারেট ধরালো। তোমার ওপর আমার বিশ্বাস আছে।
বেশ বেশ বিশ্বাস থাকা ভালো, এখন তিন হাজার ডলার আমার দরকার তুমি পারবে দিতে।
আমি তিন হাজার কেন, তিন ডলারও আমার নেই। হাত খরচ যা দেয় তার থেকে মাসে একটা ডলারও সরিয়ে রাখতে পারি না।
অ্যানসন জানতো, তবু একবার বাজিয়ে দেখলো। বললো ঠিক আছে দরকার নেই, আমিই যেমন করে তোক ব্যবস্থা করে নেবো, যেভাবেই হোক।
মেগ বলল কিন্তু তিন হাজার ডলার নিয়ে তুমি কি করবে?
কি করবো। নাটকীয় ভঙ্গিতে গায়ের চাদর সরিয়ে নাভির কাছে তিন রঙা দাগটা সে মেগকে দেখালো। এই দেখো।
একি! কি হয়েছে জন কিভাবে এমন হল।
শোনন তাহলে এই বলে অ্যানসন, গেলার হেগান, জো ডানকান এবং স্যাম বার্সস্টেন-এর ঘটনা আগাগোড়া মেগকে শোনাল, তারপর চোখ নামালো, বড় মুশকিল মেগ, বড় ঝামেলা। কত কি করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন তুমি আমার সাথী, এক অপদার্থের জীবনের বিনিময়ে আমাদের দুজনের চেষ্টায় আমার সে স্বপ্ন এবার সার্থক হবে।
জো ডানকান তো তোমার কাছে এক হাজার ডলার পাবে, তোমার তিন হাজার ডলারের কি দরকার?
বাঃ তোমার স্বামীর বীমার প্রিমিয়াম দিতে হবে না। পঞ্চাশ হাজারের বীমার এক বছরের প্রিমিয়াম দুহাজার ডলার। প্রথম প্রিমিয়াম না দিলে একটা আধলাও পাওয়া যাবেনা। তাই আমার দরকার নি হাজার ডলার, যেভাবে হোক টাকাটা আমাকে জোগাড় করতেই হবে। চুরি করতে হয় করবো, ডাকাতি করতে হয় করবো, দরকার হলে খুনও করবো।
কি সব আবোল-তাবোল বক, চুরি করবে কেন? তা চাইলে কেউ আমার মুখ দেখে তো আর তিন হাজার ডলার দেবে না, তাই চুরিই একমাত্র উপায়। না না ভয়ের কিছু নেই। চুরি করতে কিছুমাত্র অসুবিধে হবে না। সব আমি আগে থেকে ভেবে ঠিক করে রেখেছি। আচ্ছা ভালো কথা, তোমার স্বামী ব্যবসা-ট্যবসা করতে পারবে তো?
হ্যাঁ হ্যাঁ তা পারবে। একদিকে তার জন্য লালসা আর একদিকে তার ফুল বাগান, না এদিকে কোন অসুবিধে নেই।
বেশ এবার বলতে যদি কোনো কাগজে তাকে সই করতে বলা হয় তাহলে কি সে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়বে? কারণ একধরণের লোক আছে যারা পড়া-টড়ার ধার ধারে না, সই করেই খালাস আর এক ধরণের লোক আছে যারা খুঁটিনাটি সব পড়ে তারপর সই করে। তোমার স্বামী কি ধরণের?
না তা নয় তবে ও পলিসিতে সই-ই করবে না। কি করবে না করবে তা তো পরের কথা। এখন বলতে তিন বা চারখানা পলিসির নকলে যদি তাকে সই করতে বলা হয় সে কি করবে? সব কটাই কি খুটিয়ে পড়বে?
না তা দেখবে না। সে রকম লোক নয়।
ব্যস ব্যস যথেষ্ট, আমার আর কিছু জানার নেই। মেগকে জড়িয়ে ধরে বললো তাহলে তুমি আমার সঙ্গে থাকছো, আমাকে সাহায্য করছো, তাই তো। ভেবে দেখো একবার নামলে আর ফেরবার জো নেই।
মেগ অ্যানসনের চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো আমাকে নিয়ে এখনও তোমার মনে সন্দেহ কেন মেগ, আমি তো বলেইছি, আমি আছি, তোমার পাশে সব সময় আমাকে পাবে। ব্যস্, আর কি? টাকা আমার চাই কিন্তু তোমাকেও চাই, টাকা বা তোমার জন্য আমাকে যা করতে বলবে আমি তাই করতে রাজী।
আবেগে-আবেশে অ্যানসন চোখ বুজল। মেগ-এর শরীরের উত্তাপ তার শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিল। এমন পরিবেশে সাধুরাও বোকা হয়। অ্যানসনও বোকামী করল।
টোস্টও সেঁকতে গিয়ে পুড়ে গেছে, ডিমও সেদ্ধ হয়নি অ্যানসন তাই কোনো মতে চিবোতে চিবোতে দেওয়ালে ঝোলানো একটা বাঁধানো সার্টিফিকেট দেখিয়ে মেগকে জিজ্ঞেস করলো ওটা কি? কার সার্টিফিকেট?
মেগ তার সামনের চেয়ারে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। সময় সকাল আটটা। একটা সবুজ রঙের গাউন পরেছে মেগ। চুল মাথার ওপর চুড়ো করে বাঁধা। সারা দেহে প্রসাধনের চিহ্নমাত্র নেই। তবু যেন তার সৌন্দর্য বেড়েছে, ম্লান হয়নি।
ওটা ফিল এর। মেগ বলল ওটা নিয়ে ওর খুব গর্ব। রাইফেল স্যুটিং করে কোথায় যেন ফাস্ট হয়েছিল একবার, তারই সার্টিফিকেট।
অ্যানসন চেয়ার ঠেলে উঠে দেয়ালের কাছে গেল। প্রথম থেকে শেষ অবধি প্রশংসাপত্রটি পড়লো। প্রু টাউনের স্মল গার্মস অ্যান্ড টারগেট ক্লাব ৩৮ রিভলবার স্যুটিংয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য ফিলিপ বারলোকে এই প্রশংসাপত্রখানি দিচ্ছে।
অ্যানসনের কপালে চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠল। ফিরে এসে চেয়ারে বসে কি যেন ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর সে মেগকে বলল তাহলে তোমার স্বামী অ্যাটিং-এ ওস্তাদ।
এককালে হয়তো ছিল। এখন আর ওসব করে না। বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনদিন তো দেখলাম না রিভলবার হাতে নিতে। এখন তো শুধু বাগানের শখ।
তাহলে তোমার স্বামীর একটা রিভলবার আছে?
আছে। কিন্তু এসব প্রশ্ন করছ কেন?
রিভলবারটা কি এই বাড়িতেই আছে?
হ্যাঁ, ঐ তো আলমারির দেরাজে আছে।
একবার দেখাবে?
দেখবে কেন? কি দরকার ওটা দেখার?
আগে জিনিসটা দেখে নিই তারপর কি দরকার বলছি।
মেগ কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠে আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা কাঠের বাক্স এনে টেবিলের ওপর রাখলো।
বাক্স খুলে অ্যানসন রিভলবারটা নিল। পুলিসের ব্যবহার্য ৩৮ বোরের ছোট রিভলবার। এক বাক্স কার্তুজও বাক্সে আছে।
চেম্বার ফাঁকা, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আগাগোড়া কারিগুরিটুক দেখলো, অ্যানন। তারপর মুখ তুললো, এখন আর এটা সে ব্যবহার করে না তাইতো?
বললাম তো বিয়ের পর থেকে এ অবধি একদিনের জন্যও ওকে এটা আর হাতে নিতে দেখিনি। কিন্তু কেন, তোমার কি দরকার?
আচ্ছা মেগ রিভলবারটা যদি আমি একদিনের জন্য আমার কাছে রাখি তাহলে তোমার কি খুব অসুবিধে হবে?
কিন্তু কেন এটা তোমার কাছে রাখবে?
বল না অসুবিধে হবে কি?
না অসুবিধে কিসের কিন্তু কারণটা আমাকে বলতে হবে।
মাথা খাটাও ভাবো, ভেবে দেখো। রিভলবারটা পকেটে ঢোকাল, অ্যানসন বলল আমাকে তিন হাজার ডলার জোগাড় করতে হবে বুঝেছ?
মেগ ভাবলেশহীন চোখে অ্যানসনের দিকে তাকিয়ে রইল।
কার্তুজের বাক্স থেকে ছটা কার্তুজ তুলে নিল অ্যানসন, পকেটে রাখলো।
দীর্ঘ নীরবতা, কেউ কোন কথা বললো না। ধীরে ধীরে অ্যানসন মেগের দিকে এগিয়ে এলো। তারপর তাকে আলিঙ্গন করলো।