০৩. তোমাকে যা বলতে চাই

(এক) শোনো,

আমি আজ তোমাকে যা বলতে চাই তা তোমার বিশ্বাসই হবে না যদি না একটা গল্প তোমাকে বলি। এখানে মখমলের মতো ঘাস হয়, নিবিড় গাছপালা আর কত ছড়ানো এখানকার নির্জনতা। আমার বাড়ির কাছেই একটা বন। এখানে সবই অভয় অরণ্য। এরা গাছপালা এত ভালবাসে। রোজ সকালে আমি একা একা জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে যাই। একটা নদী আছে, কেউ সেখানে কখনও স্নান করে না। একটা মল আছে। মল মানে জানোই তো, বাঁধানো চাতাল আর বসবার জায়গা। এরা যা করে নিখুঁত। মলটাও এত সুন্দর। রোজ গিয়ে নদীর ধারে ওই মল-এ বসে থাকি। কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে ঘোড়া চালায় ছেলেমেয়েরা। আর জগাররা দৌড়োয়। এদের খুব স্বাস্থ্যের বাতিক। বহুদিন বাঁচতে চায়, খুব ভোগ করতে চায়। একদিন কী হল জানো, খুব সকালে বেরিয়েছি। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটছি। সেপ্টেম্বর মাস। ফল-এর আর দেরি নেই। গাছের পাতার রং বদলে যাচ্ছে। কদিন পর সারা বনভূমি একদম রাঙা হয়ে যাবে। ফল যদি তুমি দেখতে ইচ্ছে করছে আমার দু’খানা চোখ তোমাকে পাঠিয়ে দিই। আমি চারদিক দেখতে দেখতে হাঁটছি। হঠাৎ পায়ে কী একটা ঠেকল। শক্ত। তাকিয়ে যা দেখলাম বুক হিম হয়ে গেল। একটা পিস্তল পড়ে আছে। কোথা থেকে এল? কে ফেলে গেল? সর্বনাশ! ধারেকাছে ষণ্ডাগুড়া রেপিস্ট নেই তো! না বাবা, ফিরে যাওয়াই ভাল। শরীর কেঁপেটেপে আমার কী অবস্থা! ফিরব বলে যে-ই ঘুরে দাঁড়িয়েছি কী দেখলাম জানো? ভাবতেও পারবে না। রাস্তার ধারে একটা পুরনো গাছ গত ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল। কেউ সরায়নি। সেই শুকনো গাছের ওপর একটা হাত নেতিয়ে পড়ে আছে। সাদা হাত। আমার কী অবস্থা ভাবতে পারো? বুক ধড়ফড় করে যাই আর কী! তবু কী জানো, খুব ভয়ের মধ্যেও একটু সাহস ছিল। সকালবেলা, দিনের আলো, কাছাকাছি জগার আর রাইডাররা তো আছেই। আমি পা টিপে টিপে একটু এগিয়ে উঁকি দিয়ে বললাম, হু ইজ দ্যাট?

কেউ জবাব দিল না। দেখলাম একটা লোক কাত হয়ে পড়ে আছে। কপালের পাশটায় একটা ফুটো। অনেক রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। তারপর জমে গেছে। ভয় পেলেও আমি তো ডাক্তার। গাছের ওপর নেতিয়ে পড়া হাতটা ধরে বুঝলাম মারা গেছে অনেকক্ষণ। রিগর মৰ্টিস শুরু হয়ে গেছে। বেশি বয়স নয়। সাতাশ-আঠাশ। একমাথা সোনালি চুল। সাদা। একটা শার্ট আর ট্রাউজার্স পরা। আর মুখখানা এত কচি, এত সুন্দর কী বলব। কী হল জানো, হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়ল। কেন মনে পড়ল বলো তো! ছেলেটার মুখখানায় তোমার আদল আছে। আর সেই যে মনে পড়ল, হঠাৎ যেন হু হু করে তুমি সাত সমুদুর ডিঙিয়ে এসে আমার ভিতরে ঝড়ের মতো ঢুকে পড়ছিলে। ভিতরটা তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ এত কান্না পাচ্ছিল কেন বলো তো।

আমি মলের দিকে দৌড়োতে লাগলাম। চিৎকার করলাম। লোকজন জড়ো হল। পুলিশ এসে ডেডবডি তুলে নিয়ে গেল। বাড়ি ফিরে এলাম কেমন যেন ভূতে-পাওয়ার মতো। বসে বসে ভাবলাম আর ভাবলাম। একটা বহুঁকালের বন্ধ দরজা হঠাৎ খুলে যেন এক আশ্চর্য বাগানে পা দিয়েছি। চারদিক ফুলে ফুলে রঙে গন্ধে একাকার। কিন্তু কেন?

তুমি বিশ্বাসই করবে না তিন দিন আমার মাথা এলোমেলো রইল। কাজে মন দিতে পারিনি। বারবার কী মনে পড়ছিল বলে তো! ফুলশয্যার রাতে তুমি কোনও কথা বলার আগেই আমাকে একটা অনেকক্ষণ ধরে চুমু খেয়েছিলে। অনেকক্ষণ কোনও কথা বলতেই দাওনি। এমনভাবে ধরেছিলে আমায় যে, নড়তেও পারিনি। আমার খুব রাগ হচ্ছিল তোমার ওপর। তোমাকে ভাল তো বাসিই না, বরং ঘেন্না করি। ভীষণ। কী ভয়ংকর রাগ হচ্ছিল আমার। তুমি যখন ছাড়লে তখন আমি কী না বলেছি! যা খুশি। তোমার মুখটা কেমন নিভে গেল। কেমন ঠান্ডা আর পাথরের মতো হয়ে গেলে তুমি!

এবার গল্পটা আর-একটু বলে নিই। জঙ্গলের মধ্যে যে-ছেলেটা সুইসাইড করেছিল তার নাম জর্জ। এখানে, হাজার হাজার জর্জ। যা হোক, এই জর্জ কেন সুইসাইড করল বলো তোর বললে তোমার বিশ্বাস হবে না।

আমি জর্জকে চিনতাম না বটে, কিন্তু তার বাড়ি আমার খুব কাছাকাছি। পুলিশের কাছে শুনলাম, জর্জের নতুন বউ তাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতেই নাকি সে আত্মহত্যা করে বসেছে। শোনো কথা, এ দেশেও এরকম হয় নাকি? এখানে তো বর-বউ সম্পর্কই অন্যরকম। ছাড়ছে, ধরছে। বিয়েও করছে না সবসময়ে। এত নিরাবেগ জাত, তবুও তো মাঝে মাঝে এরকম হয়! শুনে মনটা আরও আরও খারাপ হল। আর কী জানো, যত মন-খারাপ ততই যেন সেই মন-খারাপটা আমি এনজয় করছিলাম। এটা একটা বিশ্বাস করার মতো কথাই নয়। মন-খারাপ কি কেউ এনজয় করে? কিন্তু আমি যে করছিলাম!

সেই মন-খারাপের মধ্যে কী হল বলো তো! আমার ভিতরে যেন বাইরের মতোই পাতা ঝরার সময় হল। কী যে ছাই হল মাথামুন্ডু বুঝতেও পারি না, বোঝাতেও পারি না। যখন বিয়ে হয়েছিল তখন কী-ই বা বয়স বলো! আর বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছিল বলে সেই বয়সে কী রাগ হয়েছিল আমার! রাগ ছিল পাটুর জন্যও। ওই বদমাশটার জন্য কেন বলল তো চিরকালের একটা দাগ পড়ল জীবনে! সব মিলিয়েমিশিয়ে বিয়ের সময়ে আমার মধ্যে আমি তো ছিলাম না। বাবার ক্যান্সার হয়েছে বলে শুনছি তখন, মাথাটাই খারাপ হওয়ার জোগাড়। সব রাগ গিয়ে পড়ল বেচারা তোমার ওপর! সেসব আমার পুরনো পাতা। এই পাতা ঝরার দিনে সাত সমুদ্র পেরিয়ে এলে ঝোড়ো বাতাসের মতো তুমি আমার পাতা খসে পড়ল সব। একে সন্ধেবেলা ঘর অন্ধকার করে বসে আছি। বাইরে নির্জন রাস্তা। তার ওপাশে ছবির মতো বাড়ি। তার পিছনে অন্ধকার বনভূমি। চেয়ে আছি। আকাশে মেঘ। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কী মনে হল বলব? হঠাৎ মনে পড়ল, সেই যে অনেকক্ষণ ধরে তুমি আমাকে চুমু খেয়েছিলে, তখন বুঝতে পারিনি, রাগ হচ্ছিল, কিন্তু ভিতরে ভিতরে খুব গভীর কোথাও সেই চুমুর স্মৃতি সুখের মতো শিহরন নিয়ে আজও আছে। খুব রাগ করেছিলাম তোমার ওপর। আলাদা ঘরে থাকতাম। তুমি কি জানো, মাঝে মাঝে দরজাটা চুলের মতো ফাঁক করে লক্ষ করতাম তোমাকে? তুমি আমাকে আক্রমণ করতে চাও কি না, তুমি জোর জবরদস্তি করবে কি না, তা বুঝতে চেষ্টা করতাম। ভয় পেতাম, তুমি হয়তো ধর্ষণ করবে আমায়। আজ মনে হয়, আমি বোধহয় তাই চাইতাম। কেন জোর করলে না বলল তো! আজ খুব বুঝতে পারছি, সে সময়ে আমার মধ্যে দুটো উলটো জিনিস কাজ করছিল। একই সঙ্গে একটা টান আর একটা প্রত্যাখ্যান। তখনকার বয়সটার কথা ভাবো, আমার জীবনটার কথা ভাবো, বুঝতে পারবে।

কিন্তু এখন এই দূর দেশে বসে এই নতুন নিজেকে আবিষ্কার করে কী হবে বলো তো! সব তো চুকেবুকে গেছে। সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলেছি। একটা কথা বললে বিশ্বাস করবে? তোমাকে প্রথম দেখেই কিন্তু মনে হয়েছিল, তুমি একটা ভাল লোক। কেন বলো তো! তুমি কি সত্যিই ভাল? কে জানে! কিন্তু স্বীকার করতে বাধা নেই, সেই জঙ্গলের মধ্যে ঘটনাটার পর থেকে আমার সব উলটোপালটা হয়ে গেল। কতবার ভুল করব বললো তো জীবনে? আমার কিছু ভাল লাগছে না।

.

(দুই) তোমাকে আমার খুব লম্বা একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে। তাতে অনেক আবোল তাবোল থাকবে। যা খুশি লিখব। পাগলামিতে ভরা। জানো গো, আমার কিন্তু একটু একটু করে পাগলামিই দেখা দিচ্ছে বোধহয়। হঠাৎ হঠাৎ আমার আজকাল এত আনন্দ হয় যেন আমি বর্ষার নদী, দু’কুল ছাপিয়ে কোথা থেকে কোথায় ছড়িয়ে পড়ছি। আবার অকারণেই বুক ভার, চোখে জল, মন মেঘলা। পড়াশুনোর এত চাপ, এত ভীষণ সময়ের অভাব, তবু তার মধ্যেও এসব হয়। জানো না তো, এখানে কাজের চাপে মনের সব আবেগ শুকিয়ে যায়। ছিলাম এক বাঙালি দম্পতির বাড়িতে। তারা বেশ লোক। বুড়োবুড়ি। দুই মেয়ের এদেশেই বিয়ে হয়েছে। বুড়োবুড়ির সময় কাটে আপনমনে, ঘোর নিঃসঙ্গতায়। আমি তাদের মাসিমা মেলোমশাই ডাকতাম। তারা তাতে খুব খুশি। ওবাড়িতে বেশ ছিলাম। কিন্তু এখন হস্টেলে থাকতে হচ্ছে। বড্ড কেজো জায়গা। যে যার নিজের লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত।

আমারও ইগো, তোমারও ইগো। তাই তোমাকে চিঠিটা লিখতে গিয়েও লিখতে পারিনি। তিনবার কিন্তু শুরু করেছি। তিনটে এয়ারোগ্রাম নষ্ট। না, ফেলিনি, রেখে দিয়েছি। কী জানি, তুমি বিয়ে করেছ কি না। মাঝে মাঝে তোমার খবর খুব জানতে ইচ্ছে করে। করেছ? সমীরণ প্রায়ই চিঠি লেখে, আমিও লিখি। কিন্তু তার কাছে জানতে চাইতে লজ্জা করে। কী ভাববে? আচ্ছা, টেলিপ্যাথি বলে কিছু নেই? নেই কেন? এই তো আমি টেলিপ্যাথিতে তোমার কাছে কত কথা বলছি! শুনতে পাচ্ছ?

প্রফেসর এজেফিয়েল সেদিন বলছিলেন, যাদের ইগো খুব প্রবল তাদের মধ্যে পাগলামির লক্ষণ থাকে। এই ইগো বড় জ্বালাচ্ছে আমাকে, জানো? তাই তোমাকে চিঠি লিখতে পারছি না। এটা আমার পাগলামি নম্বর এক। দু’নম্বর পাগলামি হল, এখন তোমাকেই ভাবি আর তোমার সঙ্গেই কথা বলি মনে মনে। এটাকে কি ভাবমূর্তি বলে? না বোধহয়। অন্য কিছু বলে হয়তো। কিন্তু ভাবমূর্তি কথাটা বেশ, না? তোমাকে ভেঙে ফেললাম, তারপর তোমার একটা মানসমূর্তি গড়ে নিলাম, বেশ মজা।

সেদিন একটা কাণ্ড হল। সুসান আমার খুব বন্ধু। দু’জনে গাড়ি নিয়ে একটা ঝরনা দেখতে গেছি। বড় সুন্দর জায়গা। সাফোকেটিংলি বিউটিফুল। ফেরার সময় একটা পিছল জায়গায় আছাড় খেলাম। না, তেমন লাগেনি। কিন্তু কে জানে কেন, আমার চোখ ভরে জল এল। ভাবলাম, তুমি থাকলে আমি কি পড়ে যেতাম? কক্ষনও না। সুসান আমাকে ধরে তুলছিল। চোখে জল দেখে অবাক হয়ে বলল, আর ইউ ক্রায়িং? মাই গড, ইউ আর নট দ্যাট হার্ট।

আমি অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম, আমার তো কেউ নেই!

কী কথার কী উত্তর। শুনে সুসান আরও অবাক। বলল, আরে তোমার আবার কে থাকবে? আমারই বা কে আছে? উই ডোন্ট নিড এনিবডি।

সত্যিই তাই। এদের কেউ নেই। মা বাবা ভাই বোন কারও তোয়াক্কা করে না। একা থাকে, স্বয়ংসম্পূর্ণ। দরকার মতো বিছানায় বয়ফ্রেন্ড ডেকে নেয়। তারপর তাকে ভুলেও যায়। জলভাত। আর বিয়ে করতে হলে এত হিসেবনিকেশ করতে বসে যে, ওটা বিয়ে না বিজনেস কন্ট্রাক্ট তা বুঝতে কষ্ট হয়।

আমি এদের কাছে পাঠ নেওয়ার চেষ্টা করছি। পারছি না। কিছুতেই পারছি না। আমার কেবলই মনে পড়ে সেই তোমার অনেকক্ষণ ধরে চুমু খাওয়ার কথা। তখন ঘেন্না করেছিল। আজ আমার সমস্ত শরীর আর মন সেই চুমুটার কথা ভেবে সম্মোহিত হয়ে যায়। অন্য কোনও পুরুষ কাছে এলে কুঁকড়ে যাই, স্পর্শ তো বটেই, কাছাকাছি হওয়াটাও সহ্য করতে পারি না। এ আমার পাগলামি নম্বর তিন।

.

(তিন) আজ বাবা এল। এয়ারপোর্টে বাবাকে আনতে গিয়েছিলাম। দেখলাম অল্প কিছুদিনেই বাবা বড্ড বুড়িয়ে গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি চালিয়ে আসছি, টুকটাক কথা হচ্ছে। কী করলাম জানো? হঠাৎ বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, মিঠুবাবুর কী খবর?

বাবা অবাক হয়ে বলল, মিঠুবাবু কে?

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, মিঠু মিত্র।

কী হবে খবর দিয়ে?

এমনি।

আমার বুক কাঁপছিল। লজ্জা করছিল।

বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ক’দিন আগে দেখা হয়েছিল। ভাল আছে।

আমি আরও কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। বাবা বলল না।

কিন্তু দু’দিন পর এক রাতে ডিনারের পর বাবা আমাকে ডেকে বলল, হারে, তুই সেদিন মিঠুর খবর জানতে চাইলি কেন?

এমনি।

তোর কি মিঠুর কথা মনে হয়?

আমার চোখে ফের জল এল’ বাবার কাছ থেকে পালিয়ে এলাম।

পাশ করে চাকরি পেয়ে হস্টেল ছেড়ে বাসা করেছি। ভাড়া অবশ্য। শিগগিরই একটা বাড়ি কিনব। একা থাব। চাকরি করব। আর এভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দেব, প্রবাসে–আমার নিয়তি তো এই।

কয়েকদিন পর বাবাকে নিউ ইয়র্ক দেখাতে নিয়ে গেছি। কিন্তু বাবার তেমন বিস্ময় নেই। কী যেন ভাবছে। মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে রেস্টুরেন্টে চা খেতে খেতে বাবা হঠাৎ বলল, এসব দেশে একটা মেয়ের পক্ষে একা থাকা বিপজ্জনক।

কত মেয়েই তো আছে। এদেশে একা থাকাই রেওয়াজ।

সেটা কেমনতরো কথা! একা থাকার রেওয়াজ তাদের কাছে, যারা নিরুপায়।

আমিও তো তাই।

তুই কেন নিরুপায়?

এ কথার কি জবাব হয়? চুপ করে রইলাম।

.

(চার) বাবাকে আজ প্লেনে তুলে দিয়ে এলাম। প্রায় এক বছর আমার কাছে রইল বাবা। কী যে ভাল লাগত। আর কিছু নয়, বাড়ি ফিরে একজন আপন মানুষকে তো দেখতে পেতাম! এ দেশের একাকিত্ব তুমি ভাবতেও পারবে না। পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাখামাখি করা যায় না, আজ্ঞা নেই, হুটহাট কারও বাড়ি যাওয়া যায় না। চেনাজানা লোকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে বলে আর কত সময় কাটে? সময়ও হাতে কম। উদয়াস্ত হাসপাতাল, রুগি, রিসার্চ।

গতকাল বাবা বলছিল, একটু ভেবে বল, দেশে কাউকে তোর কোনও মেসেজ দেওয়ার আছে?

মাথা নেড়ে বললাম, না বাবা।

মিঠু বোধহয় এখনও তোকে ফেলবে না।

আমি তো তার দয়া চাই না।

তোর যে কেউ নেই।

তুমি তো আছ।

আমি আর ক’দিন? আমার ইচ্ছে মিঠুর সঙ্গে বিয়েটা মেনে নে। সে বরং এখানে চলে আসুক।

থাক বাবা। সে নিশ্চয়ই আমাকে ঘেন্না করে।

রাগ তত থাকতেই পারে। কিন্তু সে বুদ্ধিমান, বিবেচক ছেলে।

থাক বাবা।

মুখে যাই বলি, বুকটা কেমন করছিল, এমন কি হয়? এমন কি হতে পারে? হলে হয়তো ভালও হবে না। কল্পনা এক, বাস্তব আর এক। মিলবে না হয়তো।

উজ্জ্বল অ্যাপ্রোচ করছে। বারবার। জানি, এটা সম্ভব নয়। তবু উজ্জ্বল যে আসছে তা মেনেও নিই। আর কিছু নয়। এই সাংঘাতিক একাকিত্ব থেকে তো খানিকটা মুক্তি। একজন কথা বলার লোক।

মোট বারোটা এয়ারোগ্রাম জমা হয়েছে। ওপরে তোমার নাম আর ঠিকানা। ভিতরে তিন বা চার লাইন লেখা। সবচেয়ে বড়টায় লিখতে পেরেছি তেরো লাইন। পছন্দ হচ্ছে না।

বাবা চলে যাওয়ার পর খুব কাঁদলাম। অনেকক্ষণ ধরে। আমার যে কী হবে।

.

তিনটে জেরক্স কপির দিকে চিন্তিত মুখে চেয়ে ছিল শবর দাশগুপ্ত। মিতালির ডায়েরিতে এই তিনটে পাতাই পাওয়া গেছে। বাদবাকি পৃষ্ঠা সাদা। লেখাগুলোর ওপরে বা নীচে কোনও তারিখ নেই। অনুমান করা যায় প্রথমটা আর শেষটার মধ্যে সময়ের তফাত দুই বা তিন বছরের। এর মধ্যে আরও অনেক পৃষ্ঠা লেখা হয়েছিল নিশ্চয়ই। সেগুলো কোথায় গেল বোঝা যাচ্ছে না।

কেসটা খুব মাখোমাখো হয়ে উঠছে স্যার। এ তো রীতিমতো লাভ অ্যাফেয়ার!

শবর তার বিচ্ছু টাইপের সহকারী নন্দলালের দিকে চেয়ে বলল, হাতের লেখা চেক করেছ?

হ্যাঁ। ওসব ঠিক আছে। মিতালিরই হাতের লেখা। শেষ টুকরোটায় উজ্জ্বল সেনের রেফারেন্সটা দেখেছেন স্যার?

দেখেছি। পান্টুর কী খবর?

বাড়ি নেই। ধানবাদ না কোথায় কোন ধান্দায় গেছে। আজ বা কাল ফিরবে। ফিরলেই তুলে নেব।

ক্ষণিকাদেবীকে চেক করো।

ও কে।

আর কোনও ডায়েরি খুঁজে পাওনি?

না স্যার। এই একটাই। মোট তিনটে এন্ট্রি। কোনও পাতা ছেঁড়া ছিল না।

কিন্তু বোঝা যাচ্ছে মিতালিদেবী সিস্টেমেটিক ছিলেন না। উনি এক-এক সময়ে এক একটা ডায়েরিতে লিখতেন৷ বাকি ডায়েরিগুলো হয় উনি আমেরিকা থেকে আনেননি, নয়তো চুরি গেছে।

মিঠু মিত্রকে কি ভোলা হবে স্যার?

এখন নয়। তুমি বাড়িটা আর একবার সার্চ করো। দেখো, যদি সিগনিফিক্যান্ট কিছু পাও।

নন্দলাল চলে গেল। শবর চিন্তিত মুখে চেয়ার টেনে বসল। এইটেই মিতালির শোয়ার ঘর। দক্ষিণ পশ্চিম এবং পুব ভোলা। দেয়ালে হালকা ক্রিম রং। আসবাব সবই খুব উঁচু জাতের। বার্মা সেগুনের ডবল খাট, বড় ওয়ার্ডরোব, হাফ সেক্রেটারিয়েট এবং রিভলভিং চেয়ার, কাশ্মীরি কাজ করা ছোট টেবিল, ওয়াল ক্যাবিনেটে নানা দামি জিনিস সাজানো। হাতির দাঁতের মূর্তি, রুপোর ওপর মিনার কাজ করা রেকাবি, পুতুল, দুটো মজবুত স্টিলের আলমারি। সবই খুলে দেখা হয়েছে।

খাটের কাছ বরাবর মেঝেতে পড়ে ছিল মিতালি। মোট দু’বার তাকে ছুরি মারা হয়েছিল। পিঠের দিক থেকে, হৃৎপিণ্ড বরাবর। মিতালি পড়ে ছিল কাত হয়ে, বাঁ দিকে। চারদিকে অন্তত বারো-তেরোটা সেন্টের শিশি ভাঙা অবস্থায় ছড়িয়ে ছিল। ঘর সুগন্ধে এত ভরা ছিল যে পুলিশ কুকুর সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। স্নিফার ডগকে বিভ্রান্ত করার জন্যই যে সেন্টের শিশিগুলো ভাঙা হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। একজন কেয়ারটেকার, একজন রান্নার লোক এবং একটি কাজের মেয়ে কোনও নতুন কথা বলতে পারেনি। ককটেল ডিনারে ডিনার সার্ভ করেছিল এক নামী ক্যাটারার। তাদের কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি তেমন কোনও সূত্র। মোটামুটি যা জানা গেছে তা হল, রাত এগারোটা নাগাদ মিতালি সামান্য মাতাল অবস্থায় ওপরে উঠে আসে। দোতলায় সে একা থাকত। সে শোয়ার ঘরে ঢুকে যাওয়ার পর মধ্য রাতে রান্নার লোক হরেন আর মালি ভজুয়া অনেক শিশি বোতল ভাঙার আওয়াজ পায়। মিতালি মাতাল অবস্থায় ওসব করছে ভেবে ওপরে ওঠেনি ভয়ে।

শবর উঠল। খানিকক্ষণ পায়চারি করল। তারপর পিছনের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। খুন করে পালিয়ে যাওয়ার পক্ষে এই বারান্দাটি প্রশস্ত। পিছনে একটু বাগান এবং ঝোঁপঝাড় আছে। বারান্দা থেকে অনায়াসে নীচের ঘরের জানালার ওপরকার রেন শেড-এ নামা যায়। সেখান থেকে লাফিয়ে পড়লেই হল।

না, শবর দাশগুপ্ত খুশি হচ্ছে না। মোটিভ অ্যাঙ্গেলটা পালটে যাচ্ছে। কোথাও একটা নট রয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজে সে আবার নতুন করে পূর্বাপর ভাবতে লাগল।

.

নমস্কার মিত্তিরমশাই। আপনাকে আবার জ্বালাতে এলাম।

ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চেহারার মিঠু দরজাটা ছেড়ে দিয়ে ভদ্র গলায় বলল, আসুন।

আপনি তো বেশ ভেঙে পড়েছেন দেখছি।

ও কিছু নয়। বসুন।

 আমাদের আরও কিছু জানার আছে মিত্তিরমশাই। উই ওয়ান্ট ইয়োর হেল্প।

বলুন।

আপনি সেদিন মিতালিদেবীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আপনাদের মধ্যে কথাও হয়েছিল। আমি সেই কথাগুলো জানতে চাই।

প্রথম স্টেটমেন্টেই বলেছি।

জানি। তবু আর একবার বলুন।

মিঠু মাথা নেড়ে বলল, ওর বেশি আমার কিছুই বলার নেই।

মিতালিদেবীই কি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন?

মিঠু ক্লান্ত চোখে চেয়ে বলল, একটা যোগাযোগ হয়েছিল।

কীরকম যোগাযোগ? আপনার তো টেলিফোন নেই। তা হলে?

আমার অফিসে টেলিফোন আছে।

ওঃ হ্যাঁ, ও কথাটা মনে ছিল না। তা হলে মিতালিদেবী আপনাকে অফিসেই টেলিফোন করেছিলেন?

আমি সে কথা বলিনি।

যোগাযোগটা কবে হয়েছিল?

ঠিক মনে নেই।

মারা যাওয়ার দিন কি?

না।

না? তার মানে আপনার মনে আছে। ব্যাপারটা আপনি চেপে যেতে চাইছেন কেন?

কিছু কথা না বলার অধিকার আমার আছে।

কিন্তু তাতে একটা মার্ডার কেস ক্ষতিগ্রস্ত হলে নয়।

আমি যে কথা বলতে চাইছি না তার সঙ্গে ওর খুনের সম্পর্ক নেই।

আপনি কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে মিতালিদেবীর বাড়িতে যান?

না। হঠাৎ গিয়েছিলাম।

কিন্তু একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আপনাদের মধ্যে হয়েছিল?

সেভাবে নয়।

মিতালিদেবী দেশে এসেছেন তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে। প্রায় এক মাস আগে। এর মধ্যে তার সঙ্গে আপনার মাত্র একবারই দেখা হয়েছিল কি?

হ্যাঁ।

ইউ আর নট এ গুড লায়ার। প্লিজ, সত্যি কথা বলুন। তাতে আমাদের তদন্তের সুবিধে হবে।

কিছু কথা আমি বলতে বাধ্য নই।

আপনি কি জানেন পৃথিবীতে যেখানে যত বিবাহিতা মহিলা খুন হন তাদের অধিকাংশের খুনের পিছনেই থাকেন তাদের হাজব্যান্ডরা। শতকরা নব্বইটা কেসেই।

জানি।

জানেন কি যে, এই কেসেও আপনি প্রাইম সাসপেক্ট?

অনুমান করছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।

ইউ আর এ কুল কাস্টমার।

মিঠু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, কিছু বলল না।

মিঠুবাবু, আপনার পাসপোর্টটা একটু দেখাতে পারেন?

পাসপোর্ট! আমার পাসপোর্ট নেই।

সে কী! পাসপোর্ট করেননি?

না। আমার দরকার পড়েনি।

এই জেরক্স কপিগুলোর হাতের লেখা চিনতে পারেন?

পারি। মিতালির লেখা।

মিতালির লেখা বলে চিনলেন কী করে?

বলতে পারব না। চিনি।

এ হাতের লেখা কোথায় দেখেছেন? চিঠি বা ডায়েরিতে?

মনে নেই।

তিনি আপনাকে চিঠি লিখতেন?

না।

আপনি ডায়েরির এই তিনটে কপি একটু পড়ে দেখুন।

মিঠু কপিগুলো হাতে নিল। পড়তে লাগল। তার মুখের দিকে ঈগলের মতো তীক্ষ্ণ দুটি চোখ নিষ্পলক নিবদ্ধ রইল সারাক্ষণ। মিঠুর মুখে তেমন কোনও ভাবান্তর হল না। পড়া শেষ করে সে একটা শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বসে রইল।

মিঠুবাবু, আমি ক্রাইমের লোক, হৃদয়ের ব্যাপারটা ভাল বুঝি না। এ ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অবাক ঠেকছে। আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

না।

আপনার কি মনে হয় এগুলো ফল এবং ফ্রড? কেউ মিতালির হাতের লেখা নকল করে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে?

হতে পারে।

আর যদি তা না হয়, যদি সত্যিই মিতালিদেবীরই লেখা হয় তা হলে বুঝতে হবে তিনি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন।

মিঠু জবাব দিল না।

হাবুডুবুই যখন খাচ্ছিলেন তখন তার পক্ষে সবচেয়ে স্বাভাবিক হল, দেশে ফিরেই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা। তাই না?

নাও হতে পারে।

সেটা কীরকম?

অনেকে আছে, মনে মনে অনেক কিছু বানিয়ে নেয়, বাস্তবকে এড়িয়ে চলে।

মিতালি কি সাইকিয়াট্রিক কেস?

আমি জানি না।

আপনি এম সেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের নাম কখনও শুনেছেন?

খুব সূক্ষ্মভাবে একটু শক্ত হয়ে গেল কিনা মিঠু, তা ভাল বুঝতে পারল না শবর। একবার চকিত দৃষ্টিনিক্ষেপ করে মাথা নিচু করল। বলল, কেন?

আহা, শুনেছেন কি না বলুন না।

শুনতেও পারি।

শুনেছেন মশাই, শুনেছেন। কলকাতার পুরনো অ্যাটর্নি। আপনার শ্বশুর এঁদের মক্কেল ছিলেন।

ও।

আপনি কি জানেন এঁদের কাছে মিতালিদেবীর একটা ডিড আছে?

থাকতে পারে।

অত নির্বিকার থাকবেন না। ডিডটা আপনার নামে করা। মিতালিদেবী তার সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ভার আপনাকে দিয়ে গেছেন। আপনি এখন এক বিশাল সম্পত্তির মালিক। তাই না?

কাস্টোডিয়ান আর মালিক তো এক কথা নয়।

ডিডটা কি আপনি দেখেছেন? মিতালিদেবীর কলকাতার যাবতীয় সম্পত্তি দেখাশুনো, প্রয়োজনে বিক্রি করা বা যে-কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়েছে।

পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি একটা সাধারণ জিনিস।

খুব সাধারণ কি? তা ছাড়া মিতালিদেবীর সিঙ্গল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে সম্প্রতি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে। আপনার সঙ্গে। এটাও স্বাভাবিক?

মিঠু একটা শ্বাস ফেলে বলল, কলকাতায় ওদের বিষয়সম্পত্তি দেখাশুনো করার কেউ নেই। ফলে–

ফলে উনি ওঁর ডিভোর্স করা স্বামীকে পরম বিশ্বাসে সব কিছুর ভার দিয়ে ফেললেন?

মিঠু চুপ।

মোটিভটা উনিই তৈরি করেছিলেন। মিতালিদেবীর সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিল আপনাকে এতটা বিশ্বাস করা। সবকিছু যেই হাতের মুঠোয় এল অমনি নিষ্কণ্টক হওয়ার জন্য আপনি তাকে নির্মমভাবে সরিয়ে দিলেন!

কাজটা আমি করিনি।

নিজের হাতে করেননি বলছেন? তা হলে কি ভাড়াটে খুনি অ্যাপয়েন্ট করেছিলেন?

মিতালিকে খুন করার কোনও কারণ আমার ছিল না।

এগুলো কি কারণ নয়?

আমার কাছে নয়।

তা হলে আপনার সুবিধের জন্য আমি ঘটনাগুলো একটু সাজিয়ে দিই? শ্রীমতী মিতালি ঘোষ একদিন আমেরিকায় একটি ঘটনা থেকে আবিষ্কার করলেন যে, তিনি আপনাকে আকণ্ঠ ভালবাসেন। সেই হদ্দমুদ্দ ভালবাসায় এই রোমান্টিক ও একটু ইমপ্র্যাকটিক্যাল মহিলা ডায়েরিতে পাতার পর পাতা নিজের হৃদয়াবেগে ভরে ফেলতে লাগলেন। অথচ ইগো এবং লোকলজ্জায় আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারলেন না। দেশে ফিরে এসে বরুণ ঘোষ কিছুদিন পর মারা গেলেন। মিতালিদেবী সেই মৃত্যু উপলক্ষে দেশে ফিরলেন। তিনি তখন সম্পূর্ণ একা! এই অবস্থায় তিনি আকুল হয়ে লজ্জা সংকোচ ঝেড়ে ফেলে প্রথমেই ছুটে এলেন আপনার কাছে। হয়তো আত্মসমর্পণও করলেন। এই গ্যাপগুলো যদি আপনি ভরাট করতে পারতেন তা হলে আমাদের পক্ষে সুবিধে হত। যাকগে, যা বলছিলাম। উনি তো আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, কিন্তু আপনি তো খাচ্ছিলেন না। আপনার বুকে দীর্ঘকালের একটি অপমান বিষধর সাপের মতো অপেক্ষা করছিল। আপনার জন্মমাস নভেম্বর, আপনি একজন স্কোর্পিও। স্কোর্পিওর জাতকদের প্রতিশোধস্পৃহা হয় সাংঘাতিক। তার ওপর আপনি লোভী, সম্পত্তির লোভেই না আপনি মিতালি ঘোষের অতীতের কলঙ্কের কথা এবং বিয়েতে তার অনিচ্ছা জেনেও তাকে বিয়ে করেন। হয়তো বিয়ের পর তার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু থ্যাঙ্ক গড, মিতালিদেবী সময় থাকতেই আপনাকে ডিভোর্স করে আমেরিকায় চলে যান। আপনার কপালটা কিন্তু দারুণ ভাল। মিতালিদেবী সম্মোহিতের মতো ফিরে এসে আপনার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করলেন। এর চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারে বলুন! তার ওপর আপনি একজন গুন্ডা প্রকৃতির লোক। নিষ্ঠুর ও আবেগহীন। এ কুল কাস্টমার। আপনি মিতালির তালে তালে একটু নাচলেন। তার সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান হলেন, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের কয়েক লাখ টাকা আপনার নাগালের মধ্যে এসে গেল। এরপর মিতালিদেবীর মতো একজন আবেগসর্বস্ব, ছিটিয়াল মহিলাকে জিইয়ে রাখার কোনও কারণ আপনার ছিল না। তাই না? নিজেই হোক বা ভাড়াটে লোক দিয়েই তোক আপনি তাকে সরিয়ে দিলেন। বাই দি বাই, খুনের দিন রাতে একটা থেকে দুটোর মুধ্যে আপনি কোথায় ছিলেন বলুন তো!