গৌণরচনা (ব্রাহ্মণ)
বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ব্ৰাহ্মণ সাহিত্যে দুটি প্রধান ভাগ রয়েছে : বিধি ও অর্থবাদ। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর মধ্যে বহু গৌণ বর্গ রয়েছে, যেমন ইতিহাস, পুরাণ, গাঁথা, আখ্যান, নারাশংসী ও বাকোবাক্য। এই তালিকা থেকে আমরা তৎকালে প্ৰচলিত বিচিত্ৰ সাহিত্যবৰ্গগুলি সম্পর্কে যেমন অবহিত হই, তেমনি তাদের ধারকরীপে প্ৰাচীন গদ্যভঙ্গির স্থিতিস্থাপকতারও পরিচয় পাই। এই তালিকাতে বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে পারি যে, আনুষ্ঠানিক নিয়মাবলী বা বিধিকে প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত করার জন্যেই লোকায়ত সাহিত্য বর্গগুলির উদ্ভব ও চর্চা হয়েছিল। আখ্যান ও প্রশস্তি কাব্যের মতো সাহিত্যগুলির ভিত্তি যে জনপ্রিয় ছিল, তা তৈক্তিরীয় ব্ৰাহ্মণের একটি বক্তব্যে স্পষ্ট। সেখানে বলা হয়েছে যে, বেদের অশুদ্ধ অংশই গাথা ও নারাশংসীতে পরিণত হয়েছিল। বর্ষব্যাপী অশ্বমেধ যজ্ঞে অধ্বর্যু দ্বারা আমন্ত্রিত হোতা ‘পারিপ্লব’ আখ্যান নামে যে সব কাহিনী শোনাতেন, তার উদ্দেশ্য ছিল যজমান রাজাকে উন্নততর নৈতিক স্তরে উত্তীর্ণ করে দেওয়া, কিন্তু অতি দীর্ঘায়িত পুনরুক্তিবহুল এই কাহিনীগুলির নিজস্ব গৌরব খুব বেশি ছিল না–সম্ভবত প্ৰাচীন সমাজ অধুনাবিস্মৃত বিশেষ কোনো কারণেই এদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করত।