ওই যে, ওখানে
কোনসাইল-এর যে দু-হাজার ডলার পুরস্কারের প্রতি কোনো লোভ ছিলো না, তা নয়। কিন্তু আমার বেলায় ব্যাপারটা ছিলো সম্পূর্ণ অন্য রকম। পুরস্কারের তোয়াক্কা রাখি না আমি। কিন্তু তবু কিসের টানে আমিও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতুম। আমি নিজের চোখে এই সিন্ধুদানবকে দেখতে চাই। জানতে চাই সে আসলে কোনো অতিকায় নারহোয়াল বা কিংবদন্তির সিন্ধুড্রাগন কিনা। কিন্তু দিনের পর দিন একটানা তাকিয়ে থেকে কেবল চোখ দুটিই টনটন করতে লাগলো–হঠাৎ ঢেউয়ের মধ্যে ভেসে-ওঠা কালো তিমির বিশাল পিঠ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না, কোনো সাদা তিমি বা কোনো বিপুল মবি ডিক পর্যন্ত না।
সাতাশে জুলাই আমরা বিষুবরেখা ছাড়িয়ে এলুম। জাপানের দিকে এগিয়ে চললুম আমরা। কিন্তু নাবিকেরা ততক্ষণে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছেছে। তারা কিছুতেই আর এই অর্থহীন কল্পনাবিলাসের পিছনে ঘুরে বেড়াতে চায় না। শেষকালে তাদের চাপে পড়ে ক্যাপ্টেন ফ্যারাগুটকেও ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মতো বলতে হলো যে আর তিনদিনের মধ্যে যদি এই সিন্ধুদানবের সন্ধান না পাওয়া যায় তাহলে অ্যাব্রাহাম লিঙ্কনকে তিনি আবার নিউইয়র্কে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। কে কোথায় নেশার ঘোেরে কোন আজব ও অতিকায় একটি জীব দেখেছে, সেই জন্যে সেই বন্য হংসের পিছনে হুড়মুড় করে ছুটে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না। বামকাই এত পথ এলো অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন–কোনো অলীক বুনো হাঁসের পিছন পিছন।
দু-দিন কেটে গেলো। টোপ ফেলে সিন্ধুদানবটাকে কাছে আনার জন্য বড়োবড়ো মাংসের টুকরো ফেলা হতে লাগলো জলের মধ্যে, এবং তার ফলে হাঙরদের মধ্যে ভোজ শুরু হলো বটে, কিন্তু সেই সিন্ধুদানবের রহস্য পূর্ববৎ সেই একই অনন্ত তিমিরে ঢাকা রয়ে গেলো।
জাপান তখন আর মাত্র দু-শশা মাইল দূরে। আরেকটা দিনও যদি এমনিভাবে কেটে যায়, তাহলে অ্যাব্রাহাম লিঙ্কন আর মিথ্যে বুনো হাঁসের পিছনে না-ফুটে দেশে ফিরে যাবে।–ঢং করে রাত্রি আটটা বাজলো। আমরা অনেকেই উদগ্রীবভাবে ডেকের উপর দাঁড়িয়ে আছি; যদি শেষমুহূর্তে দানবটির দর্শন পাওয়া যায়, এই প্রত্যাশায়।
কোনসাইলের স্নায়ু বলে কোনোকিছু কোনোকালে ছিলো বলে আমি টের পাইনি। কিন্তু এখন তাকেও কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত দেখা গেলো। হেসে বললুম, কোনসাইল, ওই দুহাজার ডলার পকেটস্থ করার এই শেষ সুযোগ তোমার। দ্যাখো, পারো কিনা।
মঁসিয় কি দয়া করে আমাকে এ-কথা বলার সুযোগ দেবেন যে আমি কোনো দিনই পুরস্কারের প্রত্যাশা করিনি–যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যদি লাখ ডলারও পুরস্কার ঘোষণা করতেন, তাহলেও তাদের কিছুতেই ওই টাকাটা হারাতে হতো না। কারণ ওই রকম কোনো সিন্ধুদানব কদাচ হিলো কি না তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে।
তুমি ঠিকই বলেছে, কোনসাইল। আমরা যে কেবল ছ-মাস সময় খামকা নষ্ট করলুম, তা-ই নয়–ফিরে গিয়ে দেখবো লোকের কাছে রীতিমতো হাস্যাস্পদ হয়ে উঠেছি
ঠিক তক্ষুনি নেড ল্যাণ্ডের প্রবল চীৎকার শোনা গেলো! ওই-যে! আমরা যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি, অবশেষে সেই-তিনি সশরীরে হাজির! ওই-যে, ওখানে!