হেথায় কাম্যক বনে ধর্ম্মের নন্দন।
মৃগয়া করিয়া নিত্য পোষেন ব্রাহ্মণ।।
পূর্ব্বে রাজা যুধিষ্ঠির, যাম্যে বৃকোদর।
উত্তর পশ্চিমে দুই মাদ্রীর কোঙর।।
মৃগয়া করিয়া আনি দেন কৃষ্ণা স্থানে।
দ্রৌপদী জননী প্রায় ভুঞ্জায় ব্রাহ্মণে।।
সহস্র সহস্র দ্বিজ সবে ভুঞ্জি যায়।
স্বামিগণে ভুঞ্জাইয়া পিছে কৃষ্ণা খায়।।
হেনমতে সেই বনে অর্জ্জুন বিহনে।
পঞ্চবর্ষ কৃষ্ণা সহ ভাই চারিজনে।।
একদিন একান্তে বসিয়া সর্ব্বজনে।
শোকেতে আকুল হয় স্মরিয়া অর্জ্জুনে।।
চারি ভাই কৃষ্ণা সহ কান্দেন সঘনে।
জলধারা বহে সদা যুগল নয়নে।।
রোদন সম্বরি ভীম রাজা প্রতি কয়।
পার্থের বিচ্ছেদ তাপ না সহে হৃদয়।।
পার্থের বিচ্ছেদ তাপ না সহে হৃদয়।
পার্থের যতেক গুণ প্রশংসে সংসারে।।
বীর ধীর কত গুণ প্রশংসে সংসারে।
বীর ধীর কত গুণ ধনঞ্জয় ধরে।।
তোমার আজ্ঞাতে সেই পার্থ বীরবর।
না জানি কোন বলে গেল সে সত্বর।।
শোক দুঃখ গেল সে অগম্য বনস্থল।
বহুদিন তাহার না জানি যে কুশল।।
বনমধ্যে তাহার বিপদ যদি হয়।
শ্রুতমাত্র প্রাণ আমি ছাড়িব নিশ্চয়।।
কৃষ্ণ প্রাণ ছাড়িবেক আর যদুগণ।
পাঞ্চাল দেশেতে যত পাঞ্চাল নন্দন।।
সবে প্রাণ দিবে রাজা অর্জ্জুন বিহনে।
পার্থ বিনা শরীর ধরিব কি কারণে।।
যত কর্ম্ম কৈল ধৃতরাষ্ট্র পুত্রগ।
অন্য জন হলে প্রাণ ত্যজি ততক্ষণ।।
ক্ষণেকে মরিতে পারি ঘৃণায় না মরি।
যে ভায়ের তেজে রাজা হেন মনে করি।।
ইন্দ্র আদি নাহি গণি যে ভায়ের তেজে।
ভৃত্য প্রায় খাটাইল যত মহারাজে।।
তব পাশাক্রীড়া হেতু শুন মহারাজ।
ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই হৈনু বনমাঝ।।
অধর্ম্ম করিলে রাজা, ধর্ম্ম না বুঝিলে।
ক্ষত্রধর্ম্ম রাজ্যরক্ষা তাহা তেয়াগিলে।।
এখনো সদয় হয়ে ক্ষমিছ কৌরবে।
ত্রয়োদশ বৎসরান্তে অবশ্য মরিবে।।
তবে কেন দুষ্টজনে এবে ক্ষমা করি।
বনে কত দুঃখ পাই তাহারে না মারি।।
যদি কদাচিৎ পাপ জ্ঞাতি বধে হয়।
যজ্ঞ দান করিয়া খণ্ডিব মহাশয়।।
নতুবা এ বনবাস করিব তখন।
আগে সব শত্রুগণে করিব নিধন।।
কপটে কপটী মারি, পাপ নাহি তায়।
আজ্ঞা কর দূত গিয়া আনে যদুরায়।।
জগন্নাথে সাথে করি মারি কুরুকুল।
যথা কৃষ্ণ তথা জয়, কিসে অপ্রতুল।।
এত শুনি ভীমসেন করিয়া চুম্বন।
শান্ত করি কহে রাজা মধুর বচন।।
যে কহিলে বৃকোদর সকলি প্রমাণ।
কিসের আপদ যার সখা ভগবান।।
কিন্তু হেন বেদবাণী মুনিগণে কয়।
যথা ধর্ম্ম তথা কৃষ্ণ, তথায় বিজয়।।
অধর্ম্মী লোকের কৃষ্ণ সহায় না হয়।
ভাই বন্ধু বহু তার, কেহ কিছু নয়।।
হেন ধর্ম্ম না আচরি অধর্ম্ম করিলে।
নহিবে গোবিন্দ সখা, আমি জানি ভালে।।
অবশ্য মারিবে তুমি কৌরব দুরন্তে।
এক্ষণে নহেক, ত্রয়োদশ বৎসরন্তে।।
যে নিয়ম করিলাম খণ্ডিবারে নারি।
নিয়ম করিয়া পূর্ণ, মার সব অরি।।
হেনমতে ভ্রাতৃসহ কথোপকথন।
হেনকালে আসে বৃহদশ্ব তপোধন।।
যথোচিত পূজিলেন পাণ্ডুর নন্দন।
বসিবারে দেন আনি কুশের আসন।।
শ্রান্ত হয়ে মুনিরাজ বসিল তখন।
যুধিষ্ঠির কহেন আপন বিবরণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুণে পুণ্যবান।।