এইরূপে ক্রন্দন করয়ে দশানন।
কোনমতে স্থির নাহি হয় একক্ষণ।।
রাজার ক্রন্দন শুনি কান্দে সর্ব্বজনা।
কেহ না করিতে পারে কাহারে সান্ত্বনা।।
তবে ইন্দ্রজিৎ নিজ ক্রন্দন সম্বরি।
কহিতেছে দশাননে অহঙ্কার করি।।
আমি বিদ্যমানে কেন পাঠাও অন্য জনে।
আজ্ঞা কর মেরে আসি শ্রীরাম লক্ষ্মণে।।
অনুগ্রহ করি মোরে দেহ পদধূলি।
রামসৈন্য মারিবারে এই আমি চলি।।
অঙ্গদ সুগ্রীব আর বীর হনুমান।
বড় বড় বানরের লইব পরাণ।।
নল নীল সুষেণে মারিব অবহেলে।
জাম্ববানে ডুবাইব সাগরের জলে।।
সুগ্রীবের শ্বশুর সুষেণ বেটা বুড়া।
গদাঘাতে করিব তাহার মুণ্ড গুঁড়া।।
কেশরী বানর বেটা ঘরপোড়ার বাপ।
যমালয়ে পাঠাইব করে বীরদাপ।।
মারিব শরভ আদি যত কপিগণ।
বধিব লঙ্কার শত্রু খুড়া বিভীষণ।।
যত বেটা লঙ্কা আসি করেছে প্রবেশ।
বাহুড়িয়া একজন না যাইবে দেশ।।
মেঘনাদের কথা শুনি রাবণ হর্ষিত।
কোলে করি মেঘনাদে কহিছে ত্বরিত।।
লঙ্কা-অধিপতি তুমি পুত্র মেঘনাদ।
নর ও বানর মারিয়া ঘুচাও প্রমাদ।।
ভুঞ্জিতে লঙ্কার ভোগ আমি দশানন।
বিপক্ষ নাশিতে পুত্র রয়েছ এখন।।
চারি পুত্র পড়ে রণে, রাবণ চিন্তিত।
যোড়হাতে বাপের আগে কহে ইন্দ্রজিৎ।।
লঙ্কা-অধিপতি তুমি, ভুবনের রাজা।
ইন্দ্র-আদি দেবতা তোমারে করে পূজা।।
কিসের সংগ্রাম নর-বানেরর সনে।
এখনি বান্ধিয়া আনি শ্রীরাম-লক্ষ্মণে।।
এতেক কহিলা যদি রাবণ-নন্দন।
যুদ্ধ করিবারে আজ্ঞা দিল দশানন।।
রাজ-আভরণ দিল দেবের বাঞ্ছিত।
সংগ্রামেতে সাজিল কুমার ইন্দ্রজিৎ।।
বাপের দুলাল সেই পুত্র মেঘনাথ।
সর্ব্বাঙ্গ ভরিয়া পরে রাজার প্রসাদ।।
অঙ্গুলে অঙ্গুরী পরে বাহুতে কঙ্কণ।
সর্ব্বাঙ্গে ভূষিত করে রাজ-আভরণ।।
বীর পরিধান পরে নেতের যে ফালি।
তিনশত ফের দিয়া বাঁধিল কাঁকালি।।
সর্ব্বাঙ্গে লেপন করে চন্দনের সার।
গলার উপরে তুলি দিল রত্নহার।।
স্বর্ণ নবগুণ পরে, পরে স্বর্ণপাটা।
ভুবন জিনিয়া ছটা কপালের ফোঁটা।।
সোনার দাপনি লয় নব অঙ্গে বহি।
এমন সুন্দর রূপ ত্রিভুবনে নাহি।।