মুনিরে জন্মেজয় জিজ্ঞাসে তখন।
ধৃতরাষ্ট্র শুনিল কি সব বিবরণ।।
মনি বলে, মহারাজ কর অবধান।
অর্জ্জুনের চরিত্র শুনিল বহু স্থান।।
লোকেতে অদ্ভূত রাজা অর্জ্জুন কাহিনী।
ব্যাসমুখে শুনিলেন অন্ধ নৃপমণি।।
আশ্চর্য্য শুনিয়া রাজা সঞ্জয়ে ডাকিল।
ব্যাসের কথানুসারে জিজ্ঞাসা করিল।।
শুনিলাম আর্শ্চর্য্য সে অর্জ্জুন কথন।
শুনেছ কি সঞ্জয় সে সব বিবরণ।।
সঞ্জয় বলেন, রাজা আমি সব জানি।
অর্জ্জুনের কথা রাজা অদ্ভূত কাহিনী।।
হেমন্ত পর্ব্বতে শিব সহ যুদ্ধ কৈল।
পাশুপত অস্ত্র শিবে তুষ্ট করি নিল।।
কুবের বরুণ যম যাচি দিল বর।
নিজ রথ দিয়া স্বর্গে নিল পুরন্দর।।
ইন্দ্র অর্দ্ধাসনেতে বসিল সুরমাঝে।
আদর করিয়া ইন্দ্র বসাইল মাঝে।।
মনুষ্য কি ছার, যারে দেবগণ পূজে।
মুনিগণ সন্তাপিত যার তপঃ তেজে।।
বীর মধ্যে শিব সম যাহার গণনা।
তাহার বৈরিতা করি জীবে কোন জনা।।
দিব্য অস্ত্র মন্ত্র যত মঘবা শিখায়।
কত দিনে দৈত্য মারি আসিবে হেথায়।।
এত শুনি চমকিত অন্ধ নৃপমণি।
আশ্চর্য্য মানিল রাজা পার্থ কথা শুনি।।
দুষ্ট দুর্য্যোধন কাল হইল আমার।
শোকসিন্ধু মাঝেতে পড়িনু পাকে তার।।
অর্জ্জুনের অগ্রেতে রহিবে কোন জন।
দ্রৌণি কর্ণ কৃপাচার্য্য বৃদ্ধ গুরু দ্রোণ।।
দিব্য মন্ত্র দিব্য অস্ত্র লভয়ে অর্জ্জুন।
বিশেষ দেবের বর পূর্ণ শতগুণ।।
দ্রৌপদীর কষ্টানলে অনুক্ষণ দহে।
অবশ্য হইবে যুদ্ধ, নিবারণ নহে।।
সঞ্জয় বলিল, রাজা কি বলিলে তুমি।
শুন কহি যেই বার্ত্তা পাইলাম আমি।।
যুধিষ্ঠির বনে গেল, শুনি নারায়ণ।
সেইক্ষণে যদুবলে করিল গমন।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন ধৃষ্টকেতু কেকয় নৃপতি।
শ্রুতমাত্রে বনমাঝে গেল শীঘ্রগতি।।
যুধিষ্ঠির বিভূষণ দেখি জটাচীর।
শ্রীকৃষ্ণ কহেন ক্রোধে কম্পিত শরীর।।
যেই জন হেন গতি করিল তোমার।
রাজ্য ধন নিল আর অঙ্গ অলঙ্কার।।
সে সকল দ্রব্য তার সহিত জীবন।
আনি দিব, যবে আজ্ঞা করহ রাজন।।
দ্রৌপদীর কেশে ধরি, শুনিনু শ্রবণে।
সভামধ্যে উপহাস কৈল দুষ্টগণে।।
শৃগাল কুক্কুর মাংসাহারী যে সকল।
কুরুকুল মাংস ভক্ষ্যে হবে কুতূহল।।
যে যে উপহাস কৈল কৃষ্ণা কষ্ট দেখি।
তীক্ষ্ণ অস্ত্রে সে সবার উপাড়িব আঁখি।।
কৃষ্ণ ভীমার্জ্জুন ধৃষ্টদ্যুন্ন আদি যত।
একে একে সবাই কহিল এইমত।।
যুধিষ্ঠির ধর্ম্ম রাজা কহনে না যায়।
কত দিন রক্ষা পেলে তাহার কৃপায়।।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, সকলি প্রমাণ।
এয়োদশ বৎসর হইলে সমাধান।।
কুরুসভা মধ্যে আমি করিনু নির্ণয়।
আমার শকতি তাহা খণ্ডণ না হয়।।
এত শুনি নির্ণয় করিল সর্ব্বজন।
প্রতিজ্ঞা করিল কুরু করিতে নিধন।।
নিয়ম করিয়া পূর্ণ রাজ্যে গেল সবে।
কেমনে নৃপতি শান্ত করিবে পাণ্ডবে।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, সত্য কহিলে সঞ্জয়।
কিছুতেই পাণ্ডুপুত্র শান্ত আর নয়।।
যখন ধরিল দুষ্ট দ্রৌপদীর কেশে।
তখনি জানিনু বংশ মজিল বিশেষে।।
বিধি মম কৈল অন্ধ যুগল নয়ন।
সে কারণে আমারে না মানে দুর্য্যোধন।।
দুর্য্যোধন দুঃশাসন দোঁহে দুরাচার।
আর দুই দুষ্ট দেয় যুক্তি কদাচার।।
আর আমি দৈবগতি পুত্রবশ হৈনু।
সাধুজন বচন শুনিয়া না শুনিনু।।
পশ্চাতে এ সব কথা করিব স্মরণ।
এইরূপ অনুশোচ অম্বিকা নন্দন।।
মহাভারতের কথা হইল প্রকাশ।
পাঁচালি প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস।।