রাজা বলে অকারণ করিলাম এত।
কোটি অহিংসক সর্প করিলাম হত।।
এ পাপ-নরক হইতে না দেখি নিস্তার।
কহ মুনি! কিমতে ইহাতে পাব পার।।
জ্ঞাতি-বধ করি পূর্ব্বে পিতামহগণ।
অশ্বমেধ করি পাপে হইলা মোচন।।
আমিও করিব সেই অশ্বমেধ-যজ্ঞ।
শুনি নিষেধিল ব্যাস সকল শাস্ত্রজ্ঞ।।
রাজা বলে, মুনি কেন করহ নিষেধ।
পিতৃ পিতামহ মোর কৈল অশ্বমেধ।।
অক্ষম জানিয়া বুঝি কর নিবারণ।
নিশ্চয় করিব যজ্ঞ, এই মম পণ।।
মুনি বলে, ক্ষম তুমি সকল কর্ম্মেতে।
অশ্বমেধ নাহি রাজা এ কলি-যুগেতে।।
মাংস-শ্রাদ্ধ সন্ন্যাস গোমেধ অশ্বমেধ।
এই সব হয় সদা কলিতে নিষেধ।।
অবশ্য করিব যজ্ঞ, বলে মহারাজ।
মোর বিঘ্ন করিতে কে আছে ক্ষিতিমাঝ।।
মুনি বলে, করহ যা তব মনে লয়।
কিমতে কহিব আমি, বেদে নাহি কয়।।
এত বলি মুনিরাজ হৈল অন্তর্দ্ধান।
নৃপতি করিল যত যজ্ঞের বিধান।।
যজ্ঞ-অশ্ব নিয়োজিল সেনাপতিগণ।
বহুদেশ-দেশান্তর করিল ভ্রমণ।।
সম্পূর্ণ-বৎসর অশ্ব পৃথিবী ভ্রমিল।
যত রাজগণে বলে জিনিয়া আনিল।।
যত মুনি দ্বিজগণ ছিল ভূমণ্ডলে।
নিমন্ত্রণ করিয়া আনিল যজ্ঞস্থলে।।
বপুষ্টমা-রাণী সহ আছে নৃপবর।
অসিপত্র-ব্রত আচরিয়া সম্বৎসর।।
হইল বৎসর পূর্ণ চৈত্র-পূর্ণিমাতে।
কাটিয়া তুরঙ্গ রাজা ফেলিল অগ্নিতে।।
দ্বিজগণ বেদ-শব্দে পূরিল গগন।
শূন্য-মণ্ডলেতে থাকি দেখে দেবগণ।।
অশ্বমেধ পূর্ণ হয় কলিযুগ-মাঝ।
বেদনিন্দা-ভয়েতে কম্পিত দেবরাজ।।
কাটামুণ্ড অশ্বের যে আহুতির শেষ।
মায়াবলে ইন্দ্র তাহে করিল প্রবেশ।।
সভামধ্যে নৃত্য করে তুরঙ্গের মুণ্ড।
দেখিয়া আশ্চর্য্য বড় হৈল সভাখণ্ড।।
রাণী সহ নৃপতি আছয়ে সভামাঝ।
নাচে মুণ্ড, সভাখণ্ড পাইলেক লাজ।।
যতেক সভার লোক অধোমুক হৈল।
ব্রাহ্মণ-কুমার এক হাসিয়া উঠিল।।
পুনঃ পুনঃ তালি মারে, হাসে খল খল।
দেখিয়া হইল রাজা জ্বলন্ত অনল।।
রাজার সম্মুখে ছিল খড়গ খরশান।
দ্বিজপুত্রে কাটিয়া করিল দুইখান।।
হাহাকার-শব্দ হৈল যজ্ঞের শালায়।
চতুর্দ্দিকে দ্বিজগণ পলাইয়া যায়।।
ব্রহ্মঘাতী মহাপাপী এই দুরাচার।
দেখিলে হইবে পাপ বদন ইহার।।
যত দূর পর্য্যন্ত ইহার অধিকার।
তত দূর দ্বিজের বসতি নহে আর।।
অশ্বমের-যজ্ঞ-নামে বরিয়া আনিল।
ব্রাহ্মণের মাংষ খায়, এবে জানা গেল।।
ফেলাই ইহার দ্রব যে আছে যথায়।
এত বলি সভা ছাড়ি দ্বিজগণ যায়।।
ব্রাহ্মণ-ঘাতার মুখ দেখা অনুচিত।
রাজগণ যথা তথা গেল চতুর্ভিত।।
দ্বিজ ক্ষত্র বৈশ্য শূদ্র ছিল যত জন।
সবে গেল, একমাত্র আছয়ে রাজন।।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর গাথা।
শ্রবণে সুধার ধারা ভারতের কথা।।