কুশ না মিলিল, দ্বিজ হৈল চমৎকার।
স্থানে স্থানে বসি সবে করেন বিচার।।
ইহার কারণ যে জানিল ব্যাসমুনি।
নৃপতিকে বুঝাবারে আসিলা আপনি।।
ব্যাসে দেখি আনন্দিত জন্মেজয় রাজা।
পাদ্য-অর্ঘ্য দিয়া তাঁর করে বহু পূজা।।
আশীর্ব্বাদ করি মুনি বসিয়া আসনে।
নৃপতিকে জিজ্ঞাসিল মধুর-বচনে।।
বদরিকাশ্রমে শুনিলাম সমাচার।
ব্রাহ্মণের হিংসা কর, কিমত বিচার।।
সর্ব্বধর্ম্মে-বিজ্ঞ তুমি পণ্ডিত সুজন।
তবে কেন হেন কর্ম্মে প্রবর্ত্তিলা মন।।
যাঁর ক্রোধে যদুকুল হইল বিধ্বংস।
যাঁর ক্রোধে নষ্ট হয় সগরের বংশ।।
যাঁর ক্রোধে কলঙ্কী হইল কলানিধি।
যাঁর ক্রোধে লবণ হইল জলনিধি।।
যাঁর ক্রোধে অনল হইল সর্ব্বভক্ষ।
যারঁ ক্রোধা ভগাঙ্গ হইল সহস্রাক্ষ।।
পূর্ব্বেতে যতেক তব পিতামহগণ।
যাঁরে সেবি বিজয়ী হইল ত্রিভুবন।।
হেন জনে হিংস তুমি কিসের কারণ।
শুনিয়া করিল রাজা নিজ নিবেদন।।
বিনা অপরাধে বাপে কৈল ভস্মরাশি।
পিতৃবৈরী মারিতে বাধক হৈল আসি।।
এই হেতু বড় তাপ অন্তরে আমার।
নিজ দুঃখ নিবেদিনু অগ্রেতে তোমার।।
ব্যাসদেব বলেন, ধৈর্য্য নর নররাজ।
ক্রোধে ধর্ম্ম নষ্ট হয়, সিদ্ধ নহে কাজ।।
ব্রাহ্মণেরে ক্রোধ রাজা কর অকারণ।
ভবিষ্যৎ-খণ্ডন না হয় কদাচন।।
তোমার পিতার জন্ম হইল যখন।
গণিয়া কহিল যত শাস্ত্রবিদ্ জন।।
নানা যজ্ঞ ধর্ম্ম করিবেক অপ্রমিত।
ভুজঙ্গ-দংশনে মৃত্যু হইবে নিশ্চিত।।
আমার বচনে স্থির হও গুণাধার।
পিতা হেতু দুঃখ চিন্তা না করিহ আর।।
কে খণ্ডিতে পারে রাজা দৈবের নির্ব্বন্ধ।
না বুঝিয়া কেন কর দ্বিজসহ দ্বন্দ্ব।।
ব্যাসের মুখেতে শুনি এতেক বচন।
জন্মেজয় কুশ-হিংসা কৈল নিবারণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।