সৌতি বলে, তবে পরীক্ষিতের নন্দন।
ডাকিয়া আনিল যত পাত্র-মিত্রগণ।।
সবারে বলিল রাজা করিয়া বিলাপ।
দূর না হইল মম হৃদয়ের তাপ।।
আপনার চিত্তে আমি করিনু বিচার।
দ্বিজ বিনা শত্রু মোর কেহ নহে আর।।
ধর্ম্মশীল তাত মোর জগতে বিখ্যাত।
বিনা অপরাধে শাপ পেলেন নির্ঘাত।।
পিতৃবৈরী বিনাশিতে বহু চেষ্টা ছিল।
তাহে পুনঃ দ্বিজ আসি বাধক হইল।।
শাপেতে মরিল পরীক্ষিত নরবর।
মারিতে রাখিল পুনঃ তক্ষক পামর।।
মোর রাজ্যে বসিয়া এতেক অহঙ্কার।
দ্বিজের কুরীতি অঙ্গে সহ্য নহে আর।।
ক্রোধানলে মোর অঙ্গ হতেছে দহন।
হেন মনে হয়, সব মারিব ব্রাহ্মণ।।
পূর্ব্বে কার্ত্তবীর্য্য করিলেন দ্বিজ-ধ্বংস।
উদর চিরিয়া মারিলেন ভৃগুবংশ।।
সেইমত দ্বিজ সব করিব সংহার।
যাহা হৌক, এই সত্য বচন আমার।।
নৃপতির বাক্য শুনি সবে স্তব্ধ হৈল।
পাত্র-মিত্রগণ তাহে উত্তর না দিল।।
রাজা বলে, কেহ কেন না দেহ উত্তর।
মন্ত্রিগণ বলে, শুন নৃপতি-প্রবর।।
বিষম বুঝিয়া বাক্য না আসে মুখেতে।
কে দিবে এ যুক্তি রাজা বিপ্র-বিনাশিতে।।
কহিলা যে কার্ত্তবীর্য্য মারিল ব্রাহ্মণ।
তার সমুচিত দণ্ড বিখ্যাত ভুবন।।
সেই ভৃগুকুলে জাত রাম ভগবান্।
ক্ষত্রিয়-শোণিতে ক্ষিতি করাইল স্নান।।
ক্ষত্র বলি পৃথিবীতে না রহিল আর।
ব্রাহ্মণ-ঔরসে পুনঃ হইল সঞ্চার।।
বচনে সৃজন যাঁর, বচনে পালন।
ক্ষণেকেতে করে ভস্ম যাঁহার বচন।।
অগ্নি সূর্য্য কালসর্পে আছে প্রতিকার।
ব্রাহ্মণের ক্রোধে রাজা নাহিক নিস্তার।।
এক যুক্তি চিত্তেতে আইসে নৃপমণি।
উপায় করিয়া বিপ্র-বীর্য্য কর হানি।।
কুশোদকে বিপ্রের পবিত্র হয় অঙ্গ।
কুশ-বিনা হইবেক কর্ম্ম-অঙ্গ ভঙ্গ।।
কুশের অভাবে, দ্বিজ হবে তেজোহীন।
পশ্চাৎ করিব দগ্ধ ধর্ম্মে হৈলে ক্ষীণ।।
রাজা বলে, ভাল যুক্তি কৈলে সর্ব্বজন।
এমতে নাশিব দ্বিজ, নিল মম মন।।
এত বলি নরপতি দূতগণে আনে।
আজ্ঞা করি ডাকিয়া আনিল কোড়াগণে।।
কহে নৃপ, কোড়াগণ, চতুর্দ্দিকে যাহ।
পৃথিবীর যত কুশ উপাড়ি ফেলহ।।
মন্ত্রিগণ বলে, রাজা এ নহে বিচার।
রাজা নষ্ট করে কুশ, ঘুষিবে সংসার।।
না উপাড়ি মরিবেক করিব উপায়।
ঘৃত দুগ্ধ গুড় মধু আনি দেহ তায়।।
এই সব দ্রব্য ঢালিবেক কুশমূলে।
স্বাদে পিপীলিকা গিয়া খাইবে সকলে।।
পিপীলিকা কুশমূল কাটিয়া ফেলিবে।
কার্য্যসিদ্ধ হৈবে হিংসা দিল ততক্ষণ।
চারিদিকে চলিল যতেক দূতগণ।।
রাজ্যে রাজ্যে বার্ত্তা কৈল যত অনুচরে।
মারিল সকল কুশ দেশ-দেশান্তরে।।
মস্তকে বন্দিয়া ব্রাক্ষণের পদরজ।
কহে কাশীরাম দাস গদাধরাগ্রজ।।