শূণ্য-মণ্ডলেতে শুনি নৃত্য-গীত-নাদ।
যত যজ্ঞ-হোতৃগণ গণিল প্রমাদ।।
ভূপতির ক্রোধ-বাক্যে কৈনু কোন্ কাজ।
সর্ব্বনাশ হৈল আজি, মরে দেবরাজ।।
এত চিন্তি হোতৃগণ করিল বিচার।
ইন্দ্রে ছাড়ি তক্ষকে আকর্ষে আরবার।।
তক্ষক-পন্নগে ইন্দ্র উত্তরীয়ে ভরি।
শরণ-রক্ষণ-হেতু আছে কান্ধে করি।।
রাখিতে নারিল ইন্দ্র করিয়া যতন।
মন্ত্রবলে ছাড়াইল ইন্দ্রের বন্ধন।।
আইসে তক্ষক নাগ করিয়া গর্জ্জন।
সঘনে নির্গত ঘোর নিশ্বাস-পবন।।
ঘূর্ণ্যমান বায়ু যেন ফিরয়ে আকাশে।
অবশ হইয়া নাগ অন্তরীক্ষে আসে।।
মাতুল অনলে পোড়ে আস্তিক জানিল।
অন্তরীক্ষে তিষ্ঠ তিষ্ঠ, আস্তিক বলিল।।
শূণ্যেতে রহিল সর্প আস্তিকের বোলে।
তক্ষক সঘনে কাঁপে ব্রহ্ম-মন্ত্র-বলে।।
আস্তিক বলিল, রাজা হও কৃপাবান।
আজ্ঞা কর ভূপতি! মাগি যে আমি দান।।
রাজা বলে, দ্বিজ-শিশু বৈসহ সভায়।
যা মাগিবে দিব আমি, বলেছি তোমায়।।
পিতৃবৈরী সংহারিয়া করি যজ্ঞপূর্ণ।
তোমার বাসনা যাহা পূরাইব তূর্ণ।।
আস্তিক বলিল, যদি তক্ষকে নাশিবে।
তবে তুমি কিবা আর মোরে দান দিবে।।
আস্তিকের বাক্য শুনি মানি চমৎকার।
রাজা বলে, যাহা চাহি দিব আমি আর।।
আস্তিক বলিল, রাজা কর অবধান।
ইহা বিনা তোমারে না মাগি অন্য দান।।
রাজা বলে, দ্বিজ হেন না বলিহ আর।
মোর পিতৃবৈরী সে তক্ষক দুরাচার।।
তার হেতু মৈল দেখ ভুজঙ্গ সকল।
তারে না মারিলে যত সকলি বিফল।।
তাহার নিধনে তুমি না হও বাধক।
অন্য যাহা ইচ্ছা মোরে মাগহ বালক।।
আস্তিক বলিল, রাজা তুমি সুপণ্ডিত।
তোমারে বুঝাবে অন্যে না হয় উচিত।।
আয়ু শেষে যমে নিল তোমার জনকে।
অকারণে অপরাধী করহ তক্ষকে।।
অসংখ্য ভুজঙ্গগণ করিলা সংহার।
অহিংসক জনে মার, নহে সুবিচার।।
দ্বিতীয় ইন্দ্রের সভা দেখি যে তোমার।
নিষেধ না করে কেহ জীবের সংহার।।
আস্তিক বলিল যদি এতেক বচন।
রাজারে বলিল তবে যত সভাজন।।
আপনি বলিলা ব্যাস ডাকিয়া রাজারে।
প্রবোধ করহ ভূপ, দ্বিজের কুমারে।।
নিবৃত্ত করহ যজ্ঞ, সবে বলে ডাকি।
ব্রাহ্মণ-বালকে রাজা না কর অসুখী।।
নিবৃত্ত নিবৃত্ত, বলি হৈল মহাধ্বনি।
নিষেধ করিল যজ্ঞ ভূপতি আপনি।।
সর্পযজ্ঞ নরেন্দ্র করিল নিবারণ।
আস্তিকের পূজা কৈল দিয়া বহু ধন।।
নানা ধান পেয়ে তুষ্ট হয়ে দ্বিজগণ।
নিজ নিজ দেশে সব করিল গমন।।
আস্তিকে বলিল রাজা করিয়া মেলানি।
অশ্বমেধকালেতে আসিবে দ্বিজমণি।।
তবে ত আস্তিক গেল আপনার ঘর।
কহিল বৃত্তান্ত মাতা মাতুল-গোচর।।
শুনিয়া বাসুকি নাগ হৈল আনন্দিত।
নাগলোকে উৎসব হইল অপ্রমিত।।
যতেক আছিল নাগ একত্র হইয়া।
পূজা কৈল আস্তিকের বহু রত্ন দিয়া।।
পুনর্জ্জন্ম-দাতা তুমি নাহিক সংশয়।
বর দিব, মাগ তুমি যেই মনে লয়।।
আস্তিক বলিল, যদি মোরে দিবে বর।
এই বর মাগি আমি সবার গোচর।।
প্রতি সন্ধ্যাকালে যেই মোর নাম লবে।
নাগগণ হৈতে তার ভয় নাহি রবে।।
আমার চরিত্র যেই করিবে শ্রবণ।
নাগ হৈতে কভু ভীত না হৈবে সে জন।।
এ সব নিয়ম যেই করিবে লঙ্ঘন।
সত্য কর তবে তার নিশ্চয় মরণ।।
ফাটিবেক শির যেন শিরীষের ফল।
আস্তিকের বাক্য যেই করিবে নিষ্ফল।।
প্রতিজ্ঞা করিনু সবে, বলে নাগগণে।
নিকটে না যাব কেহ তোমার স্মরণে।।
আদিপর্ব্বে ভারতের দিব্য উপাখ্যান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।