আইল আস্তিক মুনি, করি মহা-বেদধ্বনি,
নৃপতির করিল কল্যাণ।
ধন্য রাজা চন্দ্রবংশ, হেন পুত্র অবতংস,
ক্ষত্রমধ্যে না দেখি সমান।।
দেখেছি শুনেছি কত, যজ্ঞ হৈল যত যত,
কারে দিব ইহার তুলনা।
যজ্ঞ কৈল ইন্দ্র যম, কুবের বরুণ সোম,
আর যত না যায় গণনা।।
যুধিষ্ঠির পাণ্ডুপতি, বাসুদেব মহামতি,
শ্বেতবাহু নহুষ যযাতি।
মান্ধাতা মরুত্ত-ভূপ, নানাযুগে প্রতিরূপ,
দিলীপ সগর দাশরথি।।
ইক্ষবাকু ভরত অজ, রঘু শিবি শিখিধ্বজ,
নানা যজ্ঞ করিল বহুল।
কেহ শত, কেহ ত্রিশ, কেহ দশ, কেহ বিশ,
এই যজ্ঞ নহে সমতুল।।
পুত্র সহ ব্যাস-ঋষি, যাহার সভায় বসি,
যজ্ঞ-হেতু শিষ্যগণ লৈয়া।
সাক্ষাৎ হইয়া যায়, বৈশ্বানর হবি খায়,
শিখা যায় প্রদক্ষিণ হৈয়া।।
ধন্য শ্রীজনমেজয়, নাহি হবে, নাহি হয়,
তুলনা নাহিক ভূমণ্ডলে।
ধর্ম্মে যেন যুধিষ্ঠির, ধনুর্ব্বেদে রঘুবীর,
কীর্ত্তি ভগীরথ সমতুলে।।
তেজে সূর্য্য-সম-প্রভ, রূপে যেন কামদেব,
ব্রতাচারী ভীষ্মের সমান।
ধর্ম্মেতে বাল্মীকি মুনি, ক্ষমাতে বশিষ্ঠ গণি,
বিভবেতে যেন মরুত্বান্।।
আস্তিক-বচন শুনি, জন্মেজয় নৃপমণি,
মন্ত্রিগণে বলেন বচন।
বালক দ্বিজের সুত, কথা কহে বৃদ্ধমত,
যত যত পূর্ব্ব পুরাতন।।
যাহা মাগে দিব আমি, গবাশ্ব কাঞ্চন ভূমি,
এ দ্বিজের পূরাইব আশ।
মাগ শিশু যেই মনে, মনোনীত মম স্থানে,
এত বলি করিল আশ্বাস।।
এত শুনি হোতৃগণ, নৃপে করে নিবেদন,
নহে এই দানের সময়।
যজ্ঞ পূর্ণ নাহি করি, তক্ষক সে পিতৃ-অরি,
যাবৎ অনলে ভস্ম নয়।।
শুনি রাজা বলে দ্বিজে, রাখিয়াছ কোন্ কাজে,
অদ্যাপি সে তক্ষক ভীষণ।
বলে দ্বিজ নৃপমণি, তক্ষক প্রমাদ গণি,
দেবরাজে লয়েছে শরণ।।
শুনিয়া নৃপতি কোপে, দশনে অধর চাপে,
বলিল যতেক দ্বিজগণে।
ইন্দ্র রাখে মোর অরি, তাহারে সহিত করি,
তক্ষকেরে লও হুতাশনে।।
ভূপতির আজ্ঞা পেয়ে, স্রুবদণ্ড হাতে লয়ে,
দ্বিজগণ মন্ত্র উচ্চারিল।
বিপ্রের মন্ত্রের তেজে, সঙ্গে লয়ে নাগরাজে,
দেবরাজ আকাশে আসিল।।
অপ্সরা অপ্সর যত, বাদ্য-গীতে সবে রত,
মন্ত্রপাশে হইয়া বন্ধিত।
কমলাকান্তের সুত, হেতু সুজনের প্রীত,
কাশীরাম দাস বিরচিত।।