দ্রৌপদীর বাক্য শুনি ভীম ক্রুদ্ধতর।
করেন ধর্ম্মের প্রতি কর্কশ উত্তর।।
শুন মহারাজ আমি করি নিবেদন।
বীর পুরুষের ধর্ম্ম ত্যজ কি কারণ।।
ক্ষত্রিয় প্রধান ধর্ম্ম তেজ দেখাইবে।
ভুজবলে রিপু জিনি পৃথিবী ভুঞ্জিবে।।
পর রাজ্যে আছ তুমি নিজ রাজ্য ত্যজি।
কি কর্ম্ম করিবে বনে তরুগণ ভজি।।
তুমি ত স্থাপিলে রাজ্য, লইল সে জিনি।
কোন্ ধর্ম্মবলে নিল, কহ দেখি শুনি।।
দ্যূতপণে নিল কিবা বলিষ্ঠ তোমায়।
অধর্ম্মে নিলেক রাজ্য কপট পাশায়।।
লেশমাত্র ধর্ম্মে তব ছন্ন হৈল জ্ঞান।
শ্রেষ্ঠ ধর্ম্মে নৃপতি না কর অবধান।।
আমি জীত তোমার বিভবর অন্যে লয়।
সিংহ ভক্ষ্য মাংস যেন শৃগালেতে খায়।।
মম দ্রব্য লয়ে কেবা বাঁচয়ে মানুষে।
দিকপাল সহায় করিয়া যদি আইসে।।
কহ দেখি কোন রাজা করিছে সন্ন্যাস।
কেবা করে এই হীনকর্ম্ম বনবাস।।
তুমি যে করিলে ক্ষমা সেই দুষ্টজনে।
হীনশক্তি সে যে ভাবে তাই এলে বনে।।
ইহা হতে মৃত্যু শ্রেষ্ঠ হয় শতগুণে।
শত্রুগণ হাসে রাজা নাহি সহে প্রাণে।।
ধর্ম্ম হেন বুঝ রাজ তব আচরণ।
ধর্ম্ম নহে, ইহা বড় অধর্ম্ম গণন।।
ভার্য্যা অনুগত ভ্রাতৃ যাহে দুঃখী হয়।
হেন কর্ম্ম আচরণ কভু ভাল নয়।।
কুটুম্ব আত্নীয় জনে না করি পালন।
অনুব্রত কর্ম্ম করে সংসারী যে জন।।
পিতৃগণ নিন্দা করে, সেই পায় তাপ।
সেই দোষে হয় তার ব্রহ্মহত্যা পাপ।।
প্রথমে কামনা ধন, দ্বিতীয়ে অর্জ্জন।
তৃতীয়ে সঞ্চয় ধন, কহে মুনিগণ।।
ধন হতে ধর্ম্ম হয় যজ্ঞ দান পূজা।
তীর্থসেবি ভিজ্ঞায় কি ধর্ম্ম হবে রাজা।।
কহ রাজা এই কর্ম্ম সম্মত কাহার।
গোবিন্দের মত, কিংবা দ্রুপদরাজার।।
অর্জ্জুন সম্মতি কিবা করিল নৃপতি।
আমা আদি করি ইথে কাহার পীরিতি।।
ক্ষত্রধর্ম্ম নহে এই দ্বিজ আচরণ।
ক্ষত্রধর্ম্মে যুদ্ধে অরি করিবে নিধন।।
দুষ্টকর্ম্মা দুষ্টবুদ্ধি রাজা দুর্য্যোধন।
তাহারে মারিলে পাপ নাহিক রাজন।।
তাহারে মারিলে যদি কিছু পাপ হয়।
যজ্ঞ দান করিয়া খণ্ডাব মহাশয়।।
আজ্ঞা কর নরপতি প্রসন্ন হইয়া।
এক্ষণে পৃথিবী দিব শত্রুকে মারিয়া।।
ভারতের পুণ্যকথা শুনে পুণ্যবান।
কাশী কহে, সুখ নাহি ইহার সমান।।