ঘৃত বস্ত্র যব ধান্য কাষ্ঠ রাশি রাশি।
আনাইল রাজা যজ্ঞে হয়ে অভিলাষী।।
হোতা চণ্ডভার্গব নামেতে দ্বিজবর।
সদাচার-ব্রতী দ্বিজ আইল বিস্তর।।
ঋষি সে নারদ ব্যাস মার্কণ্ড পিঙ্গল।
উদ্দালক শৌনক আইল যে দেবল।।
বিপ্রগণ বেদমন্ত্রে অনল জ্বালিল।
লইয়া নাগের নাম যজ্ঞাহুতি দিল।।
পর্ব্বত-প্রমাণ অগ্নি দেখি লাগে ভয়।
সর্পগণ আসি কুণ্ডে পুড়ি ভস্ম হয়।।
আকাশে থাকিয়া যেন মেঘে বৃষ্টি করে।
বৃষ্টিধারাবৎ পড়ে অগ্নির উপরে।।
হাহাকার শব্দ হৈল নাগের নগরে।
প্রলয়-সমুদ্র-শব্দে কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।।
আপন ইচ্ছায় উঠে আকাশ উপরে।
নানাবর্ণ নাগ পড়ে কুণ্ডের ভিতরে।।
কেহ অশ্ব, কেহ উষ্ট্র, কেহ হস্তী প্রায়।
কেহ কৃষ্ণ, কেহ পীত, কেহ সিতকায়।।
জলমধ্যে গর্ত্তমধ্যে কোটরে প্রবেশে।
মন্ত্রে টানি বান্ধি আনে যজ্ঞের প্রদেশে।।
একশত, দুইশত, পঞ্চশত শির।
পর্ব্বত জিনিয়া কারো বিপুল শরীর।।
মস্তকে লাঙ্গুল ফিরে, জিহ্বা লড়বড়ি।
কাতর হইয়া কেহ যায় গড়াগড়ি।।
সঘনে নিশ্বাস ছাড়ে হইয়া কাতর।
মহানাদে পড়ে সবে অনল-ভিতর।।
দুর্গন্ধ হইল যত পূরিল সংসার।
অদ্ভুত দেখিয়া সবে হৈল চমৎকার।।
যখন প্রতিজ্ঞা কৈল রাজা জন্মেজয়।
ইন্দ্র স্থানে ভয়ে নিল তক্ষক আশ্রয়।।
কহিল বৃত্তান্ত সব যজ্ঞের কারণ।
জন্মেজয়-যজ্ঞে করে সর্পের নিধন।।
প্রাণভয়ে শরণ লইল সুরেশ্বরে।
শুনিয়া অভয় তারে দিল পুরন্দরে।।
নির্ভয় হইয়া তথা তক্ষক রহিল।
এখানে নাগের কুল নির্ম্মূল হইল।।
যজ্ঞে ভস্ম হয় যত নাগের সমাজ।
চমকিত হইল বাসুকি নাগরাজ।।
ভয়েতে কম্পিত তনু, মূর্চ্ছা ঘনে-ঘন।
ভগিনীরে ত্বরিতে করিল নিবেদন।।
দেখহ ভগিনি! সব নাগের সংহার।
নিশ্চয় নিকট মৃত্যু দেখি যে আমার।।
নাগবংশ-রক্ষা হেতু তোমার নন্দনে।
কহিয়া রাখহ শেষ আছে যত জনে।।
মায়ের শাপেতে যেই চিত্তে ছিল ভয়।
সেইকালে হৈল এই নাগের প্রলয়।।
ভ্রাতারে আকুল দেখি কান্দিয়া নাগিনী।
পুত্রেরে ডাকিয়া কহে সকরুণ বাণী।।
ভ্রাতৃগণে আমার হইল মাতৃশাপ।
সেই হেতু আমার পাইল তোর বাপ।।
মম ভ্রাতৃগণ হয় মাতুল তোমার।
এ মহা-প্রলয়ে প্রাণ রাখহ সবার।।
আস্তিক বলিল, মাতা কান্দ কি কারণে।
যে আজ্ঞা করিবা তাহা পালিব এক্ষণে।।
জরৎকারী বলে, যজ্ঞ করে জন্মেজয়।
মন্ত্র-বলে সকল ভুজঙ্গ করে ক্ষয়।।
মজিল মাতুল-বংশ, করহ উদ্ধার।
তোমা বিনা রাখে হেন কেহ নাহি আর।।
আস্তিক বলিল, মাতা না কর বিষাদ।
এখনি খণ্ডিব আমি নাগের প্রমাদ।।
বাসুকিরে বল তুমি হইতে নির্ভয়।
এখনি করিব ত্রাণ, নাহিক সংশয়।।
মাতুলে নির্ভয় করি চলিল ত্বরিত।
জন্মেজয়-যজ্ঞস্থানে হৈল উপনীত।।
প্রবেশ করিতে দ্বারী নাহি দেয় তারে।
ক্রোধেতে আস্তিক কহে, কম্পে ওষ্ঠাধরে।।
ব্রাহ্মণে হেলন কর মূঢ় দুরাচার।
নাহি জান, এই হেতু হইবে সংহার।।
আস্তিকের ক্রোধ দেখি দ্বারী কম্পমান।
দ্বার ছাড়ি প্রণমিল হয়ে সাবধান।।
তথা হৈতে আস্তিক গেলেন যজ্ঞস্থান।
বেদধ্বনি করি সভা কৈল কম্পমান।।
সভার ব্রাহ্মণগণে করিল বন্দন।
নৃপতিরে বলে তবে আশিস্-বচন।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
কাশীরাম কহে, সাধু পিয়ে কর্ণ-ভরি।।