পলায় বানর-ঠাট কেহ নাহি তিষ্ঠে।
কোপ করি অঙ্গদ চাহিছে এক দৃষ্টে।।
অঙ্গদ বলে, বানরগণ ভঙ্গ কি কারণ।
এক চড়ে রাক্ষসের বধিব জীবন।।
জীবন মরণ নাহি আপনার বশে।
যুদ্ধ করি মরিলে ভুবন ভরে যশে।।
যত যুদ্ধ করিলে সে সব নাহি গণি।
আজি রণ জিনিলে পৌরুষ বলে মানি।।
দেবতার পুত্র তোরা দেব-অবতার।
রাক্ষসের রণে কেন হাসাবি সংসার।।
এত শুনি থরে থরে ফিরে কপিগণ।
কটক ফিরায়ে আনে বালির নন্দন।।
লাফ দিয়া কপি সবে উঠিল আকাশে।
আকাশে উঠিয়া গাছ পাথর বরিষে।।
কুপিল সে কুম্ভকর্ণ হাতে ধরে শূল।
বানর-কটক বিন্ধি করিল নির্ম্মূল।।
বড় বড় বীরগণে শূলে বিন্ধি পাড়ে।
তৃণগণ যেমন অনলে পড়ে পুড়ে।।
পর্ব্বত তুলিয়া মারে বানর-কটকে।
কুম্ভকর্ণের অঙ্গে যেন তৃণ হেন ঠেকে।।
কুপিল সে কুম্ভকর্ণ অতি ভয়ঙ্কর।
দুই হাতে ধরে ধরে গিলিছে বানর।।
ভঙ্গ দিয়া বানর পলায় সব ডরে।
কুম্ভকর্ণ-রণ কেহ সহিতে না পারে।।
কুপিল সে নীলবীর কটকে প্রধান।
শালগাছ আনিলেক দিয়া এক টান।।
শালগাছ আনে যেন পর্ব্বতের চূড়া।
কুম্ভকর্ণের গায়ে ঠেকে হয়ে গেল গুঁড়া।।
রণ করে কুম্ভকর্ণ কে সহিতে পারে।
একেশ্বর নীল রহে সংগ্রাম ভিতরে।।
সাহসে করিয়া ভর নীল সেনাপতি।
আর চারি বীর তার মিলিল সংহতি।।
শরভঙ্গ কুমুদ নল গন্ধমাদন।
নীলের সহিত মিলে হৈল পঞ্চজন।।
পাঁচ বীর গাছ আর পর্ব্বত উপাড়ি।
কুম্ভকর্ণের বুকে মারে দুহাতিয়া বাড়ি।।
বানরের গাছ পাথর কিছুই না গণে।
হাতে শূল কুম্ভকর্ণ চাহে পঞ্চজনে।।
রহ রহ শব্দ বীর বানরের বলে।
দুই হাতে সাপটিয়া ধরি কোলে ফেলে।।
কোলের চাপনে বানর হৈল অচেতন।
মুখে রক্ত উঠে শ্বাস বহে ঘনে ঘন।।
চাপনের ঘায়ে মূর্চ্ছা নীল সেনাপতি।
লাথির ঘায়ে পড়িল গবাক্ষ যোদ্ধাপতি।।
শরভক্ত গন্ধমাদন পড়ে দুইজন।
পঞ্চজন ভূমে পড়ে হয়ে অচেতন।।
প্রথম সমরে যদি পঞ্চজনা পড়ে।
অনেক বানর আসি কুম্ভকর্ণে বেড়ে।।
মার মার শব্দে বানর ধায় উভরড়ে।
কেহ স্কন্ধে চড়ে, কেহ অঙ্গ চাপি পড়ে।।
কেহ পৃষ্ঠে উঠে কেহ কিল মারে ঘাড়ে।
কার সাধ্য কুম্ভকর্ণে রণ মধ্যে পাড়ে।।
বানর ধরিয়া বীর চিবাইছে দাঁতে।
মুখ সম্বরিতে নারে রক্ত পড়ে স্রোতে।।
সহস্র সহস্র কপি সাপটিয়া ধরে।
পাতাল সমান মুখ তাহে লয়ে পুরে।।
নাক কানের পথ যেন ঘরের দুয়ার।
তাহা দিয়া বানর সব বেরয়ে অপার।।
লাফ দিয়া কুম্ভকর্ণ ধরে অঙ্গদেরে।
মূর্চ্ছিত করিল তারে গদার প্রহারে।।
হাতে গদা কুম্ভকর্ণ অতি ভয়ঙ্কর।
গদার বাড়িতে মারে অনেক বানর।।
শতবলী ভূমে পড়ি যায় গড়াগড়ি।
হনুমানের বুকেতে মারিল গদাবাড়ি।।
গদা খাইয়া হনুমান উঠিল আকাশে।
আকাশে থাকিয়া গাছ পাথর বরিষে।।
ঘনে ঘনে বর্ষে যেন মহাশব্দ শুনি।
কুম্ভকর্ণের গদা ভাঙ্গি কৈল খানি খানি।।
গদা গেল কুম্ভকর্ণ লাগিল ভাবিতে।
লাফ দিয়া হনুমানে ধরিল ত্বরিতে।।
হনুমানের বুকে মারে বজ্রের চাপড়।
চাপড়ের ঘায়ে হনু করে ধড়ফড়।।
ভূমিতে পড়িল যদি পবন-নন্দন।
রণ ছাড়ি পলায় যতেক কপিগণ।।
বড় বড় বীর পলায় ভঙ্গ দিয়া রণে।
কুম্ভকর্ণে দেখে কেহ স্থির নহে মনে।।