০২. শিবস্তোত্রম্

ওঁ নমঃ শিবায়

নিখিলভুবনজন্মস্থেমভঙ্গপ্ররোহাঃ
অকলিতমহিমানঃ কল্পিতা যত্র তস্মিন্।
সুবিমলগগনাভে ত্বীশসংস্থেঽপ্যনীশে
মম ভবতু ভবেঽস্মিন্ ভাসুরো ভাববদ্ধঃ॥

যাঁহাতে সমুদয় জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও লয়ের অঙ্কুরসমূহ অসংখ্য বিভূতিরূপে কল্পিত, যিনি সুনির্মল আকাশের তুল্য, যিনি জগতের ঈশ্বররূপে অবস্থিত, যাঁহার কোন নিয়ন্তা নাই—সেই মহাদেব আমার প্রেমবন্ধন দৃঢ় ও উজ্জ্বল হউক।

নিহতনিখিলমোহে ঽধীশতা যত্র রূঢ়া
প্রকটিতপরপ্রেম্না  যো মহাদেবসংজ্ঞঃ।
অশিথিলপরিরম্ভঃ  প্রেমরূপস্য যস্য
হৃদি প্রণয়তি বিশ্বং  ব্যাজমাত্রং বিভুত্বম্॥

যিনি সমুদয় মোহ নাশ করিয়াছেন, যাঁহাতে ঈশ্বরত্ব স্বাভাবিক ভাবে অবস্থিত, যিনি (হলাহল পান করিয়া জগতের জীবগণের প্রতি) পরম প্রেম প্রকাশ করায় ‘মহাদেব’ নামে অভিহিত হইয়াছেন, প্রেমস্বরূপ যাঁহার গাঢ় আলিঙ্গনে সমুদয় ঐশ্বর্যই আমাদের হৃদয়ে শুধু মায়া বলিয়া প্রতিভাত হয়, সেই মহাদেবে আমার প্রেমবন্ধন দৃঢ় হউক।

বহতি  বিপুলবাতঃ পূর্বসংস্কাররূপঃ
বিদলতি বলবৃন্দং  ঘূর্ণিতেবোর্মিমালা।
প্রচলিত  খলু  যুগ্মং  যুষ্মদস্মৎপ্রতীতম্
অতিবিকলিতরূপং   নৌমি চিত্তং শিবস্থম্॥

পূর্বসংস্কাররূপ প্রবল বায়ু প্রবাহিত হইতেছে, উহা ঘূর্ণায়মান তরঙ্গসমূহের মত বলবান্ ব্যক্তিদিগকেও দলিত করিতেছে। ‘তুমি-আমি’-রূপে প্রতিভাত দ্বন্দ্ব চলিতেছে। সেই শিবে সংস্থাপিত অতি বিকারশীল অস্থির চিত্তকে আমি বন্দনা করি।

জনকজনিতভাবো বৃত্তয়ঃ সংস্কৃতাশ্চ
অবগণনবহুরূপা  যত্র  চৈকো  যথার্থঃ।
শমিতবিকৃতিবাতে  যত্র  নান্তর্বহিশ্চ
তমহহ   হরমীড়ে  চিত্তবৃত্তের্নিরোধম্॥

কার্যকারণভাব এবং নির্মল বৃত্তিসমূহ অসংখ্য নানারূপ হইলেও যেখানে একবস্তুই সত্য, বিকাররূপ বায়ু শান্ত হইলে যেখানে ভিতর ও বাহির থাকে না, আহা! সেই চিত্তবৃত্তির নিরোধস্বরূপ মহাদেবকে আমি বন্দনা করি।

গলিততিমিরমালঃ      শুভ্রতেজঃপ্রকাশঃ
ধবলকমলশোভঃ     জ্ঞানপুঞ্জাট্টহাসঃ।
যমিজনহৃদিগম্যো     নিষ্কলো ধ্যায়মানঃ
প্রণতমবতু মাং   সঃ  মানসো   রাজহংসঃ॥

যাঁহা হইতে অজ্ঞানরূপ অন্ধকারসমূহ নষ্ট হইয়াছে, শুভ্র জ্যোতির মত যাঁহার প্রকাশ, যিনি শ্বেতবর্ণ পদ্মের ন্যায় শোভা ধারণ করিয়াছেন, জ্ঞানরাশি যাঁহার অট্টহাস্যস্বরূপ (যাঁহার অট্টহাসিতে জ্ঞানরাশি ছড়াইয়া পড়িতেছে), যিনি সংযমী ব্যক্তির হৃদয়ে লভ্য, যিনি অখণ্ডস্বরূপ, মনোরূপ সরোবরে অবস্থিত সেই রাজহংসরূপী শিব, আমার দ্বারা ধ্যাত হইয়া প্রণত আমাকে রক্ষা করুন।

দুরিতদলনদক্ষং       দক্ষজাদত্তদোষং
কলিতকলিকলঙ্কং       কম্রকহ্লারকান্তম্।
পরহিতকরণায়       প্রাণপ্রচ্ছেদপ্রীতং
নতনয়ননিযুক্তং       নীলকণ্ঠং নমামঃ॥

যিনি পাপনাশ করিতে সমর্থ, দক্ষকন্যা সতী—যাঁহাকে করকমল দান করিয়াছেন, যিনি কলির দোষসমূহ নাশ করেন, যিনি সুন্দর কহ্লারপুষ্পের মত মনোহর, পরের কল্যাণের জন্য প্রাণত্যাগ করিতে যাঁহার সদাই প্রীতি, প্রণত ব্যক্তিগণের মঙ্গলের জন্য সর্বদা যাঁহার দৃষ্টি রহিয়াছে—সেই নীলকণ্ঠ মহাদেবকে আমরা প্রণাম করি।