০২. রাতে খেতে গিয়ে

রাতে খেতে গিয়ে আনিসুর রহমান খান চমকৃত হলেন। মাছ ছাড়াও দু ধরনের মাংস আছে। মুরগির ঝাল ফ্রাই, গরুর কলিজা ভুনা। একজন ডাক্তার হিসেবে কলিজা ভুনার মত হাই কোলেস্টেরল ডায়েট খাওয়া একেবারেই উচিত না; কিন্তু যাবতীয় হাই কোলেস্টেরল ডায়েট তার অতি পছন্দ।

রুমানা বললেন, তুমি জেনিফারকে দিয়ে পাই এর ভ্যালু বের করাচ্ছ কেন?

আনিসুর রহমান বললেন, বাইশকে সাত দিয়ে ভাগ দিতে বলেছি।

এটা হল পাই। পরিধি ডিভাইডেড বাই ব্যাস। পরিধি হচ্ছে 2πr আর ব্যাস হচ্ছে 2r ভাগ করলে থাকে π.

তুমি এতসব জাননা কীভাবে?

রুমানা বললেন, তুমি প্রায়ই ভুলে যাও যে আমি ফিজিক্স পড়েছি।

আনিসুর রহমান বললেন, এটাতো ফিজিক্স না এটা হল ম্যাথ।

রুমানা বললেন, চুপ করে খাও তো। কোনটা ফিজিক্স কোনটা ম্যাথ তা নিয়ে তোমার গবেষণা করতে হবে না।

আনিসুর রহমান বললেন, পাই বস্তুটার মান কত?

মান হল ৩.১৪।

তা হবে কেন এটা তো পয়েন্ট ওয়ান ফোরে শেষ হয় না, চলতেই থাকে।

চলতে থাকলেই সব সংখ্যা নিতে হবে? দরকারটা কী?

আনিসুর রহমান বললেন, তা ঠিক কোন দরকার নেই। পণ্ডশ্রম। একেবারেই পণ্ডশ্ৰম।

রুমানা বললেন, তুমি ডাক্তার মানুষ তুমি পাই নিয়ে হৈ চৈ করছ কেন?

আনিসুর রহমান বললেন, হৈ চৈ করছি কোথায়? হৈ চৈ করছি না।

রান্না কেমন হয়েছে?

অসাধারণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যা হয় তাই হয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কলিজা ভুনা আজ রাতে খেলাম।

ইলিশ মাছের ডিমের চেয়েও ভাল হয়েছে?

এইতো এক সমস্যায় ফেললে শ্যাম রাখি না রাধা রাখি।

রুমানা বললেন, তুমি ডাক্তার মানুষ। ডাক্তারি নিয়ে থাকে। পাই এর মান, বাংলা সাহিত্য এই সবে যাবার দরকার নেই। শ্যাম রাখি না রাধা রাখি বলে কিছু নেই। বাক্যটা হল শ্যাম রাখি না কুল রাখি।

সরি।

সরি বলারও কিছু নেই। শুধু শুধু সরি বলছ কেন?

আনিসুর রহমান বললেন, সরি বলার জন্যে সরি।

 

রাতটা তার খুব ভাল কাটল। তিনজন মিলে ফ্রাইডে দ্যা থার্টিন ছবিটা দেখলেন। ছবি দেখে ভীত হবার আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করে রাতে ঘুমুতে গেলেন। ঘুম খুব ভাল হল না। সারাক্ষণই স্বপ্ন দেখলেন তিনি বাইশকে কখনো সাত দিয়ে ভাগ দিচ্ছেন, কখনো তিন দিয়ে ভাগ দিচ্ছেন আবার কখনো বা পাঁচ দিয়ে দিচ্ছেন। রাতে কয়েকবার তার ঘুম ভাঙল। এ রকম কখনো হয় না। তিনি ঘুমের ট্যাবলেট ছাড়াই এক ঘুমে রাত পার করার মানুষ।