মুনি বলে মহাশয়, শুন শ্রীজনমেজয়,
হেন মতে নিবসে পাণ্ডব।
এক দিন আচম্বিত, শ্রীনারদ উপনীত,
সর্ব্বত্র গমন মনোজব।।
ধ্যান জ্ঞান যোগপূজ্য, অমর অসুর পূজ্য,
চতুর্ব্বেদ জিহবাগ্রেতে বৈসে।
ব্রহ্মার অঙ্গেতে জন্ম, জ্ঞাত যত ব্রহ্মকর্ম্ম,
ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমেন অনায়াসে।।
পরমার্থ অনুবন্ধী, বিজ্ঞেয় বিগ্রহ সন্ধি,
কলহ গায়নে বড় প্রীত।
শিরেতে পিঙ্গল জটা, ললাটে উজ্জ্বল ফোঁটা,
শ্রবণে কুণ্ডল সুশোভিত।।
মুখে হরিরস স্রবে, মধুর বীণার রবে,
গতি মন্দ জিনিয়া মাতঙ্গ।
বারিজ নয়ন যুগে, বহে বারি যেন মেঘে,
পুলকে কদম্ব পুষ্প-অঙ্গ।।
শরদিন্দু মুখাম্বুজ, আজানুলম্বিত ভুজ,
প্রোজ্জ্বল অমল দীপ্ত কায়।
পরিধান কৃষ্ণাজিন, সঙ্গে মুনি কত জন,
উপনীত পাণ্ডব-সভায়।।
দেখিয়া নারদ ঋষি, যে ছিল সভায় বসি,
সম্ভ্রমে উঠিল ততক্ষণে।
আস্তে ব্যস্তে ধর্ম্মসুত, সহোদরগণযুত,
প্রণাম করেন সে চরণে।।
সুগন্ধি উদক দিয়া, পদযুগ প্রক্ষালিয়া,
বসিতে দিলেন সিংহাসন।
যথা শিষ্ট ব্যবহার, পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তাঁর,
ভক্তিভাবে করেন পূজন।।
তবে মুনি স্নেহবশে, জিজ্ঞাসেন মৃদুভাষে,
কহ রাজা শুভ আপনার।
কুলের কৌলিক কর্ম্ম, ধন উপার্জ্জন ধর্ম্ম,
নির্ব্বিঘ্নেতে হয় কি তোমার।।
সাধু বিজ্ঞ যত জন, অনুরক্ত মন্ত্রিগণ,
এ সবার রাখ কি বচন।
একক বা বহু সহ, মন্ত্রণা ত না করহ,
কার্য্যে কি রাখহ মুখ্যগণ।।
ভক্ষ্যদ্রব্য যথাযথ, ন্যায় মুল্য কিন তত,
না রাখহ দ্বিজের দক্ষিণা।
তব অনুরক্ত যত, ভয়ে কি শরণাগত,
দুঃখ তো না পায় কোন জনা।।
বিজ্ঞ যোগ্য পুরোহিত, দৈবজ্ঞ-জ্যোতিষবিৎ,
আছয়ে কি বৈদ্য চিকিৎসক।
অনাথ অতিথি লোকে, ভুঞ্জাইয়া বহু সুখে,
সদা গেত ঘৃত অন্নোদক।।
রাজ্যের যতেক প্রজা, করয়ে তোমার পূজা,
সবে অনুগত কি তোমার।
ধন ধান্য বহুমত, উদক আয়ুধ যত,
পূর্ণ করিয়াছ তো ভাণ্ডার।।
প্রাতঃকালে নিদ্রাবশ, বৈকালেতে ক্রীড়ারস,
আলস্য ইন্দ্রিয় নিবারণ।
ধর্ম্ম কর্ম্মে ধনব্যয় কর নিত্য উপচয়,
পুত্রবৎপাল প্রজাগণ।।
বিবিধ অনেক নীতি, জিজ্ঞাসিল মহামতি,
পুনঃ পুনঃ ব্রহ্মার নন্দন।
শুনি ধর্ম্ম-অধিকারী, কহেন বিনয় করি,
প্রণমিয়া মুনির চরণ।।
যে কিছু কহিলা তুমি, যথাশক্তি করি আমি,
যাহা জ্ঞাত ছিলাম পূর্ব্বেতে।
শুনিয়া তোমার স্থান, বিশেষ জন্মিল জ্ঞান,
যত্নেতে করিব আজি হৈতে।।
অবধান তপোধন, করি এক নিবেদন,
চরাচর তোমাতে গোচর।
এই সভা মনোহর, অনুরূপ মুনিবর,
দেখেছ কি ব্রহ্মাণ্ড ভিতর।।
যুধিষ্ঠির বাক্য শুনি, ঈষৎ হাসিয়া মুনি,
কহেন সকল বিবরণ।
তোমার সভায় প্রায়, মনষ্য লোকেতে রায়,
নাহি দেখি, শুনহ রাজন।।
ব্রহ্মার বিচিত্র সভা, কৈলাস দেখিনু যেবা,
ইন্দ্র যম বরুণের পুরী।
দেখিয়াছি যথা তথা, মনুষ্যে অদ্ভুত কথা,
শুন কিছু কহি ধর্ম্মচারী।।
রাজা বলে সবিনয়, কহ মুনি মহাশয়,
সে সকল সভার বিধান।
প্রসার বিস্তার কত, বর্ণ গুণ ধরে যত,
প্রত্যক্ষে শুনিব তব স্থান।।
দিব্য সভাপর্ব্ব কথা, বিচিত্র ভারত-গাথা,
শুনিলে অধর্ম্ম হয় নাশ।
গোবিন্দ চরণে মন, সমর্পিয়া অনুক্ষণ,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।