নবুয়তের দশম বর্ষের যিলকদ মাসে অর্থাৎ ৬১৯ ঈসায়ী সালের মে মাসের শেষ বা জুনের প্রথম দিকে রসুলুল্লাহ (সা) তায়েফ থেকে মক্কায় আগমন করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি এবং গোত্রের কাছে নতুন উদ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এ সময় হজ্জের মৌসুম হওয়ায় দূরে কাছে সর্বত্র থেকে হজ্জ পালনের জন্যে পায়ে হেঁটে এবং সওয়ারীতে করে বহু লোক হজ্জ পালনের জন্যে আসেন। রসুলুল্লাহ (সা) এসময় তাদের ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন। নবুয়তের চর্তুথ বছর থেকে তিনি এ ধরণের দাওয়াত দিয়ে আসছিলেন।
ইমাম যুহরী বলেন, রসুলুল্লাহ (সা) যে সকল গোত্রের কাছে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন, তারা হচ্ছে, বনু আমের ইবনে সায়া’সায়া’ মোহাবের ইবনে খাছবা, ফাজারাহ, নাসসান, মায়রা, হানিফা, ছালিম, আবাস, বনু নছর, বনু আলবাকা, কেলাব, হারেছ ইবনে কা’ব আযারাহ ও হাযারেমা। কিন্তু কেউই ইসলাম গ্রহণ করেনি।
ইমাম যুহরীর উল্লিখিত ও সকল গোত্রের কাছে একবার বা এক বছরের হজ্জ মৌসুমেই শুধু ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়নি বরং নবুয়তের চতুর্থ বছর থেকে শুরু করে হিজরত পূর্ববর্তী শেষ হজ্জ মৌসুম অর্থাৎ দশ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো।
ইবনে ইসহাক কয়েকটি গোত্রের কাছে ইসলামের দাওয়াত প্রদান এবং তাদের জবাবের প্রকৃতিও উল্লেখ করেছেন। নীচে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ইল্লেখ করা যাচ্ছে।
(১) বনু কেলাব, রসুলুল্লাহ (সা) এই গোত্রের একটি শাখা বনু আব্দুল্লাহর কাছে গমণ করেন এবং তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা) এর প্রতি আহবান জানান । কথা কথায় তিনি বলেছিলেন, হে বনু আব্দুল্লাহ, আল্লাহ তাআলা তোমাদের পিতামহের চমতকার নাম রেখেছিলেন। কিন্ত এই গোত্রের লোকেরা রসুলুল্লাহ (সা)’র দেয়া দাওয়াত গ্রহণ করেনি।
(২) বনু হানিফা, রসুলুল্লাহ (সা) এদের বাড়িতে গমণ করেন, তাদেরকে দাওয়াত দেন কিন্ত তারা যে জবাব দিয়েছিল , সে রকম জবাব আবরেবর অন্য কেউই প্রদান করেনি।
(৩) আমের ইবনে সায়া “সায়”,রসুলুল্লাহ (সা) এদের কাছেও দাওয়াত দিয়েছিলেন। জবাবে এ গোত্রের বুহায়রাহ বিন ফারাস নামক এক ব্যক্তি বলেছিল, আল্লাহর শপথ যদি আমি কোরাইশের এক যুবককে সঙ্গে রাখি, তবে সমগ্র আরবকে খেয়ে ফেলব। এরপর সে বললো, একটা কথার জবাব দিন, যদি আমরা আপনার দ্বীন গ্রহণ করি এবং আপনি প্রতিপক্ষের উপর জয়লাভ করেন, এরপর কি নেতৃত্ব আমাদের হাতে আসবে ? রসুলুল্লাহ (সা) বললেন, নেতৃত্ব কর্তৃত্বতো আল্লাহর হাতে, তিনি যেখানে ইচ্ছা করবেন সেখানে রাখবেন। একথা শুনে সে লোক বললো, চমতকার কথা। আপনার নিরাপত্তার জন্য আমরা নিজেরদের বুককে আরবদের নিশানা করব অথচ আল্লাহ যখন আপনাকে জয়যুক্ত করবেন, তখন নের্তৃত্ব কর্তৃত্ব থাকবে অন্যদের হাতে, এটা হয় না। আপনার দ্বীন আমাদের প্রয়োজন নেই।
এরপর বনু আমের গোত্র তাদের এলাকায় চলে যাওয়ার পর একজন বৃদ্ধ এ ঘটনা শুনলেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি হজ্জে যেতে পারেননি। সব শোনার পর তিনি দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বললেন, মারাত্মক ভুল করেছো তুমি। হে বনু আমের গোত্রের লোকেরা, সেই লোককে কি খুঁজে পাওয়ার কোন উপায় আছে ? সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, হযরত ইসমাঈলের কোন বংশধরই নব্য়ুতের মিথ্যা দাবী করতে পারে না, অতীতেও করেনি, তোমাদের বুদ্ধি চলে গিয়েছিলো।