বিজ্ঞান আকাদেমীর সভাপতি মহামান্য থুল তার জন্যে আলাদা করে রাখা উঁচু চেয়ারটিতে বসার পর আকাদেমীর অন্য দশজন সদস্য তাদের চেয়ারে বসল। কালো গ্রানাইটের গোল টেবিলটা ঘিরে চেয়ারগুলো রাখা, টেবিলটা খুব বড় নয়; যেন সবাই সবাইকে কাছে থেকে দেখতে পায় আর কোনোরকম মাইক্রোফোন ছাড়াই তারা যেন খালি গলায় কথা বলতে পারে। ঘরটির দেয়াল ধবধবে সাদা, ছাদটা অনেক উঁচু, সেখান থেকে হালকা নরম একটা আলো ছড়িয়ে পড়ছে। বশাল একটা হলঘরের মাঝখানে গ্রানাইটের কালো টেবিল আর কয়টি চেয়ার, এ ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই।
ঘরের একমাত্র দরজাটি নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মহামান্য থুল অপেক্ষা করলেন, তারপর আকাদেমীর সকল সদস্যদের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, আমি প্রথমেই তোমাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।
কম বয়সী গণিতবিদ শ্রুম বলল, তার কোনো প্রয়োজন নেই মহামান্য থুল।
তাকে বাধা দিয়ে মহামান্য থুল বললেন, আছে। এই ঘরের আমরা এগারোজন হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এগারোজন মানুষ। পৃথিবীর মানুষ এই টেবিলকে ঘিরে বসে থাকা এই এগারোজনকে পৃথিবী পরিচালনার দায়িত্ব দয়েছে। আমাদের পরস্পরকে বিশ্বাস করতে হবে। আমরা যদি একজন আরেকজনকে বিশ্বাস না করি তাহলে এই আকাদেমী একটা অর্থহীন জটলায় পরিণত হবে। আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি যে আমি তোমাদের অবিশ্বাস করেছি। আমি তোমাদের সবার লোবোগ্রাফ করিয়ে এই ঘরে ঢুকতে দিয়েছি।
পদার্থবিদ ক্রন বলল, আমরা বুঝতে পারছি মহামান্য থুল। আপনার জায়গায় আমাদের কেউ থাকলেও সেও এই সময়ে ঠিক এই কাজটি করত। পৃথিবীর এখন অনেক বড় দুঃসময়।
মহামান্য থুল একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আমি জানি তোমরা আমার শংকাটুকু বুঝতে পারবে। তারপরেও আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। তবে আমি তোমাদের জানাতে চাই আমি নিজেও নিজের লোবোগ্রাফি করে এই ঘরে ঢুকেছি। মহামান্য থুল হাতের স্বচ্ছ কাগজটি টেবিলে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি আমার রিপোর্ট। আমি দেখেছি, তোমরাও দেখতে পার। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এই ঘরে যারা আছে তারা সবাই মানুষ। আমিও মানুষ। এখানে কোনো রবোমানব নেই।
জীববিজ্ঞানী ত্রানা বলল, আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করছি মহামান্য থুল।
না। মহামান্য থুল মাথা নেড়ে বললেন, আমি তোমাদের সবার রিপোর্ট দেখেছি। তোমাদেরও আমার রিপোর্টটি দেখতে হবে। আমরা সভা শুরু করার আগে সবাই নিশ্চিত হতে চাই যে এই চার দেওয়ালের ভেতর কোনো রবোমানব নেই। সবাই নিশ্চিত হতে চাই যে আমরা সবাই মানুষ।
বিজ্ঞান আকাদেমীর দশজন সদস্যের কেউ হাত বাড়িয়ে রিপোর্টটি নিতে রাজি হল না। সমাজবিজ্ঞানী লিহা বলল, মহামান্য থুল, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আমাদের কারো পক্ষে সেটি করা সম্ভব নয়। আপনার লোবোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে আপনার মনুষত্ব যাচাই করার মতো ধৃষ্ঠতা দেখানোর দুঃসাহস এই
পৃথিবীতে কারো নেই।
মহামান্য থুলের মুখে এক ধরনের কাঠিন্য ফুটে উঠল, সেটি তার চরিত্রের সাথে পুরোপুরি বেমানান। তিনি কঠিন গলায় বললেন, তাহলে আমার উপর আরোপিত ক্ষমতাবলে আমি আদেশ করছি, লিহা, তুমি লোবোগ্রাফি রিপোর্টটি দেখে আমাদের সকল সদস্যদের সেটি জানাও।
লিহা অত্যন্ত কুণ্ঠার সাথে রিপোর্টটি হাতে নিয়ে সেটি খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ে মাথা তুলে বলল, এই রিপোর্টে মহামান্য থুলের জিনেটিক কোডিং নির্দিষ্ট করা আছে, এখানে লেখা আছে রবোমানবের বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনোটিই তার শরীরে পাওয়া যায় নি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে একজন মানুষ।
মহামান্য থুলের মুখ থেকে কাঠিন্যটুকু সরে গিয়ে সেখানে তার পরিচিত হাসিটুকু ফুটে উঠল। তিনি সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললেন, চমৎকার! এখন আমরা সবাই নিশ্চিতভাবে জানি এখানে আমরা সবাই মানুষ। আমরা এখন মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারব।
মহামান্য থুল গ্রানাইটের মসৃণ টেবিলটার উপর অন্যমনস্কভাবে টোকা দিতে দিতে বললেন, তোমরা সবাই জান আমি কেন তোমাদের ডেকে এনেছি। এখানে আমরা যে কথা বলব পৃথিবীর কেউ সে কথাগুলো জানবে না। এগুলো রেকর্ড করা হবে না তাই ভবিষ্যতেও কেউ কখনো জানতে পারবে না। আমি এই সিদ্ধান্তগুলো কেন নিয়েছি সেটা তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ?
কেউ কোনো কথা বলল না, কয়েকজন শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। মহামান্য থুল বললেন, তোমরা সবাই জান রবোমানব প্রজেক্টটি আমাদের অনুমতি ছাড়া শুরু করা হয়েছিল। মানুষের মনুষত্ববোধ থাকবে না কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তা থাকবে এরকম রবোট তৈরি করার অনুমতি পৃথিবীর নির্বোধতম মানুষটিও দেবে না। আর সেগুলোকে মানুষের রূপ দিয়ে এন্ড্রয়েড তৈরি করতে দেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সেটাই ঘটেছে। যখন আমাদের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটা ধরতে পেরেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিছু শহরের কিছু কাউন্সিলার তার জন্যে দায়ী। তারা তাদের শহরে গোপন এন্ড্রয়েড শিল্প গড়ে উঠতে দিয়েছে। কারা দায়ী, কীভাবে সেটা গড়ে উঠতে পেরেছে সেটা নিয়ে আলোচনা করা এখন একটি একাডেমিক ব্যাপার। আমি সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্যে তোমাদের ডাকি নি। আমি ডেকেছি অন্য কারণে। আমি সেটি বলার আগে আমাদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বিজ্ঞানী জুহুকে বর্তমান পরিস্থিতিটি ব্যাখ্যা করতে বলব।
তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বিজ্ঞানী জুহু মাথা নিচু করে বলল, আমি এই আকাদেমীর কাছে ক্ষমা চাইছি, আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি নি।
মহামান্য থুল বললেন, আমি তোমাকে আত্মবিশ্লেষণ করতে বলি নি। তোমাকে আমি শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতির উপর একটা রিপোর্ট দিতে বলেছি।
তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বিজ্ঞানী জুহু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, যখন আমরা ভেবেছিলাম আমরা অবস্থাটি আয়ত্তের মাঝে আনতে যাচ্ছি ঠিক তখন আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাচ্ছি। রবোমানবেরা এখন সংঘবদ্ধ শক্তি, তারা নিজেরা নিজেদের তৈরি করছে। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন একসময় কিছু মানুষ ওদের তৈরি করেছিল। জৈবিক মানুষ ব্যবহার করে তাদের তৈরি করা হয় মস্তিষ্ক থেকে মানবিক অনুভূতিগুলো সরিয়ে নিয়ে সেখানে নিউরনগুলোকে নতুন করে পুনর্বিন্যাস করা হয়–সেজন্যে আমাদের স্বীকার করতেই হবে তাদের বুদ্ধিমত্তা মানুষ থেকে বেশি। যেহেতু তাদের কোনো মানবিক অনুভূতি নেই তাই তারা হচ্ছে ভয়ংকর একরোখা-তারা যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারে। সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ করতেও তাদের এতোটুকু দ্বিধা হয় না।
জুহু একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, পৃথিবী থেকে অপরাধ ধীরে ধীরে ওঠে যাচ্ছে। একসময় মানুষ যে কারণে অপরাধ করত এখন সেই কারণগুলোর বেশিরভাগই নেই, তাই অপরাধ করার প্রয়োজনও হয় না। তারপরেও ছোটখাট কিংবা বড়সড়ো অপরাধ যখন কেউ করে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী তাদের ধরতে পারে। আমাদের নেটওয়ার্ক পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্ক, সবার সুনির্দিষ্ট তথ্য সেখানে আছে, কেউ এর বাইরে কখনো যেতে পারে না।
জুহু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, হঠাৎ করে তাকে কেমন জানি হতাশাগ্রস্থ এবং ক্লান্ত মনে হয়। অনেকটা অন্যমনস্কভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, এই পূর্ণাঙ্গ নেটওয়ার্কটিই হয়েছে আমাদের সর্বনাশ। আমরা এই নেটওয়ার্কের ওপর খুব বেশি নির্ভর করি। রোমানবেরা এই নেটওয়ার্কের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, নেটওয়ার্কের তথ্য পরিবর্তন করে তাদের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারা সর্বশেষ কী করার চেষ্টা করছে শুনলে আপনারা হতবাক হয়ে যাবেন।
পদার্থবিদ ক্রন একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, কী করার চেষ্টা করছে?
তারা ডাটাবেসের তথ্য এমনভাবে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে যে লোবোগ্রাফি করে আমরা যখন একজন রবোমানবকে আলাদা করি, নেটওয়ার্ক তখন যেন তার আসল তথ্য লুকিয়ে তার সম্পর্কে বানানো তথ্য দেয়। তারা যদি সেটা করতে পারে আমরা তখন কোনোভাবে তাদের খুঁজে পাব না। তারা আমাদের মাঝে লুকিয়ে থেকে একদিন আমাদের পরাজিত করে পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। এই পৃথিবীতে মানুষ থাকবে না, থাকবে শুধু রবোমানব।
জীববিজ্ঞানী ত্রানা বলল, সমস্যাটা কী তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। প্রাচীনকালে রবোট তৈরি হতো যন্ত্রপাতি দিয়ে! লোহালক্কর, ফটোটিউব, ভালব, ইলেকট্রনিক, ফটোট্রনিক সার্কিট দিয়ে। তাদের খুঁজে বের করতে হত নাএমনিতেই তারা মানুষ থেকে আলাদা হয়ে থাকত! এই রবোমানবেরা সেরকম নয়। তারা পুরোপুরি মানুষ, শুধুমাত্র তাদের মস্তিষ্কটা নতুনভাবে ম্যাপিং করেছে। নিউরনগুলোকে ওভারড্রাইভ করার জন্যে মস্তিষ্কের একেবারে ভেতরে, যেটাকে থ্যালামাস বলে সেখানে একটা অত্যন্ত ছোট, চোখে দেখা যায় না এতো ছোট মাইক্রোস্কোপিক ইমপ্লান্ট বসানো হয়। সেটা কিছুক্ষণ পরপর নিউরনগুলোকে বাড়তি স্টিমুলেশান দেয়। শুধু যে স্টিমুলেশান দেয় তা নয় সেটা দিয়ে ম্যাপিং পরিবর্তন করে ফেলতে পারে, একটি রবোমানবকে ভিন্ন রবোমানবে পাল্টে দিতে পারে, নতুন তথ্য ঢুকিয়ে দিতে পারে। এদের প্রোগ্রাম করা যায় কিন্তু এরা পুরোপুরি জৈব মানুষ। সেজন্যে এদের কোনোভাবে ধরা যায় না।
মহামান্য থুল বললেন, আমি তোমাদের আরো মন খারাপ করা খবর দিই। রবোমানব খুঁজে বের করার অসাধারণ একটা পদ্ধতি একটা কমবয়সী ছেলে বের করেছিল, রবোমানবেরা তার মস্তিষ্ক কেটে নিয়ে গেছে। শুধু যে মস্তিষ্ক কেটে গিয়েছে তা নয়, রবোমানবেরা তার মস্তিষ্ক থেকে সব তথ্য বের করে এখন আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। আর কয়েকদিনের ভেতর সব জায়গায় রবোমানবেরা ঢুকে যাবে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর সদস্যরা চুপ করে বসে রইল। একটু পর গণিতবিদ শ্রুম বলল, আমাদের কী কিছুই করার নেই?
আছে। অনেক কিছু করার আছে। আমরা তার চেষ্টা করছি।
জুহু বলল, কিন্তু নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, আমরা কয়েকদিনের মাঝে নেটওয়ার্কটি হারাব। আমি খুব দুঃখিত আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি, মানুষের এতো বড় বিপর্যয়ের জন্যে আমি দায়ী-
মহামান্য থুল হাত তুলে তাকে থামালেন, তুমি কেন মিছিমিছি নিজের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছ। এখানে তোমার কিছু করার ছিল না।
কিন্তু এই দায়িত্বটি ছিল আমার।
তোমার একার নয়, আমাদের সবার। মহামান্য থুল সবার দিকে একবার তাকালেন তারপর বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, এবারে আমি তোমাদের বলি আমি কেন তোমাদের ডেকে এনেছি।
সবাই তাদের চেয়ারে সোজা হয়ে বসল। মহামান্য থুল তার হাতের নখগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতে করতে বললেন, আমরা সত্যের মুখোমুখি হই। পৃথিবীর মানুষ প্রথমবার সত্যিকারের একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। রবোমানবেরা আমাদের সভ্যতা ধ্বংস করার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। প্রাচীনকালে এক দেশের মানুষেরা অন্য দেশ দখল করে সেই দেশের মানুষদের হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দিত। এই রবোমানবদের কাছ থেকে আমরা ঠিক সেরকম একটা বিপদ আশংকা করছি। যদি কোনোভাবে তারা নেটওয়ার্ক দখল করতে পারে তাহলে তারা পৃথিবীর মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। আমরা কোনোভাবে সেটা হতে দিতে পারি না। যে কোনো মূল্যে কিছু মানুষ হলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জীববিজ্ঞানী ত্রানা বলল, আপনি ঠিক কী বলছেন আমরা বুঝতে পারছিনা মহামান্য থুল।
আমি একটি মহাকাশযান প্রস্তুত করেছি। সেই মহাকাশযানে করে আমরা পৃথিবীর কিছু মানুষকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিতে চাই। দূরবর্তী কোনো নক্ষত্রের কোনো গ্রহে তারা নতুন করে মানুষের বসতি স্থাপন করবে। ছয়শত মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে কেপলার টুটুবি গ্রহটি আছে। অন্য কিছু খুঁজে না পেলেও অন্তত এই গ্রহটিতে থাকতে পারবে। পৃথিবী থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও তারা বেঁচে থাকবে। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও মানুষের বংশধরেরা বেঁচে থাকবে। মানুষের সভ্যতা বেঁচে থাকবে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর দশজন সদস্য চুপ করে বসে রইল, কেউ একটি কথাও বলল না। মহামান্য থুল বলল, তোমরা চুপ করে বসে আছ কেন? কিছু একটা বল।
পদার্থবিজ্ঞানী ক্রন বলল, আমাদের কিছু বলার নেই মহামান্য থুল। মানব সভ্যতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের আর কিছু করার নেই।
মহামান্য থুল একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কিছু করার নেই সেটি সত্যি নয় ক্রন। আমাদের অনেক কিছু করার আছে এবং আমরা একেবারে শেষ পর্যন্ত তার চেষ্টা করব, কিন্তু আমি কোনো ঝুঁকি নেব না। মানুষ হয়ে আমি রবোমানবের পদানত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। যদি বেঁচে থাকতেও হয় আমি জানব অল্প কিছু মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও বেঁচে আছে। রবোমানবের হাতে যদি আমার মৃত্যু হয় আমি শান্তি নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারব।
সমাজবিজ্ঞানী লিহা বলল, মহামান্য থুল, মহাকাশযানে কারা যাবে, সাথে কী থাকবে, কোথায় যাবে, নিরাপত্তার জন্যে কী করা হবে এই সব খুঁটিনাটি কী ঠিক করা হয়েছে?
মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, না করা হয় নি। গোপনীয়তার জন্যে আমি কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছি, কিন্তু খুঁটিনাটি কিছুই করা হয় নি। আমি তোমাদের ডেকেছি এই পরিকল্পনাটা পূর্ণাঙ্গ করার জন্যে।
বিজ্ঞান আকাদেমীর সবচেয়ে কমবয়সী সদস্য পরিবেশবিজ্ঞানী কিহি বলল, সময় নষ্ট না করে আমরা তাহলে কাজ শুরু করে দিই।
হ্যাঁ। মহামান্য থুল মাথা নাড়লেন, বললেন, কাজ শুরু করে দাও।