পাপী! পাপী! ঘোর পাপী! বিড়বিড় করতে করতে চোখ মেলল সে। চোখ মেলে যা দেখল তাতে শিউরে উঠে ফের চোখ বন্ধ করে ফেলল। নরক। নরক।
টেবিলের ওপর গত রাতের ভুক্তাবশেষ মাংসের হাড়, রুটির টুকরো, এঁটো প্লেট, একটা খালি আর-একটা অর্ধেক খালি ব্ল্যাক নাইটের বোতল। মেঝের ওপর খানিকটা বমিও কি? নরক! নরক।
বিছানাটা মস্ত বড়। ও পাশে যে শুয়ে আছে তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে হল না সমীরণের। জুলেখা শৰ্মাদের কখনওই সকালের দিকে অবলোকন করা উচিত নয়। সকালটা কখনওই নয় নষ্ট মেয়েছেলেদের জন্য। কাতর একটা অর্থহীন শব্দ করে নিজের ভারী মাথাটা তুলবার চেষ্টা করল সমীরণ। প্রতিদিন সকালে এটাই তার প্রথম ব্যায়াম–নিজেকে ভোলা।
এত পাপ ভগবান সইছেন কী করে? এতদিনে তার বজ্র নেমে আসার কথা। তবে কি তিনি আদতে নেই? নাকি পৃথিবীতে পাপীর সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, তার তত বজ্রের স্টক নেই?
বালিশের পাশে কর্ডলেস টেলিফোনটা পড়ে আছে। লো ব্যাটারির ইন্ডিকেটর জ্বলে আছে। দু’দিন বোধহয় চার্জ দেওয়া হয়নি। কত কী বকেয়া পড়ে আছে তার। এই যে জুলেখা, এ হল পরিবর্ত ব্যবস্থা, স্টপ গ্যাপ। তার একজন স্থায়ী মেয়েমানুষ আছে। ক্ষণিকা। না, বউ নয়। ক্ষণিকা দু’বার বিয়ে করেছিল। দু’বার ডিভভার্সের পর তৃতীয়বার আর বিয়ের মতো ভুল করেনি। সমীরণের সঙ্গে তার শর্ত ছিল, আসা-যাওয়া দু’দিকেই ভোলা রবে দ্বার। কেউ কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাবে না। এবং সমীরণকে ভাল করে বুঝতে হবে যে, ক্ষণিকা যেমন তার বউ নয়, তেমনি নয় রান্নার লোক বা ঝি। কেউ কারও বন্ধু বা বান্ধবী নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। হ্যাঁ, আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কেউ কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে না। তুমুল নারীবাদী ক্ষণিকা গত দু’বছর ধরে তার লিভ ইন গার্ল ফ্রেন্ড। এই দুটো বছর এই ফ্ল্যাটের ভিতরে বিস্তর মেজাজের বিস্ফোরণ, ইগোর সঙ্গে ইগোর যুদ্ধ ও শান্তিস্থাপন, ভালবাসা ও ঘৃণা এবং লাভ হেট রিলেশন ও উদাসীনতা–এই সবকিছুই ঘটে গেছে। সে এক ভদ্রমহিলার চেহারা ও স্মার্টনেসের কিছু বাড়াবাড়ি প্রশংসা করে ফেলায় ক্ষণিকা–ঘোরর নারীবাদী ক্ষণিকা–কে বিশ্বাস করবে যে, রাগ করে বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছে গত পনেরো দিন! মুক্ত নারীকে কি মানায় এই ঈর্ষা? কিন্তু তর্ক করবে কার সঙ্গে সমীরণ? তর্কে বহুদুর। এখন গিয়ে ক্ষণিকার কাছে তার ক্ষমা চাওয়া ও সেধে ফেরত আনার বকেয়া কাজটাও পড়ে আছে। জুলেখা অন্তর্বর্তীকালীন বিকল্প ব্যবস্থা মাত্র। কিন্তু জুলেখার কথা জানতে পারলে কপালে সমীরণের আরও কষ্ট আছে।
সে পাপী–এই সার সত্য সে জানে। পঞ্চ ম-কারের কোনওটাই তার বাকি নেই। কিন্তু পাঁচটা ম-এর মধ্যে সে মেয়েমানুষ আর মদের কথা জানে। বাকি তিনটে ম কী কী? সে অন্তত জানে না।
সমীরণ নিজেকে দাঁড় করাল। এক হাতে একটা বালিশ, অন্য হাতে কর্ডলেস টেলিফোন। জিভটা এত শুকনো যে, মুখে যেন কেউ একটা পাপোশ ঢুকিয়ে দিয়েছে। বালিশটা ফের বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে সে গিয়ে টেলিফোনটা চার্জে বসাল। এ কাজটা জরুরি। কল আসতে পারে।
এইরকম বিচ্ছিরি সকালে বাথরুমটা তার কাছে মরূদ্যানের মতো লাগে। জলের আর এক নাম জীবন না? বেসিনের কল থেকে হাতের কোষে জল নিয়ে সে কয়েক টোক খেল। তারপর চোখেমুখে জলের ঝাঁপটা দিয়ে সে তাকাল আয়নায়, নিজের দিকে।
পাপী! পাপী। এত পাপ কি তোর সইবে রে? আকণ্ঠ ডুবে আছি পাপে।
শাওয়ার খুলে দিল সমীরণ। কলকাতার শীত তীব্র নয় ঠিকই, কিন্তু তবু তো শীতকাল। ঠান্ডা জলের শতধারার সূচিভেদ্য আক্রমণে প্রথমটায় শিউরে শিউরে উঠল সে। তারপর ভাল লাগতে লাগল। আঃ! কী আরাম।
জলে পাপ ধুয়ে যায় না, সে জানে। তবু জল যেন তার গা থেকে বাসি, পচা, দুর্গন্ধযুক্ত একটা আস্তরণকে অপসারিত করছিল। স্নান করতে করতেই সে হাতঘড়িটা দেখল, যেটা প্রায় সহজাত কবচ কুণ্ডলের মতো প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই পরে থাকে সে। আটটা দশ। অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য! কী করে এটা হয় তা আজও বুঝতে পারেনি সমীরণ। প্রতিদিন সকালে ঠিক একই সময়ে কেন ঘুম ভাঙে তার? কেন প্রতিদিন সকালে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে সে দেখতে পায়, ঘড়িতে আটটা দশ? অলৌকিক ছাড়া একে আর কী বলা যায়?
স্নান করতে করতেই সে দাঁত ব্রাশ করল। তারপর শাওয়ার খোলা রেখেই বসল কমোডে। জল পড়ে যেতে লাগল বিনা কারণে। কিন্তু এ সময়ে এই জলের শব্দটা তাকে উদ্বুদ্ধ ও তৎপর করে। বয়ে যাচ্ছে জল, বয়ে যাচ্ছে আয়ু, বয়ে যাচ্ছে মহার্ঘ সময়। জীবনপ্রবাহ বহি কালসিন্ধু পানে যায়… নাই নাই নাই যে সময়… সাড়ে ন’টায় তার অফিস…
কমোড থেকে উঠে সে ফের শাওয়ারের নীচে দাঁড়াল এবং দাড়ি কামিয়ে নিল। অনেকদিন আগে নন্দিতা বলেছিল, আপনার মুখে এক জোড়া গোঁফ থাকলে ভাল হত। এক-একটা মুখ আছে, গোঁফ না থাকলে মানায় না।
তা হবে। কিন্তু গোঁফের অনেক ল্যাঠা। কেয়ার করতে হয়, ছাঁটতে হয়, দু’দিক সমান করতে হয়। তার সময় কোথায়? আজও তাই গোঁফ রাখা হয়নি তার। কোথায় ভেসে গেছে নন্দিতা। গোঁফ ছাড়াও তার তো দিব্যি চলে গেল এতগুলো বছর।
কত বছর? সে কি চল্লিশের কাছাকাছি? না, সে বয়স নিয়ে মোটে ভাববে না, ভাবতে চায় না। বয়স মানেই একটা ভয়। একটা জ্বালা। একটা উদ্বেগ।
যখন সে বাথরুম থেকে বেরোল তখনও বিছানার দিকে তাকানোর ইচ্ছে হল না তার। লন্ডভন্ড বিছানার একপ্রান্তে এখনও জুলেখা শুয়ে থাকগে। ঘুম ভাঙলে আপনি চলে যাবে। এগারোটায় ওর স্কুল।
স্নান করে আসার পর নিজের শোয়ার ঘরের দুর্গন্ধ ও নারকীয় পরিবেশ তাকে যেন আরও তাড়া দিচ্ছিল বেরিয়ে পড়ার জন্য। ঘরের বাইরেও একটা নোংরা, গান্ধা শহর। তবু আলো আর হাওয়ার প্রবহমানতা আছে।
নরক! নরক!বলতে বলতে সে পোশাক পরল। চায়ের জল গরম করে টি ব্যাগ ডোবাল। বাইরের ঘরটা এখনও তত সংক্রামিত নয়। মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। তবে ফ্লাওয়ার ভাসে বাসি ফুল তার সহ্য হয় না। গত পনেরো দিন ধরে বা তারও বেশি এক গোছ হরেকরকম ফুল পচছে, শুকোচ্ছে, নেতিয়ে পড়ছে। কেউ ফেলার নেই। ফুলগুলোর দিকে অনিচ্ছের চোখে চেয়ে সে চা খেল।
পাপ কখনও গোপন থাকে না। ফুটে বেরোবেই। আর সেই কারণেই সমীরণ কখনও কিছু লুকোছাপা করে না। তার জীবন হল খোলা বই। এই যে শোয়ার ঘরে জুলেখা শুয়ে আছে, একটু বাদেই ঠিকে ঝি নবর মা এসে ওকে দেখবে। গত দশবারো দিন ধরে দেখছেও। এখন যদি হুট করে ক্ষণিকা চলে আসে, তা হলে সে-ও দেখবে। না দেখলেও ক্ষণিকা জানতে পারবে ঠিকই, তারপর অনেক অশাস্তি হবে। সব জানে সমীরণ, তবু কিছুই লুকোয় না।
হাই।
সমীরণ একটু চমকে গিয়েছিল। হাতের কাপ থেকে চলকে একটু চা পড়ল হাঁটুতে। ছ্যাক।
হাই। ঘুম ভাঙল?
ভেতরের দরজায় দাঁড়িয়ে মস্ত একটা হাই তুলল জুলেখা। ছোটখাটো শ্যামলা, ছিপছিপে মেয়েটি চোখে পড়ার মতো নয়। তবে চলাফেরায় একটা বেড়ালের মতো চকিত তৎপরতা আছে। একটা ফিরিঙ্গি স্কুলে ও ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর। ইউপির মেয়ে, কলকাতায় জন্ম-কর্ম। আর বিশেষ কিছুই জানা নেই সমীরণের। জানার অনেক ল্যাঠা।
জুলেখা আর-একটা হাই তুলে বলল, ইটস বোরিং।
হোয়াট ইজ বোরিং?
এভরিথিং।
সমীরণ মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, ঠিক কথা। জীবনটাই ভারী একঘেয়ে। নাথিং হ্যাপেনস। সোমবার ঠিক মঙ্গলবারের মতো, মঙ্গলবার ঠিক বুধবারের মতো, অ্যান্ড সো
অন।
চা খাব।
খাও। জল গরম করা আছে।
তোমার ফোন বাজছে। ধরো।
জ্বালালে।
চলে গিয়ে ফোনটা ধরল সমীরণ। কানে লাগিয়ে হ্যালো বলেই চমকে উঠে কান থেকে ফোনটাকে একটু তফাতে ধরল সে। তার বাবা মধু বাগচী যাত্রাদলে ঢুকলে নাম করতে পারতেন। গলার রেঞ্জ সাংঘাতিক। রেগে গেলে আরও মারাত্মক। এখন সেই মারাত্মক মাত্রায় গলাটা তাকে ধমকাচ্ছে, কী ভেবেছ তুমি। সারারাত ফুর্তি করে সকালে হ্যাংওভার নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে? তোমাকে কতবার বলেছি, আজ শুক্রবার অফিসের আগে মিস্টার ভার্মার বাড়ি থেকে একটা জরুরি ফাইল নিয়ে আসবে। উনি অপেক্ষা করছেন। আর-একটু বাদেই উনি একটা ফ্লাইট ধরতে বেরিয়ে যাবেন।
যাচ্ছি বাবা, এখনই যাচ্ছি।
রিচ হিম উইদিন ফিফটিন মিনিটস। ফিফটিন! হার্ড মি?
ইয়েস। ফিফটিন।
টেলিফোনটা নামিয়ে রাখতে না রাখতেই ডোরবেল বাজল। এ সময়ে বাবার কথা নয়। এ বাড়িতে খবরের কাগজ বা গয়লা আসে না। নবর মা আসে এগারোটার পর। সে ডোরবেল বাজায় না, তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সাধাসাধি না করলে ক্ষণিকা নিজে থেকে ফিরে আসার মেয়ে নয়।
একটু চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন সমীরণ গিয়ে দরজাটার দিকে হাত বাড়িয়ে জুলেখাকে বলল, টু বি অন দি সেফ সাইড, তুমি বরং শোয়ার ঘরে যাও।
যাচ্ছি। বলে জুলেখা একটা হাই তুলল। তারপর সে বেশ ধীরেসুস্থে শোয়ার ঘরে চলে গেল।
দরজা খুলে সমীরণ যাকে দেখল সে বেশ ছোটখাটো মানুষ। গোঁফ আছে। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা। চেহারা রোগা। পরনে কালো ট্রাউজার্স আর-একটা কটসউলের সবুজ চেকওলা হাওয়াই শার্ট, বিনা হাস্যে বলল, আসতে পারি?
সমীরণ দরজা না ছেড়ে বলল, কী চাই?
আপনাকেই।
কী দরকার?
লোকটা বুকপকেট থেকে আইডেন্টিটি কার্ডটা বের করে দেখিয়েই পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, তদন্ত। ভেরি ইস্পর্ট্যান্ট।
সমীরণ একটু ক্যাবলা হয়ে গিয়ে বলল, তদন্ত মানে সেই ইয়ের কেসটা কি? একবার তো এনকোয়ারি হয়ে গেছে।
হ্যাঁ, সেই ইয়ের কেসটাই। এনকোয়ারি বারবার হবে। এবারেরটা গুরুতর। পরশু দিনও এসেছিলাম। আপনি বেশ সকালেই অফিসে বেরোন দেখছি।
আজ্ঞে হ্যাঁ।
তবে পরশু আপনার কাজের মেয়েটির সঙ্গে আমার কিছু কথা হয়েছে। রিগাড়ি ইউ। আমি ভিতরে এলে কি আপনার অসুবিধে হবে? ভিতরে গার্ল ফ্রেন্ডট্রেন্ড কেউ আছে নাকি মশাই?
না না। আসুন।
থাকলেও আমি মাইন্ড করব না। তাকেও হয়তো প্রয়োজন হবে। মার্ডার কেস যে কোথা থেকে কোথায় গড়ায়।
সমীরণ লোকটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। বলল, বসুন। কিন্তু আমি একটা জরুরি কাজে বেরোচ্ছিলাম।
আমার কাজটা কি কম জরুরি? এখন যদি আপনি কাজ দেখান তা হলে আপনাকে আমার অফিসিয়ালি থানায় টেনে নিয়ে যেতে হবে।
আতঙ্কিত সমীরণ বলল, প্লিজ। তা হলে আমি বাবাকে একটা টেলিফোন করে নিই? উনিই আমার বস।
জানি। কর্ডলেস টেলিফোনটা এই ঘরে নিয়ে এসে কথা বলুন। আর গার্ল ফ্রেন্ডটিও এখানে স্বচ্ছন্দে এসে বসতে পারেন।
সমীরণ টেলিফোনটা নিয়ে এল। খানিকটা চার্জ নিয়েছে। চলবে। সে লাইনটা অন করে ডায়ালের বোম টিপতে টিপতে বলল, জুলেখা টয়লেটে গেছে। এসে যাবে।
বেফাঁস বলা। টেলিফোনে তার বাবার গলা হঠাৎ ফেটে পড়ল, জুলেখা টয়লেটে গেছে? হোয়াট ডু ইউ মিন? কে জুলেখা? আর তার টয়লেটে যাওয়ার খবর তুমি এই সাতসকালে আমাকে শোনাচ্ছ কেন?
আপনাকে নয়।
আমি জানতে চাই তুমি এখনও বেরিয়ে পড়োনি কেন? তোমাকে বলেছিলাম কি না ঠিক পনেরো মিনিটের মধ্যে ভার্মাকে রিচ করতে হবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কী সমস্যা? জুলেখা কে? তার টয়লেটে যাওয়াটাই তোমার সমস্যা নাকি?
না বাবা। আই অ্যাম আন্ডার অ্যারেস্ট।
অ্যারেস্ট! বলে বাবা এমন চেঁচাল যে, মানুষ অত জোরে সচরাচর চেঁচাতে পারলে টেলিফোন যন্ত্রটারই দরকার হত না।
অ্যারেস্ট! আমি ঠিক শুনেছি তো।
ঠিকই শুনেছেন। তবু আমি ভেরিফাই করে নিচ্ছি। বলে মাউথপিসটায় হাত চাপা দিয়ে সে লোকটাকে জিজ্ঞেস করল, অ্যাম আই আন্ডার অ্যারেস্ট?
না না। বরং ইউ আর আন্ডার স্ক্রুটিনি।
মাউথপিসটা থেকে হাত সরিয়ে সমীরণ বলল, ইনি বলছেন, ঠিক অ্যারেস্ট নয়, আই অ্যাম আন্ডার স্ক্রুটিনি। ব্যাপারটা কী তা আমি জানি না।
কেন, তোমাকে স্ক্রুটিনিই বা করা হচ্ছে কেন? তুমি কী করেছ!
মনে হচ্ছে সেই ইয়ের কেসটা—
কোন কেসটা? কীসের কেস?
একটা মার্ডার কেস।
মাই গড! মার্ডার কেস! মার্ডার কেস! ঠিক শুনছি?
ঠিকই শুনেছেন। ইনি বোধহয় আমাকে থানায় নিয়ে যাবেন। ভার্মার ফাইলটা তাই আমার পক্ষে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
হ্যাং ভার্মা। পুলিশ অফিসারকে ফোনটা দে, আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
লোকটাকে কিছু বলতে হল না, নিজেই হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে তার বাবাকে বলল, ঘাবড়াবেন না, আপনার ছেলেকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে এসেছি।
বাবার গলা টেলিফোন থেকে দু’হাত দূরে দাঁড়িয়েও শুনতে পেল সমীরণ। বাবা বলল, কার মার্ডার? কীসের মার্ডার?
মিতালি ঘোষ নামে একটি মেয়ের।
তার সঙ্গে আমার ছেলের কী সম্পর্ক?
সম্পর্কটা গোলমেলে। তবে ক্রমশ সব জানা যাবে।
আমার যে প্যালপিটিশন হচ্ছে।
একটা সর্বিট্রেট খেয়ে নিন।
শুনুন অফিসার, আমার এই সেজো ছেলেটা অত্যন্ত ইররেগুলার। বোধহয় লম্পটও এবং একটি মিটমিটে বদমাশ।
আজকাল কে নয়? দি ইয়ং জেনারেশন ইজ টোটালি স্পয়েন্ট। তার জন্য আপনারা অর্থাৎ পেরেন্টসরাই বেশি রেসপনসিল।
ও কে, ও কে। কিন্তু আমার কথাটা শেষ হয়নি। আমি বলছিলাম কী, হি হ্যাজ হিজ ভাইসেস। কিন্তু হি ইজ কমপ্লিটলি ইনক্যাপেবল টু কমিট মার্ডার, হি ইজ নট ব্ৰট আপ দ্যাট ওয়ে।
হু নোজ? তবে আমাদের প্রাইম সাসপেক্ট উনি এখনও নন। ওঁর কাজটা আজ আপনি চালিয়ে নিন।
কিন্তু আপনাদের প্রশ্নোত্তরগুলো। যে আমার জানা দরকার। আই অ্যাম ওরিড।
উপায় কী বলুন? ইন্টেরোগেশনের রানিং কমেন্টরি তো আপনাকে শোনানো যাবে না।
আমি কি আসব?
না। আপাতত ওকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে না। আপনি পরে ওঁর কাছ থেকে শুনে নেবেন। ছাড়ছি।
আচ্ছা, আচ্ছা।
ফোনটা অফ করে লোকটা সমীরণের হাতে সেটা দিয়ে বলল, হ্যাপলেস পেরেন্টস। যান, ওটা চার্জে বসিয়ে আসুন।
পাপ। পাপ! পাপ ছাড়া কি তার জীবনে কিছু নেই? তার জীবন পঞ্চ ম-কারে আকীর্ণ। কিন্তু মার্ডার ম দিয়ে শুরু হলেও বোধহয় পঞ্চ মকারের মধ্যে পড়ে না।
ভিতরের ঘরে এসে কর্ডলেসটা চার্জে বসিয়ে সে কিছুক্ষণ চোখ বুজে চুপ করে দাঁড়িয়ে ধ্যানস্থ হওয়ার চেষ্টা করল। সকালবেলায় তার মাথা এমনিতেই ভাল কাজ করে না। তার ওপর এইসব উলটোপালটা ঘটনায় সে বিভ্রান্ত। এখন দরকার মেডিটেশন। আজকাল স্ট্রেস কালনোর জন্য অনেকেই মেডিটেশন ধরেছে। ব্যাপারটা কেমন তা অবশ্য সে ভাল করে জানে না। যোগ ব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদির কথা সে খুব শুনতে পায় আজকাল। খানিকক্ষণ চোখ বুজে সে নিজেকে জড়ো করার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করল মাত্র। তারপর গিয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে চাপা জরুরি গলায় ডাকল, জুলেখা! জুলেখা!
ভিতরে শাওয়ার চলছে। জুলেখা শুনতে পেল না।
টেবিল থেকে চাবিটা তুলে এনে সেইটে দিয়ে দরজায় নক করল সে।
শাওয়ার বন্ধ হল, জুলেখা বলল, কে?
আমি। একটু তাড়াতাড়ি করো।
কেন? উইল ইউ গো টু দি পি? আর-একটা বাথরুম তো রয়েছে।
নো, আই ওন্ট গো টু দি পি। বাট দেয়ার ইজ অ্যানাদার পি হিয়ার। পুলিশ।
পুলিশ? যাঃ, তুমি ইয়ারকি করছ।
মাইরি না।
পুলিশ কী চায়?
ইন্টেরোগেট করতে এসেছে।
আমাকে? আমাকে কেন?
তোমাকেও। আমার সম্পর্কে হয়তো জানতে চাইবে।
ডোন্ট ওরি। আই শ্যাল পেইন্ট ইউ ইন পিঙ্ক।
ইয়ারকি নয়। সিরিয়াস ব্যাপার। আই মে বি আন্ডার অ্যারেস্ট।
কেন, তুমি কী করেছ?
পাপ! বিস্তর পাপ করেছি। কিন্তু পুলিশ যে পাপটার কথা বলছে সেটা আমি করিনি।
ভেবো না। আমি পুলিশের মেয়ে, পুলিশের নাতনি। আই ওয়াজ বর্ন অ্যান্ড ব্ৰট আপ ইন এ পুলিশ কোয়ার্টার। পুলিশের কোলে চড়েই বড় হয়েছি।
চমৎকৃত হয়ে সমীরণ বলল, এসব আগে বলতে হয়। আই অ্যাম ইমপ্রেস্ট, ইউ আর অ্যান অ্যাসেট।
পুলিশ কেন এসেছে বলো তো! হ্যাভ ইউ কমিটেড এনি ক্রাইম?
আমার এক বান্ধবী সম্প্রতি খুন হয়েছে।
বান্ধবী?
ইট ওয়াজ অল ইন দি নিউজপেপার্স। মিতালি ঘোষ।
আমি খবরের কাগজ পড়িই না। ঠিক আছে, তুমি গিয়ে কথা বলো। আমি আসছি।
এই শীতেও কি একটু ঘাম হচ্ছে তার? কে জানে কেন, ছোটখাটো, আনইমপ্রেসিভ চেহারার পুলিশ অফিসারটির সামনে তার কিছু অস্বস্তি হচ্ছে। সে ঘরে ঢুকতেই অফিসারটি কান থেকে একটা ছোট্ট যন্ত্র খুলে তার গুটিয়ে পকেটে রাখতে রাখতে বলল, ওয়েল ডান।
তার মানে?
আমি এতক্ষণ আপনাদের ডায়ালগ শুনছিলাম।
কীভাবে শুনছিলেন? এনি ইলেকট্রনিক ডিভাইস? আজকাল যে কত কিম্ভুত যন্ত্রপাতি বেরিয়েছে, একটুও শান্তি বা সেলুশন থাকছে না।
এটা একটা ইমপ্রোভাইজড হিয়ারিং এইড। খুব সফিস্টিকেটেড কিছু নয়, তবু ভাল কাজ দেয়। বসুন।
সমীরণ বসল।
মিতালিদেবী কি আপনার বাল্যবান্ধবী?
আমরা স্কুলে একসঙ্গে পড়তাম।
তিনি কেমন মেয়ে ছিলেন?
ব্রাইট। মেরিটোরিয়াস।
সেটা আমরা জানি। আদার সাইডস?
খুব মিশুকে ছিল। একটু রোমান্টিক।
ডাক্তারি পড়ার সময়ে ওঁর বিয়ে হয়ে যায়, তাই না?
হ্যাঁ হ্যাঁ।
এত আরলি এজে বিয়ে হয়েছিল কেন, জানেন?
সমীরণ একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলল, ওর মা নেই। বাবা আর ও। বোধহয় ওর বাবা ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। সেইজন্যই
ওঁর বাবা বরুণ ঘোষের ক্যান্সার হয়েছিল বলে ডাক্তার একটা ভুল ডায়াগনসিস করে। ঘটনাটা আপনি জানেন?
না। আসলে স্কুলের পর আমাদের বিশেষ মেলামেশা ছিল না। টেলিফোনে কথা হত। বিয়ের নেমন্তন্নেও গিয়েছিলাম।
এত আরলি এজে কেন বিয়ে হচ্ছে তা জানতে চাননি।
হ্যাঁ। কিন্তু ও ভেঙে কিছু বলেনি।
বিয়েতে কি ওঁর আপত্তি ছিল?
ছিল। বলেছিল বাবা ওকে প্রেশার দিয়ে বিয়ে দিচ্ছে।
প্রেশারের কারণ কি সাসপেক্টেড ক্যান্সার?
আমি ঠিক জানি না। হতে পারে।
আপনি হয়তো আরও কিছু জানেন। বলতে চাইছেন না।
না, ঠিক না নয়।
মিতালিদেবীর হাজব্যান্ড মিঠু মিত্রকে আপনি চেনেন?
চিনি।
কীভাবে চেনেন?
ওদের বিয়ের সময়ে পরিচয় হয়েছিল। পরে বন্ধুত্বের মতোই হয়েছিল।
কিন্তু বিয়ে তো ভেঙে যায়। এক মাস পরই মিতালিদেবী চলে আসেন!
হ্যাঁ। কিন্তু মিঠুর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তাতে কেটে যায়নি।
সম্পর্কটা কীরকমভাবে হল?
ঘটনাটা ইন্টারেস্টিং। বলব? আপনার কি অত সময় আছে?
আছে। বলুন।
বউবাজারে আমাদের একটা জুয়েলারির দোকান আছে। তখন আমরা দুই ভাই ওখানে বসতাম। একবার দোকানে একটা ডাকাতি হয়। ডাকাতির পর বাবা ডিসিশন নেন আমাদের ফিজিক্যাল ফিটনেস দরকার এবং মার্শাল আর্টও রপ্ত করা প্রয়োজন। আমি জীবনে ব্যায়ামট্যায়াম কখনও করিনি।
সেটা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।
যায়?
যায়। তবে আপনি তো হ্যাপি লাইফ কাটান। হ্যাপিনেশের হ্যাপা হল হেলথ হ্যাজার্ডস।
বাঃ, আপনি বেশ অ্যালিটেরেশন করতে পারেন।
তারপর বলুন।
হ্যাঁ। মিতালির বর যে একজন মার্শাল আর্টিস্ট তা আমার জানা ছিল। মিঠুর কাছে আমরা দুই ভাই ওসব শিখতে যেতাম। সেই থেকেই বেশ ভাব হয়ে যায়।
মিঠু মিত্র কেমন লোক?
ভাল। খুব ভাল।
তা হলে আপনার বান্ধবী মিতালি তাকে পছন্দ করেননি কেন?
কে কাকে পছন্দ করবে বলা মুশকিল।
আমি জানতে চাই মিঠু মিত্রকে অপছন্দ করার বিশেষ কোনও কারণ মিতালিদেবীর ছিল কি না।
আমি জানি না। ঠিক আছে। অন্তত এটা তো জানেন, বিয়ের আগে মিতালিদেবী আর-কোনও ছেলেকে পছন্দ করতেন কি না।
আপনি কি পান্টুর কথা জানতে চাইছেন। দেখুন, ও কেসটা স্যাড। মিতালি একটা মারাত্মক ভুল করেছিল। ভুল বুঝতে পেরে সে ফিরেও আসে।
একটু ডিটেলসে বলবেন কি?
ব্যাপারটা হল, মিতালি একটু রোমান্টিক টাইপের। পান্টু ছিল ওর পাড়ার মস্তান। এ ব্যাড টাইপ। কিন্তু বেশ রোখা-চোখা, সাহসী। মিতালি ইনভলভড হয়ে গিয়েছিল। ওর বাবা ভয়ংকর রেগে যাবেন বলে মিতালি ছেলেটার সঙ্গে পালিয়ে যায়। বিগ ব্লান্ডার। ছেলেটার রোজগারপাতি ছিল না, যোগ্যতাও নয়। মিতালি ছ’মাস বাদে বাবার কাছে ফিরে আসে। এ রেক অফ এ গার্ল। মেয়ে চলে যাওয়ার পর ওর বাবা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। শরীরও ভেঙে যায়। মিতালি ফিরে এলেও ওর বাবা সেই শকটা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু আমি মনে করি, এরকম ভুল যে কেউ করতেই পারে। অল ইন দি লাইফস গেম।
ঘটনাটা কি মিঠু মিত্র জানতেন?
বোধহয়, মিতালির বাবাই হয়তো ওকে বলেছিলেন।
আপনি শিয়োর নন?
আমি প্রসঙ্গটা কখনও তুলিনি। মনেও হয়নি।
পান্টু এখন কোথায়?
জানি না। ওকে আমি এক-আধবার দেখেছি।
বিয়েটা যে ভেঙে গেল তা পান্টুর ব্যাপারটার জন্য নয় তো।
আরে না। মিতালি তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। পান্টুকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল মন থেকে।
ওদের কোনও ইস্যু হয়েছিল কি? মানে পান্টু আর মিতালির?
না না।
মিঠু মিত্র পান্টুর কথা জেনে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল–এমন কি হতে পারে?
না, কখনওই নয়। বিয়েটা ভেঙেছিল মিতালিই।
ঠিক জানেন?
হান্ড্রেড পার্সেন্ট।
এবার বলুন, পার্টির দিন আপনি কোথায় ছিলেন?
পার্টিতেই ছিলাম। আই ওয়াজ অ্যান ইনভাইটি।
পার্টিতে কী হয়েছিল?
মিতালি অনেককে নেমন্তন্ন করেছিল।
অকেশনটা কী?
গেট টুগেদার।
কীরকম পার্টি?
ককটেল ডিনার।
মিঠু মিত্রকে কি নেমন্তন্ন করা হয়েছিল?
মাই গড! না।
তবু মিঠু মিত্র সেইদিন মিতালিদেবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাই না?
হ্যাঁ। আমার সঙ্গে তার দেখা হয়।
কখন এবং ঠিক কোথায়?
আমি তখন গাড়ি থেকে নামছি। দেখি মিঠু কম্পাউন্ডের ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। মিঠুর প্রেস্টিজবোধ প্রবল।
তিনি কেন এসেছিলেন সে-বিষয়ে কিছু বলেছিলেন আপনাকে?
না। হি ইজ এ রিজার্ভড ম্যান। আগ বাড়িয়ে বলে না।
আপনাদের মধ্যে কি কিছু কথাবার্তা হয়েছিল?
সামান্য। মিঠু খুব অন্যমনস্ক ছিল। আমি বললাম, কী খবর? ও বলল, ভাল।
উনি কি গাড়িতে এসেছিলেন?
না। মিঠুর একটা বুলেট মোটরবাইক আছে। সেইটেতে চড়ে চলে গেল। খুব স্পিড দিয়েছিল মনে আছে?
আপনি কি মিতালিদেবীকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন?
করেছিলাম।
তিনি কী বললেন?
ওকে খুব ডিস্টার্বড দেখলাম।
কীরকম? খুলে বলুন।
আনইজি লাগছিল। একটু যেন রেস্টলেস। আমাকে হঠাৎ বলল, আমি জীবনে বারবার ভুল করি কেন বলো তো?
ব্যস, এইটুকু?
না। আরও একটু বলেছিল।
কীরকম?
বলল, আই মাস্ট রিকনসাইল।
কার সঙ্গে?
সেটা স্পষ্ট করে বলেনি। আন্দাজ করছি, মিঠুকেই মিন করছিল।
হাউ ডু ইউ নো?
আমি তো বলেইছি, ওটা আমার আন্দাজ।
সেদিন কি মিতালিদেবী খুব ড্রিঙ্ক করেছিলেন?
হ্যাঁ। মিতালি মদ খেত না কখনও। আমেরিকাতেও না। আমাকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখত। তাতেই প্রায় থাকত ও আমেরিকায় নেশার বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন করতে চায়।
তবু সেদিন উনি ড্রিঙ্ক করেছিলেন?
হ্যাঁ, উলটোপালটা খাচ্ছিল। কখনও হুইস্কি, কখনও শেরি, কখনও বিয়ার বা রাম। বোঝা যায় ও ড্রিঙ্ক করতে জানেই না।
তারপর কী হল?
মশাই, মুশকিলে ফেললেন।
কেন?
আমি পাপী-তাপী লোক। মদ আমিও খাই। পার্টি কিছুক্ষণ চলার পর আমি কি আর চৈতন্যে ছিলাম?
আউট হয়ে গিয়েছিলাম?
ঠিক তা না হলেও আই ওয়াজ এক্সট্রিমলি হাই। ডিনার টেবিলে বসেও আমি নাকি কিছু খেতে পারিনি।
তারপর?
ক্ষণিকা আমাকে ফিরিয়ে আনে।
ক্ষণিকা কে? যিনি বাথরুমে আছেন?
না। এ জুলেখা।
আপনার ক’জন?
একজনই। ক্ষণিকা। এ হল স্টপ গ্যাপ।
একে কোথায় পেলেন?
জুটে যায়।
আপনি ভাগ্যবান লোক। আচ্ছা, মিঠু মিত্র আপনাকে কোথায় ক্যারাটে শেখাতেন?
সাদার্ন ক্লাবে। লেক-এর কাছে।
আপনি কতদিন শেখেন?
বেশি নয়। মাস খানেক। ক্যারাটে ইজ এ বোরিং থিং। সিনেমাটিনেমায় দেখতে মন্দ নয়। কিন্তু শেখা ভীষণ একঘেয়ে। এক জিনিস হাজারবার করতে হয়।
ক্ষণিকাদেবী এখন কোথায়?
ক্ষণিকা! ওঃ! সে বাপের বাড়িতে।
উনি কি আপনাকে ছেড়ে গেছেন?
বোধহয় না। টেম্পোরারি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং।
সেটা কীরকম? জুলেখাদেবীই কি কারণ?
না না। জুলেখা ইজ নো ম্যাচ ফর হার। ব্যাপারটা খুলেই বলি।
বলুন।
ওয়ানস আই ওয়াজ ইন লাভ উইথ মিতালি।
তাই নাকি?
ইট ওয়াজ ন্যাচারাল। মিতালির ডান গালে একটা আঁচিল আছে। আপনি দেখেননি, তাতে ওকে কী সুন্দর দেখাত! ইন ফ্যাক্ট সেভেন্টি পারসেন্ট অফ হার মেল ক্লাসমেটস ওয়্যার ইন লাভ উইথ হার।
তারপর বলুন।
অবশ্য কাফ লাভ। ওসব ভুলে যেতে দেরি হয় না। তারপর মিতালি যখন আমেরিকা থেকে ফিরে এল আই ওয়াজ সেকেন্ড টাইম ইন লাভ উইথ হার। আমেরিকায় গিয়ে ও আরও সুন্দর এবং স্মার্ট হয়েছে। অনেক ম্যাচিয়োর্ডও এইসব কথা আমি ক্ষণিকাকে বলেছিলাম।
বটে?
হ্যাঁ। অ্যান্ড ক্ষণিকা ওয়াজ ক্রস। পার্টি থেকে আমাকে নিয়ে এসে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সে সোজা বাপের বাড়ি চলে যায়।
কেন, পার্টিতে কিছু হয়েছিল?
আমি নাকি মাতাল অবস্থায় মিতালির প্রতি প্রেম নিবেদন করে ফেলেছিলাম। কিন্তু মাতালের কথা কি ধরতে আছে, বলুন? শি ইজ সো জেলাস!
বেশি জেলাসি থেকে মানুষ খুনও করতে পারে!
আতঙ্কিত সমীরণ বলল, না না! কী যে বলেন! ক্ষণিকা ওরকম মেয়ে নয়।
কীরকম মেয়ে?
কোয়াইট রেসপনসিবল। সোশ্যাল ওয়ার্কও করে।
আপনি কি বলতে পারেন মিতালিদেবীর আমেরিকায় কোনও বয়ফ্রেন্ড আছে কি না!
নেই।
কীভাবে জানলেন যে নেই?
থাকলে আমাকে জানাত।
উজ্জ্বল সেন বলে কারও নাম শুনেছেন?
শুনেছি। উজ্জ্বল ওর বন্ধু ঠিকই, কিন্তু যাকে বয়ফ্রেন্ড বলে তা নয়।
উজ্জ্বল কী করেন?
আমেরিকায় ওর ব্যাবসা আছে।
কীসের ব্যাবসা?
বোধহয় সফটওয়্যার।
বোধহয় বলছেন কেন?
সেইরকমই শুনেছিলাম যেন।
ওঁদের মধ্যে কোনও অ্যাফেয়ার ছিল না বলছেন!
না না থাকলে মিতালি আমাকে জানাত।
বরুণ ঘোষের সঙ্গে আপনার আলাপ ছিল?
সামান্য।
কীরকম লোক ছিলেন?
লোনলি। আপনমনে থাকতেন।
আপনার ব্লাডপ্রেশার কত?
প্রেশার? তা তো জানি না। কেন বলুন তো?
মাঝে মাঝে চেক করানো ভাল। আপনার ফোন বাজছে। বোধহয় আপনার বাবা। গিয়ে ফোনটা ধরুন।
বাবাই। ফোন ধরেই কানের কাছ থেকে যন্ত্রটাকে তফাত করতে হল। বাবা চেঁচাচ্ছিল, কী হল? কী হয়েছে? বলবি তো।
কিছু হয়নি। আমরা অ্যামিকেবলি কথা বলছি।
অ্যারেস্ট করেনি তো!
না বাবা।
তেমন বুঝলে আমাদের বিরজা উকিলকে খবর দিতে পারি।
এখনই দরকার নেই।
কে খুন হয়েছে বলছিলি?
আমার এক বান্ধবী।
কুলাঙ্গার কোথাকার!
বাবা ফোন রেখে দেওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচল সমীরণ।
সামনের ঘরে ঢুকতেই দেখল, লোকটা আবার তার হিয়ারিং এইডটা কান থেকে খুলে পকেটে রাখল। তারপর বলল, আপনার বান্ধবী বাথরুমে একটু বেশি সময় নিচ্ছেন।
আজ্ঞে হ্যাঁ, বাথরুম ওর খুবই প্রিয় জায়গা, ডাকব কি?
ডাকুন।
সমীরণ গিয়ে বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল, হয়েছে জুলেখা? যাচ্ছি।
আরও মিনিট পাঁচেক পর জুলেখা সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে সামনের ঘরে এল। হেসে বলল, হাই। আমি জুলেখা।
অফিসার বলল, আমি শবর দাশগুপ্ত। গোয়েন্দা।
হাউ থ্রিলিং!
আপনি একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে?
হ্যাঁ। আমার বাবার নাম বিজয় শর্মা। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ। রিটায়ার্ড।
সমীরণবাবুর সঙ্গে আপনার কত দিনের পরিচয়?
জাস্ট বারো দিন।
কীভাবে?
উই ওয়্যার টু লোনলি পিপল। উই মেট সামহোয়ার। অ্যান্ড দ্যাটস দ্যাট।
আপনি চাকরি করেন?
হ্যাঁ, মেরিজ স্কুলে ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর।
ম্যারিটাল স্ট্যাটাস?
সিঙ্গল।
একা থাকেন না বাবা-মা’র সঙ্গে?
একা। বাবা-মা আমার লাইফ স্টাইল পছন্দ করেন না।
সমীরণবাবুর সঙ্গে আপনার দেখা হওয়াটা কি অ্যাক্সিডেন্টাল?
হ্যাঁ।
কোথায় দেখা হল?
একটা বার-এ।
বার-এ? আপনি কি ড্রিঙ্ক করেন?
অকেশনালি। যখন বোরিং বা লোনলি ফিল করি।
আর ইউ ইন লাভ?
হিঃ হিঃ। ডোন্ট নো।
আপনি কি জানেন যে, ওঁর আর একজন গার্ল ফ্রেন্ড আছেন?
জানব না কেন?
আপনি মিতালি ঘোষের কথা শুনেছেন?
না।
হাউ ডিড ইউ ফল ফর হিম?
জুলেখা মুচকি হাসল, উইল ইউ বিলিভ?
হোয়াই নট?
হি টোন্ড মি দ্যাট হি ওয়াজ স্কেয়ারড অফ গোস্টস।
ভূতের ভয়?
ঠিক তাই।
শবর সমীরণের দিকে চেয়ে বলে, আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন?
সমীরণ ভারী লজ্জিত হয়ে বলে, বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু ভয় পাই। বিশেষ করে মিতালি খুন হওয়ার পর থেকে।
সত্যি?
আজ্ঞে।
মিস শর্মা, তারপর বলুন।
আই অ্যাম ন্যাচারালি অ্যাট্রাক্টেড টু লোনলি পিপল। সমীরণকে আমার ভাল লেগেছিল।
এর আগে অন্য কোনও মানুষের সঙ্গে এভাবে বাস করেছেন?
মাত্র একবার। তবে পল্লবের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ারই কথা ছিল। একটা অ্যাক্সিডেন্টে সে মারা যায়। এক বছর আগে। আই লিড এ লোনলি লাইফ।
আপনার ঠিকানা?
থ্রি এ বাই ওয়ান লিটন স্ট্রিট। রুম নম্বর টুয়েন্টি থ্রি।
এটা কি বোর্ডিং হাউস?
হ্যাঁ। কিন্তু এই মার্ডার কেসটার সঙ্গে নিশ্চয়ই আমার সম্পর্ক নেই? আমি কি যেতে পারি? আমার স্কুলে আজ ফেট আছে।
পারেন।
বাই দেন।
বাই।
জুলেখা চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল শবর। দরজা বন্ধ হওয়ার পর বলল, ইজ শি টেলিং দি টুথ?
মোর অর লেস।
হোয়াই লেস?
ওটা কথার কথা। ও ঠিকই বলেছে।
কোন বার-এ আপনাদের দেখা হয়েছিল?
মদিরা।
আপনি সেখানে রেগুলার যান?
যাই। বেশ সেলুডেড জায়গা। গাড়ি পার্ক করার জায়গা আছে।
জুলেখাও কি যায়?
না। সেদিনই ওকে প্রথম দেখলাম।
কীভাবে পরিচয় হল?
ও একটু হাই ছিল। এসে আমার টেবিলে বসল। অ্যান্ড উই টকড।
তারপর?
তারপর তো দেখছেন।
ক্ষণিকাদেবী রাগ করবেন না?
করবে। এখনও হয়তো জানে না। জুলেখা অবশ্য জানে যে, এটা কোনও পার্মানেন্ট ব্যবস্থা নয়। খুব কনসিডারেট মেয়ে।
শুধু ভূতের ভয়ের জন্য আপনি বান্ধবী জোগাড় করেছেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাস করুন। বাস্তবিকই আমার ভীষণ ভূতের ভয়। পাপী তো, আমার কেবলই মনে হয় মৃতদের আত্মারা আমার কাণ্ড দেখে রেগে যাচ্ছে। বাগে পেলেই এসে গলা টিপে ধরবে।