ছন্দ ও ভাষা
সামবেদের ছন্দ ও ভাষার কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে। সমালোচক ফ্যাডেগান লক্ষ্য করেছেন সে সামবেদের স্বরপদ্ধতি দৈনন্দিন জীবনের ভাষা থেকে বহুলাংশে পৃথক। আধুনিক পাঠক যখন ধমীয় ঐতিহ্যের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত হয়ে ওঠেন তখন উপভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতিও ভাব দৃষ্টি ইদানীং আকৃষ্ট হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরেই ঋগ্বেদের বিপুল সম্ভার অবিশ্বাস্য যথার্থতার সঙ্গে শ্রুতি-শিক্ষণের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়েছিল। অথচ সামবেদের গীতিপদ্ধতির সুরবিন্যাস ও মধ্যবতী বিরতি সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত, অজ্ঞ–কালের প্রবাহে এ স্বরন্যাস চরিত্রগতভাবে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছিল। সাধারণভাবে অবশ্য কাব্য-ছন্দের উপরই সাংগীতিক ছন্দ নির্ভর করে। তবে কিছু কিছু পার্থক্যও রয়েছে, কেননা গানের ছন্দে শুধুমাত্র দীর্ঘস্বর হ্রস্বস্বরের মধ্যেই পার্থক্য রয়েছে–দুটি স্বরবর্ণমধ্যবতী ব্যঞ্জনবর্ণের চরিত্র বা সংখ্যায় কোনও তাৎপর্য নেই। কথ্য বৈদিক ভাষা মূলত তিন প্রকার স্বরে বিন্যস্ত প্রযোজ্য এবং সেই সঙ্গে স্মৃতিতে বিধৃত স্তুতি ও প্রার্থনাগুলি মৃদুস্বরে পুনরাবৃত্তি করার জন্যও এই নিয়মই গ্রাহ্য। যেসব পুরোহিত মন্ত্র আবৃত্তি করতেন, একটি নির্দিষ্ট স্বরের বিন্যাসের মধ্যেই তাদের সীমাবদ্ধ থাকতে হাত; কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এই স্বরবিন্যাস পদ্ধতির সঙ্গে প্ৰাকৃতভাষার উচ্চারণরীতির বেশ কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য ছিল।