ঘরটি সুন্দর। জুতো পরেই খাটে শুয়ে ছিল অর্জুন। নিউজিল্যান্ডের মানুষরা ইংরেজি বলেন। কিন্তু অমল সোম বলেছিলেন ওদের উচ্চারণ বুঝতে বেশ অসুবিধে হয়। জনসাহেবের সঙ্গে তেমন সমস্যা হলে মুশকিলে পড়বে সে। এখন ভরদুপুর। ভাগ্যিস মানিকলাল তাকে প্রচুর খাইয়েছিল, নইলে..। অর্জুন তার সুটকেসের দিকে তাকাল। এবং তখনই এস. কে. গুপ্তার কথা মনে এল। তার কাছে মানিকলালের টেলিফোন নম্বর নেই যে, ভদ্রপুরে জানিয়ে দেবে যে কেউ আসেনি বাক্সটা নিতে। কিন্তু গোপাল যা বলল…।
অর্জুন ঘরের এক কোণে রাখা টিভিটা চালিয়ে দিল। রাজা এবং মন্ত্রীর খবরাখবর দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় কেন্দ্র থেকে। পোখরাতে আরও টুরিস্ট যাতে যান তার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিরাটনগরের একটা কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। তারপরেই পরদায় ভেসে উঠল সেই দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটির ছবি, যা অর্জুন এখানে আসার পথে দেখে এসেছে। সংবাদপাঠক বললেন, আজ সকাল সাড়ে এগারোটার সময় এক সড়ক দুর্ঘটনায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস. কে. গুপ্তী নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, তিনি এয়ারপোর্টে যাচ্ছিলেন। তারপরেই অন্য খবর এসে গেল। অর্জুন হতভম্ব হয়ে গেল। ভদ্রপুর থেকে তার প্লেন ছাড়ার আগেই মানিকলাল ফোনে এস, কে, গুপ্তাকে এয়ারপোর্ট যেতে বলেন। সময় যখন সাড়ে এগারোটা তখন বোঝা যাচ্ছে গুপ্তা একটুও সময় নষ্ট করেননি। গোপালের কথা যদি ঠিক হয় তা হলে আততায়ী গুপ্তাকে পথেই মেরে ফেলতে চেয়েছে। অর্থাৎ আততায়ী গুপ্তার ওপর নজর রাখছিল। এমন হতে পারে গুপ্তার ফোনে সে আড়ি পেতেছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় একটা পুরনো শত্রুতা এদের মধ্যে ছিল। কিন্তু তাই যদি হয় তা হলে আততায়ী গুপ্তাকে খুন করে এয়ারপোর্টে গিয়ে তাকে বলতে পারত যে সে-ই এস, কে, গুপ্তা। অর্জুনের পক্ষে সন্দেহ করা সম্ভব ছিল না। বাক্সটা তখনই সে দিয়ে দিত। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে বাক্সটার প্রতি আততায়ীর কোনও মোহ নেই। তা হলে খুন করল কেন?
অর্জুন হেসে ফেলল। তার স্বভাব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে এখানে এসেছে। সম্পূর্ণ অন্য কারণে। কে কাকে খুন করল তা নিয়ে সে ভাবছে কেন? সে সুটকেস খুলে সাদা পিসবোর্ডের বাক্স বের করল। গোপাল যা বলল তাতে বোঝা যাচ্ছে এস, কে, গুপ্তা বড় ব্যবসায়ী। তিনি কত বড় ব্যবসা করেন তা নিয়ে প্রশ্ন করে কোনও লাভ নেই। কিন্তু মারা গেলে যার কথা টিভিতে বলা হয় তিনি একেবারে সাধারণ মানুষ নন। তা এইরকম লোক মানিকলের ফোন পেয়ে নিজে কেন এয়ারপোর্টে এই বাক্সটা আনতে যাচ্ছিলেন। যে-কোনও লোককে পাঠালেই তো পারতেন।
অর্জুনের মনে হল কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কী এমন বিশেষ জিনিস মানিকলাল পাঠিয়েছেন যে, কর্মচারীদের ওপর বিশ্বাস করতে পারেননি এস, কে. গুপ্তা? এই সময় টেলিফোন বাজল। অর্জুন রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশে কেউ গ্যাঁক গ্যাঁক করে কিছু বলে উঠল।
অর্জুন বুঝতে না পেরে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, কে বলছেন?
আঃ। দিস ইজ জন। জন বেইলি। তুমি নীচের রেস্টুরেন্টে চলে এসো। তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি।
সব কথা পরিষ্কার নয়। একটা আনুনাসিক ধ্বনি জড়িয়ে আছে প্রতিটি শব্দের সঙ্গে। কিন্তু অর্জুন অপেক্ষা করল না।
নীচের রেস্টুরেন্টে যেতেই ওদের দেখতে পেল সে। পাঁচজন পুরুষ এবং দুজন মহিলা টেবিলে বসে আছেন। ও কাছে গিয়ে বলল, আমি অর্জুন।
সঙ্গে সঙ্গে লম্বা, একমাথা টাক, রোগা এক ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে ওর হাত জড়িয়ে ধরলেন, আমি জন। কখন এসেছ তুমি?
এই তো একটু আগে।
আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি। একে-একে সবার নাম এবং কে কী কারণে এসেছেন জানিয়ে দিলেন জন বেইলি। অর্জুন শুনল দুজন মহিলার একজন ক্যামেরা চালাবেন। অন্যজন ডাক্তার।
ওঁদের সঙ্গে বসার পর লাঞ্চ এল। কন্টিনেন্টাল খাবার। অর্জুন লক্ষ করল কেউ জল খেলেন না। খাওয়ার পর কোল্ড ড্রিঙ্কের টিন খুললেন। জন এবার বললেন, ভানু আমার বন্ধু। সার হিলারির টিমে আমরা ছিলাম। ওকে রেফার করেছিল ডেসমন্ড ডয়েগ। ডাক্তার অসুস্থ হওয়ার পর ভানু প্রয়োজন হলে ইঞ্জেকশন দিত। খুব ভাল হাত ছিল। পরে জানা গেল সে ওই অভিযানে যাওয়ার আগে কোনওদিন ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ধরেনি। সার হিলারি তাঁর বইয়ে এই ব্যাপারটা লিখেছিলেন। তুমি আমাদের এই অভিযানে কীভাবে সাহায্য করতে পারো?
কথাগুলো বুঝতে পারল অর্জুন। সে বলল, আপনারা একটা দারুণ ইন্টারেস্টিং ব্যাপারের ছবি তুলতে যাচ্ছেন। আপনাদের সঙ্গী হতে আমি আগ্রহী। আমি জানি না ঠিক কীভাবে সাহায্য করতে পারব।
পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা তোমার নেই?
না।
তুমি ডাক্তার নও?
না।
ওখানকার গ্রামের মানুষদের ভাষা তুমি কি জানো?
নেপালি হলে জানি। তবে সম্ভবত ওরা নেপালি বলে না।
তা হলে তোমাকে নিয়ে আমার কী উপকার হবে?
আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে মিস্টার ভানু ব্যানার্জি…।
ইয়েস। সেখানেই তুমি আসছ। আচ্ছা, বন্ধুরা, তোমরা এখন বিশ্রাম নিতে পারো। আমি আর অর্জুন একটু ঘুরে আসছি। জন উঠে দাঁড়ালেন।
বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। জন এবং অর্জুন সেটায় উঠলে ড্রাইভারকে সরকারি হাসপাতালে যেতে বলা হল। কাঠমণ্ডু খুব সুন্দর সাজানো শহর নয়। অন্তত দার্জিলিং-এর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। রাস্তায় এত ভারতীয় মুখ যে, বিদেশ বলে ভাবতে অসুবিধে হয়। জন বললেন, এবার নিয়ে চারবার আমি এখানে এলাম। শহরটা তেমন বদলায়নি।
হাসপাতালে যে আগেই খবর দেওয়া ছিল তা বুঝতে পারল অর্জুন। ততক্ষণে সে ভেবে নিয়েছে আগামীকালই তাকে ফেরত যেতে হবে। খামোখা পয়সা এবং সময় নষ্ট করে এখানে এল। বিশ্রী লাগছিল তার।
হাসপাতালের সিঁড়িতে স্মার্ট চেহারার এক তরুণ ডাক্তার দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওদের দেখে এগিয়ে এসে হাত বাড়ালেন, মিস্টার জন বেইলি…
ইয়েস। কেমন আছ ডাক্তার?
আমি ঠিক আছি।
মিট মাই ইয়ং ফ্রেন্ড, অর্জুন।
ডাক্তার করমর্দন করলেন অর্জুনের সঙ্গে। তারপর সিঁড়ি ভেঙে নিজের চেম্বারে নিয়ে গেলেন। জন কললেন, অর্জুন, এই হ্যান্ডসাম ডাক্তারকে আমি জন্মাতে দেখেছি। ইয়েস! পাহাড় থেকে আমরা নামছিলাম। একটু পেছনে। ছিলেন ওঁর বাবা আর মা। হঠাৎ ওঁর মায়ের শরীর খারাপ হল। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে চারপাশে ঘিরে দেওয়া হল। একটু বাদেই আমরা কান্না শুনতে পেলাম। ওঁর বাবা জানালেন, ছেলে হয়েছে। তারপর কী করা হল জানো? ওই সদ্যোজাত সন্তানকে ওঁরা নিয়ে গেলেন পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর কাছে। অত ওপরে বরফগলা সেই জল তখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। আচমকা সেই জলে ওঁকে চুবিয়ে পরিষ্কার করে গরম কম্বলে মুড়ে দেওয়া হল। আমরা বাধা দিতে গিয়েছিলাম। হিলারিসাহেব চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। মনে হয়েছিল সদ্যোজাত শিশুটিকে ওঁরা খুন করছেন। কিন্তু যে পাহাড়ি গ্রামে ওঁরা থাকেন তার আচার-অনুষ্ঠান হয়তো ওইরকমই। নইলে যে মহিলার সন্তান যে-কোনওদিন হবে তিনি স্বামীর সঙ্গে দশ হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে কাঠমণ্ডুতে আসতে চাইবেন কেন? এই আসাটা যে কীরকম কষ্টকর তা পাহাড়ে ওঠানামায় অভ্যেস যাঁদের আছে তাঁরাই জানেন। কিন্তু কাঠমণ্ডুতে পৌঁছবার আগেই শিশুটির মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রায় দুমাস তাঁকে শুয়ে থাকতে হয়েছিল কাঠমপুর হাসপাতালে। শিশুটির কিছু হয়নি। অবাক হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। সেই শিশুটিই ইনি, আজকের তরুণ ডাক্তার।
ডাক্তার হাসলেন, আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
ওঃ, নো, আমরা কিছুই করিনি। ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট তোমার দায়িত্ব নিয়েছিল।
জনের কথায় অর্জুন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন?
জন বললেন, সেবার সার হিলারি আমাদের নিয়ে ইয়েতির সন্ধানে আপার হিমালয় প্রায় চষে ফেলছিলেন। ক্রমশ আমরা যখন হতাশ হয়ে পড়ছি তখন খবর এল এক পাহাড়ি গ্রামে ইয়েতির মাথা আর চামড়া সযত্নে রাখা আছে। আমরা সেখানে গেলাম। মন্দিরে ওগুলো রাখা হয়েছে খুব যত্ন করে। ইয়েতির মাথা বলে যেটা ওরা দেখাল তা দেখে আমাদের সন্দেহ হচ্ছিল। অথচ অস্বীকারও করতে পারছিলাম না। মাথাটা শুকিয়ে কিছুটা ছোট হয়ে গেলেও তার পুঁচলো মুখ মানুষের মতো নয়। তবে গায়ের চামড়া ইয়েতির হতে পারে। ওই বরফের ওপর থাকতে হলে যতটা লোম থাকা উচিত তা ঠিক আছে। কেউ ইয়েতি দেখেছে কিনা জানতে চাইলে সবাই বলতে লাগল, সে দ্যাখেনি, কিন্তু যে দেখেছে তার কাছ থেকে শুনেছে। আর ওই বস্তুগুলো সংগ্রহ করেছে ওদের পূর্বপুরুষেরা। সার হিলারি ওগুলোকে পরীক্ষা করাতে লন্ডনে নিয়ে যেতে চাইলেন গ্রামপ্রধানরা আপত্তি জানালেন। ওগুলো দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত স্থানচ্যুত করলে গ্রামের মানুষরা বিপদে পড়বে। হয়তো ইয়েতিরা আক্রমণ করবে। আমরা অনেক চেষ্টা করলাম। ভাষা খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। ওই গ্রামের মানুষরা কাঠমণ্ডর নাম শুনেছে কিন্তু সেই শহরটাকে দ্যাখেনি। কলকাতা-লন্ডন সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। শেষপর্যন্ত ওরা নিয়ে এল একজন মানুষকে, যিনি চার হাজার ফুট নীচের এক মিশনারির স্কুলে একবছর পড়েছিলেন। ভদ্রলোক ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি বলতে পারেন। ইয়েস, নো, ভেরি গুড, ব্যাড। তাঁকে ধরে শেষপর্যন্ত গ্রামপ্রধানদের রাজি করালাম। শর্ত হল দুবছরের মধ্যে ওই দুটি বস্তু ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সেই ভদ্রলোক আর-একজন গ্রামপ্রধান ওই পবিত্র বস্তু দুটো বয়ে নিয়ে যাবেন।
লন্ডনে পৌঁছে ওঁরা অবাক হয়ে গেলেন। পৃথিবীতে কত জায়গা জনমানবহীন অবস্থায় পড়ে আছে। তবু সেখানে না গিয়ে এত লোক এক জায়গায় ঠাসাঠাসি হয়ে বাস করছে কী করে? ওঁদের ধাতস্থ করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করছেন ওগুলো। সেই অল্প ইংরেজি জানা ভদ্রলোক ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, তিনি যে দেশে এসেছেন তার প্রধানের জন্যে উপহার নিয়ে এসেছেন। সেটা নিজের হাতে তুলে দিতে চান। কুইন তখন বাকিংহাম প্যালেসে নেই। দেশের বাইরে শুভেচ্ছা-সফরে গিয়েছেন। কোনও দেশের প্রধান মহিলা এ-কথা বোঝাতে গলদঘর্ম হতে হল। তবু বিশেষ ব্যবস্থা করে তাঁকে বাকিংহাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে সব দেখে মুগ্ধ হয়ে উপহার রেখে ফিরে এলেন তিনি। পরীক্ষার ফল পাওয়া গেল। ওগুলো ভালুকজাতীয় কোনও প্রাণীর মাথা এবং চামড়া। তবে প্রায় দুশো বছরের পুরনো। অতএব জিনিসগুলো সমেত ওঁদের যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার কিছুকাল বাদে কুইন ভারত এবং নেপাল ভ্রমণে এলেন। সেবার কুইন বিদেশ ভ্রমণ সেরে ফিরে গিয়ে উপহার এবং ঘটনাটা জানতে পেরেছিলেন। তাই কাঠমণ্ডতে যাওয়ার আগে তিনি ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করার অভিলাষ জানালেন। খবরটা অত ওপরের দুর্গম গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হল। সেই সময় আমরা দ্বিতীয়বার গিয়েছিলাম ওই গ্রামে। আমাদের সঙ্গেই ওঁরা যাত্রা করলেন। যেহেতু কুইন তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে কাঠমণ্ডতে এসেছেন তাই তিনি তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিলেন। সে-সময় ভদ্রমহিলার সন্তান আসন্ন। অথচ পাহাড় ভেঙে নামতে তিনি পিছপা হননি। তার পরের ঘটনাটা আগেই বলেছি। স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ভদ্রলোক কুইনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। কুইন সব শুনে খুব অবাক হয়ে গিয়ে ঘোষণা করলেন, ওই শিশুর পাঁচ বছর বয়স হলেই তার সব দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার নেবে। তাকে পড়াশুনো করিয়ে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে মেডিক্যাল কলেজে পড়ানো হবে। অতএব ডাক্তার, আপনি যদি কৃতজ্ঞতা জানাতে চান তা হলে কুইনের কাছে জানাতে পারেন। এসব গল্প তোমাকে শোনালাম অর্জুন, কারণ এক্ষেত্রে তোমার সাহায্য দরকার। ভানু জানিয়েছে তুমি সাহায্য করতে পারবে।
অর্জুন অবাক হয়ে তাকাল।
ডাক্তার বললেন, আমাদের গ্রামের মন্দির থেকে ওই পবিত্র বস্তু দুটো চুরি গিয়েছে। তার পরেই গ্রামের মানুষের মধ্যে নানান অশান্তি আরম্ভ হয়েছে। কেউ-কেউ প্রচার করছে সাহেবরা ওগুলোকে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল বলে চুরি হল। এটা বলার সময় কেউ মনে রাখছে না এর মধ্যে তিন দশকের ওপর সময় চলে গিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মিস্টার জন বেইলি তাঁর দল নিয়ে ওখানে গেলে আতিথ্য পাবেন না। বরং উলটোটা হওয়ারই সম্ভাবনা।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে?
ডাক্তার হাসলেন, পুলিশ? মিস্টার অর্জুন, ওখান থেকে খুব কাছের পুলিশ স্টেশন অন্তত দেড়দিনের হাঁটা-পথ। গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নেই। খবর দিলেও কোনও পুলিশ সেখানে যাবে না। কারণ গিয়ে কিছুই করতে পারবে না।
কাউকে কি সন্দেহ করছেন?
না। তিরিশ বছর আগে কেউ কাঠমণ্ডতে আসত না। এখন অবস্থা বদলেছে। কিছু কিছু ছেলে এখানে আসা-যাওয়া করে। তারা লোভের ফাঁদে পা দিতে পারে। আমার জন্ম হওয়ার আগে থেকেই সার হিলারির দৌলতে সবাই জেনে গিয়েছে ওখানে ইয়েতির মাথা এবং চামড়া আছে। বিজ্ঞানীরা যতই বলুন ওগুলো নীল রঙের ভালুকের, কেউ-কেউ এখনও সেটা বিশ্বাস করেন না। ডাক্তার বললেন।
কিন্তু এগুলো চুরি করে এনে বিক্রি করবে কোথায়?
নেপালে যেমন পৃথিবীর সব দেশের জিনিস আসছে তেমনই বাইরেও যাচ্ছে। কিছু মনে করবেন না, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই বাজারটা কন্ট্রোল করছে। ডাক্তার বললেন, এসব আমার অনুমান। এমন হতে পারে যে চুরি করেছে সে এখন পর্যন্ত কাঠমণ্ডতে আনতে পারেনি জিনিসগুলো।
জন বললেন, লুক অর্জুন। আমরা এসেছি ওই নীল ভালুকের ছবি তুলতে। কিন্তু পাহাড়ের মানুষরা যদি বাধা দেয় তা হলে সেটা সম্ভব নয়। ভানু তোমার কথা আমাকে বলেছে। তোমার ওপর ওর খুব বিশ্বাস। তুমি যদি ওই হারানো ভালুকের মাথা আর চামড়া খুঁজে দিতে পারো তা হলে আমরা গ্রামবাসীদের সেটা ফেরত দিয়ে আসব। এই কারণেই যে আমরা যাচ্ছি সেটা এদের বুঝিয়ে বলব। তুমি আমার দলের সদস্য হয়ে ওই কারণেই যাচ্ছ। বুঝতে পারলে?
কিন্তু আমি যদি খুঁজে না পাই?
তুমি নাকি এখনও ব্যর্থ হওনি?
তার মানে এই নয় যে, কখনও হব না। জিনিসগুলো যদি দেশের বাইরে চলে গিয়ে থাকে তা হলে আমার কিছুই করার নেই।
লেটস ট্রাই। চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী? অ্যান্ড ওয়েল, ওগুলো যদি খুঁজে বের করতে পারো তা হলে আমি তোমাকে পাঁচ হাজার ইউ. এস. ডলার পারিশ্রমিক হিসেবে দেব। ডান? হাত বাড়ালেন জন।
হাত মেলাল অর্জুন। তারপর ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল, চুরি কতদিন আগে হয়েছে? আপনি জানলেন কী করে?
ঠিক দশদিন আগে। গ্রাম থেকে লোক এসেছিল খবর দিতে। ডাক্তার বললেন, দশদিন আগে এক সকালে চুরি ধরা পড়ে।
তা হলে তো গ্রামের লোক এখানে আসার আগেই চোর পৌঁছে গেছে।
না। লোকটি রওনা হয়েছিল সেই দুপুরেই। পথে চার রাত ওকে বিভিন্ন গ্রামে কাটাতে হয়। ও খোঁজ নিয়ে দেখেছে গত এক সাল ওপর থেকে কেউ নামেনি। এইসব বরফজমা পাহাড়ি পথে রাতের বেলায় কোনও গ্রামে আশ্রয়
নিয়ে কেউ আসতে পারে না। তবে হ্যাঁ, পরে আসতে পারে। তার খোঁজ নেওয়া হয়নি।
যে লোকটি খবর দিতে এসেছিল সে এখানে আছে?
না। গ্রামে ফিরে গেছে।
লোকটার নাম কী?
উঘি।
কাঠমণ্ডুতে যারা কিউরিওর ব্যবসা করে, বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে, তাদের কাউকে চেনেন?
না। তবে নাম জানি। যেমন, হরিকিষেন রুংতা, শেঠ বাবুলাল আর এস, কে. গুপ্ত। এঁদের অন্য ব্যবসার সঙ্গে কাঠমন্ডুতে কিউরিওর দোকানও আছে।
এস. কে. গুপ্তা? নামটা উচ্চারণ করল অর্জুন।
হ্যাঁ। এরা খুব প্রতাপশালী মানুষ। আমার জগতের নয়।
আজ একজন এস, সে, গুপ্তা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। ওঁর মৃতদেহ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। তিনি যদি ইনি হন তা হলে তো আপনি খবর পেতেনই। তাই না?
দাঁড়ান। আমি আজ লাঞ্চের পর ডিউটিতে এসেছি। এসেই আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। মিস্টার বেইলি নিউজিল্যান্ড থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁকে চুরির কথা ফ্যাক্স করে জানিয়ে দিই। তবু তিনি আসছেন বলে আমি একটু টেনশনে ছিলাম। ডাক্তার টেলিফোন তুললেন। স্পষ্ট ইংরেজিতে কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, শুনলাম আজ অ্যাকসিডেন্টে কেউ মারা গিয়েছে। বডি আইডেন্টিফাই হয়েছে? উত্তরটা শুনে রিসিভার নামিয়ে রেখে বললেন, মাই গড! হ্যাঁ, একই লোক। যদি এটা সাধারণ অ্যাকসিডেন্ট হয় তা হলে অন্য কথা। নইলে আরও কিছু খুনের জন্যে আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
গাড়িতে উঠে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আমরা কবে রওনা হচ্ছি?
কাল সকালে। আজ কারগো ফ্লাইটে মালপত্র আসার কথা। আটজন শেরপাকে বুক করেছি। একটা হেলিকপটার দুবারে সবাইকে পৌঁছে দেবে। আমরা তোমার ব্যবস্থা যাতে গ্রামেই করা যায় সেই চেষ্টা করব। পাহাড়ে ওঠানামা করতে হবে না তোমাকে। জন বললেন।
অর্জুন চুপচাপ রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিল। এস, কে, গুপ্তা যদি অপরাধ জগতের লোক হন তা হলে মানিকলালও একই গোত্রের। একথা নিশ্চয়ই ভানুদার জানা নেই। জানলে তিনি মানিকলালকে অনুরোধ করতেন না। এস, কে. গুপ্তা খুন হলেন কেন? ওই ইয়েতির মাথা নিয়ে গোলমাল?
গেস্ট হাউসে ফিরে জন নিজের ঘরে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, সন্ধে সাতটার সময় সবাই আমার ওখানে আসছে। তুমিও এসো। জুতো, পোশাক দেখে নিয়ে যাবে। নিজস্ব জিনিসপত্র যতটা সম্ভব কম সঙ্গে নেবে। বাই।
পাঁচ হাজার ডলার! তার মানে দুলক্ষ টাকা! পাওয়ার কোনও চান্স নেই। অথচ সামনে প্রলোভন রয়েছে। কী কাণ্ড!
ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে অর্জুন বাক্সটার দিকে তাকাল। কী আছে ওর মধ্যে? গাঁজা, চরস, অথবা অন্য কোনও ড্রাগ? সঙ্গে-সঙ্গে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল তার। এয়ারপোর্টে যদি কাস্টমস তাকে বাক্স খুলতে বলত এবং ওইসব নিষিদ্ধ জিনিস পেত তা হলে কত বছর কাঠমণ্ডুর জেলে কাটাতে হত তা ঈশ্বরই জানেন। ওটা যে তার বাক্স নয় একথা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারত না সে। এই কারণেই বলা হয়, কখনও অজানা বা অচেনা লোকের দেওয়া জিনিস প্যাকেট খুলে না দেখে সঙ্গে নিয়ে যেয়ো না।
বাক্সটা খুলে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল অর্জুনের। তার পরেই মনে হল মানিকলাল জানে সে ভানুদার লোক। জেনেশুনে সে বিপদে পড়ে এমন জিনিস কি সঙ্গে দেবে? এমন হতে পারে ভানুদার লোক বলেই সে এস, কে, গুপ্তাকে নির্দেশ দিয়েছিল অন্য কাউকে না পাঠিয়ে নিজে এয়ারপোর্টে গিয়ে যেন অর্জুনকে রিসিভ করে। হয়তো তাই। বাক্সটা খুলে যদি দেখা যায় কোনও নিরীহ জিনিস রয়েছে তা হলে লজ্জার শেষ থাকবে না। ওটা এমনভাবে প্যাক করা যে, খুললেই বোঝা যাবে।
অর্জুন উঠল। টেলিফোন ডাইরেক্টরি খুলে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই নামটা পেয়ে গেল, শেঠ বাবুলাল অ্যান্ড সন্স। একবার গৈলে হয় লোকটার কাছে। তার মন বলছে কথা পাড়লে কিছু কাজের কথা কানে আসবে।
এখন প্রায় বিকেল। এই শহরে বোধহয় তাড়াতাড়ি অন্ধকার নামে। একটা জ্যাকেট চড়িয়ে অর্জুন বেরিয়ে এল। আসার আগে পিসবোর্ডের বাক্সটাকে তার সুটকেসে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করৈ রাখল।
লবি পেরিয়ে বাইরে বের হতেই সে শুনতে পেল, হ্যালো!
সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লাঞ্চ টেবিলের দুই মহিলার একজন তার দিকে এগিয়ে আসছে। মহিলার পরনে নীল জিন্স আর সাদা শার্ট। কাঁধে ব্যাগ। জন বলেছিলেন, ইনি ক্যামেরায় ছবি তুলবেন।
মহিলা কাছে আসতেই অর্জুন বলল, হ্যালো। কেমন আছেন?
ফাইন। যে-কোনও নতুন জায়গায় প্রথম দিন আমার ভাল লাগে। ঘরে বসে বোর হচ্ছিলাম। জুডি, ডাক্তার, ওষুধের লিস্ট মেলাচ্ছে। আমি ডানা।
ডায়না?
ও নো। ডানা। কোথায় যাচ্ছেন?
এই একটু ঘুরে বেড়াতে। কাঠমণ্ডুতে আমি আজ প্রথম এসেছি।
তাই? চলুন একসঙ্গে যাওয়া যাক। আপত্তি নেই তো?
না না। চলুন।
অর্জুনের মনে হল এটা ভাল হল। সঙ্গে বিদেশিনী থাকলে তাকেও টুরিস্ট ছাড়া কিছু ভাববে না এখানকার মানুষ। ওরা ফুটপাথ ধরে হাঁটছিল।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি প্রফেশনাল ক্যামেরাম্যান। বলেই তার খেয়াল হল, সরি! আমি ক্যামেরাম্যান বলে ফেললাম।
দ্যাটস ওকে! এইসব ব্যাপার পুরুষদের একচেটিয়া ছিল বলে শব্দগুলোর দখল তারা নিয়ে নিয়েছে। হ্যাঁ। আমি তিনটে ফিল্মে স্বাধীনভাবে কাজ করেছি। আপনার মতোই আমি পাহাড়ে চড়ার ট্রেনিং নিইনি। কী হবে জানি না। তবে ব্যাপারটা বেশ রোমাঞ্চকর। আপনি তো প্রাইভেট ডিটেকটিভ?
না। অর্জুন মাথা নাড়ল।
না মানে? ডানা অবাক!
আমি সত্যান্বেষী। সত্য অন্বেষণ করাই আমার কাজ।
আই সি। কিন্তু পার্থক্যটা কী?
পার্থক্য আছে। একজন স্টিল ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরাম্যানের পার্থক্য আছে। আবার ফিল্মের ক্যামেরাম্যানরাও আছেন। তাই না?
ও আচ্ছা। ডানা বলল, জন যখন বলল একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর দলের সঙ্গে যাচ্ছে, তখন ভেবেছিলাম খুব ভারী চেহারার বয়স্ক মানুষের কথা। আপনাকে দেখে কিন্তু মনেই হয় না।
অর্জুন এত জোরে হেসে উঠল যে, ডানা কথা শেষ না করে হাসিতে যোগ দিল। তারপর বলল, আমি কিন্তু একই বেটা ক্যামেরায় ছবি তুলব।
সেটা কী?
হাইসেন্সেটিভ ভিডিও ক্যামেরা।
অর্জুন একটা ট্যাক্সি দাঁড় করাল, চলুন, ট্যাক্সিতে শহরটা চক্কর দিই। তা হলে তাড়াতাড়ি সব দেখা হয়ে যাবে।
ট্যাক্সি চলতে আরম্ভ করলে ডানা বলল, ক্যামেরাটা সঙ্গে নিয়ে এলাম না বলে খুব আফসোস হচ্ছে। শহরটা সত্যি সুন্দর।
অর্জুন হিন্দিতে ড্রাইভারকে রাস্তাটার নাম বলল।
ডানা জিজ্ঞেস করল, আপনি এখানকার ভাষা জানেন?
এখানে ভারতীয় ভাষাগুলো চলে। দুদেশের কিছু মানুষ একই ভাষায় কথা বলে।
সাইনবোর্ডে রাস্তার নাম দেখল অর্জুন। তারপরই শেঠ বাবুলাল অ্যান্ড সন্স দোকানটা চোখে পড়ল।
ট্যাক্সি থামাতে বলল সে। তারপর ডানাকে বলল, চলুন নামি। এই দোকানটার কথা আমি শুনেছি। কিউরিও শপ। বিখ্যাত দোকান!
ইজ ইট? ডানা উৎসাহী হল।
দোকানটার বাইরের সাজগোজ বলে দিচ্ছে বিদেশি খদ্দেরদের আকর্ষণ করার চেষ্টা আছে। ওরা ভেতরে ঢুকল। দরজায় দুজন দ্বাররক্ষী তাদের সম্ভাষণ করল। বিরাট হলঘর। তাতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বস্তু শিল্পসম্মতভাবে সাজানো রয়েছে। একজন সুন্দরী নেপালি এগিয়ে এল, গুড আফটারনুন। আমি কি
আপনাদের সাহায্য করতে পারি?
ডানা বলল, ধন্যবাদ। আমরা কি একটু ঘুরে দেখতে পারি?
নিশ্চয়ই। কিন্তু কোন ব্যাপারে আপনাদের আগ্রহ যদি বলেন…।
অর্জুন বলল, পাহাড়ের দেশে এসেছি। পাহাড়ের যে-কোনও জিনিস..!
আসুন আমার সঙ্গে।
ওরা সুন্দরীকে অনুসরণ করে যে ঘরটিতে পৌঁছল সেখানে কাচের বাক্সে সাজানো রয়েছে মুগ্ধ হওয়ার মতো সামগ্রী। সুন্দরী বলল, এই যে অ্যাশট্রে বলে যা মনে হচ্ছে এটা কিন্তু প্রকৃতি করেছে। আট হাজার ফুট ওপরে এক ঝরনার মধ্যে পড়ে ছিল সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে। পাথরটির বিশেষত্ব হল মাঝখানের গর্তটা কালো, কিন্তু এর চারপাশে চারটে রঙের সমন্বয়।
ডানা জিজ্ঞেস করল, কত দাম?
সুন্দরী একগাল হাসল, মাত্র দুহাজার পাঁচশো ডলার।
ডানা চোখ বড় করল।
সুন্দরী বলল, যে অভিযাত্রী এটিকে সংগ্রহ করে এনেছেন তার নাম শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এবং এটিকে নিজের সংগ্রহে রাখতে ওই দামকে খুব অল্পই মনে হবে আপনাদের। অভিযাত্রীর নাম তেনজিং নোরগে।
অর্জুন বলল, দেশে ফিরে গিয়ে পাঁচজনকে এ কথা বলে কতখানি বিশ্বাস করাতে পারব জানি না। আচ্ছা, এমন কোনও জিনিস নেই, এই ধরুন ইয়েতির কোনও অঙ্গ বা তাদের ব্যবহৃত কোনও জিনিস পেতে পারি কি?
ইয়েতি? সুন্দরীর চোখ স্থির।
হ্যাঁ।
সরি। আমি এব্যাপারে আপনাদের কোনও সাহায্য করতে পারছি না।
আচ্ছা, এ কথা তো বলতে পারবেন, তেমন কিছু কি খুব দামি হবে?
অবশ্যই।
অর্জুন ডানাকে বলল, দেখুন, তেমন কোনও জিনিস পেয়ে যান কিনা। পেলে বিক্রি করলে বড়লোক হয়ে যাবেন।
ডানা হাসল, কিছু বলল না।
সুন্দরী বলল, কাঠমণ্ডতে আপনারা পাবেন না।
অর্জুন বলল, না, না। আমরা কাল এক অভিযানে রওনা হচ্ছি। ওই যেসব জায়গা ইয়েতিদের এলাকা বলে বলা হয়ে থাকে সেখানেই যাব।
অর্জুন ডানাকে নিয়ে এগোচ্ছিল, সুন্দরী পাশে চলে এল, এক্সকিউজ মি। আপনারা কোথায় উঠেছেন?
ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউস।
আপনার নামটা জানতে পারি?
অর্জুন।