রসূল সর্বপ্রথম তাদের কাছেই দ্বীনের দাওয়াত দেবেন, যাঁরা তাঁর নিকটাত্মীয়, যাদের সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক, এজটাই স্বাভাবিক। নিজের পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের আগে দাওয়াত দেবেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে তাই এসব লোককে দাওয়াত দেন। চেনা পরিচিত লোকদের মধ্যে তাদেরকেই তিনি দাওয়াত দিয়েছেন, যাদের চেহারায় সরলতা এবং নমনীয়তার ছাপ দেখতে পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যাদের সম্পর্কে জানতেন যে, তারা তাঁকে সত্যবাদী, ন্যায়নীতিপরায়ণ ও সৎ মানুষ হিসাবে জ্ঞানে এবং শ্রদ্ধা করে তাঁদেরকেও।
আল্লাহর রসূলের দাওয়াতে তাদের কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা প্রিয় রসূলের সততা, সত্যবাদিতা ও মহানুভবতা সম্পর্কে কখনোই কোন প্রকার সন্দেহ করতেন না। ইসালামের ইতিহাসে এরা “সাবেকীন আউয়ালীন” নামে পরিচিত। এদের মধ্যে র্শীষ তালিকায় রয়েছেন রসূলের সহধর্মিনী উম্মুল মোমেনীন খাদিজা বিনতে খোয়াইলেদ, তাঁর মুক্ত করা ক্রীতদাস যায়েদ ইবনে সাবেত ইবনে শরাহবিল কালবি। তাঁর চাচাতো ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালেব, যিনি সে সময় তাঁর পরিবারে প্রতিপালিত হচ্ছিলেন এবং তাঁর ঘনিষ্ট সুহৃদ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) আজমাঈন। এরা সবাই প্রথম দিনেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) ইসলামে প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সর্বজনপ্রিয় নরম মেজায, উত্তম চরিত্র এবং উদার মনের মানুষ। চমৎকার ব্যবহারের কারণে সব সময় তাঁর কাছে মানুষ যাওয়া আসা করতো। এ সময় বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য লোকদের কাছে হযরত আবু বকর (রা) দ্বীনের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। তার চেষ্টায় হযরত ওসমান (রা), হযরত যোবায়ের (রা), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ, হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাসও, হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা) প্রমুখে ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা ছিলেন ইসলামের প্রথম সারিক সৈনিক।
প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে হযরত বেলাল (রা)ও ছিলেন একজন। তাঁর পরে আমীনে উম্মত হযরত আবু ওবায়দা, আমের ইবনে জাররাহ, আবু সালমা ইবনে আবদুল আছাদ,আরকাম ইবনে আবুল আরকাম,ওসমান ইবনে মাজউন, এবং তাঁর দুই ভাই, কোদামা ও আবদুল্লাহ এবং ওবায়দা ইবনে হারেস, মোত্তালেব ইবনে আবদুল মান্নাফ, সাঈদ ইবনে যায়েদ এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ ওমরের বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাম, খাব্বার ইবনে আরত, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এবং অন্য কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করেন। এরা সম্মিলিতভাবে কোরায়শ বংশের বিভিন্ন শাখার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। ইবনে হিশাম লিখেছেন, এদের সংখ্যা ছিলো চল্লিশের বেশী। এর মধ্যের কয়েকজনকেও “সাবেকীনে আউয়ালীনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, উল্লিখত ভাগ্যবানদের ইসলাম গ্রহণের পর দলে দলে লোক ইসলামের শীতল ছায়ায় অংশগ্রহণ
করেন। মক্কার সর্বত্র ইসলামের আলোচনা করতে থাকে এবং ইসলাম ব্যাপকতা লাভ করে।
এরা গোপনে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে ইসলাম শিক্ষা এবং পথ নির্দেশ দেয়ার জন্যে গোপনে গোপনে দেখা করতেন। কেননা তাবলীগের কাজ তখনো বিচ্ছিন্নভাবে এবং গোপনে চলছিলো। সূরা মোদাসসের-এর প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হওয়ার পর ঘন ঘন ওহী নাযিল হতে থাকে। এ সময়ে ছোট ছোট আয়াত নাযিল হচ্ছিলো। এসব আয়াত প্রায় একই ধরণের আকর্ষণীয় শব্দে শেষ হতো। এসব আয়াতে থাকতো চিত্তাকর্ষক গীতিধর্মিতা এবং কাব্যময়তা। পরিবেশে সাথে সেইসব আয়াত পুরোপুরি খাপ খেয়ে যেতো। এসব আয়াতে তাযকিয়ায়ে নফস বা আত্মার শুদ্ধি ও সৌন্দর্য এবং দুনিয়ার মায়াজালে জড়িয়ে যাওয়ার কুফল সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এছাড়া বেহেশেত ও দোযখের বিবরণ এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেন চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। এ সকল আয়াত এমন সব স্থান পরিভ্রমণ করিয়ে আনছিলো,যা কিছু প্রচলিত পরিবেশে সম্পর্ণ নতুন।