দ্বৈতবন মধ্যে পঞ্চ পাণ্ডুর নন্দন।
ফলমূলাহার জটা বাকল ভূষণ।।
একদিন কৃষ্ণা বসি যুধিষ্ঠির পাশে।
কহিতে লাগিল দুঃখ সকরুণ ভাষে।।
এ হেন নির্দ্দয় দুরাচার দুর্য্যোধন।
কপট করিয়া তোমা পাঠাইল বন।।
কিছুমাত্র তব দোষ নাহি তার স্থানে।
এ হেন দারুণ কর্ম্ম করিল কেমনে।।
কঠিন হৃদয় তার, লোহাতে গঠিল।
তিল মাত্র তার মনে দয়া না জন্মিল।।
তোমার এ গতি বনে দেখি নরপতি।
সহনে না যায়, মোর সন্তাপিত মতি।।
রতনে ভূষিত শয্যা, নিদ্রা না আইসে।
এখন শয়ন রাজা তীক্ষ্মধার কুশে।।
কস্তুরী চন্দনেতে লেপিত কলেবর।
এখন হইল ধনু ধূলায় ধূসর।।
মহারাজগণ যার বসিত চৌপাশে।
তপস্বী সহিত থাক তপস্বীর বেশে।।
লক্ষ লক্ষ দ্বিজ যার স্বর্ণপাত্রে ভুঞ্জে।
এবে ফলমূল ভক্ষ্য অরণ্যের মাঝে।।
এই সব ভ্রাতৃগণ ইন্দ্রের সমান।
ইহা সবা প্রতি নাহি কর অবধান।।
মলিন বদন ক্লিষ্ট দুঃখেতে দুর্ব্বল।
হেঁটমুখে সদা থাকে ভীম মহাবল।।
ইহা দেখি রাজা তব নাহি জন্মে দুখ।
সহনে না যায় মম, ভাসিতেছে বুক।।
ভীম সম পরাক্রমে নাহি ত্রিভুবনে।
ক্ষণমাত্রে সংহারিতে পারে কুরুগণে।।
সকলি ত্যজিল রাজা তোমার কারণ।
কিমতে এ সব দুঃখ দেখহ রাজন।।
এই যে অর্জ্জুন কার্ত্তবীর্য্যের সমান।
যাহার প্রতাতে সুরাসুর কম্পমান।।
পৃথিবীতে বসে যত রাজরাজেশ্বর।
রাজসূয়ে খাটাইল করিয়া কিঙ্কর।।
মলিন বসন রহে মলিন বদনে।
ইহা দেখি রাজা তব দুঃখ নাহি মনে।।
সুকুমার মাদ্রীসুত দুঃখী অধোমুখ।
ইহা দেখি রাজা তব নাহি জন্মে দুখ।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন স্বসা আমি দ্রুপদ নন্দিনী।
তুমি হেন মহারাজ, আমি হই রাণী।।
মম দুঃখ দেখি রাজা তাপ না জন্ময়।
ক্রোধ নাহি তব মনে, জানিনু নিশ্চয়।।
ক্ষত্র হয়ে ক্রোধ নাহি, নাহি হেন জন।
তোমাতে নাহিক রাজা ক্ষত্রিয় লক্ষণ।।
সময়েতে যেই বীর তেজ নাহি করে।
হীন জন বলি কহে সকলে তাহারে।।
এই অর্থে পূর্ব্বে রাজা আছয়ে সম্বাদ।
দৈত্যপতি বলি প্রতি বলিছে প্রহ্লাদ।।
করযোড়ে বলি জিজ্ঞাসিল পিতামহে।
ক্ষমা তেজ উভয়ের ভাল কারে কহে।।
সর্ব্বধর্ম্ম অভিজ্ঞ প্রহ্লাদ মহামতি।
কহিতে লাগিল শাস্ত্রমত পৌত্র প্রতি।।
সদা ক্ষম না হইবে, সদা তেজোবন্ত।
সদা ক্ষমা করে, তার দুঃখে নাহি অন্ত।।
শত্রুর আছুক কার্য্য মিত্র নাহি মানে।
অবজ্ঞা করিয়া কেহ, বাক্য নাহি শুনে।।
কার্য্যে অবহেলা করে, নাহি কিছু ভয়।
যথা স্থানে যাহা করে, ক্রমে হয় লয়।।
পুত্র কন্যা আর যত আত্ম পরিজন।
অতি ক্ষমাশীল দেখি করয়ে হেলন।।
অতি ক্ষমাশীল দেখি ভার্য্যা নাহি মানে।
সে কারণে সদা ক্ষমা ত্যজে বুধগণে।।
দোষমত দণ্ড দিবে শাস্ত্র অনুসারে।
মহাক্লেশ পায়, যেই সদা ক্ষমা করে।।
ক্ষমার কারণ তবে শুন নরপতি।
একবার করে ক্ষমা মূর্খ জন প্রতি।।
অবোধ অজ্ঞানে ক্ষমা করি একবার।
দুইবার দোষ কৈলে দণ্ড দিবে তার।।
দুইবার ক্ষমা কেহ না করে রাজন।
কত দোষ তোমার না কৈল দুর্য্যোধন।।
সে কারণে ক্ষমা রাজা না কর তাহারে।
তেজকালে কর তেজ, ক্ষমা ফেল দূরে।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীদাস কহে, ইহা বিনা নাহি আন।।