দ্বারকা নগরে চলিলেন যদুপতি।
যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসেন ভ্রাতৃগণ প্রতি।।
দ্বাদশ বৎসর আমি নিবসিব বনে।
যোগ্যবান দেখ যথা বঞ্চি হৃষ্টমনে।।
বহু মৃগ পক্ষী থাকে ফল পুষ্পরাশি।
সজল সুস্থল যথা আছে সিদ্ধ ঋষি।।
অর্জ্জুন বলেন, সব তোমাতে গোচর।
মুনিগণ হৈতে তুমি জ্ঞাত চরাচর।।
দ্বৈতনামে মহাবন অতি মনোরম।
সাধু সিদ্ধ ঋষি আদি মুনির আশ্রম।।
তথায় চলহ সবে যদি লয় মন।
এত শুনি আজ্ঞা দেন ধর্ম্মের নন্দন।।
নিজ নিজ যানারোহে চলেন পাণ্ডব।
সঙ্গেতে চলিল যত দ্বিজ মুনি সব।।
দ্বৈত কাননের গুণ না যায় বর্ণন।
গন্ধর্ব্ব চারণ থাকে মুনি অগণন।।
তমাল কদম্ব তাল শিরীষ পিয়াল।
অর্জ্জুন খর্জ্জুর জম্বূ আম্র সুরসাল।।
পারিজাত বকুল চম্পক কুরুবক।
নানা জাতি পশু হস্তিগণ মরূবক।।
ময়ূর কোকিল আদি পক্ষী সদা ভ্রমে।
ষড়ঋতুযুক্ত বন লোক মনোরমে।।
দেখিয়া উল্লাসযুক্ত পাণ্ডবের মন।
আশ্রম করিল তথা সব মুনিগণ।।
সেই বনে যত ছিল তাপস ব্রাহ্মণ।
যুধিষ্ঠিরে আসি সবে করে সম্ভাষণ।।
হেনকালে আসে মার্কণ্ডেয় মুনিবর।
জমদগ্নি সম তেজ দিব্য জটাধর।।
প্রণমিয়া যুধিষ্ঠির দিলেন আসন।
যুধিষ্ঠিরে দেখিয়া হাসিল তপোধন।।
দেখিয়া বিস্ময়চিত্ত কহেন ভূপতি।
কি হেতু হাসিলা, কহ মুনি মহামতি।।
সব ঋষিগণ দুঃখী দেখিয়া আমারে।
তোমার কি হেতু হাস্য, না বুঝি অন্তরে।।
মৃদু হাস্য করি মুনি বলেন তখন।
যে হেতু হাস্য, শুনহ রাজন।।
যেমতি রাজন তুমি ভার্য্যার সংহতি।
সর্ব্বভোগ ত্যজি বনে করিলে বসতি।।
এইরূপে পূর্ব্বে রাম রঘুর নন্দন।
সহিত জানকী আর অনুজ লক্ষ্মণ।।
পিতৃসত্য পালিবারে করি বনবাস।
অবহেলে দশস্কন্ধে করিলেন নাশ।।
অপ্রমেয় বল রাম অপ্রমেয় গুণ।
সত্যে বিচলিত নাহি হন কদাচন।।
তিন লোক জিনিবারে ইঙ্গিতেতে পারে।
সত্যের কারণ শিরে জটাভার ধরে।।
তাদৃশ দেখি যে রাজা তুমি সত্যবাদী।
মহাবল ধর্ম্মবন্ত সর্ব্বগুণনিধি।।
তথাপি বনেতে বাস সত্যের কারণ।
বিধির নিয়ম নাহি খণ্ডে মহাজন।।
যখন যে ধাতা আনি করয়ে সংযোগ।
ধর্ম্ম বুঝি সাধুজন তাহা করে ভোগ।।
বলে শক্ত হলে, সত্য নাহিক ত্যজিবে।
বিধির নির্ব্বন্ধ কর্ম্ম কভু না লঙ্ঘিবে।।
বড় বড় মত্ত হস্তী পর্ব্বত আকার।
পরাক্রমে দলিবারে পারয়ে সংসার।।
তথাপিহ পশু হয়ে বিধিবশ থাকে।
কিমতে খণ্ডিতে পারে তোমা হেন লোকে।।
ধন্য মহারাজ তুমি পাণ্ডুর নন্দন।
তোমার গুনেতে পূর্ণ হৈল ত্রিভুবন।।
এত বলি মুনিরাজ আশিস্ করিয়া।
আপন আশ্রম প্রতি গেলেন চলিয়া।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাশী কহে, শুনিলে তরয়ে ভাববারি।।