২৪তম অধ্যায়
ধৃতরাষ্ট্রের খেদ – পুনঃ যুদ্ধবৃত্তান্ত শ্রবণেচ্ছা
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে সঞ্জয়! সংগ্রাম স্থলস্থিত বৃকোদর সমবেত উক্ত ভূপতিগণ দেবতাদিগের সৈন্যগণকেও ব্যথিত করিতে পারেন। পুরুষ অদৃষ্ট সংযুক্ত হইয়া জন্ম পরিগ্রহ করিয়া থাকে, সুতরাং তাহার অভিলষিত বিষয় সকল অন্যপ্রকার দৃষ্ট হয়। দেখ পাণ্ডুতনয় যুধিষ্ঠির দীর্ঘ কাল অরণ্যে বাস ও লোকের অজ্ঞাত বিচরণ করিয়া এক্ষণে সংগ্রামের নিমিত্ত এই মহতী সেনা সংগ্রহ করিয়াছে; আমার পুত্রের দুরদৃষ্ট ব্যতীত ইহার আর কারণ কি? নিশ্চয় বোধ হইতেছে মন্যুষ্য অদৃষ্ট যুক্ত হইয়াই জন্ম গ্রহণ করে, সুতরাং তাহার অদৃষ্টের অধীন হইয়া চলিতে হয়; তন্নিমিত্তই সে আপনার ইচ্ছানুসারে সমুদায় কার্য্য সম্পন্ন করিতে পারে না। যুধিষ্ঠির দূতব্যসন প্রভাবে যৎপরোনাস্তি ক্লেশিত হইয়াছিল, এক্ষণে আপনার অদৃষ্টবলে সহায় সম্পন্ন হইয়াছে। কেকয়, কৌশিক, কোশল, চেদি ও বঙ্গদেশীয়গণ এক্ষণে আমাদের পক্ষ আশ্রয় করিয়াছে। দুরাত্মা দুৰ্য্যোধন পূর্ব্বে আমাকে কহিয়াছিল যে, পৃথিবীর অধিকাংশই আমার অধীন; যুধিষ্ঠিরের অতি অল্প মাত্র। কিন্তু দুরদৃষ্টের কি অনির্ব্বচনীয় প্রভাব মহাবীর দ্রোণ চৰ্য্য আমাদের অসংখ্য সৈন্য কর্ত্তৃক সুরক্ষিত হইয়াও ধৃষ্টদ্যুম্নের হস্তে নিহত হইলেন। সতত যুদ্ধাকাঙ্ক্ষী, সৰ্বাস্ত্র পারগ মহাবীর দ্রোণ ভূপতিগণের মধ্যে কিরূপে মৃত্যু মুখে পতিত হইলেন? হে সঞ্জয়! ভীষ্ম ও দ্রোণের নিধন বার্তা শ্রবণে আমার মহৎ কৃচ্ছ্র ও মোহ সমুপস্থিত হইয়াছে; ক্ষণ মাত্ৰও জীবিত থাকিতে বাসনা নাই। পূর্ব্বে মহামতি বিদুর আমাকে পুত্রলোলুপ দেখিয়া যাহা কহিয়াছিলেন, দুরাত্মা দুর্য্যোধনের দুৰ্ম্মন্ত্রণা প্রভাবে তৎসমুদায় ঘটিয়াছে। এক্ষণে যদি দুৰ্য্যোধনকে পরিত্যাগ করিয়া অবশিষ্ট পুত্রগণকে রক্ষা করি তাহা হইলে কিছুমাত্র নৃশংস ব্যবহার হয় না এবং সকলকেও প্রাণ পরিত্যাগ করিতে হয় না। যে ভুপতি ধৰ্ম পরিত্যাগ করিয়া অর্থপর হন, তাঁহাকে অবশ্যই ইহলোকে হীন ও ক্ষুদ্রভাবাপন্ন হইতে হয়। হে সঞ্জয়! যখন বীরবরাগ্রগণ্য দ্রোণাচাৰ্য্য নিহত হইয়াছেন, তখন এই হতোৎসাহ রাজ্যের আর নিস্তার নাই। আমরা যে পুরুষোত্তমদ্বয়ের প্রভাবে জীবন ধারণ করিতেছিলাম, সেই ধুরন্ধরদ্বয় যখন নিহত হইয়াছেন তখন আর কি রূপে আমাদের পরিত্রাণ হইবে?
যাহা হউক, এক্ষণে যে রূপে যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা সবিশেষ কীৰ্ত্তন কর। কোন্ কোন্ বীর যুদ্ধ করিয়াছিল? কে কে আক্ৰমণ করিয়াছিল? আর কোন্ কোন্ ক্ষুদ্রাশয়েরা বা পলায়ন করিয়াছিল? হে সঞ্জয়! মহাবীর ধনঞ্জয় যাহা করিয়া ছিলেন, তৎসমুদায় কীৰ্ত্তন কর। ঐ মহাবীর ও বৃকোদরই আমার মহাভয়ের কারণ। পাণ্ডবগণ সমরে প্রবৃত্ত হইলে আমাদের সৈন্যগণ কিরূপে দারুণ সংগ্রাম করিয়াছিল? পাণ্ডবেরা সংগ্রাম আরম্ভ করিলে তোমাদের মন কি রূপ হইয়াছিল? এবং আমাদের পক্ষীয় কোন্ কোন্ বীর পাণ্ডব সৈন্যগণকে নিবারণ করিয়াছিল?”