২২তম অধ্যায়
ভীমার্জ্জুনের যুদ্ধসজ্জা
সঞ্জয় কহিলেন, “অনন্তর যুধিষ্ঠির প্রভৃতি কুরুকুলতিলক পাণ্ডবগণ আপনাদিগের সেনাসমূহের ভীষ্ম-সেনার প্রতিপক্ষে ব্যূহ করিয়া ধর্ম্মযুদ্ধদ্বারা স্বৰ্গলাভের কামনা করিতে লাগিলেন। ধনঞ্জয় সকলের মধ্যস্থিত শিখণ্ডীর সেনাগণকে, ভীমসেন অগ্রচারী [অগ্রগামী] ধৃষ্টদ্যুম্নকে এবং ইন্দ্রের ন্যায় ধনুৰ্দ্ধর সাত্বতপ্রধান যুযুধান দক্ষিণ [দক্ষিণদিকের—ডাইনের] সেনাগণকে রক্ষা করিতে লাগিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির হস্তিগণের মধ্যে ইন্দ্ররথসদৃশ যুদ্ধোপকরণসম্পন্ন, হেমরত্নচিত্রিত, সুবৰ্ণময়ভাণ্ড [ক্ষুদ্র স্বর্ণকুম্ভ—সোণার কলসযুক্ত] রথে আরোহণ করিলেন; তাঁহার মস্তকে সমুন্নত দন্তুনির্ম্মিত শলাকাশালী [শলাকাযুক্ত] শ্বেতবর্ণ আতপত্ৰ শোভা পাইতে লাগিল। মহর্ষিগণ স্তুতিপাঠ্যপূর্ব্বক তাঁহাকে প্ৰদক্ষিণ, পুরোহিতসকল শত্ৰুবধ ঘোষণা এবং ব্ৰহ্মার্ষি ও সিদ্ধগণ জপ ও মহৌষধিদ্বারা স্বস্ত্যয়ন করিয়া স্তব করিতে লাগিলেন। মহাত্মা যুধিষ্ঠির সহস্ৰ গো, পুষ্প, ফল ও নিষ্কসমূহ ব্ৰাহ্মণসাৎ করিয়া ইন্দ্রের ন্যায় সমরক্ষেত্রে প্রস্থান করিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন গাণ্ডীব ও বাণ হস্তে করিয়া সূৰ্য্যের ন্যায় উজ্জ্বল, অগ্নির ন্যায় শিখাশালী, শত কিঙ্কিণীশোভিত সুবর্ণখচিত, শ্বেততুরঙ্গযুক্ত, সুছত্র, কপিধ্বজ ও কেশবাধিষ্ঠিত রথে আরোহণ করিলেন। যাঁহার সমান ধনুৰ্দ্ধর এই পৃথিবীতে হয় নাই ও হইবেও না, যে মহাভুজ অস্ত্রশস্ত্ৰ পরিত্যক্ত ভুজযুগলেও নর ও নাগগণকে নিধন করেন, সেই অর্জ্জুন আপনার পুত্রের সেনাগণকে উচ্ছিন্ন [উৎসন্ন-বিনাশ] করিবার নিমিত্ত রৌদ্র [ভীষণ] রূপ ধারণ করিলেন। যিনি ক্রীড়ায় মৃগরাজের ন্যায়, বিক্রমে দেবরাজের ন্যায় ও দৰ্পে রাবণরাজের ন্যায়, সেই দুৰ্জয় ভীমসেন নকুল ও সহদেবের সহিত বীর রথের [মহাবীর যোদ্ধার] পরিরক্ষক হইলেন; আপনার যোদ্ধৃগণ তাঁহাকে সেনাগ্রভাগে আগমন করিতে দেখিয়া ভয়ে ভগ্নোৎসাহ হইয়া পঙ্কনিমগ্ন হস্তীর ন্যায় ব্যথিত হইতে লাগিল।
“অনস্তর ভগবান জনাৰ্দন সেনামধ্যে অবস্থিত রণদুর্ম্মদ রাজপুত্ৰ ধনঞ্জয়কে কহিলেন, “হে অর্জ্জুন! যিনি সেনামধ্যে অবস্থান করিয়া রোষাবেগে সকলকে উত্তাপিত ও সিংহের ন্যায় আমাদের সেনাগণকে আকৃষ্ট করিতেছেন, ইনিই সেই ভীষ্ম, ইনি ত্রিশত অশ্বমেধ আহরণ [অনুষ্ঠান] করিয়াছেন। যেমন জলদজাল আদিত্যমণ্ডল আচ্ছাদিত করিয়া রাখে, সেইরূপ এই সম্মুখবর্ত্তী সেনাগণ তাঁহাকে আবৃত করিয়া রক্ষা করিতেছে; ইহাদিগকে বিনষ্ট করিয়া ভীষ্মের সহিত যুদ্ধ কর।’ ”