২২তম অধ্যায়
অৰ্জ্জুনের পুনঃ যুধিষ্ঠিরানুযোগ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ঐ সময় অর্জ্জুন জ্যেষ্ঠভ্রাতা যুধিষ্ঠিরকে নিতান্ত বিষন্ন দেখিয়া পুনরায় কহিলেন, “মহারাজ! আপনি ক্ষাত্রধর্ম্মানুসারে শত্ৰুজয় ও নিতান্ত দুর্লভ রাজ্য অধিকার করিয়া এক্ষণে কি নিমিত্ত সন্তপ্ত হইতেছেন? ক্ষত্রিয়গণের সমরমৃত্যুই শ্রেয়স্কর; উহা বিবিধ যজ্ঞানুষ্ঠান অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট। আর ব্রাহ্মণের সন্ন্যাস ও তপস্যা এবং ক্ষত্রিয়ের সংগ্রাম-মৃত্যুই প্রধানধৰ্ম্ম বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে। ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্ম শস্ত্রনিষ্ঠ ও অতি ভয়ঙ্কর। সংগ্রামকালে শত্রুদ্বারা মৃত্যুলাভ হওয়াই ক্ষত্রিয়গণের শ্রেয়ঃ। ক্ষত্রিয়জাতি ব্রহ্মা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, সুতরাং ব্রাহ্মণও ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্ম পরিগ্রহ করিলে এই জীবলোকে অতিশয় সম্মানাস্পদ হইয়া থাকেন। সন্ন্যাস, সমাধি, তপ ও পরধনে জীবিকানিৰ্ব্বাহ ক্ষত্রিয়ের পক্ষে বিধি নহে। আপনি সৰ্ব্বধৰ্ম্মজ্ঞ, ধৰ্ম্মপরায়ণ ও পূৰ্ব্বাপরদর্শী[শাস্ত্রীয় ও লৌকিক উভয় বিষয়ে অভিজ্ঞ]; অতএব এক্ষণে শোকসন্তাপ পরিত্যাগপূর্ব্বক ক্রিয়াকলাপের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হওয়াই আপনার কর্ত্তব্য। ক্ষত্রিয়ের হৃদয় বজ্রের ন্যায় অতি কঠিন; উহাতে শোকসন্তাপ প্রবিষ্ট হওয়া নিতান্ত অনুচিত। আপনি ক্ষাত্রধর্ম্মানুসারে শত্রুজয় ও নিষ্কণ্টক রাজ্য অধিকার করিয়াছেন, অতঃপর দান ও যজ্ঞানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হউন। দেবরাজ ইন্দ্র মহর্ষি কশ্যপের পুত্র হইয়া স্বীয় কাৰ্য্যসাধনের নিমিত্ত ক্ষত্রিয়বৃত্তি অবলম্বনপূৰ্ব্বক নবনবতিবার পাপস্বভাব জ্ঞাতিবর্গের বিনাশসাধন করিয়াছিলেন। তাঁহার এই কাৰ্য্যও পূজ্য ও প্রশংসনীয়, সন্দেহ নাই। তিনি ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মপ্রভাবেই দেবগণের ইন্দ্ৰত্ব লাভ করিয়াছেন। এক্ষণে আপনি শোকতাপ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক ইন্দ্রের ন্যায় প্রভূত দক্ষিণাদানসহকারে যজ্ঞানুষ্ঠান করুন। যাঁহারা ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মানুসারে সমরমৃত্যু লাভ করিয়াছেন, তাহাদিগের উৎকৃষ্ট গতি লাভ হইয়াছে; সুতরাং সেই মহাত্মাদিগের নিমিত্ত শোক প্রকাশ করা নিতান্ত অকৰ্ত্তব্য। যাহা ঘটিয়াছে, উহা অবশ্যম্ভাবী, অদৃষ্টকে অতিক্রম করা কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে।”