২১তম অধ্যায়
পাণ্ডবপক্ষে সঞ্জয়ের জয়াশা
সঞ্জয় কহিলেন, “হে রাজন! দুৰ্য্যোধনের বৃহতী সেনা সমুদ্যত হইয়াছে এবং ভীষ্ম অভেদ্য ব্যূহ প্রস্তুত করিয়াছেন দেখিয়া রাজা যুধিষ্ঠির বিষণ্ন ও বিবৰ্ণ হইয়া অর্জ্জুনকে কহিলেন, “ধনঞ্জয়! পিতামহ ভীষ্ম যখন ধার্ত্তরাষ্ট্রগণের যোদ্ধা হইয়াছেন, তখন আমরা কি তাঁহাদিগের সহিত যুদ্ধ করিতে সমর্থ হইব? মহাতেজাঃ ভীষ্মের এই শাস্ত্রানুসারে বিরচিত অক্ষোভ্য অভেদ্য ব্যূহ অবলোকন করিয়া আমি সসৈন্য সংশয়াপন্ন হইয়াছি, এক্ষণে এই মহাব্যূহ হইতে কি প্রকারে পরিত্রাণ ও জয়লাভ করিব?”
“হে রাজন! ধনঞ্জয় রাজা যুধিষ্ঠিরকে আপনার অনীকিনী অবলোকনে দুর্ম্মনায়মান দেখিয়া কহিলেন, “মহারাজ! যে কারণে অল্পসংখ্যক লোকেও সমধিক প্রজ্ঞা, শৌৰ্য্য ও গুণশালী বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে পরাজয় করিতে পারে, তাহা শ্রবণ করুন। দেবাসুরযুদ্ধে পিতামহ ব্ৰহ্মা মহেন্দ্ৰপ্ৰভৃতি দেবগণকে কহিয়াছিলেন যে, জিগীষুগণ সত্য, আনৃশংস্য, উদ্যম ও একমাত্র ধর্ম্মদ্বারা যে প্রকার জয়লাভ করিয়া থাকেন, বলবীৰ্য্যদ্বারা সে প্রকার হয় না; মহর্ষি নারদ, ভীষ্ম ও দ্রোণও ইহা অবগত আছেন; অতএব ধর্ম্মাধর্ম্ম ও লোভের বিষয় অবগত এবং নিরহঙ্কার হইয়া উদ্যমসহকারে যুদ্ধ করুন; যে স্থানে ধর্ম্ম, সেই স্থানেই জয়। নারদ কহিয়াছেন যে, যে স্থানে কৃষ্ণ, সেই স্থানেই জয়। অতএব আমাদিগের যে জয় হইবে, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। হে রাজন! যেমন অন্যান্য গুণগ্রাম বাসুদেবের বশংবদ, জয়ও তদ্রূপ; ইনি যে স্থানে গমন করেন, জয়ও সেই স্থানে ইহার অনুগমন করিয়া থাকে; অতএব যে স্থানে অনন্ততেজঃ [অসীম শক্তিশালী], শক্রগণের সমীপেও অব্যথিতচিত্ত [উদ্বেগশূন্য] সনাতন পুরুষ কৃষ্ণ, সেই স্থানেই জয়। এই অপ্রতিহতসায়ক [অমোঘ শর-যাঁহার বাণ অব্যৰ্থ] জনাৰ্দন পূর্ব্বে হরিরূপ পরিগ্রহপূর্ব্বক দেবাসুরগণের সম্মুখে আবির্ভূত হইয়া, কে জয়লাভ করিবে জিজ্ঞাসা করিলে, দেবগণ কহিলেন, আমরা কৃষ্ণের অনুগত, আমরাই জয়ী হইব; বস্তুতঃ তাঁহারাই জয়লাভ করিলেন। শক্ৰাদি সুরগণ তাঁহার প্রসাদে ত্ৰৈলোক্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। সেই কৃষ্ণ যখন কহিতেছেন, আপনার জয়লাভ হইবে, তখন আপনার আর কোন চিন্তা বা দুঃখের কারণ দেখিতেছি না।’ ”