দৈবের নির্ব্বন্ধ রাবণ দেখিয়া বিপাক।
ধূম্রাক্ষ বলিয়া রাবণ ঘন পাড়ে ডাক।।
আজ্ঞামাত্র আইল ধূম্রাক্ষ মহাবীর।
রাজার চরণে আসি নোঙাইল শির।।
রাবণ বলে, তুমি হে প্রধান সেনাপতি।
আজিকার যুদ্ধে তুমি কুলাবে আরতি।।
রাজ-ব্যবাহারে তার বাড়ায় সম্মান।
যুঝিবারে অনুমতি দিল গুয়া পান।।
রাজ-আজ্ঞা মাত্র বীর রথে গিয়া চড়ে।
হস্তী ঘোড়া ঠাট সৈন্য চলে মুড়ে মুড়ে।।
হস্তী ঘোড়া চলে আর অগণন ঠাট।
ধূলা উড়াইয়া চলে নাহি দেখি বাট।।
লঙ্কাতে ধূম্রাক্ষ বীর পরম সুজ্ঞানী।
যাত্রাকালে অমঙ্গল দেখিল আপনি।।
আ-দর চুলে ভিক্ষা মাগিছে যোগিনী।
রথধ্বজে উড়ি বৈসে শকুনি গৃধিনী।।
যাত্রাকালে অমঙ্গল দেখিছে অপার।
কিছুই না মানে বীর বলে মার মার।।
দুইদলে মিশামিশি দৃঢ় বাজে রণ।
নানা অস্ত্র গাছ পাথর করে বরিষণ।।
রুষিয়া ধূম্রাক্ষ বলে কোথায় তপস্বী।
উখাড়িয়া মরে কেন এত দূরে আসি।।
ছাড়িয়া সীতার আশা ফিরি যাহ ঘর।
মনুষ্য হইয়া বেটা লঙ্কার ভিতর।।
কপিগণ বলে, বেটা চক্ষু থাকতে অন্ধ।
মনুষ্য কি সাগর করিতে পারে বন্ধ।।
স্বয়ং বিষ্ণু রঘুনাথ বান্ধিলেন সেতু।
অবতার রাক্ষসের বংশনাথ হেতু।।
গড়াগড়ি যাবে রাবণের দশ মুণ্ড।
বিভীষণের উপরে ধরাব ছত্র দণ্ড।।
কূপিল ধূম্রাক্ষ বীর জ্বলন্ত আগুনি।
মুষল লইয়া এক বানরগণে হানি।।
মুষলের ঘায়ে কারো ভাঙ্গে মাথার খুলি।
কারো মুণ্ড কাটি ভূমে পাড়ে মহাবলী।।
খাণ্ডাখান কাহার মস্তকে তুলে হানে।
ভঙ্গ দিল বানর অস্থির হয়ে রণে।।
হনুমান দেখিল বানরগণ ভাগে।
দাণ্ডাইল হনুমান ধূম্রাক্ষের আগে।।
হনুমান বলে, বেটা কি নাম তোমার।
আমার সহিত যুদ্ধ কর একবার।।
রাক্ষস বলিল, যদি তোরে আমি পাই।
অন্যেরে কি প্রয়োজন তোর রক্ত খাই।।
এত যদি দুইজনে হৈল গালাগালি।
দুই বীরে যুদ্ধ করে দোঁহে মহাবলী।।
হনুমান আনিল পাথর দুইখান।
রথের উপরে ফেলি ডাকে হান হান।।
রথ ঘোড়া সারথি করিল চূরমার।
রথ এড়ি ধূম্রাক্ষ ধাইল আরবার।।
ধূম্রাক্ষের হাতে ছিল এক মহাগদা।
তার আশে পাশে বাজে জয়ঘন্টা সদা।।
দেব দৈত্য গন্ধর্ব্বগণের ভয় লাগে।
গদা হাতে করি গেল হনুমান-আগে।।
দোহাতিয়া বাড়ি মারে হনুমানের বুকে।
হনুমানের বুকে যেন বজ্র হেন ঠেকে।।
বুকেতে ঠেকিয়া গদা হৈল খান খান।
কোপ করি পাসরে আপনি হনুমান।।
হনুমান বলে, গদা গেল রসাতল।
এখন আইস আমি বুঝি তোর বল।।
এক বজ্র-চাপড় মারিল তার শিরে।
কাতর হইয়া পড়ে ভূমির উপরে।।
হনুমান মহাবীর সংগ্রামের শূর।
লাথি মারি ধূম্রাক্ষের কায় করে চূর।।
পড়িল ধূম্রাক্ষ বীর সমরে দুর্জ্জয়।
সকল বানর ডাকি করে জয় জয়।।
ধূম্রাক্ষের সেনা ছিল দুই অক্ষৌহিণী।
পলাইল সকলে লইয়া নিজ প্রাণী।।
ভগ্নদূত কহে গিয়া রাবণ গোচর।
ধূম্রাক্ষ পড়িল বার্ত্তা শুন লঙ্কেশ্বর।।