২০তম অধ্যায়
দেবস্থানঋষির অর্জ্জুনবাক্য সমর্থন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! যুধিষ্ঠিরের বাক্যাবসান হইলে পর মহাতপস্বী সদ্বক্তা দেবস্থান তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক যুক্তিযুক্তবাক্যে কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! অৰ্জ্জুন ধনকে যে সৰ্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর বলিয়া নির্দেশ করিয়াছে, আমি তোমার সমক্ষে তাহা সপ্রমাণ করিব; তুমি একাগ্রচিত্ত হইয়া শ্রবণ কর। তুমি ধৰ্ম্মপথ অবলম্বনপূৰ্ব্বক সমুদয় পৃথিবী পরাজিত করিয়াছ, অতএব অকারণে তাহা পরিত্যাগ করিতে বাসনা করা তোমার কৰ্ত্তব্য নহে। লোকমধ্যে যে চারি আশ্রম নির্দিষ্ট আছে, তৎসমুদয় ক্রমে ক্রমে অবলম্বন করাই তোমার কর্ত্তব্য। অতএব এক্ষণে তুমি প্রভূতদক্ষিণাসম্পন্ন যজ্ঞের অনুষ্ঠান কর। ঋষিগণ বেদ-অধ্যয়ন, জ্ঞানোপার্জ্জন, বিবিধ কৰ্ম্মানুষ্ঠান ও তপস্যা করিয়া থাকেন। বৈশম্পায়ন বলেন, ধন্যজ্ঞা করিয়া যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান করা অপেক্ষা উহা না করাই শ্রেয়। যাচ্ঞা করা নিতান্ত দোষাবহ। যেসকল নির্ধন ব্যক্তি যজ্ঞাদির নিমিত্ত অতিকষ্টে ধন ও বিবিধ দ্রব্যসম্ভার সংগ্রহপূর্ব্বক পাত্রসাৎ না করিয়া অপাত্রে সমর্পণ করে, তাহারা আত্মাকে ব্রহ্মহত্যাদোষে দূষিত করিয়া থাকে। পাত্র, অপাত্র বিবেচনা দান করাও নিতান্ত সহজ ব্যাপার নহে।
“যাহা হউক, ভগবান বিধাতা যজ্ঞানুষ্ঠানের নিমিত্তই অর্থের সৃষ্টি করিয়াছেন এবং পুরুষকে উহার রক্ষকরূপে নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন, অতএব যজ্ঞাদিতে সমস্ত ধন ব্যয় করিলেই অভীষ্টসিদ্ধি হয়। মহাতেজস্বী দেবরাজ ইন্দ্র ভূরিদক্ষিণ বিবিধ যজ্ঞানুষ্ঠানের প্রভাবেই সমস্ত দেবতাকে অতিক্রম ও ইন্দ্রত্ব লাভ করিয়াছেন। কৃত্তিবাসাঃ মহাদেব সৰ্ব্বযজ্ঞে আপনাকে আহুতি প্রদানপূর্ব্বক বিশ্বমধ্যে মহীয়সী কীৰ্ত্তি ও দেবদেবত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন। ইন্দ্র অপেক্ষা ধনসম্পত্তিশালী মহীপতি মরুত্ত সুবর্ণময় যজ্ঞীয় পাত্ৰসকল নির্ম্মাণ করাইয়া যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। ঐ যজ্ঞে লক্ষ্মী স্বয়ং আগমন করেন। মহারাজ হরিশ্চন্দ্র যজ্ঞানুষ্ঠানপূর্ব্বক শোকতাপশূন্য ও পুণ্যশালী হইয়াছিলেন। উঁহার সম্পত্তিও ইন্দ্র অপেক্ষা অধিক ছিল। অতএব যজ্ঞেই সমুদয় ধন ব্যয় করা কৰ্ত্তব্য।”