১ম অধ্যায়
সভক্রিয়াপর্ব্বাধ্যায়-ময়ের সৌজন্য
নারায়ণ, নরোত্তম নর, সরস্বতী দেবী এবং বেদব্যাসকে প্ৰণাম করিয়া জয় উচ্চারণ করবে।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর ময়দানব কৃতাঞ্জলি হইয়া বাসুদেবের সন্নিধানে অর্জ্জুনের বারংবার সৎকার ও পূজা করিয়া মধুর-বাক্যে কহিতে লাগিল, “হে কৌন্তেয়! আপনি ক্রোধান্বিত কৃষ্ণ এবং দহনোন্মুখ হুতাশন হইতে আমাকে পরিত্রাণ করিয়াছেন; অতএব আজ্ঞা করুন, আপনার কি প্রত্যুপকার করিব?” অর্জ্জুন কহিলেন, “হে মহাসুর! তোমার সমস্ত প্রত্যুপকার করাই হইয়াছে; তোমার মঙ্গল হউক, এক্ষণে স্বস্থানে প্ৰস্থান কর। তুমি আমার প্রতি সতত সন্তুষ্ট থাকিও, আমিও তোমার প্রতি সম্যক প্রীত রহিলাম।”
ময় কহিল, “হে বিভো! আপনি স্বীয় মহত্ত্বানুরূপ বাক্যই প্রয়োগ করিলেন, কিন্তু আমার একান্ত ইচ্ছা যে, প্রীতিপূর্ব্বক আপনার কিঞ্চিৎ উপকার করি। আমি দানবকুলের বিশ্বকর্ম্মা; কেবল আপনার গুণগ্রামের নিতান্ত বশীভূত হইয়া কাৰ্য্য করিতে উদ্যত হইয়াছি।” অর্জ্জুন কহিলেন, “হে কৃতজ্ঞ। তুমি আসন্নমৃত্যু হইতে রক্ষা পাইয়াছ বলিয়া আমার প্রত্যুপকার করিতে ইচ্ছা করিতেছ, এই নিমিত্ত তোমা দ্বারা কোন কর্ম্ম সম্পন্ন করিয়া লইতে আমার ইচ্ছা নাই; কিন্তু তোমার অভিলাষ যে ব্যর্থ হয়, ইহাও আমার অভিপ্রেত নহে; অতএব তুমি কৃষ্ণের কোন কর্ম্ম কর, তাহা হইলেই আমার প্রত্যুপকার করা হইবে।”
ময়দানব দ্বারা সভাগৃহ নির্ম্মাণ-প্ৰস্তাব
তখন ময় আদেশলিপ্সু হইয়া কৃষ্ণকে অনুরোধ করিল। কৃষ্ণ তাহার আগ্রহাতিশয় সন্দর্শনে আদেষ্টব্য বিষয়ের নিমিত্ত ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “হে শিল্পকর্ম্মবিশারদ! যদি তুমি নিতান্তই আমার প্রিয়কাৰ্য্যানুষ্ঠানে মানস করিয়াছ, তবে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের এরূপ এক সভা নির্ম্মাণ করা যে, মনুষ্যগণ তাহাতে উপবেশনপূর্ব্বক সম্যক নিরীক্ষণ করিয়াও যেন তাহার অনুকরণ করিতে না পারে। ঐ সভাতে যেন দিব্য, মানুষ ও আসুর অভিপ্ৰায়-সকল স্পষ্টররূপে লক্ষিত হয়।”
ময়দানব কৃষ্ণের অনুজ্ঞালাভে পরমহ্লাদিত হইয়া মহারাজ যুধিষ্ঠিরের নিমিত্ত বিমানসদৃশ পরমসুন্দর সভা নির্ম্মাণ করিতে মনস্থ করিল। এদিকে কৃষ্ণ ও অর্জ্জুন রাজা যুধিষ্ঠিরের নিকট গমনপূর্ব্বক তাহাকে সমস্ত বৃত্তান্ত বিজ্ঞাপন করিয়া ময়দানবকে লইয়া দেখাইলেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির তাহাকে যথাযোগ্য সম্মান করিলেন; ময়ও তাহার সমুচিত সৎকার ও তদ্দত্ত পূজা গ্ৰহণ করিয়া ক্ষণকাল বিশ্রামের পর পাগুনন্দন-সমীপে দানবদিগের বিচিত্র চরিত্ৰসকল বর্ণনা করিতে আরম্ভ করিল। অনন্তর মহাত্মা কৃষ্ণ ও পাণ্ডবগণের অভিপ্রায়ানুসারে পুণ্যদিনে কৃতকৌতুকমঙ্গল হইয়া পায়স ও বহুবিধ ধন দ্বারা ব্ৰাহ্মণগণকে পরিতৃপ্ত করিয়া সর্ব্বঋতুগুণসম্পন্ন দিব্যরূপ মনোহর সভাস্থলীর পরিসর পঞ্চ সহস্ৰ হস্ত পরিমাণ করিয়া লইল।